ঢাকা ০৪:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা সওদাগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডিপজল নির্বাচিত মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও আনন্দ ভ্রমণ সিলেট প্রেসক্লাব নির্বাচনে সভাপতি ইকরামুল কবির,সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার শঙ্কা ধান কেটে উৎসবের উদ্বোধন করলেন কৃষি মন্ত্রী  কোটচাঁদপুর কৃষক লীগের  ৫২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন  কপোতাক্ষ নদে অভিযান বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট ২০২৪ পালন করেছে মৌলভীবাজারের শিক্ষার্থীরা ডিবির অভিযানে জুয়ার সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ আটক- ১৩  কুলাউড়া উপজেলার প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও বিএনপি নেত্রী শাকিলা আর নেই

ওসমানীনগরে ধীরগতিতে কমছে পানি, বাড়ছে দূর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৫১:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২
  • / ২৩২ বার পড়া হয়েছে

ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ সিলেটের ওসমানীনগরে বন্যার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী সাদিপুর এলাকায় প্রায় ৬ ইঞ্চি পানি কমছে। পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা ও পানিবন্দিরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বাড়ি ফিরার প্রস্থুতি নিচ্ছেন বানভাসিরা।

তবে শনিবার পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ বাড়িতে ফিরার তথ্য পায়নি উপজেলা কন্ট্রোলরুম। নিজ বাড়িতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ আসবাবপত্রসহ বাড়ি ঘরের খোঁজ নিচ্ছেন অনেকই। দির্ঘ দিন পানিবন্দি থাকায় বেশির ভাগ কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মজিদ মিয়া বলেন, পানি ধীরে কমছে। দুএকদির মধ্যে বাড়িতে যাবো। বাড়িতে গিয়েওবা কি করবো। ঘর তো আর আগের মতো নেই। থাকবো কোথায়!

জানা গেছে, অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতো করো আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

বড়লো বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ও বরাদ্দ:: উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় বেড়েছে বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা। গত মঙ্গলবার ১ হাজার ৩১টি বন্যা আক্রান্ত পরিবারের তালিকা করা হয়। বুধবার বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পরদিন বৃহস্পতিবার ১৫শ৯৯টি পরিবারের ১লক্ষ২০ হাজার মানুষ বন্যাক্রান্ত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। বর্তমানে মোট ৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বেড়েছে ৭৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ। মোট ৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয় বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

পানিতে তলিয়েছে ২০ কমিউনিটি ক্লিনিক:: বন্যার পানিতে উপজেলায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে প্রায় ২০টি ক্লিনিকে এখনো পানি। ফলে স্বাস্থ্য সেবাও হুমকির মুখে রয়েছে। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠন করা হয়েছে ৮টি ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোজাহারুল ইসলাম জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি থাকায় বন্যা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান ৮টি মেডিকেল টিম মাঠে রয়েছে। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ চলমান।

খাদ্যা সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট::বন্যাকে পূজি করে উপজেলার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরী করে জিনিসপত্রের দিগুণ মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক দোকানে গিয়ে এক সাথে কয়েক পদের পূন্য মিলছে না। ফলে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় ব্যক্তি বা সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসলেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে।

পশু খাদ্য সংকট: বন্যার পানিতে ২হাজার ৯৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাণী খাদ্যের বেশির ভাগ দোখান বন্ধ। ফলে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট। গরু, ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, আমাদের তো কেউ না কেউ খাবার দিচ্ছেন, কিন্তু গরু ছাগলের খাবার কেউ দেয়না। বন্যা আসার পর ৪টি গরু ও২টি ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। প্রতিদিনই তাদের কচুরি পানা খাবার হিসাবে দিচ্ছি।
ডাকাত আতঙ্ক:: বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে হাওয়র এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। প্রতি রাতেই উপজেলায় ডাকাত ডুকছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলছেন অনেকেই। তাই উপজেলা জুড়ে ডাকাত আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে প্রতি রাতে। ডাকাতি প্রতিরোধে রাত জেগে গ্রাম পাহাড়া দিচ্ছেন গ্রামবাসী।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ১শ কিলোমিটার সড়ক::
বন্যায় উপজেলার প্রায় সকল সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে সড়কে যান চলাচল করতো সেই সড়কের উপর দিয়ে চলছেন নৌকা। এখন পর্যন্ত বন্যার পানি থাকায় এলজিইডির অধিনে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে যান বাহন চলাচলের অনুপযোগী রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে পানি জমে থাকায় ৫শ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১শ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেছে এবং কার্পেটিং উঠে গেছে।
উপজেলা এলজিউডি প্রকোশলী এস এম আল মামুন বলেন, বন্যার পানি থাকায় কয়েকটি সড়কে যান চালচল করছে না। বন্যায় উপজেলার প্রায় সকল সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি কমলে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান উর্ধতন কর্তৃপক্ষে প্রেরণ করবো।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ওসমানীনগরে ধীরগতিতে কমছে পানি, বাড়ছে দূর্ভোগ

