মৃত্যুকে সকল সময় স্মরণে রাখতে হবে: সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

- আপডেট সময় ০৫:৩২:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
- / ১৪০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমাদের মৃত্যুকে সকল সময় স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করা আছে, সেই সময় মৃত্যুবরণ করতে হবে। তাকিয়ে তাকিয়ে সেই সময় চলে আসবে। কখন আসবে সেটা বলা যায়না। বলা যায়না এখনই সেই মৃত্যুর সময় চলে আসবে। মৃত্যু থেকে আমাদের শিক্ষা হলো প্রতিটি মুহুর্ত মৃত্যুর জন্য নেক আমল করে প্রস্তুত থাকা। হারাম খাবো না, কবিরা গুনাহ করবো না, কোন ফরজ তরক করবো না, জেনা-ব্যভিচার করবো না, পাপাচার করবো না, আমার সালাত, পর্দা, পরিবারকে দ্বীনের উপরে রাখা, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে আল্লাহ তায়ালার দ্বীন মানা এবং কায়েমের জন্য জান মাল দিয়ে সর্বাতœক চেষ্টা করা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের জানাযায় অংশ নিয়ে উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা মতলিব ভাইয়ের জীবনে বাস্তব প্রতিফলন। আমরা যা মানুষকে বলি নিজেদের জীবনে খুব কম প্রতিফলিত হয়। সদাচার, বিনয়, ভদ্রতা, ধৈয্য মানুষকে আপন করে নেওয়ার কৌশল, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব।
তিনি আরও বলেন, রাসূল (সা.) হাদীসে বলেছেন, হাশরের দিনে কারা ক্ষমা পাবেন তার মধ্যে এই গুনটা মৌলিক যারা বেশি সবর করতে পারে, মানুষের সাথে সদাচারণ করতে পারে তার বিনিময়ে সে বড় আমলনামার ভাগিদার হবে। একটু খানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন এই বই আর দেওয়ান সিরাজুল ইসলামের জীবন এক। তিনি মানুষকে খুব আপন করতেন, আমাদের মধ্যে এতো অসাধারণ গুণ ধরে রাখা কঠিন। কিন্তু মতলিব ভাই ছিলেন ব্যতিক্রম।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, অনেক ঝড় জাপটা, মামলা হামলার মধ্য দিয়ে কত মঞ্জিল পার হয়েছেন তিনি। তার দিকে তাকিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইসলামী আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অনেকেই বলেছেন আমরা অভিবাবককে হারিয়েছি। সবর করি, হায় আল্লাহ এতো মানুষের স্বাক্ষী, এতো মানুষের সুধারণা যার প্রতি, তুমি তার প্রতি তোমার রহমত বর্ষণ করো।
তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, যখন কোন মানুষের মৃত্যু হয়ে যায় তখন তার কাছ থেকে আমলগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তিনটি আমল থাকে, একটি হলো সদকায়ে জারিয়া, অন্যটি উপকারি শিক্ষা এবং অপরটি নেক সন্তান-সন্ততি।
জানাযা পূর্ব আলোচনায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহেদ আলী, জেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, হবিগঞ্জ জেলা আমীর হাজী মাওলানা মোখলেসুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, সিলেট জেলা নায়েবে আমীর হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, জেলা সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি মোঃ শাহজাহান আলী, মৌলভীবাজার জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামির আলী, ঢাকা পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, হবিগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমদ, মাওলানা আহমদ বেলাল, আব্দুর রহিম রিপন ও মরহুমের বড় ছেলে দেওয়ান শরীফুজ্জামান চৌধুরী।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোওয়ার।
এর আগে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিটে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর। তিনি ৬ ছেলে ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী, সন্তান, নাতী-নাতনী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব দীর্ঘদিন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও সিলেট আঞ্চলিক বিভাগের টিম সদস্য ছিলেন। দেওয়ান মতলিব ১৯৯১ সালে মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসন থেকে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ১৫টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে ইসলামী সংগঠন ও আমরা, সাতান্ন বছর জামায়াতে ইসলামীতে কি দেখলাম, শান্তিপূর্ণ পরিবার, মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাব, রাষ্ট্রপ্রধান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, একটুখানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন , একটুখানি চোখের পানি ও ইসলামী আন্দোলন, ইবংঃ ষরভব সর্বোত্তম জীবন, কারাগারের স্মৃতি, কাবার পথে ইত্যাদি।
