ঢাকা ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের মূল ব্যাধি হচ্ছে ঘুষ ও দূর্নীতি – আবদুল হামিদ মাহবুব

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:০৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৫০ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শেখ হাসিনার শাসনামলের অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দলীয় সভানেত্রীর পদে থেকে গত সাড়ে পনেরো বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব করে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলেন। দেশের সকল ক্ষেত্রকে দলীয়করণ করেছেন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুত্র থেকে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতা আন্দোলনে তার পতন হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে পুলিশ ও তার দলের সশস্ত্র ক্যাডার দিয়ে প্রায় হাজার মানুষ খুন করেছেন। তাদের মধ্যে শিশু নারী ছাত্র ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষ ছাড়াও পুলিশের সদস্যরাও আছে। আহত করেছে দশ হাজারের অধিক ছাত্র-জনতাকে। তারপরও শেষরক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার পতন ঘটেছে। তিনি নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে ভারতে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর এটাই আমার প্রথম লেখা। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠণ হয়েছে। ৮ আগস্ট এই সরকার শপথ নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। এই নতুন সরকারকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতার অনুরোধে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্বের সবচে সম্মানীত পুরস্কার নোবেলপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সাথে যাদেরকে উপদেষ্টা পরিষদে নেওয়া হয়েছে তারা সকলেই দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিত্ব। সারাদেশের মানুষ এখন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা দেশ কেমন চালান কোথায় নিয়ে যান সেটাই দেখার বিষয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচ্ছিন্ন ভাবে জাতির সামনে কিছু কিছু কথা বলেছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন তিনি ২৫ আগস্ট। আমি এই লেখায় নিজের কোনো পর্যালোচনা কিংবা বিশ্লেষণ না দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পুরো ভাষণটির (আমার বিবেচনায়) গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশগুলো রেখে দিচ্ছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দেশবাসীকে ছাত্র-জনতার স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুর্নীতি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে শেষ করেছে। যেখানে স্বৈরাচারের পিওনও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করেছে নির্বিবাদে। শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজার খাতে লুটপাট, অবাধ সম্পদ পাচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। ক্ষমতা কুক্ষিগত করাতে ফ্যাসিবাদী সরকার খর্ব করেছে জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ও অধিকার। দুঃশাসন, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যম জনসুরক্ষা বিপন্ন করেছে। জনগণকে নির্যাতন ও বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রজনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আপনাদের সবাইকে এই স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, তাদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন। তরুণরা একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার-প্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক।

 

এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলবো আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মুখে ফেলা, মামলার জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা তা থেকে বের হতে হবে।
রাতারাতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়। তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদেরকে হাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেনেছেন জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগ ও ভয়াবহ যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিলো তার অধিকাংশ প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবী সকল মামলার ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী ২ জন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।

ড. ইউনূস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রসশাসন চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছি। আর প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

 

তিনি বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আনতে আমরা উদ্যোগ সচল করেছি। ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হাবে। শেয়ার বাজার, পরিবহণ খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়নাঘরের যত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল সংস্থা এবং জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের উপরও দলীয়করণ ও নির্যাতনের বোঝা চাপিয়েছিল। জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবন্ধ। তথ্যের প্রবাহে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের আইনগুলো চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

বিদেশি সংবাদ কর্মীদের এদেশে আসার উপর যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল ইতোমধ্যে আমরা তা তুলে নিয়েছি। বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছে বিগত সরকার। আমরা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেবো। এটা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আপনারা জানেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সাথে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

এবার কৃষি খাতের কথা একটু বলি। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সকল পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতও অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হার। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাট যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব।

তিনি বলেন, শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। নদী-খালা, খাল-বিল, পাহাড়, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘমেয়াদী টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সাথে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে। এই কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাস্ট্র ও জাতিসংঘ বর্তমান সরকারের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমরা সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। আমরা মানবাধিকার আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাবে।
আমরা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের নিশ্চিত করা হবে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সকলেই এদেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সকলের নাগরিক অধিকারসহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।

বন্যাকবলিত এলাকার সকল মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সঠিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের যত কার্যক্রম আছে তাদের সচল করেছি। ইতিমধ্যে উপদেষ্টাবৃন্দ বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব নিয়ে এলাকায় গেছেন। আমার কার্যালয়ে একটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় কি স্থির করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবি, র‌্যাবকে গুম, নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদেরও কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাই না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারো হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনো বাহিনীর, পুলিশের, র‌্যাবের কোনো সদস্য হত্যাকা-, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হবার সাহস না কারে। তাদের কাছে হুকুম যত বড় কর্তৃপক্ষের কাছ থোকই আসুক না কেন তারা তা উপেক্ষা করবে। আমি দেশরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য সকল বাহিনীতে নির্দেশ দিয়েছি তারা তাদের মধ্যে যারা হত্যাকা-, গুম, খুন বা শারীরিক, মানসিক অত্যাচারে সরাসরি জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে। যারা গুম হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। তাদের পরিবারসমূহকে সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তাদের জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাবো। আমি সকল দেশরক্ষা বাহিনী এ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের উপর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সকল নির্দেশ দিয়েছি।

গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর, প্রকল্পের নামে লুটপাট ইত্যাদি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সকল প্রকার আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব সমূহ প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরকেও অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেন। তাদেরকেও বলেছি, যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তা যেমন একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়, তেমনি এটি জাতির জীবনে মস্তবড় সুযোগ। এই সুযোগকে যেন পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি সেজন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। এই গণ-অভ্যুত্থানে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা তাদের অংশগ্রহণ চাই। আমাদের একটি লক্ষ্য হবে বিদেশগামী এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সাথে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থানরত সকলের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এই অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে। সেটা সম্বন্ধে আমরা তাদের পরামর্শ নেব।
সারাদেশ ঘুষের মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত। কীভাবে ঘুষ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি তার জন্য আমাদের পরামর্শ দিন। শুধু এই কাজটা নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই আমি মনে করি দেশের জন্য এই সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছে বলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি কথা দিচ্ছি, এ ব্যাপারে আমি আমার সর্বশক্তি নিয়োজিত করবো। আমাদের দায়িত্ব দেশের সকল মানুষকে একটি পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকার। বাকবিতন্ডা হবে। কিন্তু আমরা ভাই-বোন, আমরা বাবা-মা। আমরা কেউ কারো শত্রু না। কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করবো না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রু মনে করবেন না। কাউকে লিঙ্গের কারণে শত্রু মনে করবে না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারও উপারে, কেউ কারও নিচে না। এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে সর্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশেপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিত আকারে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নয়। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করবো। কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না। আমাদের কাজে রাখা দরকার। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এসময় তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহবানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের উপদেষ্টাম-লীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছাড় দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না। আমরা আপনাদের সকলের দোয়া চাই। যে যে কদিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টাম-লীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো যারা দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্য মতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব। শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই আমরা এই অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর একটি শ্রদ্ধেয় সকল দিকে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।
প্রধান উদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মূল কথাগুলো এই। তিনি জনগণের পরামর্শও চেয়েছেন। আমি একজন বয়স্ক সাংবাদিক ও ছড়াকার হিসাবে পরামর্শ দিচ্ছি, দেশের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর টেবিলের উপর রাখার জন্য দুটি শ্লোগান দিলাম। শ্লোগান-১. ঘুষ খেলে খাবে গু/ সব জনে দেবে থু। শ্লোগান-২. দূর্নীতি করবে যে/ গণধোলাই খাবে সে। আমি মনে করি এই দেশের মূল ব্যাধি হচ্ছে ঘুষ ও দূর্নীতি। ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধ হয়ে গেলে দেশটা সোনার দেশ হয়ে যাবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ছড়াকার। ahmahbub@gmail.com,জ

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশের মূল ব্যাধি হচ্ছে ঘুষ ও দূর্নীতি – আবদুল হামিদ মাহবুব

