স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হন ইমরান
- আপডেট সময় ০৯:১৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
- / ৮৮২ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের গোয়াইনঘাটে রিসোর্টের পাশ থেকে পর্যটকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই পর্যটকের স্ত্রী ও তার প্রেমিকসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৭ এপ্রিল বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানাধীন জাফলং বল্লাঘাট রিভারভিউ রিসোর্টের পাশে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ পাথরচাপা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। গোয়াইনঘাট থানাপুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, লাশ পাওয়া ওই যুবকের নাম আলে ইমরান (৩২)। তিনি কিশোরগঞ্জের নিকলী থানার গুরই গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
এ ঘটনায় পরদিন গোয়াইনঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার রাতে ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পৃথক দুটি অভিযানে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ইমরানের স্ত্রী খুশনাহার(২১), প্রেমিক মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগী নাদিম আহমেদ নাঈম (১৯) এ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে- ইমরানের স্ত্রী খুশনাহারের সঙ্গে মাহিদুল হাসান মাহিন (২৪) নামে এক তরুণের দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের অবৈধ প্রেম চলছে। মাহিন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জিএম পদে কর্মরত। ইমরানের সঙ্গে গত পাঁচ বছর আগে খুশনাহারের বিয়ে হয়। মাহিনের সাথে প্রেমে জড়ানোর পর থেকেই খুশনাহার এবং তার প্রেমিক মাহিন বিভিন্ন সময় ইমরানকে হত্যা করার চেষ্টা করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যা করার উদ্দেশ্যে খুশনাহার বেড়ানোর কথা বলে স্বামীকে নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল রাতে ভৈরব হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন।
অন্যদিকে একই দিনে প্রেমিক মাহিন ও মাহিনের অফিসে কর্মরত গ্রেপ্তারকৃত আসামি নাদিম এবং রাকিব নামের এক সহযোগী ঢাকা কমলাপুর হতে ট্রেনযোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে জাফলং বল্লাঘাটস্থ ‘রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল’র ১০১ নং কক্ষে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেন ইমরান। এসময় অন্য তিন আসামি জাফলং বল্লাঘাটের হোটেল শাহ আমিনে অবস্থান করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে খুশনাহার কৌশলে ‘রিভারভিউ রিসোর্ট এন্ড আবাসিক হোটেল’র তাদের কক্ষের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাথাব্যথার ঔষধের কথা বলে রাত ১০টার দিকে ইমরানকে তার স্ত্রী খুশনাহার ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর ইমরান গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে স্ত্রী খুশনাহার রাত ১২টার দিকে তার প্রেমিক মাহিন ও সহযোগিদের হোটেলকক্ষে নিয়ে আসেন। রাত ২টার দিকে ইমরানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুশনাহার ও তার প্রেমিক মাহিন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।
এ সময় আসামি নাদিম পর্যটক ইমরানের পা চেপে ধরেন এবং রাকিব নামের একজন রুমের বাহিরে পাহারা দেন। একসময় ইমরানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাত ৩টার দিকে হত্যাকারী সবাই ইমরানের মৃতদেহ লুকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে হোটেলের পাশে পাথরচাপা দিয়ে রাখেন। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে তারা হোটেল থেকে বের হয়ে সিএনজিচালিতে অটোরিকশাযোগে সিলেট ছেড়ে পালিয়ে যান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে আসামি খুশনাহার ও নাদিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় খুশনাহারের পরকীয়া প্রেমিক মাহিনকে গ্রেপ্তারে কিশোরগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করছিলো পুলিশ।
এ সময় সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।