ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রদ্ধাঞ্জলি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৩১২ বার পড়া হয়েছে

. এম ওয়াজেদ মিয়া : মহান বিজ্ঞান সাধক বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী 

এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া  রংপুর-উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশের একজন কীর্তিমান সন্তান।মোটা দাগে ড. ওয়াজেদ মিয়ার তিনটি পরিচয়ের সাথে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত প্রথমত ড. ওয়াজেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা,দ্বিতীয়ত তিনি দেশের একজন খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী এবং তৃতীয়ত বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী উত্তরবঙ্গের রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকায় ৬৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।দেশের এই কীর্তিমান সন্তান ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবন ও কর্মেরর সাথে নবীন লেখক এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন এর পরিচয় ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শাহবাগ জাতীয় গ্রন্থাগারে তার রচিত কালজয়ী আত্তজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ পাঠের মধ্য দিয়ে।ড. ওয়াজেদ ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ছিলেন।তিনি ১৯৬১-৬২ সেশনে ফজলুল হক মুসলিম লীগের ছাত্রলীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন যা বর্তমান প্রজন্মের হয়তো অনেকেই জানেন না।ড. ওয়াজেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চাত্র হিসেবে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দ্বিতীয় মেধা স্থান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ছাত্ররাজনীতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা অন্তরীণ ও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে ইতিহাসের কলংক জনক হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার অভিভাবক হয়ে উঠার গল্প তুলে ধরতে লেখক প্রয়াসি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-৬২ সেশনে হল সংসদ নির্বাচনে ড. ওয়াজেদ ছাত্রলীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হন ফলে ততকালীন সময়ে নির্বাচিত ভিপি ড. ওয়াজেদ কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠে।মেধাবী ছাত্র ড. ওয়াজেদ গণতন্ত্রমনা ও দেশপ্রেমিক ছিলেন।ছাত্ররাজনীতিতে তার আগ্রহী ও যোগদানের বিষয়ে তার কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণ করে সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।শেখ মুজিবসহ অনেক রাজনৈতিক ও ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছিলো। কাজেই ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্তিমিত ছিলো। ১৯৬০ এর শেষের দিকে শোনা যায় যে, জেনারেল আইয়ুব খান Basic Democracy নামে রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।ঐ Basic Democracy এর আওতায় কেবল ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য ও চেয়ারম্যানগণ রাষ্ট্রের কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।আইয়ুব খানের ঐ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তুতির খবর শুনে আমার বিবেক প্রতিবাদ করে ওঠে এবং তার ফলে আমি ছত্র রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরি। আত:পর ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি ছাত্রলীগে যোগদান করি।“ ( পৃষ্ঠা : ৩)

ড. ওয়াজেদ ১৯৬৩ সালে ততকালীন পাকিস্তান আণবিক কমিশনে চাকুরীপ্রাপ্ত হন এবং যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি তার অনুরাগের পরিচয় চাকুরীরত অবস্থায়ও পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুর জেলগেটে বিচার শুরু হয়েছে শুনেই তিনি পুরান পল্টনস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছুটে যান।ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি থাকাকালীন ১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি হলের বার্ষিক ডিনারে ততকালীন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস কর্নেলিয়াস প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন এবং হল সংসদের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে দেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পক্ষে জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন।এছাড়াও সে সময়ে গ্রেফতারকৃত জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির দাবি তুলেন।একই বছর সামরিক শাসন অবসানের লক্ষ্যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রনেতা ওয়াজেদ কারাবরণ করেন এবং কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তিনি প্রথমবারের মত তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ লাভ করেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়– “ I.B-এর লোক আমাকে শেখ মুজিবের পাশ কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু শেখ মুজিব ঐ কর্মকর্তাকে উপেক্ষা করে আমাকে বলেন, ‘ওয়াজেদ, এদিকে আসো।’ তিনি তার পরিবারবর্গকে বললেন, ‘এর নাম ওয়াজেদ, ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি।’ এরপর তিনি তার পরিবারবর্গের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন,এই তোমার ভাবি, আমার বড় মেয়ে হাসিনা, ছেলে কামাল,জামাল ও ছোট মেয়ে রেহানা।’ হাসিনার হাতে অনেকগুলো লিচু ছিলো। তিনি বলেন, ‘মা হাসু, লিচুগুলো ওয়াজেদকে দিয়ে দাও।“ ( পৃষ্টা : ১৫)

ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ড. ওয়াজেদ রাজনৈতিক সূত্রে বঙ্গবন্ধুকে মুজিব ভাই ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে ভাবি বলে সম্বোধন করেছেন সেই তিনিই ভাগ্যচক্রে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।ড. ওয়াজেদ আমৃত্যু শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে বঙ্গবন্ধু কারা অন্তরীণ সময় ও ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর অভিভাবক হিসেবে বটবৃক্ষ হয়ে পাশে থেকেছেন।শেখ হাসিনা ভাগ্যচক্রেই ১৯৭৫ সালে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে স্বামীর কাছে জার্মানি বেড়াতে যাওয়ায় বেচে যান।

বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আটক করে রাখার প্রেক্ষাপটে ১১ দফার ভিত্তিতে ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এসময় ততকালীন ডাকসু ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের বার্তা ড. ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌছে দিতেন।মাহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ড. ওয়াজেদ পুরুষ অভিভাবক হিসেবে ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধু পরিবারকে আগলে রাখেন।বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ পরিবারের সকলকে নিয়ে নিরাপদ নীড়ের সন্ধানে ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতেই আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং একপর্যায়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে সবাই গৃহবন্দী হন।এই গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়েই ড. ওয়াজেদ–শেখ হাসিনা দম্পত্তির প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।ড. ওয়াজেদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়ে অনেকবারই স্টেনগান এর মুখোমুখি হয়েছেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “…ধানমন্ডির ঐ বাসার কাছে ফিরে দেখি যে, বাসা অন্ধকার ও নিস্তব্ধ।বাসার দেইটে পৌছালে একজন সৈন্য আমাকে বন্দুক তাক করে গাড়ি বারান্দায় না গিয়ে গ্যারেজে অবস্থানরত সৈন্যদের কমান্ডারের নিকট যাবার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করে। শ্বাশুড়ি ও হাসিনা তখন অন্ধকার বাড়ির সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। হাসিনা চিতকার করে আমার উদ্যেশ্য জানায় যে, এর কিছুক্ষণ আগে খোকা কাকাকে তারা গ্যারেজে ডেকে নিয়ে নানা ভাবে ভীতি প্রদর্শন করেছে।সুতরাং কোন অবস্থাতেই গ্যারেজে না গিয়ে হাসিনা আমাকে সোজা গাড়ি বারান্দায় যেতে বলে।হাসিনার পরামর্শ মোতাবেক আমি তখন গাড়ি বারান্দার দিকে যাবার জন্য গাড়িটিকে ঘুরিয়ে নিয়েই ত্বরিত গতিতে বাসার বারান্দার দরজার নিকট পৌছাই।ঠিক ঐমুহুর্তে বাড়ির গেইটে কর্তব্যরত একজন সৈনিক গুলি ছোঁড়ে।ঐ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রহরারত সৈনিকরা বাসার ভেতর ঘড়ের চারদিক ঘেরাও করে এবং ওদের কমান্ডার উচ্চ:স্ব্ররে আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে তার নিকট যেতে বলে।“ ( পৃষ্ঠা-৮৯-৯০)

ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান সাধনায় ছিলেন অবিচল তিনি জার্মানিতে পোস্ট ডক্টরাল কর্মরত অবস্থায় তার শ্যালক শেখ কামালের সুলতানা খুকীর সাথে বিবাহ ঠিক হয় কিন্তু দেশে আসলে স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যেতে পারে এইজন্য তিনি বিয়েতে উপস্থিত হতে পারেন নাই।এই বিষয়ে তিনি তার শ্বাশুড়িকে আবেগঘন চিঠি লিখে দু:খ প্রকাশ করেন।ড. ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর ও প্রেমময়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ১৫ দিন আগে শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানা ও দুই সন্তান কে নিয়ে স্বামীর কাছে জার্মানি তে আসেন।এই যাত্রায় তার পাসপোর্টে নিজের নামের শেষে স্বামী ড. ওয়াজেদ এর নাম সংযুক্ত করেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “আমাকে দেখে বাচ্চারা ভীষণ খুশি হয়।ওদের মালপত্র সেখানে নিয়ে আনার পর দেখি যে, হাসিনা তার নামের সঙ্গে আমার নাম সংযোজন করে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করে নিয়েছে।নতুন পাসপোর্টে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হাসিনা শেখ ওয়াজেদ’ বলে।উল্লেখ্য যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রেও তার নাম রয়েছে ‘হাসিনা শেখ’ বলে।১৯৬৯-এ আমার সঙ্গে ইটালি যাওয়ার সময় তার জন্য এই শেষোক্ত নামেই পাসপোর্ট ইস্যু করে নেওয়া হয়েছিলো। এ ব্যাপারে আমি হাসিনাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘তুমি যদি বিমানবন্দরে না আসো সে জন্য ইচ্ছা করেই এই পাসপোর্টে তোমার নাম সংযোজন করে নিয়েছি যাতে কার্লসরুয়ে শহরে গিয়ে সহজেই তোমাকে খুঁজে বের করা যায়।স্বরণ রাখবা, তুমি যেমন বুনো ওল আমিও তেমনি বাঘা তেঁতুল।“ ( পৃষ্ঠা-২৪২)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ড. ওয়াজেদ জীবনের শেষ নি:শ্বাষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়।নয়া দিল্লির প্রবাস জীবনে ভারতের আণবিক কমিশনে চাকরি করেছেন। পান্ডারা রোডের সেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাসভবনে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার অভিভাবক ও পরমবন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো।ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “..অতএব নি:সঙ্গ অবস্থায় ঐ বাড়ির অতি ক্ষুদ্র চত্বরের মধ্যে আবদ্ধ থাকি আমরা সকলেই।আমি রাতে শুয়ে সারাক্ষণ জেগে থাকতাম এক রকম নিরাপত্তা প্রহরীর মতো।মাঝে মাঝে জানালার পর্দার ফাক দিয়ে বাইরের গেটের দিকে তাকাতাম।রাতে কয়েক ঘন্টা পর পর গেটে প্রহরারত দারোয়ানের সঙ্গে বাইরের লোকের ফিসফিস কথা বলা সন্দেহের উদ্রেক করতো।এরুপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মাঝে মধ্যে হাসিনাকে সজাগ করতাম।“ ( পৃষ্ঠা-২৫১)

মহান বিজ্ঞানসাধক ও বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র জীবন ও কর্মের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র‍্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

শ্রদ্ধাঞ্জলি

আপডেট সময় ০৫:৩৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

. এম ওয়াজেদ মিয়া : মহান বিজ্ঞান সাধক বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী 

এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া  রংপুর-উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশের একজন কীর্তিমান সন্তান।মোটা দাগে ড. ওয়াজেদ মিয়ার তিনটি পরিচয়ের সাথে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত প্রথমত ড. ওয়াজেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা,দ্বিতীয়ত তিনি দেশের একজন খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী এবং তৃতীয়ত বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী।ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী উত্তরবঙ্গের রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালের ৯ মে ঢাকায় ৬৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।দেশের এই কীর্তিমান সন্তান ড. ওয়াজেদ মিয়ার জীবন ও কর্মেরর সাথে নবীন লেখক এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন এর পরিচয় ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শাহবাগ জাতীয় গ্রন্থাগারে তার রচিত কালজয়ী আত্তজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ পাঠের মধ্য দিয়ে।ড. ওয়াজেদ ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ছিলেন।তিনি ১৯৬১-৬২ সেশনে ফজলুল হক মুসলিম লীগের ছাত্রলীগ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত ভিপি ছিলেন যা বর্তমান প্রজন্মের হয়তো অনেকেই জানেন না।ড. ওয়াজেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চাত্র হিসেবে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।তিনি ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দ্বিতীয় মেধা স্থান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ছাত্ররাজনীতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা অন্তরীণ ও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে ইতিহাসের কলংক জনক হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার অভিভাবক হয়ে উঠার গল্প তুলে ধরতে লেখক প্রয়াসি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬১-৬২ সেশনে হল সংসদ নির্বাচনে ড. ওয়াজেদ ছাত্রলীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি নির্বাচিত হন ফলে ততকালীন সময়ে নির্বাচিত ভিপি ড. ওয়াজেদ কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠে।মেধাবী ছাত্র ড. ওয়াজেদ গণতন্ত্রমনা ও দেশপ্রেমিক ছিলেন।ছাত্ররাজনীতিতে তার আগ্রহী ও যোগদানের বিষয়ে তার কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণ করে সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।শেখ মুজিবসহ অনেক রাজনৈতিক ও ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছিলো। কাজেই ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্তিমিত ছিলো। ১৯৬০ এর শেষের দিকে শোনা যায় যে, জেনারেল আইয়ুব খান Basic Democracy নামে রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।ঐ Basic Democracy এর আওতায় কেবল ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য ও চেয়ারম্যানগণ রাষ্ট্রের কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।আইয়ুব খানের ঐ অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তুতির খবর শুনে আমার বিবেক প্রতিবাদ করে ওঠে এবং তার ফলে আমি ছত্র রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরি। আত:পর ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আমি ছাত্রলীগে যোগদান করি।“ ( পৃষ্ঠা : ৩)

