ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌক্তিক’ বলে কোন শব্দ রাজনীতির ইতিহাসে চলে না: এম নাসের রহমান

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৩৪:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ::
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেছেন, দেশ এখন দুটি ধারায় বিভক্ত। একটা ধারা বলে নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন, আরেকটা ধারা বলে থাকে সংস্কার, সংস্কার, সংস্কার। এখন সংস্কার প্রয়োজন, এটা ঠিক। কিন্তু এর জন্য সীমাহীন সময় দেয়া যাবে না। আজকাল আরেকটা নতুন শব্দ বের হয়েছে, এটা বেশি ইউজ করে একটি ইসলামী দল। শব্দটি হলো “যৌক্তিক”। এখন তাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করি যৌক্তিকটা কতদিন, এটার কোন উত্তর পাওয়া যায় না। এই যৌক্তিকটা কতদিন একমাস, ছয়মাস, একবছর না তিনবছর- আসলে যৌক্তিকটা কতো, এটার কোন উত্তর তাদের কাছে নেই। শব্দ একটাই শিখেছে বলে ‘যৌক্তিক’। যৌক্তিক বলে কোন শব্দ রাজনীতির ইতিহাসে চলে না।

 

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ইম্পিরিয়েল মেডিকেল কলেজের মাঠে চাঁদনিঘাট ইউনিয়ন বিএনপি পূর্ব শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

 

নাসের রহমান বলেন, সময়ের প্রয়োজনে যেগুলো দরকার, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সংবিধান ছাড়া সবগুলো সংস্কারই করেন। সংবিধান সংষ্কার একমাত্র সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। বাকি যা সংস্কার আছে করে ফেলেন। কোন অসুবিধা নেই। দুর্নীতিদমনের সংস্কার, পুলিশের সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কার, জুডিশিয়ারি সংস্কার, যত সংস্কার আছে সবগুলি করেন। কিন্তু সংবিধানের সংস্কারে হাত দিতে পারেন না।

 

এনসিপিকে ইঙ্গিত করে নাসের রহমান বলেন, এই ছেলেরা একেক সময় একেক মামাবাড়ির আবদার করে। কি ধরণের আবদার, প্রথমেই বলেছিলো ভোটারের ভোটের বয়স সতেরো বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব। কিন্ত এটা তো একমাত্র সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়। আরো কি বলেছে, দ্বিতীয় রিপাবলিক ঘোষনা দেয়ার জন্য। দ্বিতীয় রিপাবলিক কি? এটা কি সাতাশ বছরের ছেলেরা বুঝে। আসলে এই ছেলেগুলোর পেছনে দুজন তাত্বিক গুরু আছেন। এই দুজন তাত্বিক গুরু আগে তাদের বলে দেয় কখন কি বলতে হবে। তারা বলে এই সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান করতে হবে। তাদের বয়সই হলো এই সংবিধানের বয়সের অর্ধেক। আর তারা সংবিধান নিয়ে কথা বলে, তারা কারা? সংবিধান নিয়ে কথা বলার?। সংবিধানে অনেক কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, তবে তা নির্বাচনের পরে। সংসদে আলোচনা করে পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু তারা আগেই চায়। কেন? এটা বুঝতে কি রকেট সাইন্স জানতে হবে? কারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে। বিএনপি ইনশাআল্লাহ আড়াইশো সিট নিয়ে ক্ষমতায় যাবে, আর তাদের ডর (ভয়) এখানেই।

 

তিনি বলেন, আড়াইশো বাদ দেন, দুইশো একটা সিট পেলেই তো বিএনপি সংবিধান সংস্কারের অধিকার রাখে, কিন্তু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বার বার বলেছেন, বিএনপি একতরফা কিছু করতে যাবে না। সকল দলের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবে। তারা আরেকটি কথা বলে একটা দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য এতো মানুষ মারা যায়নি, আন্দোলন করা হয়নি, এর মানেটা কি? তার মানেটা তারা জানে। আগামী ডিসেম্বরে ভোট হলে বিএনপিই ক্ষমতায় যাবে। এখন জনগণ যদি ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনে, তাহলে এখন কি তারা বিএনপিকে ঠেকাতে চায়?।

 

নাসের রহমান আরো বলেন, তোমরা ছাত্ররা আন্দোলন করেছো তোমাদের স্যালুট। তোমাদের বিগ স্যালুট। তোমাদেরকে এর জন্য সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হবে। কিন্তু যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তারা তো ক্ষমতার দখল নেয়ার জন্য আন্দোলনে নামেননি। এই যে চৌদ্দশো মানুষ মারা গেছেন, তোমরা দশ পনেরো জন ছাড়া আর বাকি কেউ তো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলনে নামেনি। কারণ তাদেরকে পেছন থেকে চালানো হয়। তাদের তাত্বিক গুরুরা একেক সময় একেক কথা বলে, বলার জন্য তাই তারা বলে।

 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন। চাঁদনিঘাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ আব্দুল মুকিত, মো. ফখরুল ইসলাম, বকসি মিছবাউর রহমান, মুজিবুর রহমান মজনু, বিএনপি নেতা আয়াছ আহমদ, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বদরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আহমেদ প্রমুখ।
দীর্ঘ সতেরো বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উৎসবের আমেজ দেখা দেয় নেতাকর্মীদের মাঝে। হাতির বহর ও ব্যান্ড পার্টির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় সম্মেলনের অতিথিদের। পরে এম নাসের রহমান জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। পরিবেশ করা হয় দলীয় সংগীত। পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে চাঁদনিঘাট পূর্ব শাখার কাউন্সিল অধিবেশনে ২৫৫টি জন ভোটারের মধ্যে ২০১জন সভাপতি পদে ভোট প্রদান করেন। এরমধ্যে চারটি ভোট বাতিল হয়।

 

 

সভাপতি পদে মো. খলিলুর রহমান ১০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ইনসান আলী ৮৯ ভোট পান, তাকে রাখা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় আলমগীর হোসেন নির্বাচিত হন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

যৌক্তিক’ বলে কোন শব্দ রাজনীতির ইতিহাসে চলে না: এম নাসের রহমান

আপডেট সময় ০৮:৩৪:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি ::
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান বলেছেন, দেশ এখন দুটি ধারায় বিভক্ত। একটা ধারা বলে নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন, আরেকটা ধারা বলে থাকে সংস্কার, সংস্কার, সংস্কার। এখন সংস্কার প্রয়োজন, এটা ঠিক। কিন্তু এর জন্য সীমাহীন সময় দেয়া যাবে না। আজকাল আরেকটা নতুন শব্দ বের হয়েছে, এটা বেশি ইউজ করে একটি ইসলামী দল। শব্দটি হলো “যৌক্তিক”। এখন তাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করি যৌক্তিকটা কতদিন, এটার কোন উত্তর পাওয়া যায় না। এই যৌক্তিকটা কতদিন একমাস, ছয়মাস, একবছর না তিনবছর- আসলে যৌক্তিকটা কতো, এটার কোন উত্তর তাদের কাছে নেই। শব্দ একটাই শিখেছে বলে ‘যৌক্তিক’। যৌক্তিক বলে কোন শব্দ রাজনীতির ইতিহাসে চলে না।

 

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ইম্পিরিয়েল মেডিকেল কলেজের মাঠে চাঁদনিঘাট ইউনিয়ন বিএনপি পূর্ব শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

 

নাসের রহমান বলেন, সময়ের প্রয়োজনে যেগুলো দরকার, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সংবিধান ছাড়া সবগুলো সংস্কারই করেন। সংবিধান সংষ্কার একমাত্র সংসদ ছাড়া কেউ করতে পারবে না। বাকি যা সংস্কার আছে করে ফেলেন। কোন অসুবিধা নেই। দুর্নীতিদমনের সংস্কার, পুলিশের সংস্কার, প্রশাসনের সংস্কার, জুডিশিয়ারি সংস্কার, যত সংস্কার আছে সবগুলি করেন। কিন্তু সংবিধানের সংস্কারে হাত দিতে পারেন না।

 

