চালু হলো মেট্রোরেল,উদ্ধোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
![](https://newssitedesign.com/newspaperpro/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় ১০:২৮:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
![](https://moulvibazar24.com/wp-content/uploads/2023/11/Rahat-rakib-tea.jpg)
সুধী সমাবেশের মাধ্যমে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের মাঠে উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনকালে এরিয়াল ভিউ ও থিম সং পরিবেশন করা হয়। নিরাপত্তার কারণে আতশবাজির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট এবং মেট্রোরেলের প্রথম দিনের কাভার উন্মোচন করেন। সেই সঙ্গে উন্মোচন করেন ৫০ টাকার স্মারক নোট। এরপর টিকিট কেটে মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তার বোন প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের একটি মাইলফলক মেট্রোরেল। পঙ্গু অসহায় বয়স্ক যাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মেট্রোরেলে নারী যাত্রীদের জন্য ওয়াশরুম ও শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার তৈরি করা হয়েছে।
মেট্রোরেল শুরুর সময়ে হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই ঘটনার পর কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিলো। হলি আর্টিজানে জাপানের ৮জন সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।এসময় জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করার কারণে আবার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়। সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেট্রোরেলে নামফলক তাদের নামে রাখবো। এছাড়া স্মৃতিস্মারক করেছি যাতে তাদের নাম থাকে।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, যানজট নিরসন করা হবে বলে নির্বাচনী ইশতেহার দেয়া হয়েছিল, তা এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হলো। এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করায় ভোটার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, মেট্রোরেল পরিবেশবান্ধব। কারণ এটি বিদ্যুৎ চালিত। এসময় দুর্ভোগ সহ্য করে সহযোগিতা করার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
মেট্রোরেল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব জনগণের। বিশ্বের সবচেয়ে সর্বশেষ প্রযুক্তির জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে এতে। এসব ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবহারে অনুরোধ। ধন্যবাদ জানাবো যদি মেনে চলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সেই দল, যে দলকে নিয়ে এদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা হয়, এটা প্রমাণিত।
বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গড়ে তুলবো জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার, উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।
মেট্রোরেলের সময়সূচি: যানজটে অতিষ্ঠ রাজধানীতে বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে ছুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন। পৌনে ১২ কিলোমিটার উড়াল-রেলপথে মাত্র ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে উত্তরা থেকে আগারগাঁও চল আসে মানুষ। তবে প্রথমদিকে মেট্রোরেল চলবে সীমিত পরিসরে, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। মাঝপথে কোথাও থামবে না। প্রথমদিকে ১০ মিনিট পরপর ট্রেন চলবে। আগামী ২৬ মার্চ থেকে এই রুটে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল পুরোদমে চলবে। সেদিন থেকে সব স্টেশনে থেমে যাত্রী তুলবে। পুরোদমে চলাচল শুরু হলে চলবে ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। যাত্রীর অভ্যস্ততার জন্য ধাপে ধাপে পথের সাতটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে যাত্রী ওঠানামার জন্য। তখন ১৭ মিনিট সময় লাগবে। এরমধ্যে যাত্রা বিরতির ১০ মিনিট। ট্রেনের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও আপাতত ২০০ যাত্রী নিয়ে চলবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে ৩৮ মিনিট লাগবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার অর্থাৎ দিনে ৫ লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করতে পারবেন।
মেট্রোরেলের ভাড়া: মেট্রোরেলে কিলোমিটারে ভাড়া ৫ টাকা। মেট্রোরেলে সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা। কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস নেই। ভাড়া লাগবে না যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিন ফুটের কম উচ্চতার শিশুদের। স্মার্ট কার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন যাত্রীরা। বিনা ভাড়ায় বা অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে ১০ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া ট্রেন ও স্টেশনে ধূমপান, পান খাওয়া নিষেধ। পোষা প্রাণী নিয়ে চড়া যাবে না মেট্রোতে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। নারী ও শিশুদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা। মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। জাতীয় গ্রিড থেকে পাঁচটি বিকল্প সংযোগ রয়েছে। তাই লোডশেডিংয়ের শঙ্কা নেই।
টিকিট কাটবেন কিভাবে: মেট্রোরেলে দুই ধরনের টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহারের এমআরটি পাস, অন্যটি দিয়ে চড়া যাবে একবার। শুরুতে কেবল মেট্রোরেল স্টেশনের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট জামানত দিলে মিলবে এমআরটি পাস। আর একবারের যাত্রার জন্য টিকিট মিলবে স্টেশনে থাকা কাউন্টার এবং পাশের স্বয়ংক্রিয় ‘টিকিট মেশিন’ থেকে। যাত্রা শেষে নির্ধারিত মেশিনে টিকিট কার্ডটি ফেরত দিলে তবেই স্টেশন থেকে বের হতে পারবেন যাত্রীরা।
মেট্রোরেলের নির্মাণ খরচ: মেট্রোরেলের প্রথম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ২০০৫ সালে। রাজধানীর জন্য তৈরি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) বলা হয়েছিল মেট্রোরেলের কথা। মেট্রোরেলের মোট ব্যয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে খরচ করা হবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরের মধ্যে।
![](https://moulvibazar24.com/wp-content/uploads/2022/12/Untitled-6-×-4-in.gif)