ঢাকা ০৬:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানা: স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন সাতক্ষীরার শরিফুল

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৩৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৯৯১ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আটক হয়েছেন সাতক্ষীরার তালার একই পরিবারের তিনজন। তারা হলেন- উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামের মৃত ওমর শরীফুল ইসলাম মোড়ল (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৩৮) ও একমাত্র মেয়ে হাবিবা (২০)।

 

সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে শরিফুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে একসঙ্গে বের হন। তারপর থেকেই ভাইসহ পরিচিতজনদের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

 

গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন ওই তিনজন। সরেজমিনে তালার খলিলগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে শরিফুলের ছোট্ট একটি দোকানঘর।

 

স্থানীয়রা জানান, এই দোকানটিতে পরিবার নিয়ে বসবাসসহ সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালাতেন শরিফুল। পাশেই মোড়ল পাড়া। সেখানেই শরিফুলের পৈতৃক ভিটা। শরিফুলের দুই ভাই সেখানেই বসবাস করেন।

 

তারা আরও জানান, গত ২৫ জুলাই স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে জঙ্গী হিসাবে আটক জামাইকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান শরিফুল। তরপর থেকেই মোবাইল বন্ধ থাকায় শরিফুলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।

 

শরিফুলের বড় ভাই নজরুল মোড়ল জানান, তারা খুবই গরীব ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তার ছোট ভাই শরিফুল সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালান। কখনো খারাপ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কোন খবর তিনি কেন, এলাকার কোনো মানুষ দিতে পারবেন না। আপনারাই খোঁজ-খবর নিয়ে দেখুন। একই কথা পরিবারটির বাকি সদস্যদের।

 

তিনি বলেন, আটরশি পীরের ভক্ত শরিফুল। প্রতিবছর আটরশির ওরশ শরীফে যেতেন। তার সাথে স্থানীয়, এলাকাবাসীসহ মাঝে মধ্যে তিনিও যেতেন। তবে এটা কোনো রাজনৈতিক দল কিনা সেটার তার জানা নেই। তার ছোট ভাই জঙ্গি সদস্য হয়েছেন শুনে অবাক তিনি। এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।পরিবারের বাকি সদস্যরাও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর শুনে।

 

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে জঙ্গি সন্দেহে সিরাজগঞ্জ থেকে আটক হন শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই অমিনুল ইসলাম শান্ত। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ কারাগারে। তাকে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বের হন শরিফুল। গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন তারা।

 

শরিফুলের প্রতিবেশী খলিলনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী ইউপি সদস্য ময়না বিবি জানান, টিভির খবরের মাধ্যমে তাদের আটকের খবরে শুনে রীতিমত হতবাক তিনি। শরিফুল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানেই বসবাস করেন এবং সাইকেল সারাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই গত বছর জঙ্গী হিসাবে ধরা পড়লে ওই পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। তিনিসহ এলাকার সবাই জানেন, জামাইকে জামিনে মুক্ত করতে ১৫-১৬ দিন আগে একটি গরু বিক্রি ও জমির হারির প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেননি।

 

সর্বশেষ গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুর্গম পাহাড়ি  এলাকার জঙ্গী আস্তানা থেকে তাদের আটকের খবরে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তিনিসহ এলাকাবাসী।

 

এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ থেকে জঙ্গী হিসেবে আটক হয়েছিলেন শরিফুলের মেয়ের জামাই আমিনুল ইসলাম শান্ত। বর্তমানে তার স্বামী কারাগারে আছে।

 

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানা: স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন সাতক্ষীরার শরিফুল

আপডেট সময় ০৯:৩৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আটক হয়েছেন সাতক্ষীরার তালার একই পরিবারের তিনজন। তারা হলেন- উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা গ্রামের মৃত ওমর শরীফুল ইসলাম মোড়ল (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৩৮) ও একমাত্র মেয়ে হাবিবা (২০)।

 

সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে শরিফুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে একসঙ্গে বের হন। তারপর থেকেই ভাইসহ পরিচিতজনদের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

 

গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন ওই তিনজন। সরেজমিনে তালার খলিলগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে শরিফুলের ছোট্ট একটি দোকানঘর।

 

স্থানীয়রা জানান, এই দোকানটিতে পরিবার নিয়ে বসবাসসহ সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালাতেন শরিফুল। পাশেই মোড়ল পাড়া। সেখানেই শরিফুলের পৈতৃক ভিটা। শরিফুলের দুই ভাই সেখানেই বসবাস করেন।

 

তারা আরও জানান, গত ২৫ জুলাই স্ত্রী আমেনা বেগম ও মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে জঙ্গী হিসাবে আটক জামাইকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান শরিফুল। তরপর থেকেই মোবাইল বন্ধ থাকায় শরিফুলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।

 

শরিফুলের বড় ভাই নজরুল মোড়ল জানান, তারা খুবই গরীব ও নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তার ছোট ভাই শরিফুল সাইকেল মেরামতের কাজ করে সংসার চালান। কখনো খারাপ কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন কোন খবর তিনি কেন, এলাকার কোনো মানুষ দিতে পারবেন না। আপনারাই খোঁজ-খবর নিয়ে দেখুন। একই কথা পরিবারটির বাকি সদস্যদের।

 

তিনি বলেন, আটরশি পীরের ভক্ত শরিফুল। প্রতিবছর আটরশির ওরশ শরীফে যেতেন। তার সাথে স্থানীয়, এলাকাবাসীসহ মাঝে মধ্যে তিনিও যেতেন। তবে এটা কোনো রাজনৈতিক দল কিনা সেটার তার জানা নেই। তার ছোট ভাই জঙ্গি সদস্য হয়েছেন শুনে অবাক তিনি। এটা তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না।পরিবারের বাকি সদস্যরাও হতভম্ব হয়ে পড়েছেন জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর শুনে।

 

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে জঙ্গি সন্দেহে সিরাজগঞ্জ থেকে আটক হন শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই অমিনুল ইসলাম শান্ত। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ কারাগারে। তাকে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে বের হন শরিফুল। গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে মৌলভীবাজার থেকে আটক হন তারা।

 

শরিফুলের প্রতিবেশী খলিলনগর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সাবেক নারী ইউপি সদস্য ময়না বিবি জানান, টিভির খবরের মাধ্যমে তাদের আটকের খবরে শুনে রীতিমত হতবাক তিনি। শরিফুল খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর বেঁধে স্ত্রী-সন্তানসহ সেখানেই বসবাস করেন এবং সাইকেল সারাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শরিফুলের একমাত্র মেয়ের জামাই গত বছর জঙ্গী হিসাবে ধরা পড়লে ওই পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। তিনিসহ এলাকার সবাই জানেন, জামাইকে জামিনে মুক্ত করতে ১৫-১৬ দিন আগে একটি গরু বিক্রি ও জমির হারির প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেননি।

 

সর্বশেষ গত শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের অভিযানে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দুর্গম পাহাড়ি  এলাকার জঙ্গী আস্তানা থেকে তাদের আটকের খবরে রীতিমত হতবাক হয়েছেন তিনিসহ এলাকাবাসী।

 

এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ থেকে জঙ্গী হিসেবে আটক হয়েছিলেন শরিফুলের মেয়ের জামাই আমিনুল ইসলাম শান্ত। বর্তমানে তার স্বামী কারাগারে আছে।