ঢাকা ০৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

ত্যাগী শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৫০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
ফয়সল আহমদ রুহেল :
চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে মুদির দোকানে চাকুরী করতে হয়। বেতনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বই কেনা।  দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রম আর রাত জেগে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। শিক্ষাজীবনে থেকেছেন অন্যের বাড়িতে লজিং। দীর্ঘ ৬ বছর পারিশ্রমিক ছাড়াই শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান। পায়ে হেঁটে প্রতিদিন ৮ মাইল রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত। কোনো কিছুই লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। দরিদ্র কৃষক বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জন্ম: শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৫২সালের ৩১ আগষ্ট মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজারস্থ বাগীরপার গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নরেন্দ্র কুমার দাস, মাতা কুঠি বালা দাস।  ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস চতুর্থ সন্তান।
পারিবারিক: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ৪ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তারা হলেন – মৌসুমী দাস, মৌলী রাণী দাস, উর্মিলা রাণী দাস, পিনাকী রাণী দাস এবং নিরুপম দাস।
শিক্ষাজীবন: নিরঞ্জন চন্দ্র দাস নিজ গ্রামের ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে।  ওইস্কুল থেকে তিনি ১৯৬১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ হতে ব্যাকরণ তীর্থ উপাধি লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন : 
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৮১ সালের ০১ জানুয়ারি  মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। সেখানে ৩১ বছর ৮ মাস চাকুরীর পর ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং এই বিদ্যালয় থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
শৈশব: আদর্শ শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের জীবন বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়।
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৬১ সালে নিজ গ্রাম ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় এক বছর গ্যাপ দেন।  পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন বিদ্যালয় থেকে ৮ কি.মি. দূরবর্তী আমতৈল গ্রামে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ওই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জীবিকার তাগিদে এক মুদির দোকানে চাকুরী করতে বাধ্য হন। ৪ বছর মুদি দোকানে চাকুরীর পর সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে মুদির দোকানে চাকুরীর পাশাপাশি কিছু বই কিনে লেখাপড়া পুনরায় শুরু করেন। দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রমের পর গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরে আসলে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এছাড়া শরণার্থী শিবির থেকে আসার পর পাশর্^বর্তী গ্রাম মালিশ্রীতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তার সহযোগী হরেন্দ্র দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-বেতের একটি ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠদান শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান এবং পরবর্তীতে ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষকতা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
১. নিরঞ্জন চন্দ্র দাস শিক্ষকতা জীবনের শুরুর দিকে গাড়ির ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে প্রতিদিন প্রায় ৮ মাইলের মত রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। একদিন বর্ষাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কর্মস্থল হতে বাড়ি ফেরার সময় বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে নালার মধ্যে পড়ে যান এবং সবাই সাঁতরে বাড়ি ফিরেন।
২. একবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একদল শিক্ষার্থী কোন এক অজ্ঞাত কারনে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তাঁর সহকর্মী ইমাম উদ্দিন সাহেবকে সাথে নিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন এবং সে সকল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বড়লেখা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
কিছু নীতি নৈতিকতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা দিক দিয়ে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস সকলের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট, সততা, আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস এর দীর্ঘায়ূ কামনা করি। চন্দ্র দাস
আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ
ফয়সল আহমদ রুহেল :
চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে মুদির দোকানে চাকুরী করতে হয়। বেতনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বই কেনা।  দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রম আর রাত জেগে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। শিক্ষাজীবনে থেকেছেন অন্যের বাড়িতে লজিং। দীর্ঘ ৬ বছর পারিশ্রমিক ছাড়াই শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান। পায়ে হেঁটে প্রতিদিন ৮ মাইল রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত। কোনো কিছুই লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। দরিদ্র কৃষক বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জন্ম : শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৫২সালের ৩১ আগষ্ট মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজারস্থ বাগীরপার গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নরেন্দ্র কুমার দাস, মাতা কুঠি বালা দাস।  ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস চতুর্থ সন্তান।
পারিবারিক : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ৪ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তারা হলেন – মৌসুমী দাস, মৌলী রাণী দাস, উর্মিলা রাণী দাস, পিনাকী রাণী দাস এবং নিরুপম দাস।
শিক্ষাজীবন: নিরঞ্জন চন্দ্র দাস নিজ গ্রামের ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে।  ওইস্কুল থেকে তিনি ১৯৬১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ হতে ব্যাকরণ তীর্থ উপাধি লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন : 
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৮১ সালের ০১ জানুয়ারি  মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। সেখানে ৩১ বছর ৮ মাস চাকুরীর পর ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং এই বিদ্যালয় থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
শৈশব : আদর্শ শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের জীবন বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়।
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৬১ সালে নিজ গ্রাম ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় এক বছর গ্যাপ দেন।  পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন বিদ্যালয় থেকে ৮ কি.মি. দূরবর্তী আমতৈল গ্রামে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ওই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জীবিকার তাগিদে এক মুদির দোকানে চাকুরী করতে বাধ্য হন। ৪ বছর মুদি দোকানে চাকুরীর পর সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে মুদির দোকানে চাকুরীর পাশাপাশি কিছু বই কিনে লেখাপড়া পুনরায় শুরু করেন। দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রমের পর গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরে আসলে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এছাড়া শরণার্থী শিবির থেকে আসার পর পাশর্^বর্তী গ্রাম মালিশ্রীতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তার সহযোগী হরেন্দ্র দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-বেতের একটি ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠদান শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান এবং পরবর্তীতে ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষকতা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
১. নিরঞ্জন চন্দ্র দাস শিক্ষকতা জীবনের শুরুর দিকে গাড়ির ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে প্রতিদিন প্রায় ৮ মাইলের মত রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। একদিন বর্ষাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কর্মস্থল হতে বাড়ি ফেরার সময় বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে নালার মধ্যে পড়ে যান এবং সবাই সাঁতরে বাড়ি ফিরেন।
২. একবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একদল শিক্ষার্থী কোন এক অজ্ঞাত কারনে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তাঁর সহকর্মী ইমাম উদ্দিন সাহেবকে সাথে নিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন এবং সে সকল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বড়লেখা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
কিছু নীতি নৈতিকতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা দিক দিয়ে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস সকলের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট, সততা, আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস এর দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ত্যাগী শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ

আপডেট সময় ১২:৫০:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
ফয়সল আহমদ রুহেল :
চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে মুদির দোকানে চাকুরী করতে হয়। বেতনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বই কেনা।  দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রম আর রাত জেগে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। শিক্ষাজীবনে থেকেছেন অন্যের বাড়িতে লজিং। দীর্ঘ ৬ বছর পারিশ্রমিক ছাড়াই শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান। পায়ে হেঁটে প্রতিদিন ৮ মাইল রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত। কোনো কিছুই লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। দরিদ্র কৃষক বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জন্ম: শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৫২সালের ৩১ আগষ্ট মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজারস্থ বাগীরপার গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নরেন্দ্র কুমার দাস, মাতা কুঠি বালা দাস।  ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস চতুর্থ সন্তান।
পারিবারিক: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ৪ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তারা হলেন – মৌসুমী দাস, মৌলী রাণী দাস, উর্মিলা রাণী দাস, পিনাকী রাণী দাস এবং নিরুপম দাস।
শিক্ষাজীবন: নিরঞ্জন চন্দ্র দাস নিজ গ্রামের ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে।  ওইস্কুল থেকে তিনি ১৯৬১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ হতে ব্যাকরণ তীর্থ উপাধি লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন : 
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৮১ সালের ০১ জানুয়ারি  মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। সেখানে ৩১ বছর ৮ মাস চাকুরীর পর ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং এই বিদ্যালয় থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
শৈশব: আদর্শ শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের জীবন বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়।
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৬১ সালে নিজ গ্রাম ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় এক বছর গ্যাপ দেন।  পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন বিদ্যালয় থেকে ৮ কি.মি. দূরবর্তী আমতৈল গ্রামে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ওই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জীবিকার তাগিদে এক মুদির দোকানে চাকুরী করতে বাধ্য হন। ৪ বছর মুদি দোকানে চাকুরীর পর সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে মুদির দোকানে চাকুরীর পাশাপাশি কিছু বই কিনে লেখাপড়া পুনরায় শুরু করেন। দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রমের পর গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরে আসলে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এছাড়া শরণার্থী শিবির থেকে আসার পর পাশর্^বর্তী গ্রাম মালিশ্রীতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তার সহযোগী হরেন্দ্র দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-বেতের একটি ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠদান শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান এবং পরবর্তীতে ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষকতা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
