ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়ন শাখার কর্মী সমাবেশ মহিম দে’র চেম্বার সদস্য পদ স্থগিত আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পরিবর্তন মৌলভীবাজারে চেম্বার অব কর্মাসের পরিচালক আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেফতার কোন আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াই পালিত হবে মহান বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবস জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার চেম্বার অফ এন্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময় দি ফ্লাওয়ার্স কে.জি.এন্ড হাই স্কুলের ছাত্রকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত কুলাউড়ায় এইচএসসি উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা পর্যটন শিল্প বিকাশে শ্রীমঙ্গলে ‘খাসি কমিউনিটি ট্যুরিজম’ এর উদ্বোধন জুড়ী সীমান্তেে বিজিবি’র হাতে ৮ বাংলাদেশী আটক

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ছিলেন স্বপ্ন জাগানো মানুষ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৬৪৬ বার পড়া হয়েছে

ফয়সল আহমদ রুহেল: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ। এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবনের নাম। একই কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক। কর্মময় জীবনের 34টি বছর কাটিয়ে অতঃপর অধ্যক্ষ থেকে অবসর। ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ছাড়াও নানামুখী সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ছিলেন একজন নিখাদ শিক্ষক। প্রিয় বিদ্যাপীঠকে তিলে তিলে তিলোত্তমা করতে নিজ সন্তানকেও সময় দিতে পারেননি। একমাত্র সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মাঝে মাঝে জীবনের গল্পগুলো এমনই কষ্টকর হয়। এই শিক্ষক এর জীবনের গল্প ঠিক এমনই। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও প্রিয় বিদ্যাপীঠের উন্নয়ন যজ্ঞে ভাটা পড়েনি। তিনি জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে অবশেষে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে অবসরে চলে যান।
জন্ম ও পারিবারিক জীবন: অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ এর জন্ম ১৯৬১ সালের ৩০ জুন সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের ঐতিহ্যবাহী জলঢুপ অঞ্চলের পাড়িয়াবহর গ্রামে। পিতা চরিত্র কুমার নাথ আর মাতা সুবাসিনী দেবী। তিন ভাই, দুই বোন এর মধ্যে তিনি ২য়। বড় বোন অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। ছোট দুই ভাই যথাক্রমে- সুব্রত রঞ্জন নাথ, পেশায় হোমিও চিকিৎসক ও সঞ্জয় কুমার নাথ পেশা চাকুরী। ছোট বোন গৃহিনী। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ১৯৯০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের অশ্বিনী কুমার নাথ ও লক্ষ্মী রাণী দেবীর কন্যা অর্চ্চনা দেব নাথ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অর্চ্চনা দেব নাথ এরা তিন ভাই ও দুই বোন। তাদের মধ্যে তিনি ৪র্থ। বড় ভাই অম্বিকা চরণ নাথ- অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁর দুই সন্তান। মেয়ে ডা. অদিতি দেব নাথ-সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেলের চিকিৎসক ও ছেলে অমিতাভ দেবনাথ- বুয়েটের আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানে কর্মরত। ছোট ভাই অর্জুন দেব নাথ- কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরীতে (কাফকো) কর্মরত। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ও অর্চ্চনা দেব নাথ এর একমাত্র সন্তান দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ) ১৯৯২সালের ৩ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করে।
শিক্ষাজীবন: তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন ১৯৬৬ সালে কালাইউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। এরপর ১৯৭১ সালে জানুয়ারিতে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্বাধীনদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালে ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি (ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স) কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এমসি কলেজে বাণিজ্য বিভাগ না থাকায় এবং পরিবারের সম্মতি না থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে ১৯৭৯ সালে বিয়ানীবাজার কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সেশন জটের কারণে ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় তিনি সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন।
বর্ণাঢ্য জীবন: শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ১৯৭১ সালে দশ-এগারো বছর বয়সে উত্তাল একাত্তরে পরিবারের সাথে অজানা গন্তব্যে ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হন। আশ্রয় নেন করিমগঞ্জের নীলমণি হাইস্কুলে। রিক্রুটিং ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ালে প্রয়োজনীয় বয়স না থাকায় প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৬ডিসেম্বর মহান বিজয়ের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই পরিবার পরিজনের সাথে ফিরে আসেন মুক্ত স্বাধীন দেশে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বিয়ানীবাজার কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম প্রায় স্থবির ছিল। অতঃপর অত্র এলাকার কৃতি সন্তান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের থানা শাখার সভাপতি জনাব মনিরুল ইসলাম (মিম্বই) এর সুদক্ষ নেতৃত্বে কম সময়ের মধ্যে আবার ছাত্রলীপ আবার সুসংগঠিত হয়। এরপর বিয়ানীবাজার কলেজে ১৯৮০-৮১ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০-৮১ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত নজমুল-হোসেন পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং তাঁর সম্পাদনায় প্রথমবারের মতো বিয়ানীবাজার কলেজ বার্ষিকী প্রকাশিত হয়।
