ঢাকা ০২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদকসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদকসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে শ্রীমঙ্গল দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার কমলগঞ্জে শমশেরনগরে রেলপথ ঘেষে জমে উঠে অবৈধ পশুর হাট; দুর্ঘটনার আশঙ্কা লাখাইয়ে দিনব্যাপী কৃষক কৃষাণী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত কোটচাঁদপুরে দুইটি ডিপ টিউবওয়েলের সেকশন পাইপ কেটে দিয়েছেন দূর্বৃত্তরা মৌলভীবাজারে চোরাই গাড়ি উদ্ধার, গ্রেফতার -১ পৌরসভার উদ্যোগে জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত পানি বিতরণ মৌলভীবাজারে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে র‌্যালী আলোচনা সভা মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে ৭জন প্রার্থী বৈধ,বাতিল-১

প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা না মেয়র আরিফের

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৪১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩
  • / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে

সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা না দিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, তাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানো যাবে না।

শনিবার বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে নাগরিক সভায় এমনটি বলেন আরিফুল হক।

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে গত জানুয়ারিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আব্দুস সাত্তার। ওই নির্বাচন ‌’উকিল আব্দুস সাত্তার মডেল হিসেবে পরিচিতি পায় রাজনীতিতে। সিলেট সিটিতে বিএনপি নেতা আরিফুল হকও সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিলো।

তবে শনিবার সমাবেশে এমন গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে আরিফুল হক বলেন, যারা মনে মনে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনো উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, আমি বিএনপির আরিফ। তাই আমার নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও আমার মায়ের নির্দেশে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবো না। তাদের আদেশই আমার শিরোধার্য।

দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই সমাবেশে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।

আরিফ বলেন, নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।

বর্তমান মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিলো জল্পনা কল্পনা। আরিফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহও প্রকাশ পায় তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলো। এ অবস্থায় দল আর নির্বাচন- এই দুটির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।

অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলে থাকার ঘোষণাই দিলেন আরিফ। শনিবারের নাগরিক সভায় তিনি বলেন, বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকেও প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সকলের কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সকল ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।

প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারে চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা এক জায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।

নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।

সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত আট জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আরিফুল হক প্রার্থী হবেন কিনা এ নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল ছিলো সবচেয়ে বেশি। আরিফ আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন ২০ মে সমাবেশ করে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। তাই শনিবারের এই সমাবেশ ঘিরে আগ্রহ ছিলো সবার।

দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণির মানুষ। মিছিল নিয়েও আসেন অনেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা না মেয়র আরিফের

আপডেট সময় ০১:৪১:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ মে ২০২৩

সিটি নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা না দিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, তাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানো যাবে না।

শনিবার বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে নাগরিক সভায় এমনটি বলেন আরিফুল হক।

বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে গত জানুয়ারিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আব্দুস সাত্তার। ওই নির্বাচন ‌’উকিল আব্দুস সাত্তার মডেল হিসেবে পরিচিতি পায় রাজনীতিতে। সিলেট সিটিতে বিএনপি নেতা আরিফুল হকও সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিলো।

তবে শনিবার সমাবেশে এমন গুঞ্জনকে উড়িয়ে দিয়ে আরিফুল হক বলেন, যারা মনে মনে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনো উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, আমি বিএনপির আরিফ। তাই আমার নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান ও আমার মায়ের নির্দেশে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবো না। তাদের আদেশই আমার শিরোধার্য।

দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এই সমাবেশে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

আসন্ন নির্বাচনকে প্রহসনের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারে অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ভোট ডাকাতির ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচনও কমিশন সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ডিজিটাল ভোট ডাকাতি চায়।

আরিফ বলেন, নির্বাচনে কারচুপির নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আমার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচনে যেতে পারি না। আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।

বর্তমান মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিলো জল্পনা কল্পনা। আরিফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহও প্রকাশ পায় তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলো। এ অবস্থায় দল আর নির্বাচন- এই দুটির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।

অবশেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে দলে থাকার ঘোষণাই দিলেন আরিফ। শনিবারের নাগরিক সভায় তিনি বলেন, বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকেও প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সকলের কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সকল ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।

প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারে চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা এক জায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।

নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।

সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত আট জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আরিফুল হক প্রার্থী হবেন কিনা এ নিয়ে নগরবাসীর কৌতূহল ছিলো সবচেয়ে বেশি। আরিফ আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলেন ২০ মে সমাবেশ করে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। তাই শনিবারের এই সমাবেশ ঘিরে আগ্রহ ছিলো সবার।

দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রারি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণির মানুষ। মিছিল নিয়েও আসেন অনেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।