ঢাকা ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
আনজুমানে আল ইসলাহ কমলগঞ্জ পৌর শাখার কার্যকরী কমিটির দায়িত্বশীল সভা অনুষ্ঠিত শ্রীমঙ্গলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীর ওপর হামলা,আহত-৪,দোকান ভাংচুর,টাকা লুট আওয়ামীলীগ পালায় না,শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় এখন? প্রশ্ন রাখেন মেজর হাফিজ সিলেট-১ আসনের সাথেই থাকছে নগরের ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে কর্মসূচি শ্রীমঙ্গলে অনিয়মের দায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা মৌলভীবাজার জেলার ৬৭ টি ইউনিয়নকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন মৌলভীবাজারে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করলো হাইকোর্ট তারেক রহমানের কাছে বিচার চাইলেন,বহিষ্কৃত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মামনুন

আওয়ামীলীগ পালায় না,শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় এখন? প্রশ্ন রাখেন মেজর হাফিজ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১২৭ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন- এই আওয়ামী লীগ তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে দাবি করে তারা ১৯৭৫ সালে এক দলীয় রাস্ট্র গঠন করার মাধ্যমে গনতন্ত্রের কবর দিয়েছিল৷ পরবর্তীকালে তাদের ভাষায় অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমান তিনি রাস্ট্র ক্ষমতায় এসে আবার গনতন্ত্রকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন সবার জন্যে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশকে আমরা পেয়েছি। রাজনৈতিক নেতারা যখন প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন জনগণের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণে চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ অধিনায়ক হিসেবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ বাংলাদেশের আয়োজনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, বরণ্যে রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন- একাত্তর যে না দেখেছে একাত্তরে বাঙ্গালি যে কি সাহসী জাতি ছিল বিশেষ করে তরুণ ছাত্ররা এবং তরুণ সৈনিকেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে দেশের স্বাধীনতার জন্যে। এবং তাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।

তিনি বলেন -এখন জাতীয় জীবনে ক্রান্তিলগ্নে আমরা উপনীত হয়েছি। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর বিশেষ করে বিএনপি সতের বছর সংগ্রামের পর এবং সব শেষে এ তরুণ ছাত্র যুবক তাদের অভিভাবকরা সবাই মিলে রাজপথে নেমে হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছে। আল্লাহর গজব তাদের ওপর পড়েছে। সেজন্য দেশ ছেড়ে তাদেরকে পালাতে হয়েছে। কতো বড় বড় কথা বলেছেন,আওয়ামীলীগ পালায় না৷ শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় এখন।

যাই হোক এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর এখন মহা গুরুদায়িত্ব রয়েছে। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হবে। ইনশাআল্লাহ জনগণের সমর্থন নিয়ে আবার রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে জনগণের প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল । আমাদের ওপর এখন অনেক দায়িত্ব।

আমরা যেনো আওয়ামী লীগ না হই। আওয়ামীলীগ যেসব কর্মকান্ড করেছে যে দুর্নীতি করেছে,মানি লন্ডারিং করেছে হত্যা গুম খুন করেছে। আমরা যেন তাদের কর্মকান্ড থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আজকে প্রয়োজন ছিল সাইফুর রহমানের মতো অভিভাবকের একজন রাজনৈতিকের। তিনি পুরো দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।যার কথায় সারা বাংলাদেশ আন্দোলিত হতো। এবং যিনি উন্নয়নের রুপকার হিসাবে আবার বাংলাদেশ কে এক স্বর্ণযোগে নিতে সক্ষম হতেন

স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ তৌফিক আহমদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ড.আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এম নাসের রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

 

মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম আরও বলেন – বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু যমুনা সেতু। এই সেতুটি নির্মানের প্রধান কারিগর স্থপতি এম সাইফুর রহমান। তিনি প্রথমে বিশ্ব ব্যাংক এই সেতুতে টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। বলে এ সেতুতে এত বিশাল অংকের টাকা দেয়া ঠিক হবে না। সাইফুর রহমান তার ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে যেভাবে পরিচালনা করেছেন ওয়াল্ড ব্যাংকে সেকারণে তার প্রতিও তাদের অনেক দুর্বলতা তার প্রতি ছিল তিনি বিশ্ব ব্যাংকে কনভিন্স করে এই যমুনা সেতু নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য নিয়ে আসেন। অতি অল্পদিনে অল্প সুদের মাধ্যমে আমরা এ ঋনটি পেয়েছিলাম। যার ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ বৃহৎ যমুনা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন আত্মপ্রচারে বিমূখ যেই জন্য বাংলাদেশের জনগণ জানেও না যে সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব এই যমুনা সেতু প্রতিষ্ঠার পিছনে। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে অন্যান্য অঞ্চলে অনেক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। তিনি একজন বৃহৎ কৃতি পুরুষ ছিলেন। কিভাবে তিনি বৃহত্তর সিলেট এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের নারী সমাজ ছিল সব সময় অবহেলিত। নারী শিক্ষার হার ছিল অনেক কম। সেখানে তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য এ কর্মসূচীর মাধ্যমে যে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন এ জন্য যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। সাইফুর রহমান তিনি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ ছিলেন। এমনিতেও তিনি সিনিয়র ছিলেন। অর্থ মন্ত্রী হিসাবে বাংলাদেশের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য তার একটা প্রধান মূল দায়িত্ব তার কাঁধে জোয়াল লাগানো ছিল সেজন্য তিনি কখনো ম্রিয়মান ছিলেন না সব সময় হাসি খুশি ছিলেন। কিন্তু তার অন্যান্য কলিগদেরকেও যাকে যেভাবে হ্যান্ডেল করার দরকার সেভাবে হ্যান্ডেল করেছেন। মন্ত্রীরা তো তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য পাগল ছিল কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি সময় দিতে পারতেন না। অনেক সময় অনেক মন্ত্রী কিছু কিছু সিনিয়ার মন্ত্রীও বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে তার রুমে ডুকলে আমি দেখেছি তিনি দরজায় তাদেরকে থামিয়ে দিতেন বলতেন এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসছো। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আসছো কেন? অর্থ মন্ত্রীর ব্যস্ততা আছে। দেশের কাজেই তো আমি ব্যস্ত। আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করবা না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসো। এভাবেই মন্ত্রীদেরকে তিনি দরজা থেকে বিদায় দিতেন। এই তার ব্যক্তিত্ব ছিল। এইভাবে তিনি দেশের অর্থনীতির কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করার জন্য তিনি টাইম বের করে নিয়েছেন। এবং দেশের জন্য যেভাবে যখন দেশ সেবা দেয়ার জন্য সেটা তিনি দিয়েছেন।
তিনি বলেন- আমি তাঁর স্নেহ ধন্য ছিলাম প্রথমদিকে সিলেটি ভাষা বুজতাম না। তার বক্তৃতা অনেক সময় সিলেট এক্সচেন ছিল। এটা নিয়ে আমাদের এমপিরা মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা করতো একটু হাসি ঠাট্টা করতো। একদিন তিনি বক্তৃতার মধ্যে বলতেছেন চোর চোর চোর। আমার পাশে আওয়ামী লীগের একজন বলে ভাই চোর কি চোর কি? আমি বললাম তোমারা এটা বুজতে পারবা একাজে তো তোমারা খুব দক্ষ। শিগগিরই এর প্রমাণ পাবা। সুতরাং তার যে বক্তৃতা অদ্ভুত তার বক্তৃতা।
শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথম যে সংসদ অধিবেশন হয় নতুন সংসদ ভবনে। আমি তখনো রাজনীতিতে আসিনাই বাড়িতে বসে টেলিভিশনে দেখছি। বাজেট বক্তৃতা তিনি দিচ্ছেন দাঁড়িয়ে। যখন এই জিয়াউর রহমানের নামটি নেন পকেটে থেকে রুমালটি বের করে তার অশ্রু মুছেন। যতোবার জিয়াউর রহমানের নাম নিয়েছেন ততোবার তার চোখ থেকে তার অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। এই যে নেতার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। জিয়াউর রহমান তো এখন বেঁচে নাই। সাইফুর রহমানের যে স্ট্যটাস কাউকে তোষামোদ করা খুশি করা তার দরকার নাই। নিজের কৃতিত্বে তিনি দেদীপ্যমান। কিন্তু নেতার প্রতি এ ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বেগম জিয়া তো খবরই নিতেন না কি হচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে। সাইফুর রহমান আছেন উনি দেখবেন যা করার। তখনো এই যে ব্লাংক চেক তাকে দিয়েছেন এই জন্য কখনো তাকে আপসোস করতে হয়নি। সাইফুর রহমান অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় পরিচালনা করেছেন।
বক্তারা বলেন, এম সাইফুর রহমান শুধু দেশের অর্থনীতি সংস্কারের নকশা তৈরি করেননি, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও কর্মদক্ষতা আজও দেশের অর্থনীতির জন্য দিশারী হয়ে আছে।

পরে এস এস সি’র অসচ্ছল ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন প্রধান অতিথি। পরে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সকাল ১১ টা থেকে এম সাইফুর রহমানের নিজ বাড়ি বাহারমর্দানে কবরে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা পৌর বিএনপি যুবদল, ছাত্রদল,কৃষকদল,মৎসজীবি দল সহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় কবর জিয়ারতসহ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল খাবার বিতরণ করা হয়