১. নিরঞ্জন চন্দ্র দাস শিক্ষকতা জীবনের শুরুর দিকে গাড়ির ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে প্রতিদিন প্রায় ৮ মাইলের মত রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। একদিন বর্ষাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কর্মস্থল হতে বাড়ি ফেরার সময় বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে নালার মধ্যে পড়ে যান এবং সবাই সাঁতরে বাড়ি ফিরেন।
২. একবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একদল শিক্ষার্থী কোন এক অজ্ঞাত কারনে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তাঁর সহকর্মী ইমাম উদ্দিন সাহেবকে সাথে নিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন এবং সে সকল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বড়লেখা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
কিছু নীতি নৈতিকতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা দিক দিয়ে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস সকলের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট, সততা, আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস এর দীর্ঘায়ূ কামনা করি। চন্দ্র দাস
আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ
ফয়সল আহমদ রুহেল :
চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকার তাগিদে মুদির দোকানে চাকুরী করতে হয়। বেতনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে বই কেনা।  দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রম আর রাত জেগে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া। শিক্ষাজীবনে থেকেছেন অন্যের বাড়িতে লজিং। দীর্ঘ ৬ বছর পারিশ্রমিক ছাড়াই শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান। পায়ে হেঁটে প্রতিদিন ৮ মাইল রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত। কোনো কিছুই লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। দরিদ্র কৃষক বাবাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে দেখে সফল হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
জন্ম : শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৫২সালের ৩১ আগষ্ট মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজারস্থ বাগীরপার গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নরেন্দ্র কুমার দাস, মাতা কুঠি বালা দাস।  ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস চতুর্থ সন্তান।
পারিবারিক : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ৪ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তারা হলেন – মৌসুমী দাস, মৌলী রাণী দাস, উর্মিলা রাণী দাস, পিনাকী রাণী দাস এবং নিরুপম দাস।
শিক্ষাজীবন: নিরঞ্জন চন্দ্র দাস নিজ গ্রামের ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৭ সালে।  ওইস্কুল থেকে তিনি ১৯৬১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ হতে ব্যাকরণ তীর্থ উপাধি লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন : 
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৮১ সালের ০১ জানুয়ারি  মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। সেখানে ৩১ বছর ৮ মাস চাকুরীর পর ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং এই বিদ্যালয় থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।
শৈশব : আদর্শ শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাসের জীবন বিভিন্ন চড়াই উৎরাই এর মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়।
নিরঞ্জন চন্দ্র দাস ১৯৬১ সালে নিজ গ্রাম ‘বাগীরপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার তেমন সুযোগ সুবিধা না থাকায় এক বছর গ্যাপ দেন।  পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন বিদ্যালয় থেকে ৮ কি.মি. দূরবর্তী আমতৈল গ্রামে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ওই স্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে ৯ম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর চরম দারিদ্রতার কারনে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জীবিকার তাগিদে এক মুদির দোকানে চাকুরী করতে বাধ্য হন। ৪ বছর মুদি দোকানে চাকুরীর পর সঞ্চিত কিছু টাকা দিয়ে মুদির দোকানে চাকুরীর পাশাপাশি কিছু বই কিনে লেখাপড়া পুনরায় শুরু করেন। দোকানে দিনভর কঠোর পরিশ্রমের পর গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
১৯৭০ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ফিরে আসলে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারনে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। এছাড়া শরণার্থী শিবির থেকে আসার পর পাশর্^বর্তী গ্রাম মালিশ্রীতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তার সহযোগী হরেন্দ্র দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-বেতের একটি ঘর তৈরি করে সেখানে পাঠদান শুরু করেন। ৬ বছর সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যান এবং পরবর্তীতে ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
শিক্ষকতা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
১. নিরঞ্জন চন্দ্র দাস শিক্ষকতা জীবনের শুরুর দিকে গাড়ির ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে প্রতিদিন প্রায় ৮ মাইলের মত রাস্তা অতিক্রম করে কর্মস্থলে যাতায়াত করতেন। একদিন বর্ষাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কর্মস্থল হতে বাড়ি ফেরার সময় বাঁশের সাঁকো ভেঙ্গে নালার মধ্যে পড়ে যান এবং সবাই সাঁতরে বাড়ি ফিরেন।
২. একবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একদল শিক্ষার্থী কোন এক অজ্ঞাত কারনে পরীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস তাঁর সহকর্মী ইমাম উদ্দিন সাহেবকে সাথে নিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেন এবং সে সকল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বড়লেখা উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
কিছু নীতি নৈতিকতা, সততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা দিক দিয়ে নিরঞ্জন চন্দ্র দাস সকলের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট, সততা, আদর্শের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই ত্যাগী আদর্শবান শিক্ষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস এর দীর্ঘায়ূ কামনা করি।