ঢাকা ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

মোঃ খুরশীদ উল্লাহ,সত্যিকারের এক মানুষ সৃজনের কারিগর 

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৫৬:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে
ফয়সল আহমদ রুহেল :
শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। পরে নিজের চিন্তাচেতনা, সৃজন-মননকে ওই শিক্ষকতার মধ্যেই আবদ্ধ রাখেননি। নিজের কর্মদক্ষতাকে ছড়িয়ে দেন নানা দিকে। শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে ছিলেন সরব। সেই আন্দোলনে পুলিশের হাতে নাজেহাল হন। মানবাধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। এমনকি খেলাধূলার প্রতিও আগ্রহের কমতি ছিল না। নিজের বিশ্বাস এবং আদর্শে অটল থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যান। এমনই একজন গুণী শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ, যিনি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
জন্ম : গুণী শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৩১ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের রফিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. কুটু উল্লাহ ও মাতা কন্টর বিবি। শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ’র ভাইবোন ৬জন। তাদের মধ্যে তিনি  ৫ম। বর্তমান মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার উত্তরবাজার সামাদ মঞ্জিলে বসবাস করছেন।
শিক্ষাজীবন :
মো. খুরশীদ উল্লাহ’র প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় ১৯৪৯ সালে বরমচাল নন্দনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু ১৯৫৩ সালে বরমচাল হাইস্কুলে। তিনি ১৯৬০ সালে ওই স্কুল থেকে ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ হতে ১৯৬২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় ৩য় বিভাগে পাশ করেন।  তিনি সিলেট সরকারী মুরারীচাঁদ কলেজ হতে ১৯৬৫ সালে বিএ (পাস) পরীক্ষায় ৩য় বিভাগে পাশ করেন।  এছাড়া কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে ১৯৬৮ সালে বিএড ২য় বিভাগ লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন :
মো. খুরশীদ উল্লাহ ফুলতলা বশির উল্লাহ জুনিয়র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১ বছর ৬ মাস। (জুলাই ১৯৬৪ ইং হতে ডিসেম্বর ১৯৬৫ ইং)। অতঃপর  ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টানা ৪২ বছর কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বমোট ৪৩ বছর ৬ মাস চাকুরী করে অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাইস্কুল ও মাদ্রাসার ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক মন্ডলীকে ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ এই তিন বছর ইংরেজী বিষয়ে প্রশিক্ষন দান করেন। এরপর তিনি ২০১২ সাল হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাজার কুসুমকলি জুনিয়র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।  সর্বমোট শিক্ষকতা : ৪৩.৬+৩+১০=৫৬.৬ বছর।
শিক্ষা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের শিক্ষা জীবনের মধ্যে নানান ঘটনা ছিল। সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা ছিল সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। রাতের ট্রেনে সিলেট হতে বরমচাল স্টেশনে আসেন। সেখান হতে বাড়ি যাওয়ার পথে রাত ১১ ঘটিকায় একটি বড় বাঘের সম্মুখীন হন। তখন তিনি শোরচিৎকার করতে থাকলে সেসময় একজন লোক লণ্ঠন হাতে তাঁর দিকে আসলে বাঘটি গর্জন করে অন্য দিকে চলে যায় এবং তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
শিক্ষক আন্দোলন : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার শিক্ষকতার পাশাপাশি কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে ২৭ বছর কাজ করেন। তাঁর দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে মিছিল-মিটিং করেন। ১৯৮৬ সালে বেসরকারী শিক্ষক আন্দোলনের সময় ঢাকায় সচিবালয়ের ফটকের সম্মুখে অবস্থান ধর্মঘট পালিত হয় এবং শিক্ষক সমিতির ব্যানার নিয়ে কেউ-ই ফটকের সামনে দাঁড়াতে রাজি হন নাই। তখন মো. খুরশীদ উল্লাহ এবং ঢাকার একজন শিক্ষক ব্যানার হাতে নিয়ে ফটকের সম্মুখে দাঁড়াতেই পুলিশ তাদেরকে নাজেহাল করে এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করে, যার ছবি পরবর্তী দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষক সম্মেলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং বগুড়ায় বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য জীবন : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে স্কুলে পাঠদান ছাড়াও বাংলাদেশ স্কাউটের কুলাউড়া উপজেলার স্কাউট কমিশনার হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং এই সময়ের মধ্যে কুলাউড়া থানা কেন্দ্রে ২ বার স্কাউট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মানবাধিকার কমিশন কুলাউড়া থানা শাখার সভাপতি হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় মীমাংসা করেন। যার ফলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই কোর্ট এর হয়রানী এবং দীর্ঘসূত্রিতা হতে রেহাই পান।