বিয়ানীবাজারে কোন স্থায়ী কোন শহীদ মিনার না থাকায় কলেজ ছাত্র সংসদ ৮০-৮১ এর উদ্যোগে বিয়ানীবাজার কলেজে স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মিত হয়। এই মহৎ কর্মের অংশীদারও ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপত্যশৈলী সম্বলিত নতুন শহিদ মিনার পুণঃনির্মাণ করা হয় যা ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী উপাধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় উদ্বোধন করেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি।
কর্মজীবন : তিনি ১৯৮৬ সালে মার্চ থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত সুজাউল কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজার মহাবিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালের ৩০ জুলাই কলেজ সরকারিকরণের সময় তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক কর্মকর্তা। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আনন্দমোহন সরকারি কলেজে যোগদান করেন ২২ জুন ২০০৪ খ্রী.। কয়েক মাস পর আনন্দমোহন সরকারি কলেজ থেকে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে যোগদান করেন ২রা ডিসেম্বর ২০০৪ খ্রী.। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে সিলেট সরকারি কলেজে যোগদান করেন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ খ্রী.। ০৯ জুন ২০০৯ খ্রী. সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে সিলেট সরকারি কলেজেই যোগদান করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে অর্থাৎ সিলেট সরকারি কলেজ থেকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন ২৯ জুলাই ২০০৯ খ্রী.। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন ৩০-০১-২০১১ খ্রি. অধ্যক্ষ ( ভারপ্রাপ্ত ) হিসেবে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। ২০১৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয় এবং অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ০৩ অক্টোবর ২০১৬ খ্রী.। ২০১৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ-কে পরবর্তী ২ ( দুই ) বৎসরের জন্য ‘সিনেট সদস্য’ হিসেবে মনোনীত করে। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি নেন ২৮ জুন ২০২০ খ্রী.। ২০২০ সালের ৩০ জুন তিনি চাকুরি জীবনের সমাপ্তি ঘটে ও অবসর জনিত PRL-এর শুরু হয়। এখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।
বিয়ানীবাজার কলেজের যত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ : ২০০৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক সুচিত উন্নয়ন কর্মে তিনি প্রথমে মনোনিবেশ করেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃজনের দিকে। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর কলেজের কাজে মন্ত্রী মহোদয়ের ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। আসার সময়ে অসাবধানতাবশত সিঁড়ি থেকে পড়ে অধ্যক্ষ মহোদয়ের বুকের ডান পাঁজরের ছয়টি হাড় ভেঙ্গে যায়। মন্ত্রী মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও কলেজের কর্মকান্ডে কখনও ভাটা পড়েনি। তাঁর সময় কলেজের উত্তর-পূর্বাংশের সীমানা দেয়াল বরাবর দুটি ত্রিতল একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রথমটিকে চারতলা ভবনে রূপান্তরিত করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে প্রশাসনিক-কাম-একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়। শিক্ষকদের আবাসিক সংকট নিরসনকল্পে পুকুরের দক্ষিণ পাশে একটি দ্বিতল শিক্ষক ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়। কলেজের অভ্যন্তরীণ রাস্তাসমূহ পাকাকরণ এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়। মাননীয় মন্ত্রী কলেজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে দেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে এক অকল্পনীয় স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে একটি নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী সংবলিত ১০তলা একাডেমিক-কাম-প্রশাসনিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর।
একাডেমিক ক্ষেত্রে শিক্ষক পদসংখ্যা ২৩ থেকে 50 এ উন্নীত হয়। আরও ৭৪ টি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃজন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে বাস্তবায়নাধীন। একাদশ শ্রেণির মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসন সংখ্যা ৪৫০ থেকে ১২০০- তে উন্নীত এবং বিএ, বিএসএস, বিবিএস ও বিএসসিতে আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে ১২০০-তে উন্নীত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিএসসি কোর্স নতুনভাবে চালু করা হয়। শিক্ষা মূল স্রোত থেকে বঞ্চিতদের জন্য বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর স্টাডি সেন্টার ও পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পদসৃজন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি ও দর্শন বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য ৩২টি ক্যামেরা সম্বলিত সিসিটিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য ৭০০ (সাতশত) বই এবং ১০০ (একশত) প্রতিকৃতি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর College Education Development Project (CEDP) এর