ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেই ট্রাজেডির শিকার গাজীপুরের দম্পতিও!

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
  • / ২৬২ বার পড়া হয়েছে

একেএম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার জলি, শিক্ষক দম্পতি। গাজীপুরের দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় গত ১৮ আগস্ট নিজেদের প্রাইভেটকারেই মেলে তাঁদের নিথর দেহ। দু’জনের কারও শরীরে ছিল না আঘাতের কোনো দাগ। তদন্তে নেমে পুলিশের একাধিক সংস্থা প্রায় আড়াই মাস জোড়া লাশের রহস্য খুঁজতে খুঁজতে হয়রান!

শুরু থেকেই একটি ‘ধারণা’ তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের মাথায় গেঁথেছিল- ওই দম্পতির মৃত্যু হতে পারে গাড়ির ভেতরে নির্গত বিষাক্ত কোনো গ্যাস থেকে। সম্প্রতি ওই প্রাইভেটকারে একটি বিড়াল ঢোকানোর পরই সেটি ছটফট শুরু করলে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের সেই ‘ধারণা’ নতুন মাত্রা পায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিড়ালটি মরমর পরিস্থিতিতে পড়লে সেটিকে দ্রুত বের করে আনা হয়। বিষাক্ত গ্যাসের ক্রিয়ায় বিড়ালের রীতিমতো মরণদশা হয়েছিল।

বিড়ালবাজিতে জিতে তদন্তে ফেরে প্রাণ। এখন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিড়াল-সূত্র ধরে এগোলেই খুলতে পারে দম্পতি মৃত্যুর রহস্যের দরজা। এর আগে গত জুলাই মাসে সিলেটের ওসমানীনগরে এক প্রবাসী পরিবারেও বিষাক্ত গ্যাসে ট্রাজেডি ঘটে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিড়াল ঘিরে এমন রহস্য ভেদ হওয়ার পর গাড়ির ভেতর-বাইরের নানা আলামত পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।

রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন পুলিশের এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, গাড়ির ফুয়েল সিস্টেমে ত্রুটি থাকলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। গাড়িতে কোনো কারণে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হলে যাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটবে। কোনো জায়গায় অক্সিজেন কম থাকলে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরির শঙ্কা থাকে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়ির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাড়ির ভেতরের গ্যাসজনিত কিছু ত্রুটি মিলেছে। এ কারণে শিক্ষক দম্পতি মারা গেছেন কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গাড়ির এসি ও গ্যাসের আরও বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে পুলিশ। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিড়ালকে ওই প্রাইভেটকারে ঢোকানোর বিষয়টি মাথায় আসে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের। বিড়াল গাড়িতে ঢুকে ছটফট করতে থাকলে দ্রুত বের করে আনা হয়। সে সময় বিড়ালটির মরণদশা হলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হন, সেখানে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে। বিষক্রিয়ার পাশাপাশি এটি পরিকল্পিত হত্যা কিনা সেটাও তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ পুলিশের হাতে আসেনি।

জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদাও একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সেই ট্রাজেডির শিকার গাজীপুরের দম্পতিও!

আপডেট সময় ০৭:৫১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২

একেএম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার জলি, শিক্ষক দম্পতি। গাজীপুরের দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় গত ১৮ আগস্ট নিজেদের প্রাইভেটকারেই মেলে তাঁদের নিথর দেহ। দু’জনের কারও শরীরে ছিল না আঘাতের কোনো দাগ। তদন্তে নেমে পুলিশের একাধিক সংস্থা প্রায় আড়াই মাস জোড়া লাশের রহস্য খুঁজতে খুঁজতে হয়রান!

শুরু থেকেই একটি ‘ধারণা’ তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের মাথায় গেঁথেছিল- ওই দম্পতির মৃত্যু হতে পারে গাড়ির ভেতরে নির্গত বিষাক্ত কোনো গ্যাস থেকে। সম্প্রতি ওই প্রাইভেটকারে একটি বিড়াল ঢোকানোর পরই সেটি ছটফট শুরু করলে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের সেই ‘ধারণা’ নতুন মাত্রা পায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিড়ালটি মরমর পরিস্থিতিতে পড়লে সেটিকে দ্রুত বের করে আনা হয়। বিষাক্ত গ্যাসের ক্রিয়ায় বিড়ালের রীতিমতো মরণদশা হয়েছিল।

বিড়ালবাজিতে জিতে তদন্তে ফেরে প্রাণ। এখন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, বিড়াল-সূত্র ধরে এগোলেই খুলতে পারে দম্পতি মৃত্যুর রহস্যের দরজা। এর আগে গত জুলাই মাসে সিলেটের ওসমানীনগরে এক প্রবাসী পরিবারেও বিষাক্ত গ্যাসে ট্রাজেডি ঘটে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিড়াল ঘিরে এমন রহস্য ভেদ হওয়ার পর গাড়ির ভেতর-বাইরের নানা আলামত পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।

রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন পুলিশের এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, গাড়ির ফুয়েল সিস্টেমে ত্রুটি থাকলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। গাড়িতে কোনো কারণে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হলে যাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটবে। কোনো জায়গায় অক্সিজেন কম থাকলে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরির শঙ্কা থাকে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়ির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাড়ির ভেতরের গ্যাসজনিত কিছু ত্রুটি মিলেছে। এ কারণে শিক্ষক দম্পতি মারা গেছেন কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গাড়ির এসি ও গ্যাসের আরও বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসবে পুলিশ। তবে তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিড়ালকে ওই প্রাইভেটকারে ঢোকানোর বিষয়টি মাথায় আসে তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের। বিড়াল গাড়িতে ঢুকে ছটফট করতে থাকলে দ্রুত বের করে আনা হয়। সে সময় বিড়ালটির মরণদশা হলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হন, সেখানে বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে। বিষক্রিয়ার পাশাপাশি এটি পরিকল্পিত হত্যা কিনা সেটাও তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ পুলিশের হাতে আসেনি।

জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদাও একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন।