ঢাকা ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ায় বাঁধের কাজে চেয়ারম্যানের সংখ্যালঘুদের মাটি লুটের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৩০১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে র কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে সংখ্যালঘুসহ ২৫ পরিবারের কৃষি জমি ও তিন ফসলী জমির মাটি লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। অনিয়ম আর দুর্নীতির মহোৎসব চলছে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিন হাজিপুর ইউনিয়নের রণচাপ এলাকায় গেলে দেখা যায়, মাটি কেটে প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি থেমে নেই। চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। আর এ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অদুদ বক্স। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জমির মালিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে মাটি নেয়ার কথা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদেও অভিযোগ , মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে সরকারি কাজে ব্যবহার করার কথা বলে এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের জমি থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের সাথে যোগসাজশ করে ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যদিও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দাবি, নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য খাস জমি থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য তারা এসব মাটি কেটে বাঁধ উচু নির্মাণ করছেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, মাটি কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তি অদুদ বক্স হাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের নিরীহ লোকজন তাকে কিছু বলতে গেলেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তিনি এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে পড়তে হয় নানা সমস্যায়।

জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্সকে প্রধান আসামী করে ৫ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত রায়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- হাজীপুর ইউনিয়নের ইসমাইলপুর গ্রামের বাসিন্দা ধনাই মিয়ার ছেলে মখন মিয়া ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মফিজুর রহমান জুয়েল ।

থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাজীপুর ইউনিয়নের রনচাপ এলাকায় সুমিত রায়সহ এলাকার বিভিন্ন লোকদের কৃষি জমি থেকে প্রভাবখাটিয়ে মাটি দিয়ে ঠিকাদারের লোকদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স। জমির মালিকরা কোন প্রতিবাদ করলে সরকারী কাজে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উল্টো জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। এরই জেরে প্রায় এক সপ্তাহ আগে রনচাপ এলাকায় সুমিত রায়ের মালিকানাধীন প্রায় ১ একর ২০ শতক জায়গার তিন ফসলী জমির মাটি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স ও স্থানীয় প্রভাবশালী মখন মিয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা মাটিকাটার মেশিন দিয়ে তাদের জমির মাটি কেটে নেয়। সুমিত রায় সিলেট থাকার সুবাধে তাঁর চাচাতো ভাই বরুণ রায় স্থানীয় লোকদের নিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করলে চেয়ারম্যান অদুদ বক্স ও মখন মিয়া বরুণ রায়কে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা। সংখ্যালঘু পরিবাবের লোক হওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না সুমিত রায়সহ ক্ষতির শিকার ২৫ পরিবারের লোকজন।এদিকে জমির ক্ষতিপূরণ দাবিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় রনচাপ এলাকার বাসিন্দা ধীরেন্দ্র কুমার দাস ও মৃদুল দাস। যার অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দেয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, হাজীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রনচাপ গ্রামের সুইচ গেইটের পশ্চিম দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মনু নদীর বেড়ীবাঁধের দু’পাশে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। উক্ত বাঁধের দু’পাশে তাদের প্রায় ৯০ শতক কৃষি জমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির ২৫০টি গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কৃষি জমি থেকে বাঁধে মাটি দেওয়ায় জমিতে প্রায় ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এই জমিতে আর কোন চাষাবাদ করা যাবে না। এতে তাদের প্রায় ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ধীরেন্দ্র কুমার দাসের।
ভারত থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদীকে বলা হত মৌলভীবাজারের দুঃখ। প্রতি বছরই বন্যায় প্লাবিত হতো জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা। পরে নদীর দুই পাড়ের জনপদকে বন্যার তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মনু নদীর দু’পাড়ের অন্তত কয়েকশত পরিবারের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাঁধ।

নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশ থেকে কৃষি জমির মাটি অবাধে কাটার ফলে বাঁধের নিচে প্রায় ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশেই আরেকটি গভীর নদীর সৃষ্টি হয়েছে। মুন নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে সৃষ্ট গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রথমেই ২৫টি পরিবারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে “মনু নদীর ভাঙ্গন হতে” মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় মনু নদীর বামতীরে কিলোমিটার ১৫.০০০ হতে ২৪.৫০০ এর মধ্যবর্তী ৮৩৪০ মিটার ও কিলোমিটার ২৭.০০০ হতে ৩২.৮০০ এর মধ্যবর্তী ৪৪০০ মিটার ৪০টি র‌্যাম্পসহ (সিঁড়ি) বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজ হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা থেকে রাজনগর উপজেলার তারাপাশা পর্যন্ত ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। কাজ শুরু হয়েছে প্রায় মাস খানেক আগে। কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক জানান, কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা চলছে। তাছাড়া তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল জানান, বাঁধ তৈরিতে কৃষি জমি থেকে মাটি নিতে হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জমির মালিকের সাথে চুক্তি করতে হবে। জমির মালিকের সম্মতিক্রমে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর মাটি নেয়ার কথা। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি নেয়া যাবে না। এছাড়া বাঁধের নিচ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেয়ে আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