আওতায় বি-ক্যাটাগরিতে ৪ (চার) কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ অর্থ কাজে লাগিয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ টেকসই এবং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম শ্রেণীকক্ষ ও পাঠদান সুবিধা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে পাঠদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য যথাক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষা সফর, অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় তথা অভিভাবক সমাবেশ এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী কলেজের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের ২ মে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কলেজ মিলনায়তনে ২৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক/প্রতিনিধিগনের সাথে এক মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর সময় বিভিন্ন ব্যাংকে ৩০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে।
কলেজের যাবতীয় লেনদেন আধুনিক ডিজিটাল অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সহজ করার জন্য ২০১৯ সালের ৯ জুন রূপালী ব্যাংক লি. (শিওর ক্যাশ) ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজের জন্য টয়োটা হাইয়েস গাড়ি ক্রয় করা হয়। কলেজের ইতিহাস ও গত এক দশকের উন্নয়নকর্ম সংরক্ষণের প্রয়াসে ‘বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ: এক দশকের উন্নয়ন গাথা’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করা হয়।
কৃতিত্ব : তাঁর সময়ে ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, সিলেট বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজের মর্যাদা অর্জন করে। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপজেলাভিত্তিক শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। অনার্স-মাস্টার্স চালু হওয়ায় বিধি অনুযায়ী কলেজে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উপাধ্যক্ষ এর পদটি সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদমর্যাদায় উন্নীত হয়।
২০১১ সাল থেকে অদ্যাবধি কলেজে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্টপোষকতায় তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় কলেজে সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কলেজ, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এর ফলস্বরূপ ২০১৬ সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ে ঐ কলেজের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য্য সাহা উর্মি শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের জাতীয় শিক্ষাসপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে 33 টি ইভেন্টের মধ্যে ২৯ টি তে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
২০১১ সালে কলেজের রোভার স্কাউট পুরুষ এবং ২০১৯ সালে মহিলা ইউনিট গঠিত হয়। ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রোভার ইউনিট ও এর সদস্য ফাহিম আহমদ শ্রেষ্ঠ রোভার নির্বাচিত হয়। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ রোভার ইউনিটের কৃতি রোভার রুমন আহমদ দেশসেরা ৩০ জনের মধ্যে ১জন নির্বাচিত হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে নেপাল ও ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোভার মুটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও সে রোভার স্কাউটে জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ পুরস্কার ন্যাশনাল সার্ভিস এওয়ার্ড-২০১৯ এ ভূষিত হয়।
অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ কলেজের শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য ২০১৫ সালে বি.এন.সি.সি. পুরুষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মহিলা ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়। cyiæl ও মহিলা সমন্বয়ে গঠিত ইউনিট দুটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। বি.এন.সি.সি. এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ দিদার ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ময়নামতি রেজিমেন্ট কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ট পি ইউ ও এবং একই প্রশিক্ষণে সি ইউ ও কামরুল হাসান জাতীয় কুচকাওয়াজে জাতীয় পতাকাবাহীর যোগ্যতা অর্জন করে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণে বার্ষিক কুচকাওয়াজে ময়নামতি রেজিমেন্টের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও ক্যাডেট সার্জেন্ট নির্ঝর ভট্টাচার্য্য ২০১৭ সালে আয়োজিত বার্ষিক প্রশিক্ষণে একাধিক ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয়ে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়। ২০১৮ সালে ক্যাডেট সার্জেন্ট নির্ঝর ভট্টাচার্য্য ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণে রবীন্দ্র ও bRiæj সংগীতে ২য় স্থান অধিকার করে। এছাড়াও সে ধারাবিবরণীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হয়। অত্র কলেজের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে- প্রথম বারের মত ৭ দিন ব্যাপী বি.এন.সি.সি. ব্যাটেলিয়ান ক্যাম্পিং ২০১৭ সালের ১৩- ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের গণ্যমাণ্য সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব byiæj ইসলাম নাহিদ এমপি।
কলেজের ছাত্র রাজনীতিকে নেতিবাচক পর্যায় থেকে ইতিবাচক পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন তাঁর সহকর্মীবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি এবং ছাত্রনেতৃবৃন্দ।
