মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেষ মুহূর্তে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
- আপডেট সময় ০৫:৫৬:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
- / ৫৪৪ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজাকে ঘিরে চলছে সাজ সাজ রব। মণ্ডপ, প্রতিমা তৈরির মাঠ ও মন্দিরগুলোতে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে পূজা প্রস্তুত করা হচ্ছে উপলক্ষে অস্থায়ী মণ্ডপগুলোও, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।দুর্গোৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হলো দেবী দুর্গার প্রতিমা। উৎসব সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
প্রতিমা শিল্পী শুভ পাল বলেন, যত কষ্টই করি না কেন, যখন দেবীকে তার স্বরূপে মণ্ডপে বসানো হবে তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন আমাদের তৈরি প্রতিমাকে সবাই পূজা করে। তখন নিজেকে আমার সফল ও সার্থক মনে হয়।পূজা শুরুর আগেই মা দুর্গাকে তুলতে হবে মণ্ডপে। ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামোর মাটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে রং ও সাজসজ্জার কাজ।বাঙালি হিন্দুর উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয় ষষ্ঠীর আগে থেকেই।
এবারের দুর্গাপূজা ২০ অক্টোবর (২ কার্তিক) ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু করে ২৪ অক্টোবর ( ৬কার্তিক) বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। এর আগে পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ।তবে ষষ্ঠী থেকেই কার্যত উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয়।
বুধবার গিয়ে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা নতুন কালীবাড়ি,ফরেষ্ট অফিস রোড, পশ্চিমবাজার দূর্গাবাড়ী,অলিগলিতে চলছে পূজার আয়োজন।ছোট-বড় বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু হয়েছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ। বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে কর্মচারী ও পূজা কমিটির সদস্যরাও।
প্রতিমা তৈরির মাঠ গুলো ঘুরে দেখা যায়, দেবী দুর্গা ও তার বাহন সিংহের প্রতিমাসহ তৈরি করা হচ্ছে যাকে বধের জন্য দেবীর আগমন সেই মহিষাসুরের প্রতিমা। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর।প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কারিগররাও। বিভিন্ন জায়গার পাকা মন্দিরগুলো রং আর কাপড়ের বাহারি সাজে সাজছে। গান, নাচ, আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের মধ্য দিয়ে বর্ণিলভাবে উৎসব পালনের জন্য চলছে বিরামহীন প্রস্তুতি।
চাদঁনীঘাট হরিজন যুব সংঘ ও কালীবাড়ির মণ্ডপগুলোর প্রতিমার মাটির কাজ এরই মধ্যে প্রায় শেষ করে ফেলেছেন শিল্পীরা। মূর্তি গড়া শেষে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা। অর্ডার অনুযায়ী প্রতিমা গড়তে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।
মৃৎশিল্পী ও তাদের সহযোগী কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দেড় মাস ধরে শিল্পীরা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তারা।
কারিগররা সাধারণত অজন্তা ধাঁচের মূর্তি বানিয়ে থাকেন। এগুলো ওরিয়েন্টাল প্রতিমা হিসেবে পরিচিত। অজন্তা ধাঁচের মূর্তির চাহিদা এখন বেশি। এ ধরনের মূর্তিতে শাড়ি, অলংকার ও অঙ্গসজ্জা সবই করা হয় মাটি ও রঙ দিয়ে। প্রতিমার শাড়ি, অলংকার, সাজসজ্জার উপকরণ আলাদাভাবে কিনে নিতে হয়।
মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিবছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। শুধুমাত্র জীবিকার জন্যই নয়। দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা। দুর্গা মাকে মায়ের মতোই তৈরি করা হচ্ছে।নবরুপা পূজা কমিটির মণ্ডপে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরি করছেন মানিকগঞ্জের সুকুমার পাল। এবারের দুর্গোৎসবে আরও ছয়টি প্রতিমা বানাচ্ছেন তিনি।
সুকুমার পাল জানান, সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকায় এসব প্রতিমা বানানো হচ্ছে।
নতুন কালীবাড়ির প্রতিমা কারিগর বলেন, ‘এখনই বছরের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করছি। পূজার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তাই দম ফেলার সময়ও নেই। এর মধ্যেই দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির সব কাজ শেষ করতে হবে।
মৌলভীবাজার পূজা উদযাপনের সার্বিক বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএমবার বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা-২০২৩ উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১০৩৬ টি মন্ডপ দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৮৮৪ টি সর্বজনীন এবং ১৫১ টি ব্যক্তিগত পূজামন্ডপ। পূজামন্ডপ সমূহের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি ,গুরুত্বপূর্ণ ২৯৫ এবং সাধারণ ৬৫১ টি
তিনি আরও জানান, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ২টি সেক্টরে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। সদর, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ থানা সেক্টর-১ এর আওতাভুক্ত হবে এবং কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা সেক্টর-০২ এর আওতাভুক্ত হবে। তাছাড়া জেলার সকল অফিসার ও ফোর্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সাইবার মনিটরিং করবে।