ঢাকা ০১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
গাজীপুরে সাংবাদিককে কুপিয়ে হ/ত্যা: মৌলভীবাজার২৪ ডট কমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ যুব সমাজ হচ্ছে পরিবর্তনের মূল,৩৬ জুলাইয়ে যুব সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য: আব্দুল মান্নান ঝুলনযাত্রা মন্ডপ পরিদর্শন করে সনাতন ধর্মলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণের অগ্রগতি, উপস্থিতি ও শিক্ষার গুণগত মান বিষয়ে খোঁজখবর নেনন – জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী খু/ন উলুয়াইল ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন জুড়ীর ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান গ্রে/ফ/তা/র মৌলভীবাজারে ডিবির অভিযানে ৭৩ লক্ষাধিক টাকার চোরাই প্রসাধনী জব্দ, আটক-১ মনূনদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ মছব্বির বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কমলগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন

বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের মিডিয়া

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১১৬৮ বার পড়া হয়েছে

১৯৭৯ সালে ছিলাম প্রথম শ্রেনীর ছাত্র। আমাদের এলাকায় বিপুল সংখ্যক সনাতনী লোকজনের বসবাস। এখানে মালাকার রবিদাস শব্দকর দাস পাল বারই রায় কামার কুমার থেকে অনেক সনাতনী ব্রাহ্মণ পরিবারও রয়েছে। স্কুলে ভর্তি হয়ে সহপাঠী হিসেবে পেলাম রাখাল, কটন, পুলিন, শিখা শিপ্রা আরো অনেককে। পুরো ক্লাসে ছেলেদের মধ্যে আমি মুসলিম। আর মেয়েদের মধ্যে প্রয়াত বিউটি, লাভলী ও শেলী। বাকি সকলেইছিলেন সনাতনী। কিন্তু আমরা কখনো ধর্মীয় বিবেচনায় এলাকায় চলাফেরা করিনি।বিকেলে খেলার মাঠে সনাতনীদের আধিক্য। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো দেয়াল ছিলো না । কী আনন্দ উল্ল্যাস হাসিখুশি। একটা দীর্ঘ সময় আমরা এভাবে কাটিয়েছি।
আমার পিতা মরহুম আব্দুল লতিফ (ললই বাবু) ছিলেন সালিশ ব্যক্তিত্ব। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখতাম পবিন্ড দা, সুনীল দে, নন্দলাল দাস,রাধাবল্লভ কাকা এমন অনেক সনাতনী লোকজন আসতেন তাদের সৃষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমার আব্বা তাদের কথা অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। অনেক বিষয় সমাধান করে দিতেন। লক্ষীকান্ত দা,ধরনী দা, সুনীল স্যার, প্রভাত স্যার, মনিন্দ্র স্যার, কৃপাসিন্ধু স্যার, রতিশবাবু স্যার আমাদের অনেক স্নেহ করতেন। প্রভাত স্যার, লোকেশ দা,সঞ্জয় বাবু, রন্টু দা, অনন্ত বাবু, সুমন্ত স্যার, বকুল পাল, নিতাই, বিধান বাবু, পঅবিন্ড দা, পরিমল দা, অমরেশ মামা, রামকৃষ্ণ স্যার, রাজেশ্বর এমন আরও অনেকে আমার কতো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার। পৌষ সংক্রান্তি এলে মুক্তিযোদ্ধা সুশীল দার বাড়িতে আমাদের কমন নিমন্ত্রণ থাকতো। বিকেলে বেড়াতে যেতাম দাসপাড়া পালপাড়া, হরিচকসঅহ বিভিন্ন সনাতনী বাড়িতে। পূজাপার্বণ, কীর্তন, নামজজ্ঞ এমনকি দুর্গাপূজার সময় নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। ৪ বারের চেয়ারম্যান নির্বাচন আর ৫ বছর চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করতে যেয়ে সনাতনী মামা, কাকা, ভাইদের সীমাহীন সমর্থন পেয়েছি। সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। একটি বারও মনে আসেনি কে হিন্দু আর কে মুসলিম!!
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর যেনো এই ভালোবাসার মাঝখানে দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ভারত ।
৫ আগস্ট দেশে যে পরিবর্ত হয়েছে সাথে সাথে আমরা একটা বার্তা দেই যেনো কোনো জাতিগত দাঙ্গা ফ্যাসাদ না হয়।এই ৪ মাসে আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নে কোনো হিন্দু মুসলিম ফিতনা ফ্যাসাদ হয়নি। কেউ একটা ঢিল পর্যন্ত মারেনি। আগের মতোই হিন্দুদের দোকান থেকে মুসলিমরা বাজার সদায় নিচ্ছেন। একসাথে বাজার করে বাড়ি ফিরছেন। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। কিন্তু দূ:খজনক বিষয় ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রচার করা হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে! এসব ঘটনা কোথায় ঘটছে আমরা জানি না। দেশের স্বার্থে এসব অপপ্রচারের নিন্দা করতে গিয়ে বাড়ছে আমাদের দুরত্ব। বলা যায় ভারতীয় মিডিয়া আর ইসকনের কয়েক বহিস্কৃত নেতা দেশের হিন্দু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
আব্দুল বাছিত বাচ্চু
গণমাধ্যম কর্মী
সাবেক চেয়ারম্যান
১০ নং হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ
কুলাউড়া