হৃদয়বিদারক ও বিয়োগাত্নক ঘটনা:
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ)। ছিল একটি স্বপ্ন ও সম্ভাবনার নাম। পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে সে ছিল আইকন। দীপ এর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবে। দেশের মানুষের সেবা করবে। কিন্তু মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় তাঁদের আজীবন লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দীপ অনেকটা পথ পাড়ি দেয়। তবে তরী তীরে ভেড়ার আগেই দীপ চলে যায় না ফেরার দেশে। এখনও ছেলের শোকে মাঝে মধ্যে মূর্ছা যান মা অর্চ্চনা দেব নাথ। সন্তান না থাকলেও মা ছেলের ধবধবে সাদা এপ্রোন ও ব্যবহৃত কাপড়গুলো রেখেছেন সযত্নে। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাসা থেকে বের হন। তখন তাঁর সন্তানতূল্য ছাত্রদের সাথে দেখা ও কথা হয়। তিনি নিজ সন্তানকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাদের মধ্যে খুঁজে পান। অন্তরের ক্ষতটা পূরণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্তান ছাড়া মায়ের বেঁচে থাকা যে সত্যিই অনেক কষ্টের। ছেলের কথা মনে পড়লে মা অর্চ্চনা দেব নাথ ছেলে দীপ এর ব্যবহৃত কাপড় বুকে চেপে ধরে নিরবে এখনও কাঁদেন। সেই প্রাণপ্রিয় সন্তান, যাকে তিনি জন্ম দিয়েছেন, কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। সন্তান হারানোর শোক তাঁকে তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত।
কলেজের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে বিভোর হতে হতে শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ স্যারের পারিবারিক জীবনে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক বিয়োগাত্নক ঘটনা ঘটে। তাঁর একমাত্র সন্তান ও জীবন প্রদীপ ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ) মৃত্যুবরণ করে। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ শোক অসহনীয় বিধায় ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে তিন-তিনবার ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা সুস্থ হন। অসুস্থতা সত্ত্বেও কলেজের উন্নয়ন যজ্ঞে তিনি ছিলেন সংকল্পবদ্ধ।
আনুষঙ্গিক দায়িত্ব পালন : তিনি ২০১৫ সালে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন পরিষদে আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী byiæj ইসলাম নাহিদ এমপি প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার সাবেক মাননীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এমপি. বর্তমান পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ.কে.এম. গোলাম কিবরিয়া তাপাদার, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ প্রমুখ । বিয়ানীবাজার সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রাচীন সংগঠন ‘কন্ঠকলি সংসদ’ এর সাবেক ও বর্তমান উপদেষ্টা পর্ষদের অন্যতম সদস্য। সপ্তম শতক থেকে পূজিত প্রাচীন ও নৃতাত্ত্বিক মন্দির শ্রী শ্রী বাসুদেব মন্দিরের সাথে ১৯৮০-৮১ সাল থেকে ছাত্রাবস্থায় জড়িত। তখন থেকেই তিনি বাসুদেব সেবক সংঘের কার্যকরি পর্ষদের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। সম্ভবত ৯০ এর দশকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর একাধিক বার সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অত:পর ২০১৬ সালে সম্মানিত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ অবধি সভাপতি পদে আসীন থেকে এই মন্দিরের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে যাচ্ছেন। তাছাড়া ২০০৬ সালে শ্রী শ্রী বাসুদেব অঙ্গনে পাঁচদিন ব্যাপী গীতাজয়ন্তী ও বিশ্বকল্যাণ যজ্ঞের সুবর্ণজয়ন্তীতে যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন এবং 2016 সালে একই অনুষ্ঠানে তিন দিন ব্যাপী হীরক জয়ন্তী পালনের সময় তাকে আহবায়কের দায়িত্ব পালন করতে হয়। গণ্যমান্য সাধুসন্তদের আগমনে উপরোক্ত উৎসব দু‘টি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলায় পরিনত হয়। জলঢুপস্থ শ্রী শ্রী মহাপ্রভু সেবক সংঘের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আসীন। বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
এই সফল শিক্ষক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ এর জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। তখনকার সময়ে তিনি পারিবারিক রেওয়াজ অনুসোরে এক শার্টপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতেন। কাপড়গুলো ময়লা হলে ধোয়ার পর শুকিয়ে পরদিন একই প্যান্ট-শার্টপরে স্কুলে যেতে হত। তিনি পরিবারের কাছ থেকে এ শিক্ষাটা নিয়েছেন বাবা-মার প্রতি ভালোবাসা, পরিবারের পরিমন্ডলের মধ্যে ভালোবাসা এবং সত্যিকারে সৎ হয়ে জীবন চরিত্র সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তার মধ্যে সফলতার বীজ বুনা যায়। এতো সফলকাম মানুষ হওয়ার পরও তিনি সাধারণের কাতারে নিজেকে উপস্থাপন করতে গর্ববোধ করেন। এই মানুষটি তাঁর বিনয়ী চিন্তা ভাবনাকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর অনেক শিক্ষার্থীরা আজ দেশ-বিদেশে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত।
মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা, পৃষ্টপোষকতা ও ঐকান্তিক ইচ্ছায় এবং সর্বোপরি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসায় ধীর, স্থির কন্ঠে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের মান উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন নিবেদিত। দীর্ঘ এই পথযাত্রায় তিনি কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছে ছিলেন পথপ্রদর্শক ও বাতিঘর। এই স্বপ্ন জাগানো মানুষটির সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি। প্রার্থনা করি তাঁর সহধর্মিনী ভালোবাসার মানুষটির জন্য। পরপারে ভালো থাকুক তাঁর প্রাণ প্রিয় সন্তান দীপ ।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ছিলেন স্বপ্ন জাগানো মানুষ

