ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২
  • / ৩২২ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আজিজুর রহমানের ২য় মৃত্যু বার্ষিকীতে গুজারাইয়ে তাঁর নিজ বাসভবন প্রাঙ্গনে স্বরণসভা,শিক্ষাবৃত্তি ও মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০ টায় কবর জিয়ারত মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পরে  বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে স্বরণসভা,শিক্ষাবৃত্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফাউন্ডেশনের আহবায়ক মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব পান্না দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মৌলভীবাজার রাজনগর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদএমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) জাহিদ আকতার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা পরিষদের নিরবাহী খোদেজা আক্তার,পৌর মেয়র মো: ফজলুর রহমান,কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম আজিজুর রহমান ব্যক্তিজীবনে সদা হাস্যজ্জল সরল ও মিষ্টভাষী মানুষ ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলার গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল সত্তার, মাতা মরহুম কাঞ্চন বিবি। তিনি শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ হতে বিকম ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছাত্রজীবন হতেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন আজিজুর রহমান।

গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ দল ও মহাজোটের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অকৃতদার এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী) ও সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন । সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী

আপডেট সময় ১০:৩২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২২

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক:  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আজিজুর রহমানের ২য় মৃত্যু বার্ষিকীতে গুজারাইয়ে তাঁর নিজ বাসভবন প্রাঙ্গনে স্বরণসভা,শিক্ষাবৃত্তি ও মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০ টায় কবর জিয়ারত মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পরে  বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে স্বরণসভা,শিক্ষাবৃত্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফাউন্ডেশনের আহবায়ক মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব পান্না দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মৌলভীবাজার রাজনগর ৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদএমপি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) জাহিদ আকতার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা পরিষদের নিরবাহী খোদেজা আক্তার,পৌর মেয়র মো: ফজলুর রহমান,কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম আজিজুর রহমান ব্যক্তিজীবনে সদা হাস্যজ্জল সরল ও মিষ্টভাষী মানুষ ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলার গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল সত্তার, মাতা মরহুম কাঞ্চন বিবি। তিনি শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ হতে বিকম ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছাত্রজীবন হতেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন আজিজুর রহমান।

গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ দল ও মহাজোটের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অকৃতদার এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী) ও সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক ছিলেন । সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন