ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার জ্ঞানভান্ডার ছড়িয়ে দিয়েছেন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে

ফয়সল আহমদ রুহেল :

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। সামাজিক বিভিন্ন গণমুখী আন্দোলন সম্প্রসারিত করেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইতিহাস লিখেন। সংস্কৃতিমনা ছিলেন। প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া লিখেছেন। জ্ঞানভান্ডার নিজের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা বহু গুণে গুণান্বিত কীর্তিমান দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার কিভাবে নিজের জ্ঞান  জ্ঞানভান্ডার বিলিয়ে দিয়েছেন সে কথা বলছি। তিনি শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক।

জন্ম : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত গিরীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য ও মাতা মৃত কনকপ্রভা ভট্টাচার্য। শিক্ষকের ভাই-বোনের সংখ্যা ১ ভাই ও ১ বোন। তাদের স্থায়ী বসবাস মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে।

শিক্ষা জীবন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৫৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু। মাধ্যমিক শিক্ষা ১৯৫৮ সালে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু। ১৯৬৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। তখন মানবিক বিভাগ ছাড়া কোন বিভাগ চালু হয়নি। এরপর কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ১৯৬৬ সালে মৌলভীবাজার কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২য় স্থান অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মৌলভীবাজার কলেজ হতে বিএ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন ১৯৭০ সালে। ১৯৮৭ সালে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১ম শ্রেণীতে বিএড ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা আলী আমজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ১১ বৎসর চাকুরী করার পর ১৯৮০ সালে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩২ বৎসর চাকুরী করে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।  তিনি সর্বমোট ৪৩ বৎসর মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন। কিন্তু পিতা-মাতার অসুস্থতার কারনে প্রশিক্ষণে যোগদান না করায় চাকুরীতে যোগদান করা হয়নি।

দায়িত্ব পালন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার শিক্ষকতা জীবনে কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডে পরীক্ষক, টেবুলেটর, স্কুটিনাইজার এর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামের শিক্ষক ও পরীক্ষক ছিলেন।

এ শিক্ষকের যত কৃতিত্ব : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৮৭ সালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লিখে পুরস্কৃত হন। প্রবন্ধাকারে তা’ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৫০ বৎসর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘শ্রীমঙ্গলিকা’ স্মারক গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং একটি মূল্যবান প্রবন্ধও সংযোজিত হয়েছিল উক্ত গ্রন্থে। তিনি ছাত্র জীবনে স্কুলে স্কাউট এবং প্রাথমিক ‘পদক’ পেয়েছিলেন। চাকুরী জীবনে যুব রেডক্রিসেন্ট এর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যোগদান করেন।

আশির দশকে বিদ্যালয়ে জেলা পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলা শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হত। সে সময় কয়েক বৎসর বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ সম্পাদনা করেন। ঐ দশকে বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করেন।

গত চার দশক ধরে শ্রীমঙ্গলের জনজীবনের সঙ্গে যত প্রকারের ‘স্মরণিকা’, ‘স্মারক গ্রন্থ’ ব্রুশর প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোতে দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যারের লিখিত প্রবন্ধাদি, কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় ও দেশীয় সংবাদপত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ডে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উচ্চ পদে এখনও কাজ করছেন।

যত কর্মকান্ড : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রী কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য পদ অলংকৃত ছিলেন। তিনি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান টিআইবি এর শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ নামে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ধর্মীয়ভাবে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ি, লোকনাথ বাবার আশ্রম, সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী পরিচালনা পরিষদ, জগন্নাথ দেবের আখড়ার পরিচালনা পরিষদ এর পরিচালনায় দীর্ঘদিন থেকে জড়িত আছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিশেষ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ, কচিকাঁচার আসর শিশু সংগঠন পরিচালনের সঙ্গে জড়িত থেকে কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। শ্রীমঙ্গল বইমেলা, নববর্ষ মেলা, বিজয় মেলায় সবসময় সম্পৃক্ত আছেন।