এনসিপিকে ইঙ্গিত করে নাসের রহমান বলেন, এই ছেলেরা একেক সময় একেক মামাবাড়ির আবদার করে। কি ধরণের আবদার, প্রথমেই বলেছিলো ভোটারের ভোটের বয়স সতেরো বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাব। কিন্ত এটা তো একমাত্র সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়। আরো কি বলেছে, দ্বিতীয় রিপাবলিক ঘোষনা দেয়ার জন্য। দ্বিতীয় রিপাবলিক কি? এটা কি সাতাশ বছরের ছেলেরা বুঝে। আসলে এই ছেলেগুলোর পেছনে দুজন তাত্বিক গুরু আছেন। এই দুজন তাত্বিক গুরু আগে তাদের বলে দেয় কখন কি বলতে হবে। তারা বলে এই সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান করতে হবে। তাদের বয়সই হলো এই সংবিধানের বয়সের অর্ধেক। আর তারা সংবিধান নিয়ে কথা বলে, তারা কারা? সংবিধান নিয়ে কথা বলার?। সংবিধানে অনেক কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, তবে তা নির্বাচনের পরে। সংসদে আলোচনা করে পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু তারা আগেই চায়। কেন? এটা বুঝতে কি রকেট সাইন্স জানতে হবে? কারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে। বিএনপি ইনশাআল্লাহ আড়াইশো সিট নিয়ে ক্ষমতায় যাবে, আর তাদের ডর (ভয়) এখানেই।

 

তিনি বলেন, আড়াইশো বাদ দেন, দুইশো একটা সিট পেলেই তো বিএনপি সংবিধান সংস্কারের অধিকার রাখে, কিন্তু আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বার বার বলেছেন, বিএনপি একতরফা কিছু করতে যাবে না। সকল দলের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিবে। তারা আরেকটি কথা বলে একটা দলকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য এতো মানুষ মারা যায়নি, আন্দোলন করা হয়নি, এর মানেটা কি? তার মানেটা তারা জানে। আগামী ডিসেম্বরে ভোট হলে বিএনপিই ক্ষমতায় যাবে। এখন জনগণ যদি ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনে, তাহলে এখন কি তারা বিএনপিকে ঠেকাতে চায়?।

 

নাসের রহমান আরো বলেন, তোমরা ছাত্ররা আন্দোলন করেছো তোমাদের স্যালুট। তোমাদের বিগ স্যালুট। তোমাদেরকে এর জন্য সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হবে। কিন্তু যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তারা তো ক্ষমতার দখল নেয়ার জন্য আন্দোলনে নামেননি। এই যে চৌদ্দশো মানুষ মারা গেছেন, তোমরা দশ পনেরো জন ছাড়া আর বাকি কেউ তো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলনে নামেনি। কারণ তাদেরকে পেছন থেকে চালানো হয়। তাদের তাত্বিক গুরুরা একেক সময় একেক কথা বলে, বলার জন্য তাই তারা বলে।

 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন। চাঁদনিঘাট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ আব্দুল মুকিত, মো. ফখরুল ইসলাম, বকসি মিছবাউর রহমান, মুজিবুর রহমান মজনু, বিএনপি নেতা আয়াছ আহমদ, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বদরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আহমেদ প্রমুখ।
দীর্ঘ সতেরো বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উৎসবের আমেজ দেখা দেয় নেতাকর্মীদের মাঝে। হাতির বহর ও ব্যান্ড পার্টির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় সম্মেলনের অতিথিদের। পরে এম নাসের রহমান জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। পরিবেশ করা হয় দলীয় সংগীত। পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে চাঁদনিঘাট পূর্ব শাখার কাউন্সিল অধিবেশনে ২৫৫টি জন ভোটারের মধ্যে ২০১জন সভাপতি পদে ভোট প্রদান করেন। এরমধ্যে চারটি ভোট বাতিল হয়।

 

 

সভাপতি পদে মো. খলিলুর রহমান ১০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ইনসান আলী ৮৯ ভোট পান, তাকে রাখা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় আলমগীর হোসেন নির্বাচিত হন।