ঢাকা ০৯:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
মৌলভীবাজারে গাছে সাথে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ডাক্তারের বাবার মৃ/ত্যু মৌলভীবাজারে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে সেমিনার অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার মনূ নদে রুই মাছের পোনা অবমুক্ত মৌলভীবাজার-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. মুদাব্বির হোসেন মুনিমের সাংবাদিক সম্মেলন আলহাজ্ব জি কে গউছ: মৃত্যুঞ্জয়ী এক সংগ্রামী ও রাজপথের অগ্নিশিখা মৌলভীবাজারে পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে উৎসবমুখর কাউন্সিল, কর্মীদের উচ্ছ্বাস বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা শ্রীমঙ্গলে মাদক ও নগদ টাকাসহ একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রে/ফ/তা/র মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ৬ দফা দাবিতে ছাত্র ফ্রন্টের স্মারকলিপি গরম নিয়ে নতুন পূর্বাভাস:লঘুচাপের প্রভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা

ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩৩৭ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার চৌমুহনার গণআন্দোলনে সাংবাদিকের ওপর হামলার একবছর

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মৌলভীবাজার শহরে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের দিনটি আজও অনেকের মনে তাজা। সেদিনের বিক্ষোভে পুলিশের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের হামলায় সাংবাদিকও ছিলেন নির্যাতনের শিকার। এশিয়ান টেলিভিশন ও দৈনিক আমার সংবাদ-এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মো. মাহবুবুর রহমান রাহেল সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আজ স্মরণ করে বলছেন—“ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়।

তিনি জানান, ৪ আগস্ট সকাল থেকে শহরে বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মিছিল চলছিল। দুপুরের দিকে কলেজ থেকে একটি জটিকা মিছিল বের হলে সাকুরা মার্কেটের সামনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। হামলার পরও ছাত্ররা মিছিল নিয়ে চৌমুহনার দিকে রওনা দেয়।

মাহবুবুর রহমান রাহেল কলেজের সামনে থেকে শুরু করে মিছিলের লাইভ সম্প্রচার করছিলেন। তিনি বলেন,
“আমি লাইভ করতে করতে চৌমুহনা পর্যন্ত যাই। সেখানে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। আমি ভিডিও করছিলাম, ঠিক তখনই ৭-৮ জন যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মী দেশীয় অস্ত্র হাতে আমাকে ঘিরে ধরে। আমার ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের Samsung মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় যুবলীগের সভাপতি। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করা হয়।”

তিনি আরও জানান, তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা পার্সন টিটু মিয়ার হাত থেকে ক্যামেরার স্ট্যান্ড ছিনিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। গুরুতর আঘাতের পরও তিনি চৌমুহনা মাঠ ত্যাগ করেননি। বিকেলে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু হলে কয়েকজন সহকর্মীসহ কাকন নামের এক ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে থেকেও কাঁদানে গ্যাসের যন্ত্রণা এড়াতে পারেননি।

পরবর্তীতে সহকর্মী ওমর ফারুক নাঈমসহ আরও কয়েকজন তাকে মোটরসাইকেলে করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ডিবিসি নিউজের নাঈম, যুবায়ের আহমদ,মামুন তরফদার,পায়েল আহমদ যাঁরা হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতায় তার নাম তোলার সময় সাক্ষী ছিলেন।

আহতের খবর শুনে তার পরিবারের সদস্যরা ফোন করে বাসায় ফিরে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠেই ছিলেন।

মোঃ মাহবুবুর রহমান রাহেল বলেন,
“রাত আটটার দিকে সহকর্মীরা বাসায় নিয়ে যান। অনেকেই ফোনে ও সরাসরি এসে আমার খোঁজ নিয়েছেন। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুব ভাই ও এটিএন নিউজের প্রতিনিধি সৈয়দ পারভেজও ফোন দেন। আমি যুবলীগ সভাপতি, সাবেক এমপি, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ফোনটি ফেরত পাইনি।”

তার আহত হওয়ার খবর সেইদিনই প্রচারিত হয় এশিয়ান টেলিভিশনে এবং ৫ আগস্ট ছাপা হয় দৈনিক আমার সংবাদসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে।
তবুও, আজ একবছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার কোনো বিচার হয়নি, ফিরে আসেনি ছিনতাই হওয়া ফোনটিও।

“সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই মূল্য দিতে হয়েছে। স্বীকৃতি না পেলেও ইতিহাস তো থাকবেই—আমি ছিলাম একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী। ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়,”—বলেন সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রাহেল।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়

আপডেট সময় ১১:৫২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

মৌলভীবাজার চৌমুহনার গণআন্দোলনে সাংবাদিকের ওপর হামলার একবছর

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মৌলভীবাজার শহরে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের দিনটি আজও অনেকের মনে তাজা। সেদিনের বিক্ষোভে পুলিশের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের হামলায় সাংবাদিকও ছিলেন নির্যাতনের শিকার। এশিয়ান টেলিভিশন ও দৈনিক আমার সংবাদ-এর মৌলভীবাজার প্রতিনিধি মো. মাহবুবুর রহমান রাহেল সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আজ স্মরণ করে বলছেন—“ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়।

তিনি জানান, ৪ আগস্ট সকাল থেকে শহরে বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মিছিল চলছিল। দুপুরের দিকে কলেজ থেকে একটি জটিকা মিছিল বের হলে সাকুরা মার্কেটের সামনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। হামলার পরও ছাত্ররা মিছিল নিয়ে চৌমুহনার দিকে রওনা দেয়।

মাহবুবুর রহমান রাহেল কলেজের সামনে থেকে শুরু করে মিছিলের লাইভ সম্প্রচার করছিলেন। তিনি বলেন,
“আমি লাইভ করতে করতে চৌমুহনা পর্যন্ত যাই। সেখানে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। আমি ভিডিও করছিলাম, ঠিক তখনই ৭-৮ জন যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মী দেশীয় অস্ত্র হাতে আমাকে ঘিরে ধরে। আমার ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের Samsung মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় যুবলীগের সভাপতি। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করা হয়।”

তিনি আরও জানান, তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা পার্সন টিটু মিয়ার হাত থেকে ক্যামেরার স্ট্যান্ড ছিনিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। গুরুতর আঘাতের পরও তিনি চৌমুহনা মাঠ ত্যাগ করেননি। বিকেলে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু হলে কয়েকজন সহকর্মীসহ কাকন নামের এক ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নেন। সেখানে থেকেও কাঁদানে গ্যাসের যন্ত্রণা এড়াতে পারেননি।

পরবর্তীতে সহকর্মী ওমর ফারুক নাঈমসহ আরও কয়েকজন তাকে মোটরসাইকেলে করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ডিবিসি নিউজের নাঈম, যুবায়ের আহমদ,মামুন তরফদার,পায়েল আহমদ যাঁরা হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতায় তার নাম তোলার সময় সাক্ষী ছিলেন।

আহতের খবর শুনে তার পরিবারের সদস্যরা ফোন করে বাসায় ফিরে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠেই ছিলেন।

মোঃ মাহবুবুর রহমান রাহেল বলেন,
“রাত আটটার দিকে সহকর্মীরা বাসায় নিয়ে যান। অনেকেই ফোনে ও সরাসরি এসে আমার খোঁজ নিয়েছেন। মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ মাহবুব ভাই ও এটিএন নিউজের প্রতিনিধি সৈয়দ পারভেজও ফোন দেন। আমি যুবলীগ সভাপতি, সাবেক এমপি, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ফোনটি ফেরত পাইনি।”

তার আহত হওয়ার খবর সেইদিনই প্রচারিত হয় এশিয়ান টেলিভিশনে এবং ৫ আগস্ট ছাপা হয় দৈনিক আমার সংবাদসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে।
তবুও, আজ একবছর পেরিয়ে গেলেও ঘটনার কোনো বিচার হয়নি, ফিরে আসেনি ছিনতাই হওয়া ফোনটিও।

“সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই মূল্য দিতে হয়েছে। স্বীকৃতি না পেলেও ইতিহাস তো থাকবেই—আমি ছিলাম একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী। ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়ার জন্য নয়,”—বলেন সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রাহেল।