সালিশে চুর অপবাদ ও অর্থদন্ড কৃষকের আত্মহত্যা..সংবাদ সম্মেলনে ন্যায় বিচারের দাবি
- আপডেট সময় ০৯:৫০:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৮৮ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজার থেকে: ইউনিয়ন পরিষদে শালিসে ছেলেকে একতরফা রায়ে চুর অপবাদ দিয়ে অর্থদন্ড। এরই সাথে জনসম্মুখে পিতা ও পরিবারের সদস্যদের নানা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে গালমন্দ। এমন মিথ্যা অপবাদ ও অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন বর্গাচাষী কৃষক ধন খা। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দায়ের করা মামলায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন (৪৫),সদস্য মহসিন (৪২)সহ এজহারভুক্ত ৬ জন আসামীকে পলাতক অবস্থায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। এর মধ্যে জামিনে বের হওয়া এক আসামীসহ অন্যান্য আসামী প্রতিনিয়তই প্রাণ নাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছেন।
(বৃহস্পতিবার) বিকেলে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের আটঘর মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ধন খা’র পরিবারের সদস্যরা এমন অভিযোগ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের আটঘর মাঝপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ধন খা’র ছেলে আরব জানান আমরা অত্যন্ত অসহায় নিরিহ কৃষক ও দিনমজুর পরিবারের সন্তান। আমরা দিনমজুরী ও কৃষিজমি বর্গা দিয়ে চাষাবাদ করে জীবন যাপন করলেও আমাদের নিজ এলাকায় সৎ,সরল,স্বচ্ছ ও ন্যায় পরায়ণ মানুষ হিসেবে আমাদের পরিবার ও গোষ্ঠীর সুনাম ও সম্মান রয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আনুষ্ঠানিক সালিশ ডেকে অন্যায়ভাবে এক তরফাভাবে আমাকে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় ও আমার পিতা ধন খা কে নানা হেও প্রতিপন্ন কথা বলে অপমানের কারণে ভোরেই সালিশকারীর বাড়ির গ্রেইটের সামনে কাঁঠাল গাছে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই গরু চুরি নাটক সাজানোর অন্যতম হোতা আমাদের এলাকার জোয়াড়ি ও নানা অপকর্মের হোতা ইউছুফ। এর কারণ ইউছুফের ভাতিজা ও মামাত ভাইকে আমি চুরি করার ঘটনায় প্রমাণিতভাবে ধরে ফেলায় সে প্রতিশোধের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে হাত করে আমাদেরকে ঘায়েল করার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত থাকে এবং সুযোগ বুঝে অত্যন্ত সু-পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটায়। কয়েক দিন আগে ইউছুফের ভাতিজা হাবিবুর আমাদের ঘর থেকে আট হাজার টাকা চুরি করে। এটা দেখে ফেলে এবং হাবিবের কাছ থেকে ওই টাকা ফেরত আনা হয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই ইউছুফ গরু চুরির পরিকল্পিত নাটক সাজায়।
আমার মামাতো বোনের স্বামী রুপন মিয়া শ্রীমঙ্গল মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাকে গরু চুরি সাথে জড়িত সন্দেহে তার আত্মীয় স্বজনের বাড়িঘর তল্লাশি করতে থাকে। শ্রীমঙ্গলের মির্জাপুর ইউনিয়নের পাচাউন গ্রাম থেকে অক্টোবরের শেষের দিকে তিনটি গরু চুরি হয়। আমাদের বাড়িতে ৩১ অক্টোবর বেড়াতে আসেন আমার মামাত বোন ইমা বেগম। তার স্বামী গরু চুরি করেছে সন্দেহে ইউছুফ,মহসীন,জাকির,মুফতিসহ কয়েকজন আমাদেও বাড়িতে গিয়ে বার বার অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তারা সেখানে গরু পাননি। ৩১ অক্টোবর রাতে ইমাকে ইউছুফের বাড়িতে নিয়ে ভয় দেখিয়ে মারধর করে আমি গরু চুরিতে জড়িত ছিলাম বলে স্বীকারোক্তি নেয়। ৩ নভেম্বর ইউনিয়ন মিলনায়তনে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সালিশে আমাকে একতরফা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে চোর সাব্যস্ত করে ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুহেল মিয়া মারধর করে এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশ বৈঠকে কারো কোনো কথা শোনা হয়নি। জরিমানার টাকা সাথে সাথে দেওয়ার জন্যও তাগদা করা হয়।
আমরা বাবা,চাচা ও চাচাত ভাইসহ শালিসে উপস্থিত অন্যরা এই অন্যায় বিচার ও রায়ের প্রতিবাদ জানালে আমার মরহুম পিতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নানা তুচ্ছতাচ্ছিল্য,অপবাদ ও গালমন্দ করা হয়। আমার বাবা একজন ধার্মিক ও সরল মনের সৎ কৃষীজীবী মানুষ। চাপিয়ে দেওয়া এই অন্যায় রায়ে আমার সরলপ্রাণ বাবা মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ওই রাতেও ইউছুফ রায়ের টাকার জন্য আমাদের বাড়িতে আসে এবং চাপদেয়। রায়ের টাকার জন্য নানা ভয়ভীতি দেখায়। কিন্তু আমরা দিনমজুর ও বার্গাচাষী মানুষ এতো টাকা একসাথে জোগাড় করা সাধ্য আমাদের নেই। লোকলজ্জ্বায় তাদের এই চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও অপমানমূলক অপবাদ থেকে বাচঁতে আমার বাবা আত্মহত্যার মাধ্যমে দুনিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।
রায়ের পর ওই রাতেই আমার বাবা ধন খা মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন এবং এই ঘটনার মূলহোতা ইউসুফের বাড়ির সামনেই একটি কাঠাল গাছের সাথে দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আমি বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা করি। মামলানং ৭/৩৩৩, তাং ০৪,১১, ২০২৪ ইং, মামলায় আসামী করা হয় ইউছুফ (৩৫), হাবিব মিয়া(২০),কাছন মিয়া (৪৫), ফরিজা বেগম(৫০), নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন (৪৫), ইউপি সদস্য মহসিন (৪২), মুফতি (৩৫), জাকির হোসেন (৩২)সহ অপ্সাতনামা আরও ২/৩ জনকে। এই মামলার প্রেক্ষিতে ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩। ওদের গ্রেফতারের পর থেকে এজাহারে উল্লেখিত অন্যান্য আসামীসহ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত পাবেল আহমদ পাপলু, রিকান মিয়া,সুহেল মিয়া, রহমত ও জামিনে থাকা ফরিজা বেগম প্রতিনিয়তই আমাদেরকে প্রাণ নাশের নানা হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছে। আমরা অসহায় দিনমজুর পরিবারের লোকজন তাদের ভয়ে চরম ভয়ভীতির মধ্যে দিনকাটাচ্ছি।
এসময় তারা জানান পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবাকে হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা। আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মৃত ধন খা‘র ছেলে তোয়েল খা ও মেয়ে নীলিমা খানম পরীক্ষার ফ্রি না দিতে পারায় পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এছাড়াও আর্থিক অনটনে তাদের পরিবারও চলছেনা। বাবাকে হারিয়ে এখন তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিজু খা,তোফায়েল খা,ভাতিজা আফজাল খা,মেয়ে শামীমা খানম,ভাতিজি নেহারুন খানম,ছেলের বউ তাহমিনা খানমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।