শ্রীমঙ্গলে চায়ের নিলাম কেন্দ্র থেকে চা ব্যবসায়িকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ
- আপডেট সময় ০৯:৪৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৪৭৭ বার পড়া হয়েছে
মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রে সোনার বাংলা টি বোর্কাস লিমিটেডের চেয়ারম্যান চা ব্যবসায়ি মো.শহীদ আহমদকে সন্ত্রাসী কায়দায় জোরপূর্বক টেনে হেঁচড়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব মো.হেলাল আহমদের বিরুদ্ধে। তিনি শ্রীমঙ্গল ব্রোর্কাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গত বুধবার সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে চা নিলাম কেন্দ্রে চায়ের নিলাম ডাক শেষে শ্রীমঙ্গল বোকার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে জোরর্পূব্বক ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত অফিসে আটকে রেখে ২৭ লাখ টাকা পাওনা দাবী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী শহীদ আহমদ বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জনকে বিবাদী করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরা হলেন- শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব মো.হেলাল মিয়া (৪০), অপরজন শ্রীমঙ্গল ট্রাক ট্যাংক লরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মো.শাহজাহান মিয়া (৪৭)।
ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গাগলাজোর গ্রামে। তিনি শ্রীমঙ্গল শহরতলীর ৩নং পুল এলাকায় দীর্ঘ দুই যুগ ধরে বসবাস করছেন।
শ্রীমঙ্গল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোনার বাংলা ব্রোকার্স লিমিটেড এর চেয়ারম্যান এবং শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের সদস্য গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টায় সময় ২২তম চা নিলাম পরিচালনা করার জন্য শ্রীমঙ্গল শহরের জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে গেলে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব হেলাল আহমদ ও ট্রাক ট্র্যাংক লরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে এবং তাকে কিল, ঘুষি ও চর থাপ্পর মেরে একটি প্রাইভেট কার গাড়িতে উঠিয়ে শহরের মিশন রোডস্থ তাদের ব্যক্তিগত অফিসে নিয়া যায়। সেখানে নিয়ে তার নিকট ২৭লক্ষ টাকা দাবি করে যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
সেখানে তিনঘন্টা আটক রাখার পর শর্ত সাপেক্ষে অর্থাৎ ওইদিন রাত ৮টার মধ্যে ২৭ লক্ষ টাকা প্রদান করা শর্তে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। সেই শর্ত ভঙ্গ করিলে তাকে প্রাণে হত্যা করিবে মর্মে হুমকি প্রদান করা হয়। সেখান থেকে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী ছাড়া পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে দ্রুত মৌলভীবাজার লাইফ লাইন প্রাইভেট হাসপাতালে কার্ডিওলজি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন,ওইদিন রাতে তাদের কথামতো উল্লেখিত টাকা প্রদান না করায় কৃষকলীগ নেতা হেলাল আহমদ বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার হতে ফোন করিয়া টাকা প্রদান করার জন্য হুমকি প্রদান করিতে থাকে। পরে তিনি অসহায় হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এবং টি বোকার্স এসোসিয়েশন বরাবরে বিচারপ্রার্থী হয়ে অপর একটি আবেদন করেন। এমনকি অবস্থা বেগতিক দেখে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপিকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবগত করেন তিনি।
এছাড়া জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে সু-বিচার পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদনে অনুলিপি দিয়েছেন চেয়ারম্যান বাংলাদেশ চা বোর্ড। সভাপতি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স। সভাপতি শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতি,সভাপতি শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব ও উপজেলা প্রেসক্লাব বরাবরে।
ব্যবসায়ী শহীদ বলেন-চা নিলামের সময় তাকে তুলে নেওয়ার জন্য বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নিলামডাকের স্থলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকে পরে নিলাম ডাকা শেষ হওয়ার পর পরই জোর পূর্ব্বক টেনে হিচড়ে আমাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায় এবং প্রাণে হত্যার ভয় ভীতি দেখায়।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব ও শ্রীমঙ্গল বোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.হেলাল আহমদ বলেন,‘আমি তার কাছে চা পাতার টাকা পাই। ২৭ লাখ ৩৩ হাজার সামথিং। এটার যথেষ্ট প্রুভডও আছে। চেক আছে, ডিও আছে,লেজার খাতা আছে। সাক্ষিও আছে। ঐদিন অকশনের পরে তারে আমি আমার অফিসও চা খাওয়ার জন্য নিয়ে আসি। এর পর সে রাত ৮টার সময় আমার পাওনা টাকার বিষয়ে চা ব্যবসায়িদের নিয়ে বসবে বলে চলে যায়। তাকে কোন জিম্মি করার কোনো ঘটনা না। সেখানে চা ব্যবসায়ী সমিতির সমিতির সভাপতি চেরাগ ভাই ও আকরাম খান, ট্রাক সমিতির শাহজাহান ভাই, রুপসী বাংলা ব্রোর্কাসের পরিচালক মনীর ভাই ছিলো। এটা জিম্মির কোনো ঘটনা না।”
রুপসী বাংলা টি বোর্কাসের পরিচালক ও বোর্কাস এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মো.মনীর বলেন, ঐদিন প্রথমে আমার নিলাম ডাক ছিলো । আমি নিলাম শেষ করে আমার অফিসে চলে যাই। পরে চা ব্যবসায়ীরা ফোন করে আমাকে জানায় শহীদ ভাইকে গাড়িতে উঠিেয় নিয়ে গেছে। তারপর বিকালে হেলাল আহমদ আমাকে ফোন করে জানায় অফিসে আসতে হবে শহীদের সাথে গ্যাঞ্জাম হয়েছে। বিষয়টি বসে শেষ করার জন্য। আপনিতো টি ব্রোর্কাসের সভাপতি। আমিও গেলাম হেলালের অফিসে। সেখানে ব্যবসায়ী সমিতির অনেকেজন ছিল। যাওয়ার পর হেলাল বললো যে, শহীদ আহমদকে রাত আটটায় পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। আমি বললাম যতটুকু শুনেছি শহীদ সাহেবকে আপনি ধরে নিয়া আসছেন। এরপর শহীদ সাহেব কৌশল করে সেখান থেকে বের হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, নিলামে যে ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটেছে আমি একজন ব্রোর্কাসের সভাপতি হিসাবে এর তীব্র নিন্দা জানাই। এটি নিন্দীয় বিষয়। চায়ের ব্যবসা ভদ্র লোকের ব্যবসা। সুতারাং এবিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে সমস্যা।
তিনি বলেন,
হেলাল আহমদ আমাকে বললেন শহীদের কাছে টাকা পান। তখন আমি বললাম টাকা যদি পাওনা থাকে প্রমাণ সাপেক্ষ ছাড়া তো টাকা পাবেন না। হেলাল বললো চেক আছে। আমি বললাম তাহলে চেক ডিজঅনার মামলা করেন। এখন দেখা গেলো হেলাল আহমদ এর কাছে চেক সেটা টেম্পারিং করা । এর আগে বিষয়টি নিয়ে শহীদ আহমদ একটি উকিল নোটিশও করেছে। থানা পুলিশও পাওনার বিষয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত শেষে এর সত্যতা পায়নি।
শ্রীমঙ্গল চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.চেরাগ আলী বলেন,বিষয়টি খুবই দু:খজনক।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চা ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী সমিতি উপদেষ্টা আকরাম খান বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। তিনি আরও বলেন,বিষয়টি সমাধানের জন্য ওইদিন রাতে সামাজিকভাবে সালিশ বৈঠককে বসার জন্য বলেছিলাম।’
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষণ রায় বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।