আপডেট সময় ০৫:০৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের শেখ হাসিনার শাসনামলের অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দলীয় সভানেত্রীর পদে থেকে গত সাড়ে পনেরো বছর ধরে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব করে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিলেন। দেশের সকল ক্ষেত্রকে দলীয়করণ করেছেন। অবশেষে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুত্র থেকে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতা আন্দোলনে তার পতন হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে পুলিশ ও তার দলের সশস্ত্র ক্যাডার দিয়ে প্রায় হাজার মানুষ খুন করেছেন। তাদের মধ্যে শিশু নারী ছাত্র ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষ ছাড়াও পুলিশের সদস্যরাও আছে। আহত করেছে দশ হাজারের অধিক ছাত্র-জনতাকে। তারপরও শেষরক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তার পতন ঘটেছে। তিনি নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ফেলে রেখে নিজে ভারতে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর এটাই আমার প্রথম লেখা। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠণ হয়েছে। ৮ আগস্ট এই সরকার শপথ নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। এই নতুন সরকারকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। ছাত্র-জনতার অনুরোধে এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্বের সবচে সম্মানীত পুরস্কার নোবেলপ্রাপ্ত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সাথে যাদেরকে উপদেষ্টা পরিষদে নেওয়া হয়েছে তারা সকলেই দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিত্ব। সারাদেশের মানুষ এখন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা দেশ কেমন চালান কোথায় নিয়ে যান সেটাই দেখার বিষয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচ্ছিন্ন ভাবে জাতির সামনে কিছু কিছু কথা বলেছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন তিনি ২৫ আগস্ট। আমি এই লেখায় নিজের কোনো পর্যালোচনা কিংবা বিশ্লেষণ না দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পুরো ভাষণটির (আমার বিবেচনায়) গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশগুলো রেখে দিচ্ছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে দেশবাসীকে ছাত্র-জনতার স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুর্নীতি দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে শেষ করেছে। যেখানে স্বৈরাচারের পিওনও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করেছে নির্বিবাদে। শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজার খাতে লুটপাট, অবাধ সম্পদ পাচার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। ক্ষমতা কুক্ষিগত করাতে ফ্যাসিবাদী সরকার খর্ব করেছে জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ও অধিকার। দুঃশাসন, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যম জনসুরক্ষা বিপন্ন করেছে। জনগণকে নির্যাতন ও বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রজনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আপনাদের সবাইকে এই স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, তাদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন। তরুণরা একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকার-প্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটিই। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক।

 

এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলবো আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মুখে ফেলা, মামলার জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা তা থেকে বের হতে হবে।
রাতারাতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সকল ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্ব দরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়। তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদেরকে হাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেনেছেন জুলাই-আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানে বলপ্রয়োগ ও ভয়াবহ যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এই প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিলো তার অধিকাংশ প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবী সকল মামলার ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সকল আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী ২ জন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই কার্যক্রমের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।

ড. ইউনূস বলেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রসশাসন চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছি। আর প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সকলকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

 

তিনি বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আনতে আমরা উদ্যোগ সচল করেছি। ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হাবে। শেয়ার বাজার, পরিবহণ খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়নাঘরের যত চরম ঘৃণ্য সকল অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল সংস্থা এবং জনগণের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের উপরও দলীয়করণ ও নির্যাতনের বোঝা চাপিয়েছিল। জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবন্ধ। তথ্যের প্রবাহে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে এধরনের আইনগুলো চিহ্নিত করে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

বিদেশি সংবাদ কর্মীদের এদেশে আসার উপর যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল ইতোমধ্যে আমরা তা তুলে নিয়েছি। বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছে বিগত সরকার। আমরা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেবো। এটা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আপনারা জানেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সাথে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।

ড. ইউনূস বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

এবার কৃষি খাতের কথা একটু বলি। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সকল পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতও অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হার। এই খাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘাট যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব।

তিনি বলেন, শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। নদী-খালা, খাল-বিল, পাহাড়, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘমেয়াদী টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানি বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সাথে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে। এই কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাস্ট্র ও জাতিসংঘ বর্তমান সরকারের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমরা সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। আমরা মানবাধিকার আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাবে।
আমরা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের নিশ্চিত করা হবে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সকলেই এদেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সকলের নাগরিক অধিকারসহ অন্যান্য সকল অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।

