ঢাকা ০১:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্ত হাওয়ায় মুক্তকথা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩২:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৭০ বার পড়া হয়েছে

নতুন বাংলাদেশ। এই দেশে এখন বহমান নতুন হাওয়া। মুক্ত হাওয়া। এই মুক্ত হাওয়া আমিও ভাসিয়ে দিই মুক্ত কিছু কথা। কতদিন এই সুযোগ থাকবে জানি না। যতদিন আছে ততদিন তো বলা যায়। তাই শিরোনাম মুক্ত হাওয়ায় মুক্তকথা।

বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ নিয়ে যে মহামানবদের আগমন ঘটেছে, তাদের প্রথম বার্তাটি ছিল—এখন থেকে সবকিছু অন্যরকম হবে। সেই চরম স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা, যিনি দেশকে নরকের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই মহামানবেরা দেশকে স্বর্গে পরিণত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জনগণের মনে আশা জাগিয়েছিলেন যে, এবার হয়তো দেশবাসীর জীবনে নতুন দিনের সূচনা ঘটবে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই সেই প্রতিশ্রুতির সাথে মিলছে?

শেখ হাসিনার পতন যে কারণে ঘটেছে, সেই একই কারণ এখনও বিদ্যমান। হাসিনা তার শাসনামলে হেফাজতের কিছু কর্মীকে অপমান করেছিলেন, তাদেরকে কানে ধরিয়ে অপদস্থ করেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি, সেই একই ধরনের অপমানজনক আচরণ আজও চলছে, কেবল নতুন রূপে। ঈশ্বরের প্রেরিত মহামানবদের নেতৃত্বে থাকা এই বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষকে কানে ধরে উঠবস করানো হচ্ছে, উলঙ্গ নৃত্য করানো হচ্ছে, এবং যেকোনো সময় তাদেরকে অমানবিকভাবে অপমানিত করা হচ্ছে। এরকম আচরণ কি একটি সভ্য সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য? শেখ হাসিনার শাসনের সময় যা ঘটেছিল, তার সাথে এর পার্থক্য কোথায়?

প্রশ্ন থেকে যায়, শেখ হাসিনার থেকে এই নতুন নেতৃত্ব আসলে কোন দিক দিয়ে আলাদা? যখন একজন উপদেষ্টা সামান্য সমালোচনা করলেই তাকে বদলে ফেলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয় না, তখন কীভাবে তারা দাবি করতে পারেন যে, তারা আগের শাসক থেকে ভিন্ন? এ ধরনের শাসনব্যবস্থা কি সত্যিই ঈশ্বরপ্রদত্ত?

আমার গভীর ইচ্ছা ছিল একজন মহামানবের মুখোমুখি হয়ে তার চোখে তাকিয়ে বলি—হে মহামানব, আপনার আগমন আমাদের জন্য সত্যিই কাঙ্ক্ষিত ছিল। আমরা যুগ যুগ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনি আমাদের জন্য নতুন কী নিয়ে এসেছেন? আপনার কাছ থেকে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু কি আমরা সত্যিই পেয়েছি?

দুঃখজনকভাবে, এখনো সেই স্বৈরাচারী আমলের মতই আমরা দেখছি পেটুয়া বাহিনী মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্যুত করছে। এখনো বাকস্বাধীনতার কোনো বালাই নেই। মানুষ এখনো গলা খুলে কিছু বলতে পারছে না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মানুষকে নজরদারির ভয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে। তাহলে এই শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ আসলে কি? এ কি নতুন রূপে পুরনো স্বৈরাচারীর পুনরুত্থান নয়?

আপনারা বলেছিলেন, আগের মতো কিছুই হবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, সবকিছুই আগের মতো, বরং অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তাহলে কি ঈশ্বর আপনাদের প্রতি পুনরায় বিমুখ হয়ে গেছেন? এই প্রশ্নটি অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

যে জোশে আপনারা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছিলেন, যদি সেই একই জোশে মানুষ আবার রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে আপনাদের পরিণতি কি হবে? মানুষ যখন আর সহ্য করতে পারবে না, তখন কী করবেন? সেই মুহূর্তে পালানোর জায়গাও হয়তো আপনাদের থাকবে না। কারণ ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, যে শাসকই হোক, যখন জনগণের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তখন কোনো শক্তিই তাদের রোধ করতে পারে না।

আজকের নেতৃত্ব যদি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনের প্রতীক হতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অন্যথায়, তারা স্বৈরাচারী শাসকদের ইতিহাসের পাতায় যোগ দিতে বাধ্য হবে। এবং জনগণ সেই শাসনকে একইভাবে প্রত্যাখ্যান করবে, যেভাবে তারা আগের শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

মুক্ত হাওয়ায় মুক্তকথা

আপডেট সময় ০৫:৩২:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

নতুন বাংলাদেশ। এই দেশে এখন বহমান নতুন হাওয়া। মুক্ত হাওয়া। এই মুক্ত হাওয়া আমিও ভাসিয়ে দিই মুক্ত কিছু কথা। কতদিন এই সুযোগ থাকবে জানি না। যতদিন আছে ততদিন তো বলা যায়। তাই শিরোনাম মুক্ত হাওয়ায় মুক্তকথা।

বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ নিয়ে যে মহামানবদের আগমন ঘটেছে, তাদের প্রথম বার্তাটি ছিল—এখন থেকে সবকিছু অন্যরকম হবে। সেই চরম স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা, যিনি দেশকে নরকের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন, তার শাসনের অবসান ঘটিয়ে এই মহামানবেরা দেশকে স্বর্গে পরিণত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জনগণের মনে আশা জাগিয়েছিলেন যে, এবার হয়তো দেশবাসীর জীবনে নতুন দিনের সূচনা ঘটবে। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই সেই প্রতিশ্রুতির সাথে মিলছে?

শেখ হাসিনার পতন যে কারণে ঘটেছে, সেই একই কারণ এখনও বিদ্যমান। হাসিনা তার শাসনামলে হেফাজতের কিছু কর্মীকে অপমান করেছিলেন, তাদেরকে কানে ধরিয়ে অপদস্থ করেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি, সেই একই ধরনের অপমানজনক আচরণ আজও চলছে, কেবল নতুন রূপে। ঈশ্বরের প্রেরিত মহামানবদের নেতৃত্বে থাকা এই বাংলাদেশেও সাধারণ মানুষকে কানে ধরে উঠবস করানো হচ্ছে, উলঙ্গ নৃত্য করানো হচ্ছে, এবং যেকোনো সময় তাদেরকে অমানবিকভাবে অপমানিত করা হচ্ছে। এরকম আচরণ কি একটি সভ্য সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য? শেখ হাসিনার শাসনের সময় যা ঘটেছিল, তার সাথে এর পার্থক্য কোথায়?

প্রশ্ন থেকে যায়, শেখ হাসিনার থেকে এই নতুন নেতৃত্ব আসলে কোন দিক দিয়ে আলাদা? যখন একজন উপদেষ্টা সামান্য সমালোচনা করলেই তাকে বদলে ফেলা হয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয় না, তখন কীভাবে তারা দাবি করতে পারেন যে, তারা আগের শাসক থেকে ভিন্ন? এ ধরনের শাসনব্যবস্থা কি সত্যিই ঈশ্বরপ্রদত্ত?

আমার গভীর ইচ্ছা ছিল একজন মহামানবের মুখোমুখি হয়ে তার চোখে তাকিয়ে বলি—হে মহামানব, আপনার আগমন আমাদের জন্য সত্যিই কাঙ্ক্ষিত ছিল। আমরা যুগ যুগ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনি আমাদের জন্য নতুন কী নিয়ে এসেছেন? আপনার কাছ থেকে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু কি আমরা সত্যিই পেয়েছি?

দুঃখজনকভাবে, এখনো সেই স্বৈরাচারী আমলের মতই আমরা দেখছি পেটুয়া বাহিনী মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্যুত করছে। এখনো বাকস্বাধীনতার কোনো বালাই নেই। মানুষ এখনো গলা খুলে কিছু বলতে পারছে না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মানুষকে নজরদারির ভয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে। তাহলে এই শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ আসলে কি? এ কি নতুন রূপে পুরনো স্বৈরাচারীর পুনরুত্থান নয়?

আপনারা বলেছিলেন, আগের মতো কিছুই হবে না। কিন্তু আমরা দেখছি, সবকিছুই আগের মতো, বরং অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। তাহলে কি ঈশ্বর আপনাদের প্রতি পুনরায় বিমুখ হয়ে গেছেন? এই প্রশ্নটি অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

যে জোশে আপনারা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছিলেন, যদি সেই একই জোশে মানুষ আবার রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে আপনাদের পরিণতি কি হবে? মানুষ যখন আর সহ্য করতে পারবে না, তখন কী করবেন? সেই মুহূর্তে পালানোর জায়গাও হয়তো আপনাদের থাকবে না। কারণ ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, যে শাসকই হোক, যখন জনগণের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তখন কোনো শক্তিই তাদের রোধ করতে পারে না।

আজকের নেতৃত্ব যদি সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনের প্রতীক হতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অন্যথায়, তারা স্বৈরাচারী শাসকদের ইতিহাসের পাতায় যোগ দিতে বাধ্য হবে। এবং জনগণ সেই শাসনকে একইভাবে প্রত্যাখ্যান করবে, যেভাবে তারা আগের শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।