আপডেট সময় ০৪:২৬:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০২৩

ফয়সল আহমদ রুহেল: শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ। এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবনের নাম। একই কলেজের ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক। কর্মময় জীবনের 34টি বছর কাটিয়ে অতঃপর অধ্যক্ষ থেকে অবসর। ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক। কর্মজীবনে শিক্ষকতা ছাড়াও নানামুখী সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। ছিলেন একজন নিখাদ শিক্ষক। প্রিয় বিদ্যাপীঠকে তিলে তিলে তিলোত্তমা করতে নিজ সন্তানকেও সময় দিতে পারেননি। একমাত্র সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মাঝে মাঝে জীবনের গল্পগুলো এমনই কষ্টকর হয়। এই শিক্ষক এর জীবনের গল্প ঠিক এমনই। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও প্রিয় বিদ্যাপীঠের উন্নয়ন যজ্ঞে ভাটা পড়েনি। তিনি জীবনের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে অবশেষে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ থেকে অবসরে চলে যান।
জন্ম ও পারিবারিক জীবন: অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ এর জন্ম ১৯৬১ সালের ৩০ জুন সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের ঐতিহ্যবাহী জলঢুপ অঞ্চলের পাড়িয়াবহর গ্রামে। পিতা চরিত্র কুমার নাথ আর মাতা সুবাসিনী দেবী। তিন ভাই, দুই বোন এর মধ্যে তিনি ২য়। বড় বোন অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। ছোট দুই ভাই যথাক্রমে- সুব্রত রঞ্জন নাথ, পেশায় হোমিও চিকিৎসক ও সঞ্জয় কুমার নাথ পেশা চাকুরী। ছোট বোন গৃহিনী। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ১৯৯০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের অশ্বিনী কুমার নাথ ও লক্ষ্মী রাণী দেবীর কন্যা অর্চ্চনা দেব নাথ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অর্চ্চনা দেব নাথ এরা তিন ভাই ও দুই বোন। তাদের মধ্যে তিনি ৪র্থ। বড় ভাই অম্বিকা চরণ নাথ- অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তাঁর দুই সন্তান। মেয়ে ডা. অদিতি দেব নাথ-সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেলের চিকিৎসক ও ছেলে অমিতাভ দেবনাথ- বুয়েটের আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্টানে কর্মরত। ছোট ভাই অর্জুন দেব নাথ- কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরীতে (কাফকো) কর্মরত। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ও অর্চ্চনা দেব নাথ এর একমাত্র সন্তান দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ) ১৯৯২সালের ৩ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করে।
শিক্ষাজীবন: তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন ১৯৬৬ সালে কালাইউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। এরপর ১৯৭১ সালে জানুয়ারিতে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্বাধীনদেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালে ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি (ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স) কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এমসি কলেজে বাণিজ্য বিভাগ না থাকায় এবং পরিবারের সম্মতি না থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে ১৯৭৯ সালে বিয়ানীবাজার কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সেশন জটের কারণে ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় তিনি সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন।
বর্ণাঢ্য জীবন: শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ ১৯৭১ সালে দশ-এগারো বছর বয়সে উত্তাল একাত্তরে পরিবারের সাথে অজানা গন্তব্যে ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হন। আশ্রয় নেন করিমগঞ্জের নীলমণি হাইস্কুলে। রিক্রুটিং ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ালে প্রয়োজনীয় বয়স না থাকায় প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৬ডিসেম্বর মহান বিজয়ের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই পরিবার পরিজনের সাথে ফিরে আসেন মুক্ত স্বাধীন দেশে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বিয়ানীবাজার কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যক্রম প্রায় স্থবির ছিল। অতঃপর অত্র এলাকার কৃতি সন্তান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের থানা শাখার সভাপতি জনাব মনিরুল ইসলাম (মিম্বই) এর সুদক্ষ নেতৃত্বে কম সময়ের মধ্যে আবার ছাত্রলীপ আবার সুসংগঠিত হয়। এরপর বিয়ানীবাজার কলেজে ১৯৮০-৮১ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০-৮১ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত নজমুল-হোসেন পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং তাঁর সম্পাদনায় প্রথমবারের মতো বিয়ানীবাজার কলেজ বার্ষিকী প্রকাশিত হয়।
বিয়ানীবাজারে কোন স্থায়ী কোন শহীদ মিনার না থাকায় কলেজ ছাত্র সংসদ ৮০-৮১ এর উদ্যোগে বিয়ানীবাজার কলেজে স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মিত হয়। এই মহৎ কর্মের অংশীদারও ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক স্থাপত্যশৈলী সম্বলিত নতুন শহিদ মিনার পুণঃনির্মাণ করা হয় যা ২০১০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী উপাধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় উদ্বোধন করেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি।