ড. ওয়াজেদ ১৯৬৩ সালে ততকালীন পাকিস্তান আণবিক কমিশনে চাকুরীপ্রাপ্ত হন এবং যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি তার অনুরাগের পরিচয় চাকুরীরত অবস্থায়ও পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধুর জেলগেটে বিচার শুরু হয়েছে শুনেই তিনি পুরান পল্টনস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছুটে যান।ফজলুল হক মুসলিম হলের ভিপি থাকাকালীন ১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি হলের বার্ষিক ডিনারে ততকালীন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস কর্নেলিয়াস প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন এবং হল সংসদের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে দেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পক্ষে জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন।এছাড়াও সে সময়ে গ্রেফতারকৃত জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তির দাবি তুলেন।একই বছর সামরিক শাসন অবসানের লক্ষ্যে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রনেতা ওয়াজেদ কারাবরণ করেন এবং কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তিনি প্রথমবারের মত তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ লাভ করেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়– “ I.B-এর লোক আমাকে শেখ মুজিবের পাশ কাটিয়ে অন্য দিক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু শেখ মুজিব ঐ কর্মকর্তাকে উপেক্ষা করে আমাকে বলেন, ‘ওয়াজেদ, এদিকে আসো।’ তিনি তার পরিবারবর্গকে বললেন, ‘এর নাম ওয়াজেদ, ফজলুল হক হলের সহ-সভাপতি।’ এরপর তিনি তার পরিবারবর্গের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন,এই তোমার ভাবি, আমার বড় মেয়ে হাসিনা, ছেলে কামাল,জামাল ও ছোট মেয়ে রেহানা।’ হাসিনার হাতে অনেকগুলো লিচু ছিলো। তিনি বলেন, ‘মা হাসু, লিচুগুলো ওয়াজেদকে দিয়ে দাও।“ ( পৃষ্টা : ১৫)

ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ড. ওয়াজেদ রাজনৈতিক সূত্রে বঙ্গবন্ধুকে মুজিব ভাই ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কে ভাবি বলে সম্বোধন করেছেন সেই তিনিই ভাগ্যচক্রে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্য কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।ড. ওয়াজেদ আমৃত্যু শেখ হাসিনা ও তার পরিবারে বঙ্গবন্ধু কারা অন্তরীণ সময় ও ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর অভিভাবক হিসেবে বটবৃক্ষ হয়ে পাশে থেকেছেন।শেখ হাসিনা ভাগ্যচক্রেই ১৯৭৫ সালে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে স্বামীর কাছে জার্মানি বেড়াতে যাওয়ায় বেচে যান।

বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আটক করে রাখার প্রেক্ষাপটে ১১ দফার ভিত্তিতে ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এসময় ততকালীন ডাকসু ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের বার্তা ড. ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌছে দিতেন।মাহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ড. ওয়াজেদ পুরুষ অভিভাবক হিসেবে ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধু পরিবারকে আগলে রাখেন।বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ পরিবারের সকলকে নিয়ে নিরাপদ নীড়ের সন্ধানে ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতেই আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং একপর্যায়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে সবাই গৃহবন্দী হন।এই গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়েই ড. ওয়াজেদ–শেখ হাসিনা দম্পত্তির প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।ড. ওয়াজেদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে গৃহবন্দী থাকাকালীন সময়ে অনেকবারই স্টেনগান এর মুখোমুখি হয়েছেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “…ধানমন্ডির ঐ বাসার কাছে ফিরে দেখি যে, বাসা অন্ধকার ও নিস্তব্ধ।বাসার দেইটে পৌছালে একজন সৈন্য আমাকে বন্দুক তাক করে গাড়ি বারান্দায় না গিয়ে গ্যারেজে অবস্থানরত সৈন্যদের কমান্ডারের নিকট যাবার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করে। শ্বাশুড়ি ও হাসিনা তখন অন্ধকার বাড়ির সামনে বারান্দায় বসেছিলেন। হাসিনা চিতকার করে আমার উদ্যেশ্য জানায় যে, এর কিছুক্ষণ আগে খোকা কাকাকে তারা গ্যারেজে ডেকে নিয়ে নানা ভাবে ভীতি প্রদর্শন করেছে।সুতরাং কোন অবস্থাতেই গ্যারেজে না গিয়ে হাসিনা আমাকে সোজা গাড়ি বারান্দায় যেতে বলে।হাসিনার পরামর্শ মোতাবেক আমি তখন গাড়ি বারান্দার দিকে যাবার জন্য গাড়িটিকে ঘুরিয়ে নিয়েই ত্বরিত গতিতে বাসার বারান্দার দরজার নিকট পৌছাই।ঠিক ঐমুহুর্তে বাড়ির গেইটে কর্তব্যরত একজন সৈনিক গুলি ছোঁড়ে।ঐ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রহরারত সৈনিকরা বাসার ভেতর ঘড়ের চারদিক ঘেরাও করে এবং ওদের কমান্ডার উচ্চ:স্ব্ররে আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে তার নিকট যেতে বলে।“ ( পৃষ্ঠা-৮৯-৯০)

ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান সাধনায় ছিলেন অবিচল তিনি জার্মানিতে পোস্ট ডক্টরাল কর্মরত অবস্থায় তার শ্যালক শেখ কামালের সুলতানা খুকীর সাথে বিবাহ ঠিক হয় কিন্তু দেশে আসলে স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যেতে পারে এইজন্য তিনি বিয়েতে উপস্থিত হতে পারেন নাই।এই বিষয়ে তিনি তার শ্বাশুড়িকে আবেগঘন চিঠি লিখে দু:খ প্রকাশ করেন।ড. ওয়াজেদ ও তার স্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর ও প্রেমময়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ১৫ দিন আগে শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানা ও দুই সন্তান কে নিয়ে স্বামীর কাছে জার্মানি তে আসেন।এই যাত্রায় তার পাসপোর্টে নিজের নামের শেষে স্বামী ড. ওয়াজেদ এর নাম সংযুক্ত করেন।এ প্রসঙ্গে ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “আমাকে দেখে বাচ্চারা ভীষণ খুশি হয়।ওদের মালপত্র সেখানে নিয়ে আনার পর দেখি যে, হাসিনা তার নামের সঙ্গে আমার নাম সংযোজন করে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করে নিয়েছে।নতুন পাসপোর্টে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হাসিনা শেখ ওয়াজেদ’ বলে।উল্লেখ্য যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রেও তার নাম রয়েছে ‘হাসিনা শেখ’ বলে।১৯৬৯-এ আমার সঙ্গে ইটালি যাওয়ার সময় তার জন্য এই শেষোক্ত নামেই পাসপোর্ট ইস্যু করে নেওয়া হয়েছিলো। এ ব্যাপারে আমি হাসিনাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘তুমি যদি বিমানবন্দরে না আসো সে জন্য ইচ্ছা করেই এই পাসপোর্টে তোমার নাম সংযোজন করে নিয়েছি যাতে কার্লসরুয়ে শহরে গিয়ে সহজেই তোমাকে খুঁজে বের করা যায়।স্বরণ রাখবা, তুমি যেমন বুনো ওল আমিও তেমনি বাঘা তেঁতুল।“ ( পৃষ্ঠা-২৪২)

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ড. ওয়াজেদ জীবনের শেষ নি:শ্বাষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আগলে রেখেছিলেন পরম মমতায়।নয়া দিল্লির প্রবাস জীবনে ভারতের আণবিক কমিশনে চাকরি করেছেন। পান্ডারা রোডের সেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাসভবনে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনার অভিভাবক ও পরমবন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো।ড. ওয়াজেদ এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়- “..অতএব নি:সঙ্গ অবস্থায় ঐ বাড়ির অতি ক্ষুদ্র চত্বরের মধ্যে আবদ্ধ থাকি আমরা সকলেই।আমি রাতে শুয়ে সারাক্ষণ জেগে থাকতাম এক রকম নিরাপত্তা প্রহরীর মতো।মাঝে মাঝে জানালার পর্দার ফাক দিয়ে বাইরের গেটের দিকে তাকাতাম।রাতে কয়েক ঘন্টা পর পর গেটে প্রহরারত দারোয়ানের সঙ্গে বাইরের লোকের ফিসফিস কথা বলা সন্দেহের উদ্রেক করতো।এরুপ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে মাঝে মধ্যে হাসিনাকে সজাগ করতাম।“ ( পৃষ্ঠা-২৫১)

মহান বিজ্ঞানসাধক ও বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বাক্ষী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র জীবন ও কর্মের প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র‍্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।