কুলাউড়ায় ১৬ জন শিক্ষকের পদোন্নতি অনিশ্চিত!
- আপডেট সময় ১২:৫৮:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
- / ২২৬ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার,মৌলভীবাজার থেকে: কুলাউড়ায় ১৬ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদোন্নতির অনিশ্চয়তায় ভোগছেন।
নবজাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকদের দায়েরকৃত মামলা জটিলতায় পদোন্নতি নিয়ে এই উদ্বেগ উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগাদেশ অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও কুলাউড়ার ১৬জন জাতীয়করণকৃত শিক্ষক নিজেদেরকে সহকারি শিক্ষক হিসেবে মানতে নারাজ। দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। পদবীর চেয়ার ছেড়ে দিলে মর্যাদা কমে যাবে। তাই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেবার জন্যে আদালতে মামলা দিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখলে রেখেছেন কুলাউড়ার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ১৬জন সহকারি (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) শিক্ষক।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পদোন্নতির চেকলিস্ট নির্দেশনা মোতাবেক মামলাধীন ১৬টি পদ সংরক্ষণ করে পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা প্রেরণের নির্দেশনা থাকায় পদোন্নতিযোগ্য প্রায় ২০-২৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ ও মেধাবীরা ১৬টি পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষকদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দক্ষ ও মেধাবী প্রাথমিক শিক্ষকরা পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার উৎকন্ঠায় থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। নিরুপায় হয়ে কেউ আশ্রয় নিচ্ছেন আদালতের। আবার কেউ কেউ চিঠি চালাচালিসহ দৌঁড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতনদের দ্বারে দ্বারে।
জানা যায় স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের এক কঠিন মুহূর্তে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে ৩৬,১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একযোগে সরকারীকরণের মধ্য দিয়ে একটি উন্নত সমৃদ্ধ শিক্ষিত জাতী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন ধাপে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দেন। কিন্তু বিভিন্ন ধাপের/স্তরের শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ মামলা, উর্ধ্বতনের বিমাতাসূলভ আচরণ। যুগের পর যুগ একই পদে চাকুরী করেও নেই কোন পদোন্নতি। আর্থিক অসচ্ছলতা, বেতন স্বল্পতা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উর্ধ্বমূল্যের বাজারে স্বল্প বেতনের কারণে আর্থিক টানাপোড়েনের বেহাল দশার কারণে উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীরা এ পেশায় নিজেদের জড়াতে অনেকটাই আগ্রহ হারাচ্ছেন। আর হতাশায় ভুগছেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পদোন্নতি বঞ্চিত সহকারি শিক্ষকরা।
জানা যায় প্রায় ২০ বছর যাবত এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি ডিগ্রীধারীদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত না করলেও এ বছর তাদেরকেও পদোন্নতির জন্য সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অথচ বর্তমান নিয়োগ বিধিতে কমপক্ষে ডিগ্রী পাশ না হলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কেউ আবেদন করার কোন সুযোগই নেই।
জানা যায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষদের ২য় শ্রেণীর পদ মর্যাদার ঘোষণা দিলেও এবারই প্রথম এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি যোগ্যতা সম্পন্নদের পদোন্নতির সুযোগ দেবার ফলে অনেক শিক্ষকরা এ সিদ্ধান্তকে প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণীর পদ মর্যাদা থেকে দূরে সরানোর নীল নকশা বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এ নিয়েও সিনিয়র শিক্ষক এবং উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যেও হতাশা আরও তীব্রতর হচ্ছে। জানা যায় কুলাউড়ার নবজাতীয়করণকৃত ১৬জন শিক্ষক নিয়োগবিধির তোয়াক্কা না করে বিধিবহিরর্ভূত ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখতে কুটকৌশল হিসেবে আদালতে মামলা দিয়ে একই ব্যক্তি সহকারি এবং প্রধান শিক্ষকের ২টি পদই জব্দ করে রেখেছেন। ওই শিক্ষকদের নিয়োগ আদেশে তাদেরকে সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলেও তারা সরাসরি নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষক দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। জানা যায় অধিদপ্তরের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতি পন্থায় নিয়োগযোগ্য এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য। সে অনুযায়ী কুলাউড়া উপজেলায় পদোন্নতিযোগ্য পদ রয়েছে ১২৫টি। যার মধ্যে ৮৯ টি পদে প্রধান শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন এবং ৩৬টি পদ পদোন্নতির জন্য শূন্য রয়েছে।
অপরদিকে সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য (৩৫ শতাংশ) পদ সংখ্যা ৬৮টি। তন্মধ্যে ৬৬টি পদে প্রধান শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন এবং ২টি পদ শূন্য রয়েছে। জাতীয়করণকৃত শিক্ষক গেজেটে ওই ১৬জন শিক্ষক সহকারী শিক্ষক হিসেবে গেজেটপ্রাপ্ত হয়েছেন। মামলকারী শিক্ষকগণের মধ্য থেকে ৩জন শিক্ষক ইতিপূর্বে অবসরে চলে গেছেন। মামলাকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদ প্রাপ্যতার জন্য মামলা করলেও বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী এ পদগুলো সরাসরি কোটার অন্তর্ভূক্ত। সরাসরি পদায়নের জন্য কুলাউড়া উপজেলায় ২টি পদ শূন্য থাকলেও তাদের মনগড়া মামলার কারণে কোটানুযায়ী ৩৬টি পদ এবং পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সম্মিলিত গ্রেডেশন তালিকা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকরা তাদেরকে সরাসরি পন্থায় নিয়োগ হয়েছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সরাসরি পন্থায় নিয়োগযোগ্য পদ শূন্য আছে মাত্র ২টি।
তাছাড়া তাদের থেকে প্রায় ১০-১৫বছরের অধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা নবজাতীয়করণকৃতদের মামলার কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পদোন্নতি বঞ্চিতরা পদোন্নতি পন্থায় পদায়নযোগ্য ১৬টি পদসহ ৩৬টি পদ পদোন্নতির জন্য উন্মুক্ত করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন দাখিল করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন।