ঢাকা ০২:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লাউয়াছড়ায় দুর্ঘটনায় ১৫ মাসে ১৮টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৫৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মে ২০২২
  • / ৫১৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি: বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক এখন বনের প্রাণীকুলের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ সামনে পড়ে ট্রেন, না হয় দ্রতগতির বাস ট্রাক। এমনকি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ৩৩ কেভি জাতীয় গ্রিড লাইন। আর তখনই মারা যাচ্ছে বিরল প্রজাতির অনেক বানর হুনুমান উল্লুক বাঁদূর অজগর এমন অসংখ্য বন্যপ্রাণী । গত ১৫ মাসে এভাবে ১৮টি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এভাবে এতগুলো বন্যপ্রাণীর অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবেশবিদরা। তাদের দাবি, লাউয়াছড়ায় ভেতর দিয়ে যাওয়া ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক সরিয়ে নেওয়া ও বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ফাইবার অপটিক্যাল দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া। তাদের এসব দাবির সঙ্গে একমত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত দেড় বছর ধরে এ ধরনের একটি চিঠি দিয়ে ফলাফল আসেনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বন্যপ্রাণী এক্ট ১৯৭৪ এর ধারা ২ ও ৩ মতে ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মধ্যবর্তী পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকা জাতীয় উদ্যান তথা ন্যাশনাল পার্ক (প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করে সরকার। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার দূরের এই বনে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুনে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। এখানের বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল সেই উদ্যোগ।ববণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির শরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই ক’বছরে বন বিভাগ ১৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এই বনে অবমুক্ত করেছে ।

তাদের দেওয়া তথ্য মতে এই জাতীয় উদ্যানে জানুয়ারি ২১ থেকে গত ১৬ মাসে ১৮ টি বন্যপ্রাণী এভাবে মারা যায়। এগুলোর মধ্যে বানর ৪টি, মুখপোড়া হনুমান ৪টি, অজগর একটি, চশমাপরা হনুমান ২টি, লজ্জাবতী বানর একটি, উল্টো লেজি বানর ১টি, চিতা বিড়াল ১টি, গন্ধগোকুল ( খাটাশ) ১টি, বন্য শুকর ১টি ধোড়া সাপ ১টি ও দাড়াশ সাপ ১টি।

লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যান কো-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য আমরা বনের ভেতর বাস ট্রাক ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি শুরু করেছি।আমরা চাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এলাকায় বাস ট্রেনের গতি কোনো অবস্থায় ২০ কিলোমিটার এর বেশি হবে না এবং আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।

বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেড় বছর আগে বনের ভেতর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কটি সরিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবটি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা জানি না। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে এ ব্যাপার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

লাউয়াছড়ায় দুর্ঘটনায় ১৫ মাসে ১৮টি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু

আপডেট সময় ০৩:৫৫:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মে ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি: বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্ক এখন বনের প্রাণীকুলের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। হঠাৎ সামনে পড়ে ট্রেন, না হয় দ্রতগতির বাস ট্রাক। এমনকি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের ৩৩ কেভি জাতীয় গ্রিড লাইন। আর তখনই মারা যাচ্ছে বিরল প্রজাতির অনেক বানর হুনুমান উল্লুক বাঁদূর অজগর এমন অসংখ্য বন্যপ্রাণী । গত ১৫ মাসে এভাবে ১৮টি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা গেছে। এভাবে এতগুলো বন্যপ্রাণীর অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবেশবিদরা। তাদের দাবি, লাউয়াছড়ায় ভেতর দিয়ে যাওয়া ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক সরিয়ে নেওয়া ও বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ফাইবার অপটিক্যাল দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া। তাদের এসব দাবির সঙ্গে একমত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগও। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত দেড় বছর ধরে এ ধরনের একটি চিঠি দিয়ে ফলাফল আসেনি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বন্যপ্রাণী এক্ট ১৯৭৪ এর ধারা ২ ও ৩ মতে ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার মধ্যবর্তী পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকা জাতীয় উদ্যান তথা ন্যাশনাল পার্ক (প্রকৃতির জন্য সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করে সরকার। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৭১ কিলোমিটার দূরের এই বনে ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জুনে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। এখানের বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল সেই উদ্যোগ।ববণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ জানায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে। ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির শরীসৃপ ও ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণীর বিচরণ এই বনে। এছাড়া এই ক’বছরে বন বিভাগ ১৬৭ প্রজাতির বন্যপ্রাণী এই বনে অবমুক্ত করেছে ।

তাদের দেওয়া তথ্য মতে এই জাতীয় উদ্যানে জানুয়ারি ২১ থেকে গত ১৬ মাসে ১৮ টি বন্যপ্রাণী এভাবে মারা যায়। এগুলোর মধ্যে বানর ৪টি, মুখপোড়া হনুমান ৪টি, অজগর একটি, চশমাপরা হনুমান ২টি, লজ্জাবতী বানর একটি, উল্টো লেজি বানর ১টি, চিতা বিড়াল ১টি, গন্ধগোকুল ( খাটাশ) ১টি, বন্য শুকর ১টি ধোড়া সাপ ১টি ও দাড়াশ সাপ ১টি।

লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যান কো-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য আমরা বনের ভেতর বাস ট্রাক ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণে নানা কর্মসূচি শুরু করেছি।আমরা চাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এলাকায় বাস ট্রেনের গতি কোনো অবস্থায় ২০ কিলোমিটার এর বেশি হবে না এবং আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।

বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেড় বছর আগে বনের ভেতর থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কটি সরিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবটি এখন কোন পর্যায়ে আছে তা জানি না। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে এ ব্যাপার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য একটি চিঠি দিয়েছি।