দুর্ঘটনায় শেষ হলো ৩টি পরিবার
![](https://newssitedesign.com/newspaperpro/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় ০২:৩৪:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৭১৩ বার পড়া হয়েছে
![](https://moulvibazar24.com/wp-content/uploads/2023/11/Rahat-rakib-tea.jpg)
বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মাদানগর গ্রামের সালাতুন বেগম (৫০) ছেলে, মেয়ে, জামাতা ও নাতনীকে হারিয়ে বিলাপ করছেন সব সময় বাড়ীতে। কমলগঞ্জ উপজেলার ভেড়াছড়া গ্রামের সালামের স্ত্রী সন্তানসহ নিহত হওয়ায় বাড়ীতে বসে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা ফেরদৌসী বেগম। এছাড়াও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের গাড়ির চালক সাদির মিয়া বাড়ীতেও চলছে শোকের মাতম।
গত ৭ জানুয়ারী সকালে হবিগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাদানগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হারানো স্বজনদের জন্য মাতম চলছে। প্রতিবেশীসহ আত্মীয়স্বজন নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
রাজুর মা সালাতুন বেগমের আত্মীয় এক মহিলা শারমীন বেগম চোখ মুছতে মুছতে বললেন, “আইজ বাড়ীর মানুষ খুশিতে থাকার কথা আছিল। নতুন ধান চাল কোটাইয়া গুড়ি বানাইয়া রাখা হইছিল। পিঠা-হান্দেশ অইব। এ খুশি আর রইল না। আমরা এইটা সহ্য কতে পারছিনা কেমনে তার মা-বাবা সহ্য করবে।
দুর্ঘটনায় বেছে যান প্রবাসী রাজু আহমেদের চাচাতো ভাই নিশাত আহমদ (১৮) শরীরের অনেক স্থানে আঘাত লেগেছে।
নিশাত বলেন, খুব কুয়াশা পড়ছিল। রাস্তায় সামনের কোন গাড়ী দেখা যাচ্ছিলনা। হঠাৎ ধাক্কার আওয়াজ পাই। এরপর আর কিছু মনে নেই। পরে শুনেছি বালুবোঝাই ট্রাকের ভেতর থেকে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। নূরুল হক ও সালাতুন বেগমের তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে রাজু মালেশিয়া ও মেজ ছেলে সাজু ফ্রান্সে থাকেন এবং ছোট ছেলে শিহাব মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেনীতে পড়ত।
নিহত সালাম একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে স্ত্রীর বড় ভাই আকলিছুর রহমান রাজুকে রিসিভ করতে গিয়েছিলেন ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরছিলেন। ঢাকা থেকে ফেরার পথে ভোরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী, স্ত্রী, সন্তানসহ ৫ জনের জীবনপ্রদ্বীপ নিভে গেল। একসঙ্গে স্বামী, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে হারানোর ফলে ভেড়াছড়া গ্রামের বাড়িটিতে এখন শুধুই বিষাদের ছায়া। ভেড়াছড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে শায়িত করা হয়েছে।
ভেড়াছড়া গ্রামের নিহত আব্দুস সালামের বাড়িতে সরেজমিন গেলে দেখা যায়, এখন বাড়ীতে লোকের ভিড় রয়েছে। নিহত সালামের লাশ দাফনের পর থেকে বৃদ্ধ মা ফেরদৌসী বেগম খাটের এক পাশে বসে কাঁদছেন। অন্য রুমে তিন বোনসহ স্বজনরা আহাজারি করছেন।নাতনি, ছেলের বউ ও ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা ফেরদৌসী বেগম বলেন, “আল্লাহ আমার আদরের সন্তানসহ নাতনিকে নিয়ে গেল। এখন আর ছেলেরে কই পাইমু রে”।
একথা বলেই বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। ছেলে, নাতনি ও ছেলের বউকে হারিয়ে সালামের মা ফেরদৌসী বেগমের আহাজারিতে গোটা বাড়িতে কান্নার রোল হচ্ছে সব সময়।স্বজনরা হয়ে পড়েছেন বাকরুদ্ধ। সালামের লাশ ও সন্ধ্যার পর সালামের স্ত্রী সাদিয়া বেগম ও একমাত্র মেয়ে হাবিবার লাশ ভেড়াছড়া গ্রামের বাড়িতে আসে। লাশ বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শত শত মানুষ ভিড় করেন লাশ দেখতে। বাদ মাগরিব তিন জনের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
নিহত সালামের চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদ ও প্রতিবেশী জুয়েল আহমদ বলেন, ‘সালাম তার স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল তার বিদেশ ফেরত স্ত্রীর বড় ভাইকে ঢাকা থেকে আনতে। কিন্তু সে স্বপরিবারে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলো।
কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের মাদানগর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আকলিছুর রহমান রাজু ৮ বছর ধরে কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তিনি গত শুক্রবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দে অবতরণ করেন। তাকে এগিয়ে আনতে বিমানবন্দরে যান তার বাবা নুরুল ইসলাম, ছোট বোন সাদিয়া বেগম, বোন জামাই আব্দুস সালাম, ভাগ্নী হাবিবা, ছোট ভাই শিহাবসহ ৮ জন একটি নোহা মাইক্রোবাসযোগে যান।
বাড়িতে ফেরার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহপুর নামক স্থানে বালুবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে মারা যান আব্দুস সালাম (৩৭)। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান সালামের স্ত্রী সাদিয়া (২৭), মেয়ে হাবিবা (৩) ও আতিকুর রহমান শিহাব (১৫) ও গাড়ির চালক পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর গ্রামের সাদির মিয়া (৩০)। আহত প্রবাসী রাজু, তার বাবা নুরুল ইসলাম এখন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত চাচাতো ভাই নিশাত আহমদ চিকিৎসা শেষে বাড়ীতে রয়েছেন।
আব্দুস সালামরা ৬ ভাই, তিন বোন। তিনি ভাইদের বড় ছিলেন। তিনি পেশায় একজন মুদি দোকানী। এদিকে এ দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসীর ভাই আতিকুর রহমান শিহাবকে কুলাউড়ার মাদানগর পারিবারিক কবরস্থানে ও গাড়ি চালক সাদির মিয়াকে তার গ্রামের বাড়ি আলীনগর গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান হেলাল বলেন, সাদিয়া বেগমের মাত্র ৪ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। এভাবে কোনো দুর্ঘটনায় এ এলাকায় এক পরিবারের এত প্রাণহানি হয়নি। এ জন্য পুরো এলাকার মানুষ শোকাহত।
![](https://moulvibazar24.com/wp-content/uploads/2022/12/Untitled-6-×-4-in.gif)