কর্মজীবন : তিনি ১৯৮৬ সালে মার্চ থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত সুজাউল কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজার মহাবিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালের ৩০ জুলাই কলেজ সরকারিকরণের সময় তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষক কর্মকর্তা। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে আনন্দমোহন সরকারি কলেজে যোগদান করেন ২২ জুন ২০০৪ খ্রী.। কয়েক মাস পর আনন্দমোহন সরকারি কলেজ থেকে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে যোগদান করেন ২রা ডিসেম্বর ২০০৪ খ্রী.। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে সিলেট সরকারি কলেজে যোগদান করেন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ খ্রী.। ০৯ জুন ২০০৯ খ্রী. সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে সিলেট সরকারি কলেজেই যোগদান করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে অর্থাৎ সিলেট সরকারি কলেজ থেকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক পদে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন ২৯ জুলাই ২০০৯ খ্রী.। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন ৩০-০১-২০১১ খ্রি. অধ্যক্ষ ( ভারপ্রাপ্ত ) হিসেবে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। ২০১৬ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে তাঁকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয় এবং অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ০৩ অক্টোবর ২০১৬ খ্রী.। ২০১৬ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ-কে পরবর্তী ২ ( দুই ) বৎসরের জন্য ‘সিনেট সদস্য’ হিসেবে মনোনীত করে। অত্র কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি নেন ২৮ জুন ২০২০ খ্রী.। ২০২০ সালের ৩০ জুন তিনি চাকুরি জীবনের সমাপ্তি ঘটে ও অবসর জনিত PRL-এর শুরু হয়। এখন তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।
বিয়ানীবাজার কলেজের যত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ : ২০০৯ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কর্তৃক সুচিত উন্নয়ন কর্মে তিনি প্রথমে মনোনিবেশ করেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃজনের দিকে। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর কলেজের কাজে মন্ত্রী মহোদয়ের ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। আসার সময়ে অসাবধানতাবশত সিঁড়ি থেকে পড়ে অধ্যক্ষ মহোদয়ের বুকের ডান পাঁজরের ছয়টি হাড় ভেঙ্গে যায়। মন্ত্রী মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও কলেজের কর্মকান্ডে কখনও ভাটা পড়েনি। তাঁর সময় কলেজের উত্তর-পূর্বাংশের সীমানা দেয়াল বরাবর দুটি ত্রিতল একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রথমটিকে চারতলা ভবনে রূপান্তরিত করা হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে প্রশাসনিক-কাম-একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়। শিক্ষকদের আবাসিক সংকট নিরসনকল্পে পুকুরের দক্ষিণ পাশে একটি দ্বিতল শিক্ষক ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়। কলেজের অভ্যন্তরীণ রাস্তাসমূহ পাকাকরণ এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়। মাননীয় মন্ত্রী কলেজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে দেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে এক অকল্পনীয় স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে একটি নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী সংবলিত ১০তলা একাডেমিক-কাম-প্রশাসনিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর।
একাডেমিক ক্ষেত্রে শিক্ষক পদসংখ্যা ২৩ থেকে 50 এ উন্নীত হয়। আরও ৭৪ টি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃজন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে বাস্তবায়নাধীন। একাদশ শ্রেণির মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসন সংখ্যা ৪৫০ থেকে ১২০০- তে উন্নীত এবং বিএ, বিএসএস, বিবিএস ও বিএসসিতে আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে ১২০০-তে উন্নীত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিএসসি কোর্স নতুনভাবে চালু করা হয়। শিক্ষা মূল স্রোত থেকে বঞ্চিতদের জন্য বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এর স্টাডি সেন্টার ও পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পদসৃজন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ইংরেজি ও দর্শন বিষয়ে অনার্স কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য ৩২টি ক্যামেরা সম্বলিত সিসিটিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য ৭০০ (সাতশত) বই এবং ১০০ (একশত) প্রতিকৃতি নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার স্থাপিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর College Education Development Project (CEDP) এর আওতায় বি-ক্যাটাগরিতে ৪ (চার) কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। এ অর্থ কাজে লাগিয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ টেকসই এবং প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম শ্রেণীকক্ষ ও পাঠদান সুবিধা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে পাঠদানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য যথাক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষা সফর, অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় তথা অভিভাবক সমাবেশ এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী কলেজের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের ২ মে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কলেজ মিলনায়তনে ২৬টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক/প্রতিনিধিগনের সাথে এক মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর সময় বিভিন্ন ব্যাংকে ৩০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে।
