মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক: প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টার এক রুদ্ধশ্বাস  অভিযানে ‘ ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামক নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট( সিটিটিসি)।

শনিবার ভোরে জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি যুগিটলা নামক ওই পাহাড়ি টিলায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও সোয়াট অভিযান চালায়। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন হিলসাইড’। এর আগে শুক্রবার রাতে ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও স্থানীয় পুলিশ।

অভিযান শেষে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান যুগ্ম কমিশনার  আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে এধরণের তথ্য আসে  গত ৮-১০ দিন আগে। এর আলোকে আমাদের অভিযান শুরু হয়। এক জঙ্গি শুক্রবার পরিবারের লোকদের আনতে ঢাকায় গেলে আমরা তাকে গ্রেফতার করি। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ‘ ইমাম মাহমুদের কাফেলা  ‘ নামক নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তার পরপরই আমাদের বিভিন্ন  ইউনিট বাড়িটি ঘিরে রাখে। পরে পুলিশের জঙ্গি বিরোধী ইউনিট সোয়াত এই অভিযানে যোগ দেয়। আমরা আজ ভোর সাড়ে ৬ টায় অভিযান শুরু করি এবং বলপ্রয়োগ ছাড়াই  সকাল সাড়ে ১০ টায়  ‘অপারেশন হিল সাইড’ নামক আমাদের এই অভিযান শেষ হয় ।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জান বলেন, অভিযান কালে আমরা ১০ জন জঙ্গিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের সাথে  ৩ টি শিশুও  রয়েছে। রফিকুল ইসলাম,খায়রুল ইসলাম, হাফিজ উল্ল্যাহ সহ এসব জঙ্গিদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও  মময়মনসিংহ জেলায়।

আটককৃত ‘জঙ্গিরা’ হলেন-  সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তার মেয়ে মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কানলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), খায়রুলের স্ত্রী মেঘনা (১৭), সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে  রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোর জেলার সদর থানার  চাদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮)।

এছাড়া হেফাজতে নেওয়া তিন শিশু হচ্ছে- নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের খায়রুল ইসলামের মেয়ে আবিদা (১), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের মেয়ে হুজাইফা (৬) ও জুবেদা (১৮ মাস)।

তিনি জানান, আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে ৩ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০ টি ডেটোনেটর ,নগদ ৩ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা, অনেক জিহাদী বই,প্রশিক্ষণের  জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের মজুতদকৃত অনেক খাদ্যদ্রব্যও পাওয়া গেছে।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান দাবি করেন আটক জঙ্গিদের ভাষ্য এবং আমাদের তথ্য মতে তারা এই জমি কিনে প্রায় দেড়মাস আগে এখানে  আস্থানা গড়ে তুলে । এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো এই জঙ্গি সংগঠন।

তিনি এই জঙ্গি সংগঠন অঙ্কুরে বিনষ্ট  করতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন।

স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের কাছে এখানে কারা আসতো এবং তাদের সহযোগীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে ।

তিনি এই অভিযান সফল করতে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মনজুর রহমান পিপিএম বার এবং কুলাউড়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালেক সহ স্থানীয় পুলিশ সদস্য এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
এর আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ের এই বাড়িটি শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে   ঘিরে রাখা হয়।  পুরো রাতব্যাপী এখানে কৌতুহলী মানুষ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।

কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের যুগিটিলা গ্রামের পাহাড়ে শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়।