কুলাউড়ায় বাঁধের কাজে চেয়ারম্যানের সংখ্যালঘুদের মাটি লুটের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৬:৪৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে র কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে সংখ্যালঘুসহ ২৫ পরিবারের কৃষি জমি ও তিন ফসলী জমির মাটি লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। অনিয়ম আর দুর্নীতির মহোৎসব চলছে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিন হাজিপুর ইউনিয়নের রণচাপ এলাকায় গেলে দেখা যায়, মাটি কেটে প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি থেমে নেই। চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। আর এ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অদুদ বক্স। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জমির মালিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে মাটি নেয়ার কথা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদেও অভিযোগ , মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে সরকারি কাজে ব্যবহার করার কথা বলে এলাকার নিরীহ ব্যক্তিদের জমি থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের সাথে যোগসাজশ করে ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যদিও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দাবি, নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য খাস জমি থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য তারা এসব মাটি কেটে বাঁধ উচু নির্মাণ করছেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, মাটি কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তি অদুদ বক্স হাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের নিরীহ লোকজন তাকে কিছু বলতে গেলেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তিনি এলাকায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললে পড়তে হয় নানা সমস্যায়।

জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্সকে প্রধান আসামী করে ৫ ফেব্রুয়ারি কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত রায়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন- হাজীপুর ইউনিয়নের ইসমাইলপুর গ্রামের বাসিন্দা ধনাই মিয়ার ছেলে মখন মিয়া ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মফিজুর রহমান জুয়েল ।

থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাজীপুর ইউনিয়নের রনচাপ এলাকায় সুমিত রায়সহ এলাকার বিভিন্ন লোকদের কৃষি জমি থেকে প্রভাবখাটিয়ে মাটি দিয়ে ঠিকাদারের লোকদের কাছে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করছেন ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স। জমির মালিকরা কোন প্রতিবাদ করলে সরকারী কাজে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উল্টো জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হয়। এরই জেরে প্রায় এক সপ্তাহ আগে রনচাপ এলাকায় সুমিত রায়ের মালিকানাধীন প্রায় ১ একর ২০ শতক জায়গার তিন ফসলী জমির মাটি চেয়ারম্যান অদুদ বক্স ও স্থানীয় প্রভাবশালী মখন মিয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা মাটিকাটার মেশিন দিয়ে তাদের জমির মাটি কেটে নেয়। সুমিত রায় সিলেট থাকার সুবাধে তাঁর চাচাতো ভাই বরুণ রায় স্থানীয় লোকদের নিয়ে মাটি কাটতে নিষেধ করলে চেয়ারম্যান অদুদ বক্স ও মখন মিয়া বরুণ রায়কে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা। সংখ্যালঘু পরিবাবের লোক হওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না সুমিত রায়সহ ক্ষতির শিকার ২৫ পরিবারের লোকজন।এদিকে জমির ক্ষতিপূরণ দাবিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় রনচাপ এলাকার বাসিন্দা ধীরেন্দ্র কুমার দাস ও মৃদুল দাস। যার অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে দেয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, হাজীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রনচাপ গ্রামের সুইচ গেইটের পশ্চিম দিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার মনু নদীর বেড়ীবাঁধের দু’পাশে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। উক্ত বাঁধের দু’পাশে তাদের প্রায় ৯০ শতক কৃষি জমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির ২৫০টি গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কৃষি জমি থেকে বাঁধে মাটি দেওয়ায় জমিতে প্রায় ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এই জমিতে আর কোন চাষাবাদ করা যাবে না। এতে তাদের প্রায় ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ধীরেন্দ্র কুমার দাসের।
ভারত থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা মনু নদীকে বলা হত মৌলভীবাজারের দুঃখ। প্রতি বছরই বন্যায় প্লাবিত হতো জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা। পরে নদীর দুই পাড়ের জনপদকে বন্যার তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মনু নদীর দু’পাড়ের অন্তত কয়েকশত পরিবারের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাঁধ।

নির্মাণাধীন প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশ থেকে কৃষি জমির মাটি অবাধে কাটার ফলে বাঁধের নিচে প্রায় ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশেই আরেকটি গভীর নদীর সৃষ্টি হয়েছে। মুন নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে সৃষ্ট গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রথমেই ২৫টি পরিবারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে “মনু নদীর ভাঙ্গন হতে” মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় মনু নদীর বামতীরে কিলোমিটার ১৫.০০০ হতে ২৪.৫০০ এর মধ্যবর্তী ৮৩৪০ মিটার ও কিলোমিটার ২৭.০০০ হতে ৩২.৮০০ এর মধ্যবর্তী ৪৪০০ মিটার ৪০টি র‌্যাম্পসহ (সিঁড়ি) বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজ হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা থেকে রাজনগর উপজেলার তারাপাশা পর্যন্ত ১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকায় বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। কাজ শুরু হয়েছে প্রায় মাস খানেক আগে। কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ জুন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আব্দুছ ছালেক জানান, কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা চলছে। তাছাড়া তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল জানান, বাঁধ তৈরিতে কৃষি জমি থেকে মাটি নিতে হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই জমির মালিকের সাথে চুক্তি করতে হবে। জমির মালিকের সম্মতিক্রমে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর মাটি নেয়ার কথা। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি নেয়া যাবে না। এছাড়া বাঁধের নিচ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেয়ে আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ডেকেছি।