ঢাকা ১১:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ

হাওর পাড়ে কৃষকের স্বস্তিতে ‘কৃষক ছাউনি’

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:৪৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৩০৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কখনো চৈত্রের কাঠফাটা রোদ, আবার কখনো বজ্রপাতসহ ঝড়। এরই মাঝে কাজ করে যেতে হয় কৃষকদের। এই মৃত্যুঝুঁকি থেকে তাদের রক্ষা করতে আর একটু বিশ্রামের জায়গা করে দিতে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে তৈরী হয়েছে কৃষক ছাউনি। যেনো সারাদিন বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠে কাজ করে একটু বিশ্রামের জায়গা পেয়ে স্বস্তিতে থাকেন কৃষকরা।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের পূর্ব সিংগুর এলাকায় এ কৃষক ছাউনি স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে। হাওড়ে ধান কাটাসহ অন্য কাজ করার সময় কৃষকরা বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে ওই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে পারবেন। ছাউনিতে বসার জন্য আছে পাকা বেঞ্চ, নলকূপ। এই ছাউনিকে ঘিরে সেখানে মানুষজনের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে বেড়াতে আসেনঅনেকেই, তুলেন মুঠোফোনে ছবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব সিংগুর গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা হাকালুকি হাওরের দিকে গেছে। দুই পাশে বোরো ধানের খেত। আশপাশে নেই কোনো গাছগাছালি। রাস্তার শেষ প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে পনেরো বাই আট ফুটের কৃষক ছাউনি। জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ রঙে ছাউনির দেয়াল সাজানো হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি উঠে যায়। এ কারণে মাটি ভরাট করে ছাউনিটি একটু উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছে, তাই কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ছাউনিতে উঠতে হয়। আছে বসার জন্য পাকা বেঞ্চ। একত্রে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবেন। এমনকি কৃষকদের পানি পান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে নলকূপ।

জানা গেছে, পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাবের উদ্যোগে প্রায় চার মাস আগে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। ঐ ক্লাবের সদস্য মাছুম আহমেদ জানান, শুষ্ক ও বোরো মৌসুমে এলাকার কৃষকরা হাওরে কাজে যান। তীব্র গরমে পরিশ্রান্ত কৃষকদের বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা আগে ছিল না। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত শুরু হলে আশপাশে কোথাও ঠাঁই নিতে পারতেন না। মূলত এ দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কৃষক ছাউনি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানান, কৃষক ছাউনি শুধু কৃষকদের বিশ্রাম বা আশ্রয়স্থল নয়, ঘোরাঘুরির স্থানও। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এখানে ছুটে আসেন। তারা ঘুরে বেড়ান। ছাউনির ভেতরে বেঞ্চে বসে গল্পগুজব করেন, কেউ কেউ ছবি, সেলফি তুলেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী জাবেদ আহমদ বলেন, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায়। তাই কৃষকদের জন্য ভালো কিছু করার আগ্রহ থেকে হাকালুকি হাওড়ের বুকে ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় উদ্যোগে।

কৃষক মাছুম আহমদ, সাহাব উদ্দিন বলেন, আগে বৃষ্টির সময় আমরা হাওড়ে ভয় ও বজ্রপাতের আতংক নিয়ে কৃষি কাজ করেছি। এখন নির্ভয়ে কাজ করতে পারছি। ওই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিচ্ছি।

এ কাজের উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বরমচাল ইউনিয়ন ইউপি সদস্য মইনুল হক বলেন, কৃষক ছাউনি করার আগে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনার কথা জেনে খুবই খুশি হই। এই ছাউনি তৈরির ফলে উপকৃত হবেন কৃষকরা। কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘবে তাদের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, কৃষক ছাউনিটি চমৎকার লেগেছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মাঝেমধ্যে হাকালুকি হাওরে কৃষকদের প্রাণহানি ঘটে। এই ছাউনি হাওরের অন্যান্য এলাকার লোকজনের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

হাওর পাড়ে কৃষকের স্বস্তিতে ‘কৃষক ছাউনি’

