মানবতার হাত ধরেই আশার আলো
- আপডেট সময় ০৬:২৬:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪
- / ১৪৮ বার পড়া হয়েছে
আবু মকসুদ
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। দেশের অধিকাংশ অঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, যা শুধু সম্পদের ক্ষতি নয়, প্রাণহানির কারণও হয়ে উঠেছে। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে; মানুষ পানিবন্দী হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, ইতোমধ্যেই ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন দুর্যোগময় সময়ে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধারের জন্য এগিয়ে এসেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, বন্যার মতো দুর্যোগে প্রশিক্ষণ ছাড়া সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বন্যার স্রোত খুবই বিপজ্জনক এবং এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণহীন স্বেচ্ছাসেবীরা সহজেই ভেসে যেতে পারে; এমনকি অভিজ্ঞ সাঁতারুদের জন্যও এই পরিস্থিতি বিপদজনক। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও এতে উদ্ধারকর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
প্রশিক্ষিত বাহিনী যেমন ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী বা বিশেষায়িত উদ্ধারকারী দল এই ধরনের পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং জ্ঞান রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের নেই। প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারেন এবং দ্রুত ও সঠিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। তাদের সহায়তায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে যে, প্রশিক্ষণ ছাড়া বন্যার পানিতে নামা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যারা সরাসরি মাঠে কাজ করতে অক্ষম, তারা অর্থ, খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করে সহায়তা করতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবীদের উচিত সরকারি বা স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা এবং তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা।
স্বেচ্ছাসেবকরা যদি মাঠে কাজ করতে চান, তবে তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম, যেমন লাইফ জ্যাকেট, পানিরোধী পোশাক, এবং প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের সাথে কাজ করা উচিত। অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেকে বিপদের মুখোমুখি করা উচিত নয়। বন্যা পরিস্থিতিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজের বিবেক ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখে উদ্ধারে অংশগ্রহণ করতে হবে। মানুষকে উদ্ধার করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যেখানে সবাই সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।
এই দুর্যোগের সময়, আমাদের সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং যথাসম্ভব ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের প্রতিও নজর দিতে হবে, কারণ এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যারা এখনো নিরাপদ স্থানে আছেন, তাদের উচিত স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র বা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা। জরুরি অবস্থায় বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ হতে পারে, তাই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা জরুরি। পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক ও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য গণমাধ্যম এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়লে তা আরও বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে, তাই সঠিক তথ্য যাচাই করে অন্যদের সাথে শেয়ার করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়ে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে এবং দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো বৈরিতা নেই; বরং প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতের কাছ থেকে আমরা সু-প্রতিবেশীসুলভ আচরণই আশা করি, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং মানবিকতার ভিত্তিতেও হওয়া উচিত। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না, তা আমরা জানি। কিন্তু প্রকৃতিকে উপলক্ষ করে কেউ যদি অসভ্যতায় নিজেকে প্রকাশ করে, তাকে অসভ্য বলতেই হবে। বর্তমানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে; বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জনপদ। ভারতের দায়িত্ব ছিল আমাদের সতর্ক করা, যাতে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারতাম। সঠিক সময়ে সতর্ক করলে হয়তো আমরা অনেক প্রাণহানি এড়াতে পারতাম। বন্যার বাঁধ খুলে দেওয়া কোনো সু-প্রতিবেশীর কাজ হতে পারে না। একান্ত বাধ্য হলেও, আমাদের আগে জানানো উচিত ছিল। কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা বিশাল পানির স্রোত যেন এক অকল্পনীয় শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, শহরকে গ্রাস করে নিয়েছে। এ যেন প্রাকৃতিক শক্তি নয়, বরং মানুষের বিরুদ্ধে মানুষেরই এক অস্ত্র—কান্না আর যন্ত্রণার স্রোত।
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই এক একটি লড়াই। এখন এই লড়াই হচ্ছে জলের সাথে, প্রকৃতির সাথে। চারদিকে শুধু জলরাশি, শুধুই প্রবল জলের তোড়। এই জনপদ, যেখানে একদিন শিশুদের হাসিতে মুখরিত ছিল, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা। যুবকরা যেখানে প্রেমিকার জন্য গোলাপ নিয়ে বাড়ি ফিরত, আজ সেই পথের ধারে কেবলই ধ্বংসাবশেষ। কোনো কিশোরী যে উঠোনে কিশোরের চিঠি পড়ে শিহরিত হতো, সেই উঠোন আজ পানির তলে। যে উঠোনে একদিন শোনা যেত শিশুদের হাসির শব্দ, সেখানে আজ শুধুই নীরব কান্না। এককালের প্রাণবন্ত জনপদ আজ কবরের অন্ধকারে ছেয়ে গেছে।
বন্যার পানিতে শুধু ঘর-বাড়ি নয়, ভেসে গেছে মানুষের জীবন, মানুষের স্বপ্ন। ভেসে গেছে সবকিছু—কৃষকের স্বপ্নের ক্ষেত, শ্রমিকের ঘামঝরা পরিশ্রম, মায়ের আঁচলে বাধা ছোট্ট শিশুর খাবার—সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই ছোট্ট খড়ের গাদায়, গুটিসুটি মেরে বসে থাকা মা আর তার দুই সন্তান—তাদের সুখে ভয় মিশে গেছে। হয়তো কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাদেরও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা।
পিতার নিড়ানি দেওয়া জমিতে যে জাল কুমড়ো ছিল, কিংবা মাটির নিচে লুকানো পরিশ্রমের ফসল আলু, আজ সেই জমিগুলো পানির নিচে। মুরগির খাঁচায় ছিল কয়েক জোড়া মোরগ-মুরগি, গোয়ালে ছিল একজোড়া গরু-মহিষ। নির্দয় পানি তাদের ক্ষমা করেনি, ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গবাদি পশুর কান্না, মুরগির খাঁচার ভাঙন, আর প্রাকৃতিক পরিবেশের এই বিরূপ পরিবর্তন যেন প্রমাণ করছে প্রকৃতি কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে।
অসহায় মানুষের আর্তনাদ আকাশকেও যেন কাঁদাচ্ছে। তারা সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে, কিন্তু সহায়তা না পেয়ে বারবার হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। এই মানুষগুলো মরুভূমিতে এক ফোঁটা জলের আশায় ছুটে চলা পিপাসার্তের মতো। এখন তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে, যেন তিনি তাদের উদ্ধার করেন। ঈশ্বরের সদয়তা এই মুহূর্তে তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু তাও যেন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে, কারণ প্রকৃতির এই নির্দয় খেলা মানুষের জীবনকে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে।
একটির পর একটি প্রাণহানির খবর পরিবারগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। একটি পরিবারের সবাই মিলে বাঁচার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পানির স্রোত তাদের কেড়ে নিয়েছে একে একে। মায়ের হাতে শিশুর নিথর দেহ, বাবার অশ্রুভরা চোখ—এই দৃশ্যগুলো মানুষকে ভেঙে ফেলছে, তাদের কাঁদিয়ে তুলছে। এক বৃদ্ধা, যিনি তার পুরো জীবন এই জনপদে কাটিয়েছেন, আজ তার জীবনের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। তার ঘর, যা ছিল তার সুখ-দুঃখের সাথী, আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই ঘরের ভাঙা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি শুধুই কাঁদছেন, যেন তার জীবনের সমস্ত সুখ তার হাতের মুঠো থেকে ফসকে গেছে।
যারা বেঁচে আছেন, তাদের চোখেমুখে শুধুই আতঙ্ক। প্রতিটি মুহূর্তে তারা নতুন করে বাঁচার লড়াই করছেন। খাবার নেই, পানি নেই, আশ্রয়ের অভাব—সবকিছু মিলিয়ে তারা এক অসহনীয় অবস্থার মুখোমুখি। এক মা তার সন্তানদের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, কিন্তু তাও নিশ্চিত নয়। শিশুদের ক্ষুধার্ত চেহারা, বয়স্কদের অসহায়ত্ব—সবকিছু মিলিয়ে এই জনপদ এক বেদনাবিধুর চিত্রে পরিণত হয়েছে।
