ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতার ভয়ে বাড়িছাড়া দরিদ্র কৃষক পরিবার

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:২৭:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

জেলা সংবাদদাতা : পরিবারের সদস্য নিয়ে অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন দরিদ্র কৃষক আব্দুল মকিছ। পরিবার নিয়ে প্রাণ রক্ষায় এখন রয়েছেন আত্মগোপনে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মতিন বকসের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পূর্ব মাতারকাপন এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে কৃষক আব্দুল মকিছের। তিনি মতিন বকসের ভয়ে প্রায় তিন মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এনিয়ে পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার মডেল থানায় বিএনপি নেতা মতিন বখসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কৃষক আব্দুল মকিছ। একই ঘটনায় আদালতেও মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলার আসামিরা হলেন আব্দুল মকিছের ভাই আব্দুল শহীদ, আব্দুল মতিন, ভাইদের স্ত্রী মিলি বেগম ও পারভিন বেগম।

মামলার এজাহার ও মৌখিক অভিযোগ থেকে জানা যায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পূর্ব মাতারকাপন গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ভাইদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল আব্দুল মকিছের। সেই সূত্র ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিরা মকিছের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বসতঘরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় তার স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন সন্ধ্যায় আসামিরা আবারও বাড়িতে গিয়ে পুনরায় আব্দুল মকিছের স্ত্রীকে ছুরি ও লোহার পাইপ দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। ঘটনার খবর পেয়ে আব্দুল মকিছ বাড়িতে এসে স্ত্রীকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। থানায় দায়ের করা অভিযোগ আব্দুল মকিছ উল্লেখ করেন ভাইদের পক্ষ নিয়ে মতিন বকস জমি দখলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।

এবিষয়ে স্থানীয় লোকজনদেরকে জানালে মতিন বকস তার লোকজন দিয়ে মকিছ ও তার পরিবারের লোকজনদেরকে মারধর করেন। স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে প্রাণে হত্যার হুমকি দেন।

এবিষয়ে কৃষক আব্দুল মকিছ মুঠোফোনে জানান তিনি নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদের বিরোধপূর্ণ জমিজমার সবকিছুর সমাধান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা মতিন বকস তার ভাইদের ভুলবুঝিয়ে তার পেছনে লেগেছেন। সহায় সম্পদ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাকে ও পরিবারকে প্রাণে হত্যার চেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছেন। তিনি এখন যে কোনো কৌশলে ভাইদের সহায়ক হয়ে আমাদের সম্পত্তি দখলে নিতে চান। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমি গরীব মানুষ আমার ছোট ৩ টা বাচ্চা নিয়ে কৃষি কাজের মাধ্যমে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম জীবন যাপন করছি। তিনি মতিন বকসের ভয়ে এলাকায় অনেকেই কথা বলতে সাহস পায়না। তিনি সবসময় বিচার শালিসে আর্থিক সুবিধা নিয়ে জোর করে তার রায় বাস্তবায়ন করাতে চান। তিনি বলেন গেল ৫ আগষ্টের পর তিনি আগের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার দাপঠের কাছে সবাই অসহায়। তার মতের অবাধ্য হলে বা প্রতিবাদ করলেই রাজনৈতিক তকমা দিয়ে মামলা হামলার নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মতিন বকস জানান মকিছ তার ভাই বোনদের জায়গা সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। তাদের হক মেরেছে। বিগত দিনে সে এমপি জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি নেছার আহমদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান ও তাঁতীলীগের এক নেতার প্রশ্রয়ে প্রভাব খাটিয়ে এসব করেছে। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। তার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা। মকিছই তাকে শালিস বিচারের জন্য আহবান করে। সে সামাজিক বিচার মানতে নারাজ।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানান এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। একই বিষয়ে থানায়ও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আদালতে দায়ের করা মামলা ও থানার অভিযোগ তদন্ত স্বাপেক্ষে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতার ভয়ে বাড়িছাড়া দরিদ্র কৃষক পরিবার

