ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
১ কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে নিখোঁজ জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার দাখিলে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক শ্রীমঙ্গলের ডোবাগাঁও মাদরাসার আব্দুর রহিম কোটচাঁদপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ উদযাপিত ভিসা প্রতারণার ফাঁদে মৌলভীবাজার মৌলভীবাজারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর বিভিন্ন দাবিতে স্মরকলিপি তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা” দুর্গাপুরে বিএনপিনেতা আবু বক্কর সিদ্দিক মৌলভীবাজারে গ্রীণ কেয়ার ফাউন্ডেশনের মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ কোটচাঁদপুর সিরাজুল হক সিরুমিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত কোটচাঁদপুরের বলুহর বাওড় পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল

ভিসা প্রতারণার ফাঁদে মৌলভীবাজার

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:০২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে

বহু পূর্ব হতেই মৌলভীবাজার তথা সিলেটের মানুষ লন্ডনে যাবার জন্য জন্মের পর থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে। মোটামুটি কলেজের এইচ এস সি শেষ করতে পারলে পড়ালেখা নিয়ে অধিকাংশই আর পড়ার দিকে আগাতে চায় না। অনেকেই বিয়ে করে, অনেকে আবার ছাত্র ভিসায়, অনেকেই ওয়ার্ক পারমিটে বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। এখানে বিসিএস এর পরীক্ষা কিংবা বিসিএস ক্যাডার হওয়া বা বড় কোন চাকুরীজীবী হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই পোষণ করেন না। বিসিএস কিংবা চাকুরীজীবির চেয়েও সম্মান আর গৌরব হচ্ছে লন্ডন-আমেরিকা বা প্রবাসের বাসিন্দা হওয়া। আমাদের এই মনোভাবের কারনে দেশে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম আর এই জন্যই চাকরীর বাজারে আমাদের মূল্য অনেক নগন্য ও সীমিত।

সিলেটিদের এই স্বপ্নকে পুঁজি ও হাতিয়ার বানিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল এক আদম ব্যবসার বা দালালের চক্র। যারা মানুষকে লন্ডন কিংবা বিদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি আদালতে ও থানায় এ সংক্রান্ত ভিসা জালিয়াতি ও প্রতারনার কারণে দায়ের হয়েছে প্রচুর মামলা। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিচার সালিশতো আছেই।

মামলার ঘটনার বিষয় প্রায় একই। যেমন : দালাল চক্র ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা অন্য কোনো দেশের ভিসা দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়েছে, টাকা নেওয়ার পরে জ্বাল ভিসা বা কস লেটার ইস্যু করে আবার অনেককে কস লেটার বা ভিসা দিতে পারে নাই। এখন দালাল চক্র কোনো ভুক্তভোগীকে ভিসা কিংবা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। অনেক দালাল প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে। অধিকাংশ প্রতারনা এবং আত্মসাৎ দেশে-বিদেশের লোক মিলে যৌথভাবে করা হচ্ছে। বিদেশে যার মাধ্যমে ভিসা দেওয়ার কথা ছিলো সে দেশে থাকা তার কোনো আত্মীয় কিংবা এজেন্সি লোকের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে। অনেকেই নগদ টাকা দিয়েছে, আবার অনেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারক চক্রকে টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমানে মামলা দায়ের করা হলেও মূল প্রতারক প্রবাসে থাকার কারণে টাকা উদ্ধার কিংবা তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না বা জোড়ালো আইনগত প্রদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভপর হচ্ছেনা।

অনেক ভুক্তভোগী জমি-জমা বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন আবার অনেকে হারিয়েছেন তাদের শেষ সম্বল। ভুক্তভোগীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে এবং অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ প্রতারক চক্র অসহায় মানুষগুলোর নিকট থেকে টাকা নিয়ে ঠিকই প্রবাসে আরামে জীবন যাপন করছেন। আবার অনেকেই আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে বিলাসিতা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এরা মানুষরূপী অমানুষ।

যেহেতু দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়াই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে সবাই বিবেচনা করে থাকেন, সেহেতু আপনাদের দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাবার সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা উচিত।