কলেজের যাবতীয় লেনদেন আধুনিক ডিজিটাল অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে স্বচ্ছ, নিরাপদ ও সহজ করার জন্য ২০১৯ সালের ৯ জুন রূপালী ব্যাংক লি. (শিওর ক্যাশ) ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজের জন্য টয়োটা হাইয়েস গাড়ি ক্রয় করা হয়। কলেজের ইতিহাস ও গত এক দশকের উন্নয়নকর্ম সংরক্ষণের প্রয়াসে ‘বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ: এক দশকের উন্নয়ন গাথা’ শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণ করা হয়।
কৃতিত্ব : তাঁর সময়ে ২০১৬ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ, সিলেট বিভাগে শ্রেষ্ঠ কলেজের মর্যাদা অর্জন করে। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপজেলাভিত্তিক শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। অনার্স-মাস্টার্স চালু হওয়ায় বিধি অনুযায়ী কলেজে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর উপাধ্যক্ষ এর পদটি সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদমর্যাদায় উন্নীত হয়।
২০১১ সাল থেকে অদ্যাবধি কলেজে সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্টপোষকতায় তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পৃষ্টপোষকতায় কলেজে সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কলেজ, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এর ফলস্বরূপ ২০১৬ সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয়ে ঐ কলেজের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য্য সাহা উর্মি শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের জাতীয় শিক্ষাসপ্তাহ প্রতিযোগিতায় উপজেলা পর্যায়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে 33 টি ইভেন্টের মধ্যে ২৯ টি তে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
২০১১ সালে কলেজের রোভার স্কাউট পুরুষ এবং ২০১৯ সালে মহিলা ইউনিট গঠিত হয়। ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ রোভার ইউনিট ও এর সদস্য ফাহিম আহমদ শ্রেষ্ঠ রোভার নির্বাচিত হয়। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ রোভার ইউনিটের কৃতি রোভার রুমন আহমদ দেশসেরা ৩০ জনের মধ্যে ১জন নির্বাচিত হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৯ সালে নেপাল ও ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রোভার মুটে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও সে রোভার স্কাউটে জাতীয়ভাবে সর্বোচ্চ পুরস্কার ন্যাশনাল সার্ভিস এওয়ার্ড-২০১৯ এ ভূষিত হয়।
অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ কলেজের শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য ২০১৫ সালে বি.এন.সি.সি. পুরুষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মহিলা ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়। cyiæl ও মহিলা সমন্বয়ে গঠিত ইউনিট দুটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। বি.এন.সি.সি. এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ শফিউল্লাহ দিদার ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ময়নামতি রেজিমেন্ট কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ট পি ইউ ও এবং একই প্রশিক্ষণে সি ইউ ও কামরুল হাসান জাতীয় কুচকাওয়াজে জাতীয় পতাকাবাহীর যোগ্যতা অর্জন করে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণে বার্ষিক কুচকাওয়াজে ময়নামতি রেজিমেন্টের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও ক্যাডেট সার্জেন্ট নির্ঝর ভট্টাচার্য্য ২০১৭ সালে আয়োজিত বার্ষিক প্রশিক্ষণে একাধিক ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয়ে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়। ২০১৮ সালে ক্যাডেট সার্জেন্ট নির্ঝর ভট্টাচার্য্য ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণে রবীন্দ্র ও bRiæj সংগীতে ২য় স্থান অধিকার করে। এছাড়াও সে ধারাবিবরণীতে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত হয়। অত্র কলেজের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে- প্রথম বারের মত ৭ দিন ব্যাপী বি.এন.সি.সি. ব্যাটেলিয়ান ক্যাম্পিং ২০১৭ সালের ১৩- ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। এর সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশের গণ্যমাণ্য সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব byiæj ইসলাম নাহিদ এমপি।
কলেজের ছাত্র রাজনীতিকে নেতিবাচক পর্যায় থেকে ইতিবাচক পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন তাঁর সহকর্মীবৃন্দ, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি এবং ছাত্রনেতৃবৃন্দ।
হৃদয়বিদারক ও বিয়োগাত্নক ঘটনা:
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ)। ছিল একটি স্বপ্ন ও সম্ভাবনার নাম। পরিবারের একমাত্র সন্তান হিসেবে সে ছিল আইকন। দীপ এর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে ডাক্তার হবে। দেশের মানুষের সেবা করবে। কিন্তু মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় তাঁদের আজীবন লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দীপ অনেকটা পথ পাড়ি দেয়। তবে তরী তীরে ভেড়ার আগেই দীপ চলে যায় না ফেরার দেশে। এখনও ছেলের শোকে মাঝে মধ্যে মূর্ছা যান মা অর্চ্চনা দেব নাথ। সন্তান না থাকলেও মা ছেলের ধবধবে সাদা এপ্রোন ও ব্যবহৃত কাপড়গুলো রেখেছেন সযত্নে। অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বাসা থেকে বের হন। তখন তাঁর সন্তানতূল্য ছাত্রদের সাথে দেখা ও কথা হয়। তিনি নিজ সন্তানকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাদের মধ্যে খুঁজে পান। অন্তরের ক্ষতটা পূরণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্তান ছাড়া মায়ের বেঁচে থাকা যে সত্যিই অনেক কষ্টের। ছেলের কথা মনে পড়লে মা অর্চ্চনা দেব নাথ ছেলে দীপ এর ব্যবহৃত কাপড় বুকে চেপে ধরে নিরবে এখনও কাঁদেন। সেই প্রাণপ্রিয় সন্তান, যাকে তিনি জন্ম দিয়েছেন, কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। সন্তান হারানোর শোক তাঁকে তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত।
কলেজের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে বিভোর হতে হতে শ্রদ্ধেয় দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ স্যারের পারিবারিক জীবনে সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক বিয়োগাত্নক ঘটনা ঘটে। তাঁর একমাত্র সন্তান ও জীবন প্রদীপ ২০১৪ সালের ২২ নভেম্বর নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র দীপঙ্কর দেব নাথ (দীপ) মৃত্যুবরণ করে। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ শোক অসহনীয় বিধায় ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে তিন-তিনবার ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা সুস্থ হন। অসুস্থতা সত্ত্বেও কলেজের উন্নয়ন যজ্ঞে তিনি ছিলেন সংকল্পবদ্ধ।
আনুষঙ্গিক দায়িত্ব পালন : তিনি ২০১৫ সালে জলঢুপ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন পরিষদে আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী byiæj ইসলাম নাহিদ এমপি প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার সাবেক মাননীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন এমপি. বর্তমান পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রী, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ.কে.এম. গোলাম কিবরিয়া তাপাদার, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ প্রমুখ । বিয়ানীবাজার সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রাচীন সংগঠন ‘কন্ঠকলি সংসদ’ এর সাবেক ও বর্তমান উপদেষ্টা পর্ষদের অন্যতম সদস্য। সপ্তম শতক থেকে পূজিত প্রাচীন ও নৃতাত্ত্বিক মন্দির শ্রী শ্রী বাসুদেব মন্দিরের সাথে ১৯৮০-৮১ সাল থেকে ছাত্রাবস্থায় জড়িত। তখন থেকেই তিনি বাসুদেব সেবক সংঘের কার্যকরি পর্ষদের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। সম্ভবত ৯০ এর দশকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তারপর একাধিক বার সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অত:পর ২০১৬ সালে সম্মানিত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ অবধি সভাপতি পদে আসীন থেকে এই মন্দিরের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করে যাচ্ছেন। তাছাড়া ২০০৬ সালে শ্রী শ্রী বাসুদেব অঙ্গনে পাঁচদিন ব্যাপী গীতাজয়ন্তী ও বিশ্বকল্যাণ যজ্ঞের সুবর্ণজয়ন্তীতে যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন এবং 2016 সালে একই অনুষ্ঠানে তিন দিন ব্যাপী হীরক জয়ন্তী পালনের সময় তাকে আহবায়কের দায়িত্ব পালন করতে হয়। গণ্যমান্য সাধুসন্তদের আগমনে উপরোক্ত উৎসব দু‘টি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলায় পরিনত হয়। জলঢুপস্থ শ্রী শ্রী মহাপ্রভু সেবক সংঘের পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আসীন। বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
এই সফল শিক্ষক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ এর জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। তখনকার সময়ে তিনি পারিবারিক রেওয়াজ অনুসোরে এক শার্টপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতেন। কাপড়গুলো ময়লা হলে ধোয়ার পর শুকিয়ে পরদিন একই প্যান্ট-শার্টপরে স্কুলে যেতে হত। তিনি পরিবারের কাছ থেকে এ শিক্ষাটা নিয়েছেন বাবা-মার প্রতি ভালোবাসা, পরিবারের পরিমন্ডলের মধ্যে ভালোবাসা এবং সত্যিকারে সৎ হয়ে জীবন চরিত্র সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তার মধ্যে সফলতার বীজ বুনা যায়। এতো সফলকাম মানুষ হওয়ার পরও তিনি সাধারণের কাতারে নিজেকে উপস্থাপন করতে গর্ববোধ করেন। এই মানুষটি তাঁর বিনয়ী চিন্তা ভাবনাকে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর অনেক শিক্ষার্থীরা আজ দেশ-বিদেশে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত।
মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক দিকনির্দেশনা, পৃষ্টপোষকতা ও ঐকান্তিক ইচ্ছায় এবং সর্বোপরি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসায় ধীর, স্থির কন্ঠে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের মান উন্নয়নের দায়িত্বে ছিলেন নিবেদিত। দীর্ঘ এই পথযাত্রায় তিনি কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতা ও এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছে ছিলেন পথপ্রদর্শক ও বাতিঘর। এই স্বপ্ন জাগানো মানুষটির সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি। প্রার্থনা করি তাঁর সহধর্মিনী ভালোবাসার মানুষটির জন্য। পরপারে ভালো থাকুক তাঁর প্রাণ প্রিয় সন্তান দীপ ।