আপডেট সময় ১১:২৭:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

জেলা সংবাদদাতা : পরিবারের সদস্য নিয়ে অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন দরিদ্র কৃষক আব্দুল মকিছ। পরিবার নিয়ে প্রাণ রক্ষায় এখন রয়েছেন আত্মগোপনে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মতিন বকসের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পূর্ব মাতারকাপন এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে কৃষক আব্দুল মকিছের। তিনি মতিন বকসের ভয়ে প্রায় তিন মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এনিয়ে পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার মডেল থানায় বিএনপি নেতা মতিন বখসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কৃষক আব্দুল মকিছ। একই ঘটনায় আদালতেও মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলার আসামিরা হলেন আব্দুল মকিছের ভাই আব্দুল শহীদ, আব্দুল মতিন, ভাইদের স্ত্রী মিলি বেগম ও পারভিন বেগম।

মামলার এজাহার ও মৌখিক অভিযোগ থেকে জানা যায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পূর্ব মাতারকাপন গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ভাইদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল আব্দুল মকিছের। সেই সূত্র ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিরা মকিছের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বসতঘরে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ সময় তার স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন সন্ধ্যায় আসামিরা আবারও বাড়িতে গিয়ে পুনরায় আব্দুল মকিছের স্ত্রীকে ছুরি ও লোহার পাইপ দিয়ে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। ঘটনার খবর পেয়ে আব্দুল মকিছ বাড়িতে এসে স্ত্রীকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। থানায় দায়ের করা অভিযোগ আব্দুল মকিছ উল্লেখ করেন ভাইদের পক্ষ নিয়ে মতিন বকস জমি দখলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন।

এবিষয়ে স্থানীয় লোকজনদেরকে জানালে মতিন বকস তার লোকজন দিয়ে মকিছ ও তার পরিবারের লোকজনদেরকে মারধর করেন। স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে প্রাণে হত্যার হুমকি দেন।

এবিষয়ে কৃষক আব্দুল মকিছ মুঠোফোনে জানান তিনি নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদের বিরোধপূর্ণ জমিজমার সবকিছুর সমাধান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা মতিন বকস তার ভাইদের ভুলবুঝিয়ে তার পেছনে লেগেছেন। সহায় সম্পদ দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাকে ও পরিবারকে প্রাণে হত্যার চেষ্ঠায় লিপ্ত রয়েছেন। তিনি এখন যে কোনো কৌশলে ভাইদের সহায়ক হয়ে আমাদের সম্পত্তি দখলে নিতে চান। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমি গরীব মানুষ আমার ছোট ৩ টা বাচ্চা নিয়ে কৃষি কাজের মাধ্যমে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম জীবন যাপন করছি। তিনি মতিন বকসের ভয়ে এলাকায় অনেকেই কথা বলতে সাহস পায়না। তিনি সবসময় বিচার শালিসে আর্থিক সুবিধা নিয়ে জোর করে তার রায় বাস্তবায়ন করাতে চান। তিনি বলেন গেল ৫ আগষ্টের পর তিনি আগের মতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার দাপঠের কাছে সবাই অসহায়। তার মতের অবাধ্য হলে বা প্রতিবাদ করলেই রাজনৈতিক তকমা দিয়ে মামলা হামলার নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মতিন বকস জানান মকিছ তার ভাই বোনদের জায়গা সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। তাদের হক মেরেছে। বিগত দিনে সে এমপি জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি নেছার আহমদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান ও তাঁতীলীগের এক নেতার প্রশ্রয়ে প্রভাব খাটিয়ে এসব করেছে। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে মারামারি হচ্ছে। তার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা। মকিছই তাকে শালিস বিচারের জন্য আহবান করে। সে সামাজিক বিচার মানতে নারাজ।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানান এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। একই বিষয়ে থানায়ও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আদালতে দায়ের করা মামলা ও থানার অভিযোগ তদন্ত স্বাপেক্ষে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।