আপডেট সময় ১১:৫১:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জুন ২০২২

ওসমানীনগর প্রতিনিধিঃ সিলেটের ওসমানীনগরে বন্যার পানি ধীরগতিতে কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিনে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী সাদিপুর এলাকায় প্রায় ৬ ইঞ্চি পানি কমছে। পানি কমায় আশ্রয়কেন্দ্র থাকা ও পানিবন্দিরা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বাড়ি ফিরার প্রস্থুতি নিচ্ছেন বানভাসিরা।

তবে শনিবার পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কেউ বাড়িতে ফিরার তথ্য পায়নি উপজেলা কন্ট্রোলরুম। নিজ বাড়িতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ আসবাবপত্রসহ বাড়ি ঘরের খোঁজ নিচ্ছেন অনেকই। দির্ঘ দিন পানিবন্দি থাকায় বেশির ভাগ কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মজিদ মিয়া বলেন, পানি ধীরে কমছে। দুএকদির মধ্যে বাড়িতে যাবো। বাড়িতে গিয়েওবা কি করবো। ঘর তো আর আগের মতো নেই। থাকবো কোথায়!

জানা গেছে, অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতো করো আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

বড়লো বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ও বরাদ্দ:: উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় বেড়েছে বন্যা আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যা। গত মঙ্গলবার ১ হাজার ৩১টি বন্যা আক্রান্ত পরিবারের তালিকা করা হয়। বুধবার বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর পরদিন বৃহস্পতিবার ১৫শ৯৯টি পরিবারের ১লক্ষ২০ হাজার মানুষ বন্যাক্রান্ত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। বর্তমানে মোট ৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বেড়েছে ৭৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ। মোট ৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ দেয়া হয় বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

পানিতে তলিয়েছে ২০ কমিউনিটি ক্লিনিক:: বন্যার পানিতে উপজেলায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে প্রায় ২০টি ক্লিনিকে এখনো পানি। ফলে স্বাস্থ্য সেবাও হুমকির মুখে রয়েছে। পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠন করা হয়েছে ৮টি ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোজাহারুল ইসলাম জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি থাকায় বন্যা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান ৮টি মেডিকেল টিম মাঠে রয়েছে। বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ চলমান।

খাদ্যা সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট::বন্যাকে পূজি করে উপজেলার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্য সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট তৈরী করে জিনিসপত্রের দিগুণ মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছেন। এক দোকানে গিয়ে এক সাথে কয়েক পদের পূন্য মিলছে না। ফলে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সহায়তায় ব্যক্তি বা সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসলেও বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে।

পশু খাদ্য সংকট: বন্যার পানিতে ২হাজার ৯৫ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাণী খাদ্যের বেশির ভাগ দোখান বন্ধ। ফলে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট। গরু, ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, আমাদের তো কেউ না কেউ খাবার দিচ্ছেন, কিন্তু গরু ছাগলের খাবার কেউ দেয়না। বন্যা আসার পর ৪টি গরু ও২টি ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। প্রতিদিনই তাদের কচুরি পানা খাবার হিসাবে দিচ্ছি।
ডাকাত আতঙ্ক:: বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে হাওয়র এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে ডাকাত আতঙ্ক। প্রতি রাতেই উপজেলায় ডাকাত ডুকছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলছেন অনেকেই। তাই উপজেলা জুড়ে ডাকাত আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে প্রতি রাতে। ডাকাতি প্রতিরোধে রাত জেগে গ্রাম পাহাড়া দিচ্ছেন গ্রামবাসী।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলার কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ১শ কিলোমিটার সড়ক::
বন্যায় উপজেলার প্রায় সকল সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে সড়কে যান চলাচল করতো সেই সড়কের উপর দিয়ে চলছেন নৌকা। এখন পর্যন্ত বন্যার পানি থাকায় এলজিইডির অধিনে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কে যান বাহন চলাচলের অনুপযোগী রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে পানি জমে থাকায় ৫শ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১শ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেছে এবং কার্পেটিং উঠে গেছে।
উপজেলা এলজিউডি প্রকোশলী এস এম আল মামুন বলেন, বন্যার পানি থাকায় কয়েকটি সড়কে যান চালচল করছে না। বন্যায় উপজেলার প্রায় সকল সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি কমলে পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান উর্ধতন কর্তৃপক্ষে প্রেরণ করবো।