ঢাকা ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়া কফি চাষে মৌলভীবাজারে নতুন উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:২৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৫৫২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে এক সময় ব্রিটিশরা কফি চাষ করতেন। তারা চলে যাওয়ার পর কফির চাষ আস্তে আস্তে কমে যায়। অথচ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে কফি।

তাই আবার মৌলভীবাজারে কফি চাষের জন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় তারা কফির চারাও বিতরণ করছে । এরই মধ্যে জেলার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে কফির দুটি জাত- `অ্যারাবিকা’ ও `রোবাস্তা’ পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা । ফলে চায়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষকরা।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমদ জানান, মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা, রাজনগর, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় তিন হাজার কফির চারা রোপন করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে কোন প্রকল্প না থাকায় এটির ব্যাপকহারে বিস্তার সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে কফির দুটি জাতেরই ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে রোবাস্তা সমতলে ভালো হয়েছে; আর পাহাড়ে হয়েছে অ্যারাবিকা। একটি কফি গাছ তিন বছর থেকে ফল দেওয়া শুরু করলেও ৫/৬ বছর হলে ফলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।

সরকারি প্রণোদনাসহ প্রকল্প আকারে কফির চাষ করলে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে; পাশাপাশি রপ্তানি করে সরকারও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে জানান এ কৃষি অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকে সখের বসেও কফির চারা রোপন করছেন। কফির ফলগুলো দেখতে অনেকটা চেরি ফলের মত হয়।

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার ইউনিয়নে মাথিউড়া চা বাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা ও বাড়ির পাশে কফি গাছে থোকা থোকা কফি ধরে আছে। কিছু গাছে কফি সবুজ, কিছু গাছে সাদাভাব নিচ্ছে আবার বেশকিছু গাছে পেঁকে লাল হয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ গ্রাহকের কাপ পর্যন্ত রাখতে হলে সঠিকভাবে কফি গ্রাইন্ডিং করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কফি বীজ গুঁড়া করা যত মিহি হবে তত দ্রুত সুন্দর কফি তৈরি হবে। কিন্তু স্থানীয়রা এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন না; তারা পাকা কফি গাছ থেকে পেড়ে রোদে শুকিয়ে ও ভেজে গুঁড়া করে তারপর পান করেন।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান ,উপজেলার জাগছড়া ও সোনাছড়া চা বাগানে ফিনলে কোম্পানির বিশাল কফি বাগান আর কফির ফ্যাক্টরি ছিল। চা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কফি চাষ কমে যায়। ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে ফিনলে কফি চাষ বন্ধ করে সেখানে চা আবাদ বর্ধিত করে।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, সোনাছড়া ও জাগছড়ায় তাদের বিশাল কফি বাগান ছিল। লাভ কম হওয়ায় প্রায় ৩৭/৩৮ বছর আগে কোম্পানি কফি চাষ বন্ধ করে দেয়।চায়ের পাশাপাশি এ জেলায় কফি চাষের একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ও কৃষি গবেষক লুৎফুল বারী।

তিনি বলেন, কফি একটি উচ্চ মূল্যের ফল। চায়ের সঙ্গেও এটি চাষ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের বাড়িতেও চাষ করতে পারেন। তবে এর জন্য জেলায় একটি প্রসেসিং সেন্টার প্রয়োজন হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হারিয়ে যাওয়া কফি চাষে মৌলভীবাজারে নতুন উদ্যোগ

আপডেট সময় ১০:২৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর ২০২২

বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানে এক সময় ব্রিটিশরা কফি চাষ করতেন। তারা চলে যাওয়ার পর কফির চাষ আস্তে আস্তে কমে যায়। অথচ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে কফি।

তাই আবার মৌলভীবাজারে কফি চাষের জন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় তারা কফির চারাও বিতরণ করছে । এরই মধ্যে জেলার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে কফির দুটি জাত- `অ্যারাবিকা’ ও `রোবাস্তা’ পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা । ফলে চায়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষকরা।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমদ জানান, মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা, রাজনগর, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় তিন হাজার কফির চারা রোপন করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে কোন প্রকল্প না থাকায় এটির ব্যাপকহারে বিস্তার সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে কফির দুটি জাতেরই ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে রোবাস্তা সমতলে ভালো হয়েছে; আর পাহাড়ে হয়েছে অ্যারাবিকা। একটি কফি গাছ তিন বছর থেকে ফল দেওয়া শুরু করলেও ৫/৬ বছর হলে ফলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।

সরকারি প্রণোদনাসহ প্রকল্প আকারে কফির চাষ করলে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে; পাশাপাশি রপ্তানি করে সরকারও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে জানান এ কৃষি অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকে সখের বসেও কফির চারা রোপন করছেন। কফির ফলগুলো দেখতে অনেকটা চেরি ফলের মত হয়।

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার ইউনিয়নে মাথিউড়া চা বাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা ও বাড়ির পাশে কফি গাছে থোকা থোকা কফি ধরে আছে। কিছু গাছে কফি সবুজ, কিছু গাছে সাদাভাব নিচ্ছে আবার বেশকিছু গাছে পেঁকে লাল হয়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ গ্রাহকের কাপ পর্যন্ত রাখতে হলে সঠিকভাবে কফি গ্রাইন্ডিং করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কফি বীজ গুঁড়া করা যত মিহি হবে তত দ্রুত সুন্দর কফি তৈরি হবে। কিন্তু স্থানীয়রা এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন না; তারা পাকা কফি গাছ থেকে পেড়ে রোদে শুকিয়ে ও ভেজে গুঁড়া করে তারপর পান করেন।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগান এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান ,উপজেলার জাগছড়া ও সোনাছড়া চা বাগানে ফিনলে কোম্পানির বিশাল কফি বাগান আর কফির ফ্যাক্টরি ছিল। চা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কফি চাষ কমে যায়। ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে ফিনলে কফি চাষ বন্ধ করে সেখানে চা আবাদ বর্ধিত করে।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, সোনাছড়া ও জাগছড়ায় তাদের বিশাল কফি বাগান ছিল। লাভ কম হওয়ায় প্রায় ৩৭/৩৮ বছর আগে কোম্পানি কফি চাষ বন্ধ করে দেয়।চায়ের পাশাপাশি এ জেলায় কফি চাষের একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ও কৃষি গবেষক লুৎফুল বারী।

তিনি বলেন, কফি একটি উচ্চ মূল্যের ফল। চায়ের সঙ্গেও এটি চাষ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের বাড়িতেও চাষ করতে পারেন। তবে এর জন্য জেলায় একটি প্রসেসিং সেন্টার প্রয়োজন হবে।