মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মনিপুরি সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা এবং এর প্রসারে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে এক ব্যতিক্রমী কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে আদমপুর ইউনিয়নস্থ ‘মনিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স’-এ লৈশেমপুং এবং ইউনেস্কো (UNESCO) ঢাকা অফিসের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের মনিপুরি ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে উত্তরীয় পরিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ওজা বীরেন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কো ঢাকা অফিসের কালচারাল হেড কিযী তাহনিন। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “মনিপুরি সংস্কৃতি কেবল বাংলাদেশের নয়, এটি বৈশ্বিক অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য রত্ন। এই ঐতিহ্যকে ডিজিটাল যুগে টিকিয়ে রাখতে তরুণদেরই কাণ্ডারি হতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন ইউনেস্কো কনসালটেন্ট রিফাত মুনিম এবং পারসিড (PARC)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ফাতিহা পলিন। বক্তারা তরুণদের আধুনিক প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে নিজেদের ভাষা, পোশাক এবং ইতিহাস সংরক্ষণের আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মনিপুরি শিল্পীরা তাদের চিরায়ত সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন। শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল বিশ্বখ্যাত মনিপুরি নৃত্য, যা দর্শককে মুগ্ধ করে। পাশাপাশি বীরত্বগাথার প্রতীক হিসেবে প্রদর্শিত হয় ‘থাং-টা’ বা মনিপুরি মার্শাল আর্ট এবং আধ্যাত্মিক সুরের মূর্ছনা ছড়ানো ‘পুং চোলম’ বা মৃদঙ্গ নৃত্য।
কর্মশালায় স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং গুণিজনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষায় মনিপুরি সমাজ অত্যন্ত সচেতন। লৈশেমপুং ও ইউনেস্কোর এই যৌথ প্রয়াস তরুণ প্রজন্মকে তাদের শেকড় খুঁজে পেতে এবং আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হতে নতুন প্রেরণা যোগিয়েছে।