(1) আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করবেন। চুক্তির মধ্যে অবশ্যই ভিসা দাতা, তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ বিশেষ করে তার বউ, মা, ভাই যেকোনো একজনসহ পক্ষ ভুক্ত করবেন।

(2) যদি খরচ বাবদ বিচার পূর্বে কিছু টাকা দিতেই হয় তাহলে অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে ভিসা দাতাকে টাকা পরিশোধ করবেন। যিনি আপনাকে বিদেশ নিবেন যদি তিনি প্রবাসে থাকেন তাহলে তার দেশে থাকা ভাই/মা/বাবা কিংবা বউয়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পরিশোধ করবেন।

(3) ভিসা না হওয়ার পূর্বে এবং ভিসা হাতে না পেয়ে কখনোই সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করবেন না। যদি ভিসা প্রদান করে সেক্ষেত্রে ভিসাটি সঠিক কিনা যাচাই করে নিবেন।

(4) চুক্তি সম্পাদনকারীর সময় ভিসা দাতার কিংবা তার পরিবারের নিকট হইতে এই মর্মে একটি চেক গ্রহণ করবেন যে, যদি সে বিদেশে নিতে না পারে সেক্ষেত্রে ইসুকৃত চেক এর মাধ্যমে আপনার পরিশোধীত টাকা ফেরত প্রদান করবে।

(5) যিনি প্রবাস হইতে আপনাকে ভিসা প্রদান করবেন তার ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এর কপি আপনার সংগ্রহে রাখবেন।

বিদেশ যাবেন সমস্যা নেই পড়াশুনাটা শেষ করে যেতে পারেন তাতে আপনার নিজের এবং দেশের উপকারে আসবে , ৩০-৪০ লাখ টাকা খরচ করে কিংবা ঝুঁকির মধ্যে না পরে বেদেশের চিন্তা না করে এই টাকা দেশে ইনভেস্ট করতে পারেন। বিদেশ যদি যেতেই হয় বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, দালালের খপ্পরে পড়ে সম্ভল যাতে না হারাতে হয় লক্ষ্য রাখবেন। সরকারের উচিত বিদেশগামী বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে যারা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন তাদের জন্য অচিরেই একটি নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহন করে দেওয়া এবং দালালের লাগাম টেনে ধরা।

এড. নিয়ামুল হক
অতিরিক্ত পিপি, মৌলভীবাজার জজ কোর্ট।
০১৭১৭-৪৯০৮৮০

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ভিসা প্রতারণার ফাঁদে মৌলভীবাজার

আপডেট সময় ০৮:০২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

বহু পূর্ব হতেই মৌলভীবাজার তথা সিলেটের মানুষ লন্ডনে যাবার জন্য জন্মের পর থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে। মোটামুটি কলেজের এইচ এস সি শেষ করতে পারলে পড়ালেখা নিয়ে অধিকাংশই আর পড়ার দিকে আগাতে চায় না। অনেকেই বিয়ে করে, অনেকে আবার ছাত্র ভিসায়, অনেকেই ওয়ার্ক পারমিটে বিদেশে পাড়ি জমাতে চায়। এখানে বিসিএস এর পরীক্ষা কিংবা বিসিএস ক্যাডার হওয়া বা বড় কোন চাকুরীজীবী হওয়ার স্বপ্ন অনেকেই পোষণ করেন না। বিসিএস কিংবা চাকুরীজীবির চেয়েও সম্মান আর গৌরব হচ্ছে লন্ডন-আমেরিকা বা প্রবাসের বাসিন্দা হওয়া। আমাদের এই মনোভাবের কারনে দেশে আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম আর এই জন্যই চাকরীর বাজারে আমাদের মূল্য অনেক নগন্য ও সীমিত।

সিলেটিদের এই স্বপ্নকে পুঁজি ও হাতিয়ার বানিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল এক আদম ব্যবসার বা দালালের চক্র। যারা মানুষকে লন্ডন কিংবা বিদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি আদালতে ও থানায় এ সংক্রান্ত ভিসা জালিয়াতি ও প্রতারনার কারণে দায়ের হয়েছে প্রচুর মামলা। তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিচার সালিশতো আছেই।

