শুরু শারদীয় দুর্গাপূজা
- আপডেট সময় ১১:২১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০২২
- / ২০৩ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে শনিবার (১ অক্টোবর)। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এ দুর্গোৎসব শুরু হবে। বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ মহোৎসব।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে গত দু’বছর অনেকটাই নিষ্প্রাণ ছিল বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আলোকসজ্জাসহ উৎসবসংশ্নিষ্ট বিষয় পরিহার করে কেবল ‘সাত্ত্বিক পূজায়’ সীমিত রাখা হয়েছিল আয়োজন; ছিল বাড়তি সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়গুলোও। তবে এবার করোনার সংকট ও ভয় কাটিয়ে ফিরে এসেছে চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ। সারাদেশের মণ্ডপ-মন্দিরে বর্ণাঢ্য উৎসবের প্রস্তুতিও এখন শেষ হয়েছে। বছরের দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, আজ শনিবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ষষ্ঠী তিথিতে আজ সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। এদিন সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা। আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং ৪ অক্টোবর মহানবমী শেষে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব।
তবে গতকাল শুক্রবার পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করেছে। সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেবীর বোধন। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা করা হয়। মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাও।সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন, যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে, যার ফল শস্যবৃদ্ধি। এ প্রেক্ষাপটে এবারের দুর্গোৎসব শুভফলই বয়ে আনবে বাঙালির জীবনে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার ঢাকাসহ সারাদেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে। ঢাকা মহানগরীতে এবার ২৪১টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন থাকছে, যা গতবার ছিল ২৩৫টি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে সর্বত্র শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম দেখা গেছে। সবখানেই এখন সাজসাজ রব। প্রায় সব মণ্ডপেই উঠেছে বর্ণিল প্রতিমার সারি। নিখুঁতভাবে মনের কল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে কাঠামো থেকে দুর্গা দেবী প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তিও শোভা পাচ্ছে। কোনো কোনো মণ্ডপ-মন্দিরে দেবী দুর্গার এবারের আগমন ও গমনের প্রতীকী ঘটনাসহ পৌরাণিক বিভিন্ন কাহিনি নানা আদলে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা রয়েছে।
দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পর্বে দেশের দু-একটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘এবার দুর্গাপূজা ঘিরে জঙ্গি হামলার শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।’
এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে এবারের দুর্গাপূজাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোতে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। নিরাপত্তার বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি আর্চওয়ে গেট, মেটাল ডিটেক্টরসহ অন্য আয়োজনও থাকবে।
এদিকে, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করবে। এখানে সারাদেশে দুর্গাপূজা-সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা জানানো যাবে।