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের মিডিয়া

আপডেট সময় ১০:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

১৯৭৯ সালে ছিলাম প্রথম শ্রেনীর ছাত্র। আমাদের এলাকায় বিপুল সংখ্যক সনাতনী লোকজনের বসবাস। এখানে মালাকার রবিদাস শব্দকর দাস পাল বারই রায় কামার কুমার থেকে অনেক সনাতনী ব্রাহ্মণ পরিবারও রয়েছে। স্কুলে ভর্তি হয়ে সহপাঠী হিসেবে পেলাম রাখাল, কটন, পুলিন, শিখা শিপ্রা আরো অনেককে। পুরো ক্লাসে ছেলেদের মধ্যে আমি মুসলিম। আর মেয়েদের মধ্যে প্রয়াত বিউটি, লাভলী ও শেলী। বাকি সকলেইছিলেন সনাতনী। কিন্তু আমরা কখনো ধর্মীয় বিবেচনায় এলাকায় চলাফেরা করিনি।বিকেলে খেলার মাঠে সনাতনীদের আধিক্য। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো দেয়াল ছিলো না । কী আনন্দ উল্ল্যাস হাসিখুশি। একটা দীর্ঘ সময় আমরা এভাবে কাটিয়েছি।
আমার পিতা মরহুম আব্দুল লতিফ (ললই বাবু) ছিলেন সালিশ ব্যক্তিত্ব। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখতাম পবিন্ড দা, সুনীল দে, নন্দলাল দাস,রাধাবল্লভ কাকা এমন অনেক সনাতনী লোকজন আসতেন তাদের সৃষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমার আব্বা তাদের কথা অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। অনেক বিষয় সমাধান করে দিতেন। লক্ষীকান্ত দা,ধরনী দা, সুনীল স্যার, প্রভাত স্যার, মনিন্দ্র স্যার, কৃপাসিন্ধু স্যার, রতিশবাবু স্যার আমাদের অনেক স্নেহ করতেন। প্রভাত স্যার, লোকেশ দা,সঞ্জয় বাবু, রন্টু দা, অনন্ত বাবু, সুমন্ত স্যার, বকুল পাল, নিতাই, বিধান বাবু, পঅবিন্ড দা, পরিমল দা, অমরেশ মামা, রামকৃষ্ণ স্যার, রাজেশ্বর এমন আরও অনেকে আমার কতো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার। পৌষ সংক্রান্তি এলে মুক্তিযোদ্ধা সুশীল দার বাড়িতে আমাদের কমন নিমন্ত্রণ থাকতো। বিকেলে বেড়াতে যেতাম দাসপাড়া পালপাড়া, হরিচকসঅহ বিভিন্ন সনাতনী বাড়িতে। পূজাপার্বণ, কীর্তন, নামজজ্ঞ এমনকি দুর্গাপূজার সময় নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম। ৪ বারের চেয়ারম্যান নির্বাচন আর ৫ বছর চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করতে যেয়ে সনাতনী মামা, কাকা, ভাইদের সীমাহীন সমর্থন পেয়েছি। সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। একটি বারও মনে আসেনি কে হিন্দু আর কে মুসলিম!!
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর যেনো এই ভালোবাসার মাঝখানে দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ভারত ।
৫ আগস্ট দেশে যে পরিবর্ত হয়েছে সাথে সাথে আমরা একটা বার্তা দেই যেনো কোনো জাতিগত দাঙ্গা ফ্যাসাদ না হয়।এই ৪ মাসে আমাদের হাজীপুর ইউনিয়নে কোনো হিন্দু মুসলিম ফিতনা ফ্যাসাদ হয়নি। কেউ একটা ঢিল পর্যন্ত মারেনি। আগের মতোই হিন্দুদের দোকান থেকে মুসলিমরা বাজার সদায় নিচ্ছেন। একসাথে বাজার করে বাড়ি ফিরছেন। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন। কিন্তু দূ:খজনক বিষয় ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিদিন প্রচার করা হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে! এসব ঘটনা কোথায় ঘটছে আমরা জানি না। দেশের স্বার্থে এসব অপপ্রচারের নিন্দা করতে গিয়ে বাড়ছে আমাদের দুরত্ব। বলা যায় ভারতীয় মিডিয়া আর ইসকনের কয়েক বহিস্কৃত নেতা দেশের হিন্দু মুসলিম জনগোষ্ঠীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
আব্দুল বাছিত বাচ্চু
গণমাধ্যম কর্মী
সাবেক চেয়ারম্যান
১০ নং হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদ
কুলাউড়া