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আওয়ামীলীগ পালায় না,শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় এখন? প্রশ্ন রাখেন মেজর হাফিজ

আপডেট সময় ০৯:০৬:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন- এই আওয়ামী লীগ তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে দাবি করে তারা ১৯৭৫ সালে এক দলীয় রাস্ট্র গঠন করার মাধ্যমে গনতন্ত্রের কবর দিয়েছিল৷ পরবর্তীকালে তাদের ভাষায় অখ্যাত মেজর জিয়াউর রহমান তিনি রাস্ট্র ক্ষমতায় এসে আবার গনতন্ত্রকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন সবার জন্যে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দেশকে আমরা পেয়েছি। রাজনৈতিক নেতারা যখন প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন জনগণের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই সেই মাহেন্দ্রক্ষণে চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ অধিনায়ক হিসেবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ বাংলাদেশের আয়োজনে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, বরণ্যে রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন- একাত্তর যে না দেখেছে একাত্তরে বাঙ্গালি যে কি সাহসী জাতি ছিল বিশেষ করে তরুণ ছাত্ররা এবং তরুণ সৈনিকেরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে দেশের স্বাধীনতার জন্যে। এবং তাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।

তিনি বলেন -এখন জাতীয় জীবনে ক্রান্তিলগ্নে আমরা উপনীত হয়েছি। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর বিশেষ করে বিএনপি সতের বছর সংগ্রামের পর এবং সব শেষে এ তরুণ ছাত্র যুবক তাদের অভিভাবকরা সবাই মিলে রাজপথে নেমে হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছে। আল্লাহর গজব তাদের ওপর পড়েছে। সেজন্য দেশ ছেড়ে তাদেরকে পালাতে হয়েছে। কতো বড় বড় কথা বলেছেন,আওয়ামীলীগ পালায় না৷ শেখ হাসিনা পালায় না কোথায় এখন।

যাই হোক এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর এখন মহা গুরুদায়িত্ব রয়েছে। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হবে। ইনশাআল্লাহ জনগণের সমর্থন নিয়ে আবার রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে জনগণের প্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল । আমাদের ওপর এখন অনেক দায়িত্ব।

আমরা যেনো আওয়ামী লীগ না হই। আওয়ামীলীগ যেসব কর্মকান্ড করেছে যে দুর্নীতি করেছে,মানি লন্ডারিং করেছে হত্যা গুম খুন করেছে। আমরা যেন তাদের কর্মকান্ড থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আজকে প্রয়োজন ছিল সাইফুর রহমানের মতো অভিভাবকের একজন রাজনৈতিকের। তিনি পুরো দলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।যার কথায় সারা বাংলাদেশ আন্দোলিত হতো। এবং যিনি উন্নয়নের রুপকার হিসাবে আবার বাংলাদেশ কে এক স্বর্ণযোগে নিতে সক্ষম হতেন

স্মৃতি পরিষদের সভাপতি সৈয়দ তৌফিক আহমদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ড.আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য স্মৃতি পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এম নাসের রহমান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আলিমুল ইসলাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপন ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

 

মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম আরও বলেন – বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু যমুনা সেতু। এই সেতুটি নির্মানের প্রধান কারিগর স্থপতি এম সাইফুর রহমান। তিনি প্রথমে বিশ্ব ব্যাংক এই সেতুতে টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। বলে এ সেতুতে এত বিশাল অংকের টাকা দেয়া ঠিক হবে না। সাইফুর রহমান তার ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে যেভাবে পরিচালনা করেছেন ওয়াল্ড ব্যাংকে সেকারণে তার প্রতিও তাদের অনেক দুর্বলতা তার প্রতি ছিল তিনি বিশ্ব ব্যাংকে কনভিন্স করে এই যমুনা সেতু নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য নিয়ে আসেন। অতি অল্পদিনে অল্প সুদের মাধ্যমে আমরা এ ঋনটি পেয়েছিলাম। যার ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ বৃহৎ যমুনা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন আত্মপ্রচারে বিমূখ যেই জন্য বাংলাদেশের জনগণ জানেও না যে সাইফুর রহমানের কৃতিত্ব এই যমুনা সেতু প্রতিষ্ঠার পিছনে। বাংলাদেশের বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে অন্যান্য অঞ্চলে অনেক উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। তিনি একজন বৃহৎ কৃতি পুরুষ ছিলেন। কিভাবে তিনি বৃহত্তর সিলেট এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের নারী সমাজ ছিল সব সময় অবহেলিত। নারী শিক্ষার হার ছিল অনেক কম। সেখানে তিনি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য এ কর্মসূচীর মাধ্যমে যে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন এ জন্য যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ তাকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। সাইফুর রহমান তিনি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষ ছিলেন। এমনিতেও তিনি সিনিয়র ছিলেন। অর্থ মন্ত্রী হিসাবে বাংলাদেশের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য তার একটা প্রধান মূল দায়িত্ব তার কাঁধে জোয়াল লাগানো ছিল সেজন্য তিনি কখনো ম্রিয়মান ছিলেন না সব সময় হাসি খুশি ছিলেন। কিন্তু তার অন্যান্য কলিগদেরকেও যাকে যেভাবে হ্যান্ডেল করার দরকার সেভাবে হ্যান্ডেল করেছেন। মন্ত্রীরা তো তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য পাগল ছিল কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি সময় দিতে পারতেন না। অনেক সময় অনেক মন্ত্রী কিছু কিছু সিনিয়ার মন্ত্রীও বিনা অ্যাপয়েন্টমেন্টে তার রুমে ডুকলে আমি দেখেছি তিনি দরজায় তাদেরকে থামিয়ে দিতেন বলতেন এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসছো। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আসছো কেন? অর্থ মন্ত্রীর ব্যস্ততা আছে। দেশের কাজেই তো আমি ব্যস্ত। আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করবা না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসো। এভাবেই মন্ত্রীদেরকে তিনি দরজা থেকে বিদায় দিতেন। এই তার ব্যক্তিত্ব ছিল। এইভাবে তিনি দেশের অর্থনীতির কর্মকান্ডে মনোনিবেশ করার জন্য তিনি টাইম বের করে নিয়েছেন। এবং দেশের জন্য যেভাবে যখন দেশ সেবা দেয়ার জন্য সেটা তিনি দিয়েছেন।
তিনি বলেন- আমি তাঁর স্নেহ ধন্য ছিলাম প্রথমদিকে সিলেটি ভাষা বুজতাম না। তার বক্তৃতা অনেক সময় সিলেট এক্সচেন ছিল। এটা নিয়ে আমাদের এমপিরা মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা করতো একটু হাসি ঠাট্টা করতো। একদিন তিনি বক্তৃতার মধ্যে বলতেছেন চোর চোর চোর। আমার পাশে আওয়ামী লীগের একজন বলে ভাই চোর কি চোর কি? আমি বললাম তোমারা এটা বুজতে পারবা একাজে তো তোমারা খুব দক্ষ। শিগগিরই এর প্রমাণ পাবা। সুতরাং তার যে বক্তৃতা অদ্ভুত তার বক্তৃতা।
শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথম যে সংসদ অধিবেশন হয় নতুন সংসদ ভবনে। আমি তখনো রাজনীতিতে আসিনাই বাড়িতে বসে টেলিভিশনে দেখছি। বাজেট বক্তৃতা তিনি দিচ্ছেন দাঁড়িয়ে। যখন এই জিয়াউর রহমানের নামটি নেন পকেটে থেকে রুমালটি বের করে তার অশ্রু মুছেন। যতোবার জিয়াউর রহমানের নাম নিয়েছেন ততোবার তার চোখ থেকে তার অশ্রু বিসর্জন দিয়েছেন। এই যে নেতার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। জিয়াউর রহমান তো এখন বেঁচে নাই। সাইফুর রহমানের যে স্ট্যটাস কাউকে তোষামোদ করা খুশি করা তার দরকার নাই। নিজের কৃতিত্বে তিনি দেদীপ্যমান। কিন্তু নেতার প্রতি এ ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বেগম জিয়া তো খবরই নিতেন না কি হচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে। সাইফুর রহমান আছেন উনি দেখবেন যা করার। তখনো এই যে ব্লাংক চেক তাকে দিয়েছেন এই জন্য কখনো তাকে আপসোস করতে হয়নি। সাইফুর রহমান অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় পরিচালনা করেছেন।
বক্তারা বলেন, এম সাইফুর রহমান শুধু দেশের অর্থনীতি সংস্কারের নকশা তৈরি করেননি, বরং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও কর্মদক্ষতা আজও দেশের অর্থনীতির জন্য দিশারী হয়ে আছে।

পরে এস এস সি’র অসচ্ছল ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন প্রধান অতিথি। পরে মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে সকাল ১১ টা থেকে এম সাইফুর রহমানের নিজ বাড়ি বাহারমর্দানে কবরে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা পৌর বিএনপি যুবদল, ছাত্রদল,কৃষকদল,মৎসজীবি দল সহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় কবর জিয়ারতসহ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল খাবার বিতরণ করা হয়