পরিবেশ রক্ষায়, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন ও সামাজিক বিভিন্ন গণমুখী আন্দোলনের কর্মকান্ডকে সম্প্রসারিত করে চলেছেন। বেশ কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। তাঁর এযাবৎ “ছন্দে ছন্দে শব্দ শিখন”, “অন্তপুরে অনন্তের আলো”, “ফিরে দেখা”, “শ্রীমঙ্গল জনভূমে সনাতনী স্রোতধারা” নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার ইত্তেফাক, সংবাদ, সমাজ দর্পন, মাতৃভূমি প্রভৃতি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকায় শতাধিক প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া প্রকাশিত হয়েছে।

পারিবারিক :  দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য এর স্ত্রী রমা চক্রবর্তী দীর্ঘ ২৬ বৎসর শ্রীমঙ্গল উদয়ন বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করে অবসর জীবনযাপন করছেন।  এই শিক্ষক ১ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। মেয়ে বড় বিবাহিত। জামাতা ব্যাংকার। ছেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রো-ইকোনমিক্সে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। স্যারের বড়বোন অর্পনা ভট্টাচার্য দীর্ঘ ৫০ বৎসর শ্রীমঙ্গল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে (বেসরকারী-সরকারী) সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করে অবসর জীবনযাপন করছেন।
দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যারের ভগ্নিপতিও বাডস্ রেসিডেনসিয়েল মডেল স্কুলে চাকুরী করে পরলোক গমন করেছেন।

২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
৭৬ বছর বয়সী এই গুণী শিক্ষক উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের নিজ বাড়ীতে স্ত্রী ও বড়বোনসহ অবসর জীবনযাপন করছেন।  দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার নিজের সাফল্য নিয়ে, কাজ নিয়ে  অহমিকা নেই। নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সব কাজে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই শিক্ষক ৪৩ বছর শিক্ষকতা করেন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। তাঁর অবদান মনে রাখবে উপজেলা শিক্ষক সমাজ। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার জ্ঞানভান্ডার ছড়িয়ে দিয়েছেন

আপডেট সময় ০১:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফয়সল আহমদ রুহেল :

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। সামাজিক বিভিন্ন গণমুখী আন্দোলন সম্প্রসারিত করেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইতিহাস লিখেন। সংস্কৃতিমনা ছিলেন। প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া লিখেছেন। জ্ঞানভান্ডার নিজের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা বহু গুণে গুণান্বিত কীর্তিমান দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার কিভাবে নিজের জ্ঞান  জ্ঞানভান্ডার বিলিয়ে দিয়েছেন সে কথা বলছি। তিনি শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক।

জন্ম : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত গিরীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য ও মাতা মৃত কনকপ্রভা ভট্টাচার্য। শিক্ষকের ভাই-বোনের সংখ্যা ১ ভাই ও ১ বোন। তাদের স্থায়ী বসবাস মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে।

শিক্ষা জীবন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৫৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু। মাধ্যমিক শিক্ষা ১৯৫৮ সালে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শুরু। ১৯৬৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড হতে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। তখন মানবিক বিভাগ ছাড়া কোন বিভাগ চালু হয়নি। এরপর কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ১৯৬৬ সালে মৌলভীবাজার কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২য় স্থান অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মৌলভীবাজার কলেজ হতে বিএ দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন ১৯৭০ সালে। ১৯৮৭ সালে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে ১ম শ্রেণীতে বিএড ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা আলী আমজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ১১ বৎসর চাকুরী করার পর ১৯৮০ সালে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩২ বৎসর চাকুরী করে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।  তিনি সর্বমোট ৪৩ বৎসর মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলেন। কিন্তু পিতা-মাতার অসুস্থতার কারনে প্রশিক্ষণে যোগদান না করায় চাকুরীতে যোগদান করা হয়নি।

দায়িত্ব পালন : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার শিক্ষকতা জীবনে কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডে পরীক্ষক, টেবুলেটর, স্কুটিনাইজার এর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামের শিক্ষক ও পরীক্ষক ছিলেন।