বন্যাকবলিত এলাকার সকল মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সঠিক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারের যত কার্যক্রম আছে তাদের সচল করেছি। ইতিমধ্যে উপদেষ্টাবৃন্দ বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব নিয়ে এলাকায় গেছেন। আমার কার্যালয়ে একটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় কি স্থির করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবি, র‌্যাবকে গুম, নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদেরও কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাই না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারো হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনো বাহিনীর, পুলিশের, র‌্যাবের কোনো সদস্য হত্যাকা-, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হবার সাহস না কারে। তাদের কাছে হুকুম যত বড় কর্তৃপক্ষের কাছ থোকই আসুক না কেন তারা তা উপেক্ষা করবে। আমি দেশরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য সকল বাহিনীতে নির্দেশ দিয়েছি তারা তাদের মধ্যে যারা হত্যাকা-, গুম, খুন বা শারীরিক, মানসিক অত্যাচারে সরাসরি জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে। যারা গুম হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। তাদের পরিবারসমূহকে সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা আমার নেই। তাদের জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাবো। আমি সকল দেশরক্ষা বাহিনী এ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের উপর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সকল নির্দেশ দিয়েছি।

গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর, প্রকল্পের নামে লুটপাট ইত্যাদি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সকল প্রকার আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব সমূহ প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরকেও অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেন। তাদেরকেও বলেছি, যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তা যেমন একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়, তেমনি এটি জাতির জীবনে মস্তবড় সুযোগ। এই সুযোগকে যেন পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি সেজন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। এই গণ-অভ্যুত্থানে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা তাদের অংশগ্রহণ চাই। আমাদের একটি লক্ষ্য হবে বিদেশগামী এবং প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সাথে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিদেশে অবস্থানরত সকলের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এই অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে। সেটা সম্বন্ধে আমরা তাদের পরামর্শ নেব।
সারাদেশ ঘুষের মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত। কীভাবে ঘুষ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি তার জন্য আমাদের পরামর্শ দিন। শুধু এই কাজটা নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই আমি মনে করি দেশের জন্য এই সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছে বলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি কথা দিচ্ছি, এ ব্যাপারে আমি আমার সর্বশক্তি নিয়োজিত করবো। আমাদের দায়িত্ব দেশের সকল মানুষকে একটি পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকার। বাকবিতন্ডা হবে। কিন্তু আমরা ভাই-বোন, আমরা বাবা-মা। আমরা কেউ কারো শত্রু না। কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করবো না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রু মনে করবেন না। কাউকে লিঙ্গের কারণে শত্রু মনে করবে না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারও উপারে, কেউ কারও নিচে না। এই ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে সর্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশেপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিত আকারে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নয়। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করবো। কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করবেন না। আমাদের কাজে রাখা দরকার। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এসময় তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।
একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহবানে আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করবো। আমাদের উপদেষ্টাম-লীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছাড় দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহবানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাবো যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।

তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাবো, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না। আমরা আপনাদের সকলের দোয়া চাই। যে যে কদিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টাম-লীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো যারা দেশের এই সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্য মতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব। শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই আমরা এই অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেবো না। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর একটি শ্রদ্ধেয় সকল দিকে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।
প্রধান উদেষ্টার জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মূল কথাগুলো এই। তিনি জনগণের পরামর্শও চেয়েছেন। আমি একজন বয়স্ক সাংবাদিক ও ছড়াকার হিসাবে পরামর্শ দিচ্ছি, দেশের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর টেবিলের উপর রাখার জন্য দুটি শ্লোগান দিলাম। শ্লোগান-১. ঘুষ খেলে খাবে গু/ সব জনে দেবে থু। শ্লোগান-২. দূর্নীতি করবে যে/ গণধোলাই খাবে সে। আমি মনে করি এই দেশের মূল ব্যাধি হচ্ছে ঘুষ ও দূর্নীতি। ঘুষ-দূর্নীতি বন্ধ হয়ে গেলে দেশটা সোনার দেশ হয়ে যাবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ছড়াকার। ahmahbub@gmail.com,জ