আপডেট সময় ১১:৪৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধিঃ কখনো চৈত্রের কাঠফাটা রোদ, আবার কখনো বজ্রপাতসহ ঝড়। এরই মাঝে কাজ করে যেতে হয় কৃষকদের। এই মৃত্যুঝুঁকি থেকে তাদের রক্ষা করতে আর একটু বিশ্রামের জায়গা করে দিতে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে তৈরী হয়েছে কৃষক ছাউনি। যেনো সারাদিন বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠে কাজ করে একটু বিশ্রামের জায়গা পেয়ে স্বস্তিতে থাকেন কৃষকরা।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরের পূর্ব সিংগুর এলাকায় এ কৃষক ছাউনি স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে। হাওড়ে ধান কাটাসহ অন্য কাজ করার সময় কৃষকরা বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে ওই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে পারবেন। ছাউনিতে বসার জন্য আছে পাকা বেঞ্চ, নলকূপ। এই ছাউনিকে ঘিরে সেখানে মানুষজনের আনাগোনা বেড়েছে। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে বেড়াতে আসেনঅনেকেই, তুলেন মুঠোফোনে ছবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব সিংগুর গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা হাকালুকি হাওরের দিকে গেছে। দুই পাশে বোরো ধানের খেত। আশপাশে নেই কোনো গাছগাছালি। রাস্তার শেষ প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে পনেরো বাই আট ফুটের কৃষক ছাউনি। জাতীয় পতাকার আদলে লাল-সবুজ রঙে ছাউনির দেয়াল সাজানো হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি উঠে যায়। এ কারণে মাটি ভরাট করে ছাউনিটি একটু উঁচুতে স্থাপন করা হয়েছে, তাই কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ছাউনিতে উঠতে হয়। আছে বসার জন্য পাকা বেঞ্চ। একত্রে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবেন। এমনকি কৃষকদের পানি পান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে নলকূপ।

জানা গেছে, পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাবের উদ্যোগে প্রায় চার মাস আগে স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। ঐ ক্লাবের সদস্য মাছুম আহমেদ জানান, শুষ্ক ও বোরো মৌসুমে এলাকার কৃষকরা হাওরে কাজে যান। তীব্র গরমে পরিশ্রান্ত কৃষকদের বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা আগে ছিল না। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত শুরু হলে আশপাশে কোথাও ঠাঁই নিতে পারতেন না। মূলত এ দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কৃষক ছাউনি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

এলাকাবাসী জানান, কৃষক ছাউনি শুধু কৃষকদের বিশ্রাম বা আশ্রয়স্থল নয়, ঘোরাঘুরির স্থানও। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এখানে ছুটে আসেন। তারা ঘুরে বেড়ান। ছাউনির ভেতরে বেঞ্চে বসে গল্পগুজব করেন, কেউ কেউ ছবি, সেলফি তুলেন।

স্থানীয় এলাকাবাসী জাবেদ আহমদ বলেন, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায়। তাই কৃষকদের জন্য ভালো কিছু করার আগ্রহ থেকে হাকালুকি হাওড়ের বুকে ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় উদ্যোগে।

কৃষক মাছুম আহমদ, সাহাব উদ্দিন বলেন, আগে বৃষ্টির সময় আমরা হাওড়ে ভয় ও বজ্রপাতের আতংক নিয়ে কৃষি কাজ করেছি। এখন নির্ভয়ে কাজ করতে পারছি। ওই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিচ্ছি।

এ কাজের উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে বরমচাল ইউনিয়ন ইউপি সদস্য মইনুল হক বলেন, কৃষক ছাউনি করার আগে উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনার কথা জেনে খুবই খুশি হই। এই ছাউনি তৈরির ফলে উপকৃত হবেন কৃষকরা। কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘবে তাদের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, কৃষক ছাউনিটি চমৎকার লেগেছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে মাঝেমধ্যে হাকালুকি হাওরে কৃষকদের প্রাণহানি ঘটে। এই ছাউনি হাওরের অন্যান্য এলাকার লোকজনের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে।