ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি

- আপডেট সময় ০৬:১৭:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ১ বার পড়া হয়েছে

মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকী হাফিজাহুল্লাহ।
প্রারম্ভ:ধর্ষণের আরবি প্রতিশব্দ ‘ইগতিসাব’। অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া। পরিভাষায় ধর্ষণ বলা হয়, অনিচ্ছায়, জোরপূর্বক ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌন চাহিদা পূরণ করা।
প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক এক হুমকি ধর্ষণ। জঘন্য এই অপরাধ দমন করা না গেলে সমাজের শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়, বিশেষত নারীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি অপরিহার্য।
ব্যভিচারের মতোই ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ। বরং ধর্ষণ এমন একটি গর্হিত কাজ, যেখানে এক পক্ষ অত্যাচার করে অপর পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ধর্ষণ শুধু ব্যভিচার নয়, বরং তা অন্যায়, সহিংসতা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ইসলামে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির কোনো দোষ বা শাস্তি নেই; বরং অপরাধীরই কেবল শাস্তি প্রযোজ্য।
★কোরআনের
আলোকে আলোচনা…
আল্লাহ সূরা নূরের ২ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡكُمۡ بِهِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অনুবাদ:ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী – নারী ও পুরুষ প্রত্যেককে একশ’ কশাঘাত করবে, আল্লাহর বিধান কার্যকরী করতে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হও; মু’মিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا [١٧:٣٢]
অনুবাদ:আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [সূরা ইসরা-৩২]
প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লেখ করেছেন,
ধর্ষক যদি কোনো শিশুকে ধর্ষণ করে এবং এতে তার মৃত্যু হয়, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। একইভাবে কোনো নারীকে ধর্ষণের আগে বা পরে যদি তাকে হত্যা করা হয়, তবে হত্যাকারী ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বেশির ভাগ ফকিহের মতে, এমন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড তরবারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
[তাফসিরে
কুরতুবি:২/৩৫৮]
★হাদিসের আলোকে আলোচনা…
সুনানে ইবনে মাজাহ এর ২৫৯৮
নং হাদিসে এসেছে…
عَنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ اسْتُكْرِهَتِ امْرَأَةٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَدَرَأَ عَنْهَا الْحَدَّ وَأَقَامَهُ عَلَى الَّذِي أَصَابَهَا . وَلَمْ يَذْكُرْ أَنَّهُ جَعَلَ لَهَا مَهْرًا .
অনুবাদ: ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষণকারীকে হদ্দের শাস্তি দেন। তিনি মহিলার জন্য মোহরের ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা তা রাবী উল্লেখ করেননি।
হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। (সহিহ মুসলিম)।
পরিশেষে বলবো ঈমানের অপরিহার্য দাবিও হচ্ছে মানুষ অপরাধমুক্ত জীবন প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অপরাধ ছেড়ে দেবে। দুনিয়া ও পরকালের জবাবদিহিতার মানসিকতা নিজেদের মধ্যে তৈরি করবে।
আল্লাহ তাআলা পুরো মানবজাতীকে ইসলামের গর্হিত কাজগুলো ছেড়ে দেয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধানগুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ভিত্তিক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
