বিএনপির কমিটিতে আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগীরা স্থান পাওয়ায় কুলাউড়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল

- আপডেট সময় ১১:৫০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিতে আওয়ামীলীগের দোসর ও সুবিধাভোগীরা স্থান পেয়েছেন। এ নিয়ে রীতিমত ক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে কুলাউড়ায়। গত ২৮ আগস্ট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন দেয় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। কমিটি অনুমোদনের কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম হতাশা। কমিটি গঠন নিয়ে ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষোভে ইউনিয়নে ইউনিয়নে চলছে লাগাতার বিক্ষোভ প্রতিবাদ সভা ও মিছিল।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীলদের উচিত ছিল যাচাই-বাছাই করে ইউনিয়ন কমিটিগুলো অনুমোদন করা। ইউনিয়ন কমিটিতে অনেক ত্যাগী, কারানির্যাতিত নেতাকর্মীদের স্থান হয়নি। বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যাদের কোনো অবদান নেই তারা অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে কাদিপুর ইউনিয়নে বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত বিএনপির নেতাকর্মীরা সম্মিলিত প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেন। এর আগে গত শনিবার (৩০ আগস্ট) একযোগে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে উপজেলার পৃথিমপাশা, শরীফপুর, হাজীপুর ও ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে। এসব কর্মসূচিতে শত শত ত্যাগী পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
এদিকে শনিবার রাতে পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির আয়োজনে বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে আওয়ামীলীগের দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত বিএনপির সম্মিলিত নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করে। পৃথিমপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী তকী খান ও বিএনপি নেতা আজমল হোসেন চৌধুরী বাতেন এ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এতে বিএনপি যুবদল ছাত্রদলের ত্যাগী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নেতৃবৃন্দরা জানান, নবগঠিত কমিটিতে স্থান হয়নি বিএনপি নেতা আব্দুল আহাদ বাবু, ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতছির আলী, সাবেক ৪ বারের সভাপতি উমর আলী, ত্যাগী নেতা আইয়ুব আলী, সিনিয়র বিএনপি নেতা রিয়াজ উদ্দিন, কারা নির্যাতিত নেতা রুশন আলী, কারানির্যাতিত যুবদল নেতা বেলাল আহমদ রব্বান, আব্দুল আহাদসহ অনেক নেতাকর্মীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের পক্ষে সরাসরি মাঠে কাজ করা আহমদ মাহমুদ উজ্জামান ডিপুকে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে। গত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এম এম শাহীনের নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি মাঠে কাজ করা মুস্তাক আহমদ চৌধুরী মামুনকে রাখা হয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি পদে। আওয়ামীলীগের দোসর হেলাল মিয়াকে ইউনিয়ন কমিটির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক ও উসমান আলীকে স্থানীয় সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সময় কামরুল হাসান সামাদ ও বাবুল আহমদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকায় তাদের দুজনকে কমিটিতে না রাখতে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের এক নেতা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রেদওয়ান খানকে নির্দেশ দেন। পরে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রেদওয়ান খানের নির্দেশনায় তাদের ওয়ার্ড কমিটিতে রাখা হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান কমিটিতে বাবুল আহমদকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কামরুল হাসান সামাদকে দপ্তর সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে।
বিএনপি নেতা নবাব আলী তকী খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে দলের জন্য কাজ করেছি। ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে আমাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি পদ দেয়া উচিত ছিল কিন্তু আমাকে ইউনিয়ন কমিটিতে সদস্য দেয়া হয়েছে। কমিটিতে যাদের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতিসহ অনেক পদে রাখা হয়েছে তারা বিগত দিনে নৌকা-পাটের সাথে কাজ করেছেন। তারা বিএনপির দুর্দিনে পাশে ছিলেন না। কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতাদের রাখা হয়নি।
বিএনপি নেতা আজমল হোসেন চৌধুরী বাতেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে আমাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন সিদ্দিকী ময়েজ ও সাধারণ সম্পাদক আহমদ উর রহমান খান মুরাদ প্রভাবিত হয়ে আওয়ামীলীগের কিছু দোসরদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। এছাড়া বিগত ১৭ বছর যারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা তাদেরকেও কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার রাতে হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা বাজারে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ২০১৮ সালে কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ইয়াকুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান হেলাল টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগের পদবীধারী নেতাদের কমিটিতে সুযোগ করে দিয়েছেন। জাতীয় শ্রমিকলীগ হাজীপুর ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতি কনা মিয়া কর্ণেলকে ইউনিয়ন বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামীলীগের দোসর তারেক আহমদকে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জুনাব আলী তালুকদারকে সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে ইউনিয়নের অনেক ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করেননি। পরে একটি ঝাড়ু মিছিল বাজার প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে গত বুধবার রাতে ইউনিয়নের বটতলা বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির কমিটি নিয়ে শরীফপুর ইউনিয়নে প্রতিবাদ সভা করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন শরীফপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক কনা মাস্টার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রানা, সহ-সভাপতি লাল মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক কমিটির যুগ্ম-আহবায়কসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বক্তারা এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া শনিবার সন্ধ্যার পর শরীফুপুর ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক কনা মাস্টারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে শতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। তারা অনতিবিলম্বে কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর ধরে ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে গিয়ে যারা বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন তাদের স্থান হয়নি নতুন কমিটিতে। ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের মনগড়া কমিটি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে শনিবার সন্ধ্যার পর ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