মামলার ঘটনার বিষয় প্রায় একই। যেমন : দালাল চক্র ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা অন্য কোনো দেশের ভিসা দেওয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা নিয়েছে, টাকা নেওয়ার পরে জ্বাল ভিসা বা কস লেটার ইস্যু করে আবার অনেককে কস লেটার বা ভিসা দিতে পারে নাই। এখন দালাল চক্র কোনো ভুক্তভোগীকে ভিসা কিংবা টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। অনেক দালাল প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে। অধিকাংশ প্রতারনা এবং আত্মসাৎ দেশে-বিদেশের লোক মিলে যৌথভাবে করা হচ্ছে। বিদেশে যার মাধ্যমে ভিসা দেওয়ার কথা ছিলো সে দেশে থাকা তার কোনো আত্মীয় কিংবা এজেন্সি লোকের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে। অনেকেই নগদ টাকা দিয়েছে, আবার অনেকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারক চক্রকে টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমানে মামলা দায়ের করা হলেও মূল প্রতারক প্রবাসে থাকার কারণে টাকা উদ্ধার কিংবা তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না বা জোড়ালো আইনগত প্রদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভপর হচ্ছেনা।

অনেক ভুক্তভোগী জমি-জমা বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন আবার অনেকে হারিয়েছেন তাদের শেষ সম্বল। ভুক্তভোগীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে এবং অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ প্রতারক চক্র অসহায় মানুষগুলোর নিকট থেকে টাকা নিয়ে ঠিকই প্রবাসে আরামে জীবন যাপন করছেন। আবার অনেকেই আলিশান বাড়ি নির্মাণ করে বিলাসিতা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এরা মানুষরূপী অমানুষ।

যেহেতু দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়াই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে সবাই বিবেচনা করে থাকেন, সেহেতু আপনাদের দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাবার সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা উচিত।

(1) আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করবেন। চুক্তির মধ্যে অবশ্যই ভিসা দাতা, তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ বিশেষ করে তার বউ, মা, ভাই যেকোনো একজনসহ পক্ষ ভুক্ত করবেন।

(2) যদি খরচ বাবদ বিচার পূর্বে কিছু টাকা দিতেই হয় তাহলে অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে ভিসা দাতাকে টাকা পরিশোধ করবেন। যিনি আপনাকে বিদেশ নিবেন যদি তিনি প্রবাসে থাকেন তাহলে তার দেশে থাকা ভাই/মা/বাবা কিংবা বউয়ের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পরিশোধ করবেন।

(3) ভিসা না হওয়ার পূর্বে এবং ভিসা হাতে না পেয়ে কখনোই সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করবেন না। যদি ভিসা প্রদান করে সেক্ষেত্রে ভিসাটি সঠিক কিনা যাচাই করে নিবেন।

(4) চুক্তি সম্পাদনকারীর সময় ভিসা দাতার কিংবা তার পরিবারের নিকট হইতে এই মর্মে একটি চেক গ্রহণ করবেন যে, যদি সে বিদেশে নিতে না পারে সেক্ষেত্রে ইসুকৃত চেক এর মাধ্যমে আপনার পরিশোধীত টাকা ফেরত প্রদান করবে।

(5) যিনি প্রবাস হইতে আপনাকে ভিসা প্রদান করবেন তার ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এর কপি আপনার সংগ্রহে রাখবেন।

বিদেশ যাবেন সমস্যা নেই পড়াশুনাটা শেষ করে যেতে পারেন তাতে আপনার নিজের এবং দেশের উপকারে আসবে , ৩০-৪০ লাখ টাকা খরচ করে কিংবা ঝুঁকির মধ্যে না পরে বেদেশের চিন্তা না করে এই টাকা দেশে ইনভেস্ট করতে পারেন। বিদেশ যদি যেতেই হয় বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন, দালালের খপ্পরে পড়ে সম্ভল যাতে না হারাতে হয় লক্ষ্য রাখবেন। সরকারের উচিত বিদেশগামী বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে যারা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন তাদের জন্য অচিরেই একটি নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহন করে দেওয়া এবং দালালের লাগাম টেনে ধরা।

এড. নিয়ামুল হক
অতিরিক্ত পিপি, মৌলভীবাজার জজ কোর্ট।
০১৭১৭-৪৯০৮৮০