লোডশেডিং। এতে বেড়েছে চার্জার ফ্যান, লাইট এবং আইপিএস বিক্রি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেকটি চার্জার ফ্যান তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১২ ইঞ্চির চার্জার ফ্যানের দাম তিন হাজার টাকা থেকে শুরু। তবে বাজারে ১৪, ১৬, ১৮ ইঞ্চির চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া আমদানি করা বড় স্ট্যান্ড-এর চার্জার ফ্যানও বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোর দাম ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু।
লোডশেডিংয়ের কারণে এসব চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মান ও কোম্পানিভেদে বাজারে বিভিন্ন ধরনের আইপিএস বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দাম ১৬ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। তবে কম ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু ছোট সাইজের আইপিএসও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর দাম তুলনামূলক কম। তবে সেগুলোর মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাতে শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ রোড, পুরান বাজার, সেন্টাল রোল, সোনার বাংলা রোড, মৌলভীবাজার রোডসহ শহরের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্যের খুচরা ও পাইকারি দোকানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ব্যবসায়িরা দোকানের ভেতর এবং বাইরে ছোট, মাঝারি এবং বড় সাইজের বিভিন্ন রকমের চার্জার ফ্যান এবং রিচার্জেবল লাইট সাজিয়ে রেখেছেন।
অতিরিক্ত গরমে রিচার্জেবল ফ্যান কেনার ধুম পড়েছে, শো-রুম গুলোতে মানুষের ভীড়, কিন্তু ফ্যান বলে অভিযোগ তুলেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা (পিডিসি) শিউলি আক্তার। এম আর তালুকদার নামের এক তরুণ অভিযোগ করেন ৫০০ টাকার ফ্যান ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৌলভীবাজারে রোডে দেখা হয় ফ্যান কিনতে আসা শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন,দিনে রাতে লোডশেডিং যে হারে বেড়েছে তাতে চার্জার ফ্যানের বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে কেউ পড়তে পারে না গরমের কারণে। এজন্য চার্জার ফ্যান নিচ্ছি। তবে এখন বাজারে ফ্যানের দাম অনেক বেশি।
এসময় পাশে থাকা আরেক ক্রেতা নাজমুন আরা সুইটি বলেন, হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়েছে, বাসায় বাচ্চাদের পাশাপাশি বৃদ্ধ মায়ের ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘরে বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এসি রেখেও লাভ নেই। বিদ্যুৎ না থাকলেও সব কিছুই অচল। তাই গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছি। আব্দাল হোসেন নামের শ্রীমঙ্গল শহরের এক বাসিন্দা বলেন, শ্রীমঙ্গল শহর-শহরতলীসহ সব জায়গায় এখন হুটহাট চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। একবার গেলে ফিরে আসে অন্তত আধা ঘণ্টা পর। আগে শুধু দিনে লোডশেডিং ছিল। এখন সন্ধ্যা ও মধ্যরাতেও হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৭/৮ বার লোডশেডিং হওয়ায় জনজীবনে ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ে প্রচন্ড গরম থেকে রেহাই পেতে তিনি মাঝারি সাইজের একটি চার্জার ফ্যান কিনেছেন তিন হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে।
শহরের হবিগঞ্জ রোডের মোঃ আলতাব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ি বলেন-প্রচন্ড গরম থেকে রেহাই পেতে মানুষ এখন চার্জার ফ্যান ও চার্জার লাইট বেশি ক্রয় করছেন। ব্যাপক চাহিদার কারণে এখন কারণে চার্জার ফ্যানের দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন আমি যে ফ্যান ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি এখন এটা পাইকারি কিনতে হচ্ছে আরো ৩৫০টাকা দিয়ে। যে ফ্যানটি আগে বিক্রি করছি ১২৫০ টাকা বিক্রি করছি এটা এখন ১৬৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমার দোকানে বিভিন্ন সাইজের যেসব ফ্যান স্টোকে ছিল সেগুলো আগের রেইটেই বিক্রি করছি। আর নতুন কেনা মালগুলো বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যান্য ইলেট্রনিক দোকানের তুলনায় কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন দাবি করে তিনি বলেন যার কারণে আমার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। আলহামদুলিল্লা, বেচাকেনাও খুব ভালো হচ্ছে দাবি করেন মোবাইল মেলার প্রোপাইটর মোঃ আলতাব হোসেন।
শহরের পুরান বাজারের আলো ঘর ইলেকট্রনিক দোকানের গৌতুম দেবনাথ বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করে আসছি। তবে এবারেে গরমে বেশি চাহিদা চার্জার লাইট এবং চার্জার ফ্যানের। দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে এ ব্যবসায়ি বলেন, ক্রেতারা আসেন দরদাম করেন, হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কমানোর সুযোগ নেই। আগে যে দামে বিক্রি করছে এখন দেখা গেছে কোনো কোনো পণ্য দিগুণ দামেও বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন যে পরিমাণ ক্রেতারা দোকানে আসেন সে পরিমাণে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন দামের দিক দিয়ে ক্রেতারা চাহিদা মতো না হওয়া তারা কিনতে পারেন নাা আবার আমরাও বিক্রি করতে পারি না। তবে একেবারে মান্দাও বলা যাবে না। শহরের সোনার বাংলা রোডের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম লিয়াকত বলেন, আমার দোকানে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা চার্জার লাইটের। শোলশেডিংয়ে এবার চাহিদা বেড়েছে চার্জার লাইটের। ফ্যানের দাম বেড়ে যাওয়ায় তিনি আপাতত ফ্যান বিক্রি করছেন নাা বলেও জানান।
এছাড়াও শহরের মৌলভীবাজার রোড, চৌমুহনাসহ বিভিন্ন দোকানে খুচরা ও পাইকারিভাবে চার্জার ফ্যান এবং আইপিএস বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়িরা জানান। তবে বর্তমানে চাহিদার কারণে ইলেকট্রনিক্সের দোকানের পাশাপাশি অন্যান্য দোকান এবং ফুটপাতেও এসব পণ্য বিক্রি হওয়ার দৃশ্যটি নজরে আসে।