ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছড়া ও খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ও ফসলাদির জমি প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:১৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪
  • / ৫৯৬ বার পড়া হয়েছে

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকটি ছড়া ও খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ও ফসলাদির জমি প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার হাজারও একর ফসলি জমি এবং পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার লোকজন। প্রায় ২৬ হেক্টর জমির সবজি ও আউশধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জানা যায়, ঘুর্ণিঝড় রামেল’র প্রভাবে রোববার রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয় কুলাউড়ায়। যারফলে পাহাড়ি ঢলে ছড়া, খাল ও নদী গুলোতে তীব্র স্রোতে পানি নামতে থাকে। মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের গাজিপুর এলাকায় গোগালী ছড়ার উত্তর পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। যারফলে ওই ইউনিয়নের গাজিপুর, ঘাগটিয়া, পুরন্দরপুর, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, গিয়াসনগর এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।

ওই ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল আউয়াল জানান, গোগালী ছড়ার পাড় ভেঙে গাজিপুর দাখিল মাদ্রাসার বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে গেছে। তাঁর ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমি, পুকুর, ফিসারীসহ অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। কুলাউড়া-গাজিপুর প্রধান সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক লোকজন ঘরবাড়ি ফেলে রাস্তার উঁচু স্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার সদর, রাউৎগাও, টিলাগাও, কাদিপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাউৎগাও ইউনিয়নের বাসিন্দা, গণমাধ্যমকর্মী তাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে ফানাই ও শুকনোছড়া নদীর পানি পাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই ইউনিয়নের কবিরাজী, পালগ্রাম, হাসিমপুর, মুকুন্দপুর, ভবানিপুর, ভাটুত্বগ্রাম, মৈশাজুড়ীসহ আরও ৮-১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধানের জমি, বীজতলা ও রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও ফিসারির মাছ। সবমিলিয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এই অঞ্চলের লোকজন।

উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব মুঠোফোনে বলেন, গাজিপুর মাদ্রাসার পাশে গোগালীছড়ার পাড় ভেঙে প্রায় ৮-১০ টি গ্রামের দুই হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফসলি জমিসহ অনেক পুকুর, ফিসারি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিতাস ব্রিকফিল্ড এবং জৈনেক্য এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বাউন্ডারির কারণে পানি ঠিকমতো নিচ দিকে প্রবাহিত হতে পারছে না। তাদের কারনে সাধারণ মানুষের এত ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। খবর পেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন জানান, এবছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। তারমধ্যে বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর। আউশধানের ৬৫০ হেক্টর বিজতলার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ২ হেক্টর এবং আবাদকৃত ৩৯৫ হেক্টর আউশধানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিমজ্জিত’র পরিমাণ আরও বাড়বে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন মাঠে তদারকিতে রয়েছেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহি উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, উপজেলার সদর ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। তবে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ও স্থাপনার তালিকা পেলে সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভাঙা স্থানগুলো মেরামতের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ছড়া ও খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ও ফসলাদির জমি প্লাবিত

আপডেট সময় ০৫:১৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকটি ছড়া ও খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা ও ফসলাদির জমি প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার হাজারও একর ফসলি জমি এবং পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার লোকজন। প্রায় ২৬ হেক্টর জমির সবজি ও আউশধান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

জানা যায়, ঘুর্ণিঝড় রামেল’র প্রভাবে রোববার রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয় কুলাউড়ায়। যারফলে পাহাড়ি ঢলে ছড়া, খাল ও নদী গুলোতে তীব্র স্রোতে পানি নামতে থাকে। মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের গাজিপুর এলাকায় গোগালী ছড়ার উত্তর পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। যারফলে ওই ইউনিয়নের গাজিপুর, ঘাগটিয়া, পুরন্দরপুর, মিরবক্সপুর, কামারকান্দি, গিয়াসনগর এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।

ওই ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য ফজলুল আউয়াল জানান, গোগালী ছড়ার পাড় ভেঙে গাজিপুর দাখিল মাদ্রাসার বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে গেছে। তাঁর ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমি, পুকুর, ফিসারীসহ অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। কুলাউড়া-গাজিপুর প্রধান সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক লোকজন ঘরবাড়ি ফেলে রাস্তার উঁচু স্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার সদর, রাউৎগাও, টিলাগাও, কাদিপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাউৎগাও ইউনিয়নের বাসিন্দা, গণমাধ্যমকর্মী তাজুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি ঢলে ফানাই ও শুকনোছড়া নদীর পানি পাড়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই ইউনিয়নের কবিরাজী, পালগ্রাম, হাসিমপুর, মুকুন্দপুর, ভবানিপুর, ভাটুত্বগ্রাম, মৈশাজুড়ীসহ আরও ৮-১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে আউশ ধানের জমি, বীজতলা ও রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও ফিসারির মাছ। সবমিলিয়ে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এই অঞ্চলের লোকজন।

উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব মুঠোফোনে বলেন, গাজিপুর মাদ্রাসার পাশে গোগালীছড়ার পাড় ভেঙে প্রায় ৮-১০ টি গ্রামের দুই হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফসলি জমিসহ অনেক পুকুর, ফিসারি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিতাস ব্রিকফিল্ড এবং জৈনেক্য এক ব্যক্তির মালিকানাধীন বাউন্ডারির কারণে পানি ঠিকমতো নিচ দিকে প্রবাহিত হতে পারছে না। তাদের কারনে সাধারণ মানুষের এত ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। খবর পেয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জসিম উদ্দিন জানান, এবছর উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। তারমধ্যে বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ১০ হেক্টর। আউশধানের ৬৫০ হেক্টর বিজতলার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় ২ হেক্টর এবং আবাদকৃত ৩৯৫ হেক্টর আউশধানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নিমজ্জিত’র পরিমাণ আরও বাড়বে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন মাঠে তদারকিতে রয়েছেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহি উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, উপজেলার সদর ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। তবে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ও স্থাপনার তালিকা পেলে সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও ভাঙা স্থানগুলো মেরামতের জন্য দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।