এ শিক্ষকের যত কৃতিত্ব : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৮৭ সালে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস লিখে পুরস্কৃত হন। প্রবন্ধাকারে তা’ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৫০ বৎসর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘শ্রীমঙ্গলিকা’ স্মারক গ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং একটি মূল্যবান প্রবন্ধও সংযোজিত হয়েছিল উক্ত গ্রন্থে। তিনি ছাত্র জীবনে স্কুলে স্কাউট এবং প্রাথমিক ‘পদক’ পেয়েছিলেন। চাকুরী জীবনে যুব রেডক্রিসেন্ট এর সদস্য হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যোগদান করেন।

আশির দশকে বিদ্যালয়ে জেলা পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলা শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হত। সে সময় কয়েক বৎসর বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘স্মরণিকা’ সম্পাদনা করেন। ঐ দশকে বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করেন।

গত চার দশক ধরে শ্রীমঙ্গলের জনজীবনের সঙ্গে যত প্রকারের ‘স্মরণিকা’, ‘স্মারক গ্রন্থ’ ব্রুশর প্রকাশিত হয়েছে সবগুলোতে দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যারের লিখিত প্রবন্ধাদি, কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় ও দেশীয় সংবাদপত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধাদি প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক কর্মকান্ডে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উচ্চ পদে এখনও কাজ করছেন।

যত কর্মকান্ড : দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য শ্রীমঙ্গল চন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রী কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য পদ অলংকৃত ছিলেন। তিনি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান টিআইবি এর শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ নামে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ধর্মীয়ভাবে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, শ্রীশ্রী শ্রীমঙ্গলেশ্বরী কালীবাড়ি, লোকনাথ বাবার আশ্রম, সার্বজনীন দুর্গাবাড়ী পরিচালনা পরিষদ, জগন্নাথ দেবের আখড়ার পরিচালনা পরিষদ এর পরিচালনায় দীর্ঘদিন থেকে জড়িত আছেন। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিশেষ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ, কচিকাঁচার আসর শিশু সংগঠন পরিচালনের সঙ্গে জড়িত থেকে কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। শ্রীমঙ্গল বইমেলা, নববর্ষ মেলা, বিজয় মেলায় সবসময় সম্পৃক্ত আছেন।

পরিবেশ রক্ষায়, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন ও সামাজিক বিভিন্ন গণমুখী আন্দোলনের কর্মকান্ডকে সম্প্রসারিত করে চলেছেন। বেশ কয়েকটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। তাঁর এযাবৎ “ছন্দে ছন্দে শব্দ শিখন”, “অন্তপুরে অনন্তের আলো”, “ফিরে দেখা”, “শ্রীমঙ্গল জনভূমে সনাতনী স্রোতধারা” নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার ইত্তেফাক, সংবাদ, সমাজ দর্পন, মাতৃভূমি প্রভৃতি দৈনিক ও মাসিক পত্রিকায় শতাধিক প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া প্রকাশিত হয়েছে।

পারিবারিক :  দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য এর স্ত্রী রমা চক্রবর্তী দীর্ঘ ২৬ বৎসর শ্রীমঙ্গল উদয়ন বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করে অবসর জীবনযাপন করছেন।  এই শিক্ষক ১ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। মেয়ে বড় বিবাহিত। জামাতা ব্যাংকার। ছেলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগ্রো-ইকোনমিক্সে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। স্যারের বড়বোন অর্পনা ভট্টাচার্য দীর্ঘ ৫০ বৎসর শ্রীমঙ্গল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে (বেসরকারী-সরকারী) সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করে অবসর জীবনযাপন করছেন।
দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যারের ভগ্নিপতিও বাডস্ রেসিডেনসিয়েল মডেল স্কুলে চাকুরী করে পরলোক গমন করেছেন।

২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
৭৬ বছর বয়সী এই গুণী শিক্ষক উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামের নিজ বাড়ীতে স্ত্রী ও বড়বোনসহ অবসর জীবনযাপন করছেন।  দ্বীপেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য স্যার নিজের সাফল্য নিয়ে, কাজ নিয়ে  অহমিকা নেই। নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সব কাজে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এই শিক্ষক ৪৩ বছর শিক্ষকতা করেন অত্যন্ত সুনাম ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। তাঁর অবদান মনে রাখবে উপজেলা শিক্ষক সমাজ। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ূ কামনা করি।