ব্রেকিং নিউজ
বহুমাত্রিক জীবনানন্দ দাশ এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন
নিজস্ব সংবাদ :
- আপডেট সময় ০৪:১৫:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০২৩
- / ৫০৮ বার পড়া হয়েছে
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা জীবন বড়ই বিচিত্র ও দ্বান্দ্বিক। অনেক কিছু পেয়েও জীবনে ক্লান্তি আসতে পারে আবার অনেক কিছু না পেয়ে জীবনে হতাশা নেমে আসে।কালজয়ী কবি জীবনানন্দ দাশ যিনি তার জীবদ্দশায় খুব বেশি আলোচিত না হলেও মৃত্যুর পর বাংলা ভাষার কবিতার জগতে রবীন্দ্রনাথের পর সবচেয়ে বেশি পাঠক নন্দিত জনপ্রিয় কবি।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা চিত্ররুপময় ও তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে,স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তা অকপটে স্বীকার করেছেন। জীবনানন্দের কবিতায় আধুনিকতার ছোয়া স্পষ্ট। কবিতায় তার উপমার প্রয়োগ কবিকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে।কবির অমর সৃষ্টি বনলতা সেন কবিতা পাঠ করলে হৃদয়গ্রাহী সব উপমা মুগ্ধতার পরশ এনে দেয়।
অনেক ঘুরেছি আমি, বিম্বিসার ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি, আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য ; সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্য আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল ইতিহাস, প্রকৃতি ও জীবজন্তু সহ অনেক বিষয়ই জীবনানন্দের কবিতার উপমায় রুপক অর্থ প্রকাশ করেছে যা পাঠকের হৃদয়ে অংকন করেছে স্থায়ী দাগ এবং জীবনানন্দ দাশ এর কবিতা চিত্রশিল্পীদের কাছে নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের অফুরন্ত ভাবনার খোরাক। ২. “আট বছর আগে একদিন” কবিতায় কবি আত্মহত্যার স্বরুপ উন্মোচন করেছেন।কোন ভাবনা থেকে কবিতার সেই ব্যাক্তি আত্মহত্যা করেছিলেন সেই রহস্য অনুসন্ধান পাঠককে রোমাঞ্চিত ও জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।সবকিছু থেকেও জীবনে আত্মহত্যার প্রবণতা জীবনকে নিয়ে পর্যালোচনার আর এক নতুন দিগন্ত।জীবনে এত ক্লান্তি কেন? লাশকাটা ঘরে চিৎ হয়ে শুয়ে টেবিলের উপরে থাকাই কি ক্লান্তির সমাধান।
যেখানে কবির উচ্চারণে জানা যায় বধূ শুয়ে ছিল পাশে- শিশুটিও ছিল; প্রেম ছিল,আশা ছিল- জ্যোৎস্নায় – তবু সে দেখিল কোন ভূত? ঘুম কেন ভেণে গেল তার? অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল-লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার। কবির নিজের জীবনেও কি ক্লান্তি এসেছিল? ধারণা করা হয় ১৯৫৪ সালের ট্রাম দূর্ঘটনায় কবির মৃত্যু আত্মহত্যা। কেননা কলকাতায় গত একশ বছরে ট্রাম দূর্ঘটনায় একটিই মৃত্যু এবং সেটি কবি জীবনানন্দ দাশ। পঞ্চ পান্ডবের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতায় আধুনিকতার রুপান্তরকরণে অগ্রনায়ক। কবি ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া করেছেন এবং বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ,বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ সহ অনেক কলেজেই থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন।তবে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইংরেজি ভাষার কবি হওয়ার চেষ্টা করেননি।
রুপসী বাংলার প্রকৃতি ও নৈসর্গিকতা নিয়েই মহা মূল্যবান অনেক কবিতা লিখেছেন। কল্পনায় মৃত্যুর পরেও ফিরে আসতে চেয়েছেন ধানসিঁড়ি নদী বিধৌত তার প্রিয় বাংলায়। “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় – শঙখচিল শালিখের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল -ছায়ায়; অথবা বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,তাই আমি পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর ; অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতো বড় পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দোয়েলপাখি দুই সন্তানের জনক কবি জীবনানন্দ দাশ স্ত্রী লাবণ্যপ্রভা কে নিয়ে সুখী ছিলেন না।
তিনি তার কাজিন শোভোনার প্রেমে আসক্ত ছিলেন যদিও সেই প্রেম প্রস্ফুটিত হয়নি। প্রেম ও প্রেমিকা নিয়ে কবির মনে হারানোর অজানা আশংকা ছিল।আকাশলীনা কবিতায় সেই আশংকার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় সূরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সূরঞ্জনা; নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাথে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; কবি জীবনানন্দ দাশ তার পঞ্চান্ন বছরের যাপিত জীবনে অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে গেছেন,একের পর এক কলেজে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
১৯৪৭ এ দেশভাগের সময় বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।মনের গহীনে পুষে বেরিয়েছেন গভীর মর্মবেদনা। ভাগ্যের লিখন অলঙ্ঘনীয় তাই বিধাতা কবিকে সম্মানিত করেছেন তার কালজয়ী লেখার কোটি কোটি পাঠকের ভালোবাসায় জীবদ্দশায় না হলেও মৃত্যুর পর।
লেখক : উপ-সহকারী পরিচালক র্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সাবেক ছাত্র।
ট্যাগস :