জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু দেশ থেকে পালিয়ে যাননি – আমীরে জামায়াত
- আপডেট সময় ০৫:২৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩৩৩ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একটা সরকার আমাদের দেশে ছিল, তারা আমাদের সিঙ্গাপুর উপহার দিয়েছিলো। এই আমাদের রাজনগরের সিঙ্গাপুর। প্রত্যেক বছর নদী শাসনের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়। কিন্তু এটাকে সুষ্ঠুভাবে কাজ না লাগিয়ে লুটপাট করা হয়। লুটপাটের কুফল যন্ত্রণা জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখান তারা পালাতে গিয়ে বস্তা নিয়ে পালায়। এখন বন্যার স্রোতে মাছ ভাসতেছে, ওরাও এখন খালেবিলে ভাসতেছে। জনগণ সেখান থেকে তাদের ধরছে, এখন মানুষ পল দিয়ে সেইভাবে তাদের ধরতেছে। আপনারা বললেন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রাজপথে তুলে এনেছেন, আপনার কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাসজ্ঞানে তো কখনো দেখি নাই, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়ে এইভাবে কোন শাসক ও দুসরদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। আপনারা পালাবেন কেন। আমাদের নেতৃবৃন্দকে আপনার হত্যা করেছেন আমাদের কোন নেতা দেশ ছেড়ে পালাননি। এটি আমাদের বাবা দাদাদের দেশ। আমাদের কোন খালা-মাসির দেশ নেই। বাংলাদেশ আমাদের জন্ম মৃত্যুর চিরস্থায়ী ঠিকানা।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কলেজ পয়েন্টে বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ফূডপ্যাক উপহার প্রদানের সময় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে বিরাট একটি পরিবর্তন এসেছে। সাড়ে সতেরো বছর জাতির ঘাড়ে দুর্বোহ বুঝা চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রথম দুই বছর আওয়ামীলীগের আন্দোলনের ফসল মঈন ফখরুদ্দিন সরকার, তারপরের পনেরো বছর সরাসরি তারা নিজে। এই সাড়ে পনেরো বছরে জাতির কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত হেনেছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপর। পিলখানায় বিডিআরের সদর দপ্তরে নারকিয় হত্যাকাণ্ড করা হয়। সেখানে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকশ সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হরণ করা হয়। তাদেরকে হত্যা করে ড্রেনে ভাসিয়ে দেয়া হয়। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের কষ্ট জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এরপরের আঘাতটাই আসে জামায়াতে ইসলামীর উপর। ঠিক যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল তেমনি বিচারের নামে জামায়াতের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার সহকর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। দুইএকজনের জীবন্ত দেহ থেকে চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। থানায় সুস্থ মানুষকে ধরে নিয়ে মেঝেতে ফেলে সুস্থ মস্তিষ্কে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শুধু কি তাই হাজার হাজার মামলা লাখ লাখ কর্মীকে জেলে নেয়া হয়েছে। এখানে থেমে যায়নি দোকান পাট লুট করখ হয়েছে। বাড়িঘর বলডুজারদিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। চাকরি থেকে আমাদের লোকদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
আমীরে জামায়াত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। ফেনী মানুষ এখনো লাশ দাফন করার জায়গা পাচ্ছেন না। এবার আসমান যেমন আমাদের জন্য দোয়ার খুলে দিয়েছে বৃষ্টির জন্য তেমনি ভারতও সকল পানি ছেড়ে দিয়েছে, ভাসিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা ৫৩ বছর ধরে শুনে আসছি, ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু। এবার তারা পানি ছাড়লো কিন্তু আমাদেরকে বললোও না, আমরা বাধ্য হয়ে পানি ছাড়ছি, আপনার একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন। এটা কিন্তু প্রতিবেশীর শিষ্টাচার। যদি উজানের কোন দেশ আকস্মিক ছেড়ে দেয় কিন্তু ভাটির দেশকে যদি না জানায় তাহলে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা তাদের শাস্তি চাচ্ছি না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দুইটা প্রতিবেশী দেশ একসাথে বসবাস করতে চাই। আশাকরি ভবিষ্যতে তারা এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবে।
তিনি আরো বলেন, আইন হাতে নিয়ে কেউ আওয়ামীলীগ যে জঘন্য কাজ করেছে, আপনার তা করবেন না। কারো বাড়ি ঘর সম্পদ নষ্ট করবেন না। এক জালেম বিদায় হয়েছে আরেক জালেম যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। যিনি অপরাধ করেছেন, যিনি খুনি, খুনিকে সহযোগিতা করেছেন, মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়েছেন, যিনি তদন্তকে মিথ্যা সাজিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। মানুষকে বেইজ্জত করেছেন। কষ্ট দিয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে টাকা আদায় করেছেন, নির্যাতন করেছেন, হাত পা কেটে দিয়েছেন- তাদের শাস্তি অবশ্যই হবে। তাদের যিনি গডফাদার তিনি বলতেন আইন সকলের জন্য সমান। এবার সেই সমান আইন প্রয়োগ হবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন আমাদেরকে নির্মূল করার জন্য, সেই ট্রাইব্যুনালে আল্লাহ চাইলে তাদেরকেই উঠতে হবে।
পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, সিলেট দক্ষিণ জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, আঞ্চলিক টিম সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর মোঃ আবদুল মান্নান, জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহেদ আলী, জেলা সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামীর আলী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আলা উদ্দিন শাহ।
রাজনগর উপজেলা আমীর আবু রাইয়ান শাহীনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মিছবাউল হাসানের পরিচালনায় কলেজ পয়েন্ট আজ সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্য সৈয়দ তারেকুল হামিদ, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা আহমেদ ফারুক, পৌর সেক্রেটারী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী মুর্শেদ, সদর উপজেলা সেক্রেটারি দেওয়ান আশিক আল রশীদ চৌধুরী, ছাত্রশিবির শহর সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন, জেলা সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন, রাজনগর উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মোঃ শাহাব উদ্দিন, রাজনগর সদর ইউনিয়ন আমীর দেলোয়ার হোসেন বাবলু, টেংরা ইউনিয়ন সভাপতি মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত প্রতি প্যাকেট ১৫ কেজি করে রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫শত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ফু প্যাকেট উপহার প্রদান করেন।