মানুষের কান্না মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যাচ্ছে। তারা জানে না, কবে এই দুর্দশার শেষ হবে। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের কাছে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে। এক যুবক, যে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, আজ তার পরিবারকে বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছে। তার চোখে এখন শুধুই হতাশা, কারণ সে জানে না কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু তার হৃদয়ে একটুকরো আশার আলো জ্বলছে যে, হয়তো কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।
অন্যদিকে, যে শিশুগুলো সবেমাত্র জীবন সম্পর্কে শিখতে শুরু করেছিল, তাদের মনেও এখন শুধুই আতঙ্কের ছাপ। তাদের চোখে খেলা করছে অনিশ্চয়তা আর ভয়। তারা জানে না, এই বন্যা কেন ঘটেছে, কেন তাদের জীবন এক মুহূর্তে এভাবে পাল্টে গেল। তারা হয়তো এই দুর্যোগের কারণ বুঝবে না, কিন্তু তাদের কচি মনেও এখন একটা স্থায়ী দাগ থেকে যাবে। সেই দাগ, যা তাদের ভবিষ্যতে শৈশবের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বারবার মনে করিয়ে দেবে।
এত কিছু হারানোর পরও, তারা একে অপরের কাছে সহায়তা প্রার্থনা করছে। নিজেদের যতটুকু সামর্থ্য, ততটুকুই একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। যারা কিছুটা সামর্থ্য রাখে, তারা তাদের সামান্য খাবার, পানি বা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। মানুষের মধ্যে এই পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং মানবিকতা এখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা।
অসুস্থ, দুর্বল মানুষগুলো হয়তো জানে না, তারা আগামী দিনগুলোতে কীভাবে টিকে থাকবে, কিন্তু একে অপরের চোখে তারা যে করুণ চাহনি দেখতে পায়, সেটাই তাদের বেঁচে থাকার তাগিদ দেয়। একজন বৃদ্ধা, যার নিজের খাবার নেই, তিনি পাশের ক্ষুধার্ত শিশুটিকে নিজের শেষ টুকরো খাবার দিয়ে দিচ্ছেন, কারণ তিনি জানেন, এই মুহূর্তে একমাত্র ভালোবাসা এবং সহমর্মিতাই তাদের একমাত্র অবলম্বন।
বন্যার পানি সরে গেলেও এই জনপদের মানুষগুলো আর আগের মতো হাসতে পারবে না। তাদের চোখের জল, তাদের হাহাকার—সবকিছুই তাদের জীবনকে এক চিরস্থায়ী বেদনার মধ্যে ফেলে দেবে। এই ক্ষতগুলো কখনো শুকাবে না, এই কান্নাগুলো কখনো থামবে না, কারণ এই দুর্যোগ তাদের জীবনের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। তারা জানে না, কিভাবে এই কষ্টের বোঝা বহন করবে, কিভাবে এই অসহনীয় বেদনার মধ্য দিয়ে যাবে।
শিশুগুলো, যারা এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি, তারাও ভবিষ্যতে এই দুর্যোগের প্রভাব বয়ে বেড়াবে। তারা যখন বড় হবে, তখনও এই দুর্যোগের স্মৃতি তাদের মনকে তাড়িয়ে বেড়াবে। হয়তো জীবনের অন্য সবকিছু ভুলে যাবে, কিন্তু এই বন্যার কথা কখনো ভুলতে পারবে না।
মানুষের কান্না মানুষকে কাঁদায়, কারণ সেই কান্নার মধ্যে লুকিয়ে থাকে মানবতার গভীরতম বেদনা। এই বেদনার সাথে কেউই পরিচিত হতে চায় না, কিন্তু জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা তাদের সেই অন্ধকারে টেনে নিয়ে যায়। এই দুর্যোগে প্রতিটি মানুষই নতুন করে জীবন শিখছে—শিখছে কীভাবে বাঁচতে হয়, কীভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হয়।
এই দুর্যোগে আমরা সবাই এক, আমাদের দুর্দশা আমাদের একত্রিত করেছে। এই একতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা। মানবতার এই পরীক্ষায়, আমরা যদি একে অপরের পাশে দাঁড়াই, সহমর্মিতা দেখাই, তাহলে হয়তো আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। কিন্তু সেই পুনর্জাগরণের পথে আমাদের স্মৃতিতে থাকবে এই বন্যা, এই কান্না, যা আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এই ক্ষতগুলো একদিন শুকিয়ে যেতে পারে, কিন্তু দাগগুলো থেকে যাবে চিরকাল। তারা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে যে আমরা মানুষ, এবং মানুষের কান্নায় সাড়া দেওয়াই আমাদের আসল দায়িত্ব। এই বন্যা আমাদের শিখিয়েছে যে আমরা একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ, এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এক নতুন সকাল, এক নতুন জীবন তৈরি করতে পারি।
এই দুর্যোগে যারা সবকিছু হারিয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোই এখন আমাদের মানবিক দায়িত্ব। এই সহমর্মিতা এবং ভালোবাসাই তাদের পুনর্গঠনের পথ প্রশস্ত করতে পারে। নতুন করে শুরু করতে হবে আমাদের, নতুন করে গড়ে তুলতে হবে আমাদের সমাজ। তবেই হয়তো আমরা আবারও সেই হাসিমুখগুলো দেখতে পাব, সেই প্রাণচঞ্চল শিশুদের কোলাহল শুনতে পাব। আমাদের এই মানবিকতার শক্তিতেই গড়ে উঠবে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ, যেখানে মানুষ মানুষের জন্যই বাঁচবে।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী,ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।