ঢাকা ০২:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাঁশের মই দিয়ে উঠতে হয় কোটি টাকার সেতুতে

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২
  • / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে
সৈয়দ মহসিন পারভেজ: স্থানীয়দের সুবিধার কথা ভেবে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই সেতু এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে উঁচু সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই ব্যবহার করে পারাপার হচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মনু নদের ওপর নির্মিত প্রায় ৩২ কোটি টাকার রাজাপুরের সেতু। ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে বছরখানেক আগে কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুতে সংযোগ সড়ক এখনো হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই দিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি বলে দাবি করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, স্বপ্নের এই সেতুটি রাস্তা থেকে বেশ উঁচুতে রয়েছে। এটির পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট এবং পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু। তাই বাঁশের মই দিয়ে বর্তমানে ওঠানামার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সওজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পূর্ব পাশে একটি ও পশ্চিম পাশে আরেকটি খেয়াঘাট ছিল। পশ্চিম পারে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার লোকজন খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হয় রাজাপুর সেতু। সেতুর দুই পাশে কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়ক। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুর দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ এখনো পড়ে আছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, হাজীপুর ও শরীফপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের প্রতিদিন এই সেতু পার হয়ে পৃথিমপাশা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
হাজারো মানুষের স্বপ্নের সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ না হওয়ায় উন্নয়নের পথ খুলছে না। দ্রুত এই সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সওজের কুলাউড়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার জানান, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ভূমি অধিগ্রহণের ফাইল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ফাইল পেলে দ্রুতই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাঁশের মই দিয়ে উঠতে হয় কোটি টাকার সেতুতে

আপডেট সময় ০৩:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২
সৈয়দ মহসিন পারভেজ: স্থানীয়দের সুবিধার কথা ভেবে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই সেতু এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে উঁচু সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই ব্যবহার করে পারাপার হচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মনু নদের ওপর নির্মিত প্রায় ৩২ কোটি টাকার রাজাপুরের সেতু। ২০১৮ সালে এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে বছরখানেক আগে কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুতে সংযোগ সড়ক এখনো হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই দিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি বলে দাবি করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, স্বপ্নের এই সেতুটি রাস্তা থেকে বেশ উঁচুতে রয়েছে। এটির পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট এবং পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু। তাই বাঁশের মই দিয়ে বর্তমানে ওঠানামার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সওজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পূর্ব পাশে একটি ও পশ্চিম পাশে আরেকটি খেয়াঘাট ছিল। পশ্চিম পারে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। এসব এলাকার লোকজন খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।
এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ কুলাউড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকায় মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর নাম দেওয়া হয় রাজাপুর সেতু। সেতুর দুই পাশে কুলাউড়া-রবিরবাজার-শরীফপুর সড়ক। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়।
যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুর দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ এখনো পড়ে আছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, হাজীপুর ও শরীফপুরসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের প্রতিদিন এই সেতু পার হয়ে পৃথিমপাশা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
হাজারো মানুষের স্বপ্নের সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ না হওয়ায় উন্নয়নের পথ খুলছে না। দ্রুত এই সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সওজের কুলাউড়া কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার জানান, রাজাপুর সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য মোট ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ভূমি অধিগ্রহণের ফাইল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ফাইল পেলে দ্রুতই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।