ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারে কালি মন্দিরের নির্মাণ কাজ বন্ধ,পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৫৮ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলা শহরে সরকারি অর্থায়নে শতবর্ষী পুরাতন কালীমন্দির পুনঃনির্মাণে অপরিকল্পিত নির্মাণের অভিযোগে মন্দিরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মালম্বিরা।

জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের সেন্ট্রাল রোডের পুরাতন কালীবাড়ী ভেঙে মন্দির পুনঃনির্মাণ শুরু হয়ে প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দের অর্থে শুধুমাত্র ছাদ ডালাইয়ের কাজ শেষ হয়। পরে পুরাতন কালীবাড়ীর নিজস্ব অর্থায়নে দোতলায় মন্দির ও নিচতলায় দোকানকোটার পরবর্তী কাজ শুরু হয়। কিন্তু এই চলমান কাজে আপত্তি তুলে সদর উপজেলা নির্বাহী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন সুভ্রত সরকার রাজ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। এমন অভিযোগে গত ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে মন্দিরের চলমান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। এই লিখিত নির্দেশের পর পুনঃনির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন কার্যকরী কমিটি। কিন্তু, শুনানির দিন থেকে একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মন্দিরের কাজ বন্ধ থাকায় অনেক নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মালম্বিরা।

মৌলভীবাজার শহরের বেশকয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শহরের নিকটবর্তী ঘড়ুয়া গ্রামের প্রয়াত সুধন রামদাস ১৫ শতক দানকৃত ভূমিতে মনুনদের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পূরাতন কালি মন্দির। কিন্তু মনুনদের ক্রমাগত ভাঙ্গনে অর্ধেক ভূমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমান এই মন্দিরের চারটি দোকানকোঠার ভাড়ায় সেবা পূজার ব্যয় চলতো বলে তারা জানান।

অভিযোগকারী সুভ্রত সরকার রাজ বলেন, ‘আমরা কারো বিপক্ষে নই, কারো শত্রুও নই, কাউকে শত্রু মনেও করিনা। আমাদের চাওয়া শুধু একটাই শাস্ত্রীয়ভাবে মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হউক, কোন দোকানকোঠ নয়। সরকারি অনুদান মন্দিরের জন্য দোকানের জন্য নয়।’

কালীবাড়ীর কার্যকরী কমিটির সভাপতি মনবীর রায় মঞ্জু বলেন, গত ২০১৯ সালে ১৫ নভেম্বর জেলার কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুরাতন কালীবাড়ীতে দোকানকোঠা নিচে রেখে দোতলায় কালিমন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত সর্ব সম্মতিতে গৃহীত হয়। যাতে বড় পরিসরে পূজার্চনা করা যায়। কিন্তু একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, এখানে মন্দির নয় শুধু দোকানকোঠা হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, শীঘ্রই ভক্তবৃন্দের সুবিধার্থে কাজ শুরুর নির্দেশ আসবে বলে আশা করছি।

এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস গত ২৭ অক্টোবর পুরাতন কালী মন্দির নির্মাণে সৃষ্ট সমস্যা গুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ বন্ধ রেখে শুনানি হয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের শরণাপন্ন হলে, বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। ট্রাস্টের সিদ্ধান্তের পর দুপক্ষকে নিয়ে বসবো।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মৌলভীবাজারে কালি মন্দিরের নির্মাণ কাজ বন্ধ,পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

আপডেট সময় ০৯:১৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলা শহরে সরকারি অর্থায়নে শতবর্ষী পুরাতন কালীমন্দির পুনঃনির্মাণে অপরিকল্পিত নির্মাণের অভিযোগে মন্দিরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মালম্বিরা।

জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহরের সেন্ট্রাল রোডের পুরাতন কালীবাড়ী ভেঙে মন্দির পুনঃনির্মাণ শুরু হয়ে প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দের অর্থে শুধুমাত্র ছাদ ডালাইয়ের কাজ শেষ হয়। পরে পুরাতন কালীবাড়ীর নিজস্ব অর্থায়নে দোতলায় মন্দির ও নিচতলায় দোকানকোটার পরবর্তী কাজ শুরু হয়। কিন্তু এই চলমান কাজে আপত্তি তুলে সদর উপজেলা নির্বাহী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন সুভ্রত সরকার রাজ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা। এমন অভিযোগে গত ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে মন্দিরের চলমান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। এই লিখিত নির্দেশের পর পুনঃনির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন কার্যকরী কমিটি। কিন্তু, শুনানির দিন থেকে একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মন্দিরের কাজ বন্ধ থাকায় অনেক নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মালম্বিরা।

মৌলভীবাজার শহরের বেশকয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শহরের নিকটবর্তী ঘড়ুয়া গ্রামের প্রয়াত সুধন রামদাস ১৫ শতক দানকৃত ভূমিতে মনুনদের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পূরাতন কালি মন্দির। কিন্তু মনুনদের ক্রমাগত ভাঙ্গনে অর্ধেক ভূমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমান এই মন্দিরের চারটি দোকানকোঠার ভাড়ায় সেবা পূজার ব্যয় চলতো বলে তারা জানান।

অভিযোগকারী সুভ্রত সরকার রাজ বলেন, ‘আমরা কারো বিপক্ষে নই, কারো শত্রুও নই, কাউকে শত্রু মনেও করিনা। আমাদের চাওয়া শুধু একটাই শাস্ত্রীয়ভাবে মন্দিরের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হউক, কোন দোকানকোঠ নয়। সরকারি অনুদান মন্দিরের জন্য দোকানের জন্য নয়।’

কালীবাড়ীর কার্যকরী কমিটির সভাপতি মনবীর রায় মঞ্জু বলেন, গত ২০১৯ সালে ১৫ নভেম্বর জেলার কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুরাতন কালীবাড়ীতে দোকানকোঠা নিচে রেখে দোতলায় কালিমন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত সর্ব সম্মতিতে গৃহীত হয়। যাতে বড় পরিসরে পূজার্চনা করা যায়। কিন্তু একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, এখানে মন্দির নয় শুধু দোকানকোঠা হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, শীঘ্রই ভক্তবৃন্দের সুবিধার্থে কাজ শুরুর নির্দেশ আসবে বলে আশা করছি।

এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস গত ২৭ অক্টোবর পুরাতন কালী মন্দির নির্মাণে সৃষ্ট সমস্যা গুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কাজ বন্ধ রেখে শুনানি হয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের শরণাপন্ন হলে, বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। ট্রাস্টের সিদ্ধান্তের পর দুপক্ষকে নিয়ে বসবো।