স্বামীর বাড়ির অধিকার পেতে থানায় অভিযোগ তানিয়ার,প্রতারনার শিকার
- আপডেট সময় ০৯:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২২
- / ৫৪০ বার পড়া হয়েছে
কোটচাঁদপুর(ঝিনাইদহ)প্রতিনিধিঃ নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ছেলে – মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে স্বামীর ঘর আকড়ে ছিলেন স্বামী হারা তানিয়া খাতুন। হঠাৎ শ্বশুর -শ্বাশুড়ি ও তার স্বজনদের অত্যচারে আইনের শরনাপন্ন হন তিনি। এ সুযোগে স্বামীর বাড়ির অধিকার ফিরিয়ে দিতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নেন টাকা এক প্রতারক।
এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের মুরুটিয়া গ্রামে।
জানা যায়,কোটচাঁদপুর উপজেলার মরুটিয়া গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে তানিয়া খাতুন (৩০) এর বিয়ে হয় পাশের বাড়ির রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। ২০২০ সালে বিদ্যুৎয়ায়িত হয়ে মারা যান রেজাউল। এরমধ্যে তাদের সংসারে আসে ২ টি সন্তান।
যার মধ্যে রয়েছে ছেলে জাহিদ হোসেন (১২) আর মেয়ে সামিয়া খাতুন (৩)। রেজাউলের মৃত্যুর পর বেশকিছু দিন তানিয়া ছেলে মেয়ে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন কারনে তাকে শারীরিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতন করতে থাকেন শ্বশুর শ্বাশুড়ি ও তার পরিবারের লোকজন।
কোন উপায় না পেয়ে স্বামীর বাড়ির অধিকার ফিরে পেতে গেল ১৭ এপ্রিল কোটচাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেন তানিয়া।
এ সুযোগ নেন প্রতারক। সে পুলিশ সেজে সুকৌশলে ম্যানেজ করেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ফারুক হোসেনের মোবাইল নাম্বার। পরে তার মাধ্যমে পান তানিয়ার মোবাইল নাম্বার। এরপর বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন টাকা।
এ ব্যাপারে তানিয়া খাতুন জানান, গেল রবিবার (১৭এপ্রিল) থানায় অভিযোগ করি। একদিন পর স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) ফারুক হোসেন আমার বাড়িতে এসে দারোগার কথা বলে মোবাইল নাম্বার নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর (০১৩০৭-৭২৫৮১০) নাম্বার থেকে একটি কল আসে। ফোনে কথা বলা লোকটি নিজেকে কোটচাঁদপুর থানার দারোগা শফিক পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, আপনার অভিযোগটি আমার কাছে আছে। চিন্তা করেন না। পুলিশ বাড়িতে গিয়ে অভিযোগের সঠিক বিচার করবে। আপনি আমার মোবাইলে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন ।
আমি তাকে ৫’শ টাকা দিতে রাজি হয়। তিনি আমাকে বলেন, তাহলে অভিযোগের কোন কাজ হবে না। পরে (০১৭৫৯-০২৮৩২১) বিকাশের মাধ্যমে তাকে ৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। ওইদিন বিকালে জানতে পারি ওই নামে সংশ্লিষ্ট থানায় কোন দারোগা নাই।
এতে করে হতাশ হয়ে পড়েন তানিয়া।
তিনি বলেন,নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে ছেলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সেই ঠাইটুকু হারাতে বসে,আমার মাথায় ঠিক ছিল না। স্বামীর বাড়ির অধিকার ফিরে পেতে আমি এ ধরনের প্রতরনার শিকার হলাম।
এ বিষয়ে পরে ওই ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন বলেন, শফিক নামে এক প্রতারক থানার দারোগা পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফারুক হোসেন বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে নাম্বার টা নিয়ে দিয়ে ছিলাম।এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তা তো জানতাম না। তবে পুলিশ ইচ্ছা করলে সবই পারেন। আমিও চাই ওই ঘটনার সুষ্ট তদন্ত হোক। আর দোষিরা ধরা পড়ুক,শাস্তি পাক।
তানিয়ার ভাসুর দাউদ হোসেন জানান, যে সব অভিযোগ করেছেন থানায় তা মিথ্যা। এ ধরনের কিছু ঘটেনি। আমরা রীতিমত ছেলে মেয়ের খাওয়া পরা দিয়ে থাকি। আর এক জায়গায় থাকলে এক আধটুকু কিছু হয়। এরপরও আমার ভাইয়ের নামে কোন সম্পতি নাই। যে সে পাবে।যা কিছু আছে আমার পিতার নামে। যদি তানিয়া বিবাদ করে,তাহলে কিছুই দিবোনা। আর যদি আপোষ করে,তাহলে গ্রামবাসী বা প্রশাসন যা বললেন,সেটা মেনে নিবো।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর মডেল থানার সহকাির উপপরিদর্শক (এ,এস,আই) কামাল হোসেন বলেন,অভিযোগের পেক্ষিতে আমি ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম। সব শুনেছি। তেমন বড় ধরনের কোন ঘটনা না। থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। কথা বলে যদি মিমাংসা হয়,তাহলে ভাল। না হলে আইন গত যা হয়, তা করা হবে।
পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে,তিনি বলেন,তিনি যদি ভুল করে কাউকে টাকা দিয়ে দেন। তাহলে আমাদের কি করার আছে। এরপরও নাম্বারে টেকিং করে দেখা হয়েছে। ওই নামবরটা অনেক দূরের একটা নামবার। যা আমাদের আয়ত্তের বাইরে।এ বিষয়ে আর কি করার আছে।
মোঃ মঈন উদ্দিন খান