পুরস্কার : তিনি ১৯৬৮ সালে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ হতে পুরস্কারপ্রাপ্ত হোন। তিনি একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। তিনি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে নানান প্রতিযোগিতামূলক টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ করেন।
পারিবারিক : গুণী এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেন, তেমনি পরিবারের প্রধান হিসেবে নিজ সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেন। মো. খুরশীদ উল্লাহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। মেয়ে নার্গিস সুলতানা-ঢাকায় একটি বেসরকারী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। ছেলে রাসেল আব্দুল্লাহ-একটি বেসরকারি কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকুরীরত। আরেক ছেলে ড. আবু সহিদ আব্দুল্লাহ-ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক। ছোট মেয়ে নাসরিন সুলতানা-একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুলাউড়া উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সব কাজেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো পিছপা হননি, কখনো দূরে সরে যাননি। যখনই তাকে কেউ ডেকেছেন, সাড়া দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর  বিনয় ও নম্রতা মুগ্ধ করেছে উপজেলার অসংখ্য মানুষকে। তাঁর গুণের কথা, তাঁর অবদান মনে রাখবে উপজেলা শিক্ষক সমাজ। তিনিও শিক্ষকতা জীবনে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। মানুষের ভালোবাসা বড় প্রাপ্তি। মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মোঃ খুরশীদ উল্লাহ,সত্যিকারের এক মানুষ সৃজনের কারিগর 

আপডেট সময় ১২:৫৬:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
ফয়সল আহমদ রুহেল :
শিক্ষার মহান ব্রত নিয়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। পরে নিজের চিন্তাচেতনা, সৃজন-মননকে ওই শিক্ষকতার মধ্যেই আবদ্ধ রাখেননি। নিজের কর্মদক্ষতাকে ছড়িয়ে দেন নানা দিকে। শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের আন্দোলনে ছিলেন সরব। সেই আন্দোলনে পুলিশের হাতে নাজেহাল হন। মানবাধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। এমনকি খেলাধূলার প্রতিও আগ্রহের কমতি ছিল না। নিজের বিশ্বাস এবং আদর্শে অটল থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যান। এমনই একজন গুণী শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ, যিনি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
জন্ম : গুণী শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৩১ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের রফিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. কুটু উল্লাহ ও মাতা কন্টর বিবি। শিক্ষক মো. খুরশীদ উল্লাহ’র ভাইবোন ৬জন। তাদের মধ্যে তিনি  ৫ম। বর্তমান মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার উত্তরবাজার সামাদ মঞ্জিলে বসবাস করছেন।
শিক্ষাজীবন :
মো. খুরশীদ উল্লাহ’র প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় ১৯৪৯ সালে বরমচাল নন্দনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু ১৯৫৩ সালে বরমচাল হাইস্কুলে। তিনি ১৯৬০ সালে ওই স্কুল থেকে ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ হতে ১৯৬২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় ৩য় বিভাগে পাশ করেন।  তিনি সিলেট সরকারী মুরারীচাঁদ কলেজ হতে ১৯৬৫ সালে বিএ (পাস) পরীক্ষায় ৩য় বিভাগে পাশ করেন।  এছাড়া কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে ১৯৬৮ সালে বিএড ২য় বিভাগ লাভ করেন।
শিক্ষকতা জীবন :
মো. খুরশীদ উল্লাহ ফুলতলা বশির উল্লাহ জুনিয়র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১ বছর ৬ মাস। (জুলাই ১৯৬৪ ইং হতে ডিসেম্বর ১৯৬৫ ইং)। অতঃপর  ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টানা ৪২ বছর কুলাউড়া উপজেলার কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বমোট ৪৩ বছর ৬ মাস চাকুরী করে অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাইস্কুল ও মাদ্রাসার ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক মন্ডলীকে ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১১ এই তিন বছর ইংরেজী বিষয়ে প্রশিক্ষন দান করেন। এরপর তিনি ২০১২ সাল হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাজার কুসুমকলি জুনিয়র স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।  সর্বমোট শিক্ষকতা : ৪৩.৬+৩+১০=৫৬.৬ বছর।
শিক্ষা জীবনের স্মরণীয় ঘটনা : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের শিক্ষা জীবনের মধ্যে নানান ঘটনা ছিল। সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা ছিল সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। রাতের ট্রেনে সিলেট হতে বরমচাল স্টেশনে আসেন। সেখান হতে বাড়ি যাওয়ার পথে রাত ১১ ঘটিকায় একটি বড় বাঘের সম্মুখীন হন। তখন তিনি শোরচিৎকার করতে থাকলে সেসময় একজন লোক লণ্ঠন হাতে তাঁর দিকে আসলে বাঘটি গর্জন করে অন্য দিকে চলে যায় এবং তিনি প্রাণে রক্ষা পান।
শিক্ষক আন্দোলন : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার শিক্ষকতার পাশাপাশি কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে ২৭ বছর কাজ করেন। তাঁর দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে মিছিল-মিটিং করেন। ১৯৮৬ সালে বেসরকারী শিক্ষক আন্দোলনের সময় ঢাকায় সচিবালয়ের ফটকের সম্মুখে অবস্থান ধর্মঘট পালিত হয় এবং শিক্ষক সমিতির ব্যানার নিয়ে কেউ-ই ফটকের সামনে দাঁড়াতে রাজি হন নাই। তখন মো. খুরশীদ উল্লাহ এবং ঢাকার একজন শিক্ষক ব্যানার হাতে নিয়ে ফটকের সম্মুখে দাঁড়াতেই পুলিশ তাদেরকে নাজেহাল করে এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করে, যার ছবি পরবর্তী দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষক সম্মেলনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং বগুড়ায় বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
বর্ণাঢ্য জীবন : 
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে স্কুলে পাঠদান ছাড়াও বাংলাদেশ স্কাউটের কুলাউড়া উপজেলার স্কাউট কমিশনার হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন এবং এই সময়ের মধ্যে কুলাউড়া থানা কেন্দ্রে ২ বার স্কাউট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মানবাধিকার কমিশন কুলাউড়া থানা শাখার সভাপতি হিসাবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা স্থানীয়ভাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় মীমাংসা করেন। যার ফলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই কোর্ট এর হয়রানী এবং দীর্ঘসূত্রিতা হতে রেহাই পান।
পুরস্কার : তিনি ১৯৬৮ সালে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ হতে পুরস্কারপ্রাপ্ত হোন। তিনি একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। তিনি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে নানান প্রতিযোগিতামূলক টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ করেন।
পারিবারিক : গুণী এই মানুষটি কর্মক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেন, তেমনি পরিবারের প্রধান হিসেবে নিজ সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেন। মো. খুরশীদ উল্লাহ দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। মেয়ে নার্গিস সুলতানা-ঢাকায় একটি বেসরকারী স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতায় নিয়োজিত। ছেলে রাসেল আব্দুল্লাহ-একটি বেসরকারি কোম্পানীতে উচ্চ পদে চাকুরীরত। আরেক ছেলে ড. আবু সহিদ আব্দুল্লাহ-ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক। ছোট মেয়ে নাসরিন সুলতানা-একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত।
২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুনী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুলাউড়া উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)।
উল্লেখ্য, ১৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকে ভুষিত করবে সংস্থাটি।
মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সব কাজেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো পিছপা হননি, কখনো দূরে সরে যাননি। যখনই তাকে কেউ ডেকেছেন, সাড়া দিয়েছেন, পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর  বিনয় ও নম্রতা মুগ্ধ করেছে উপজেলার অসংখ্য মানুষকে। তাঁর গুণের কথা, তাঁর অবদান মনে রাখবে উপজেলা শিক্ষক সমাজ। তিনিও শিক্ষকতা জীবনে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। মানুষের ভালোবাসা বড় প্রাপ্তি। মো. খুরশীদ উল্লাহ স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।