ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিমাই খাসি পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:২০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৭১ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক::কুলাউড়া উপজেলাধীন ঝিমাই খাসি পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ, বিভিন্ন খাসি পুঞ্জির বিশেষ কৃষি ঐতিহ্যবাহী পানজুম, পরিবেশ-প্রাণ-প্রকৃতি,আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, প্রথাগত ভূমির মালিকানা,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি,অস্তিত্ব রক্ষার্থেসংবাদ সম্মেলন করেছে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন,বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাডলি ডেরিক প্রেন্টিস, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ এর সভাপতি জনক দেববর্মা, আদিবাসী নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, বাপার সমন্বয় আসম সালেহ সোহেল, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান

সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়…  বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি এবং কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শ্রেণী পেশার নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা অবগত আছেন মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ৮০টি খাসি পুঞ্জি রয়েছে, যেখানে প্রধানত খাসি ও গারো আদিবাসীরা স্মরনাতীত কাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিশেষ কৃষিপদ্ধতিতে পানচাষ করে নিজেদের জীবন জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষা করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতেই সহস্রাধিক বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী পান চাষ, সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এবং রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে এই আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন অবস্থায় যুগ যুগ ধরে কঠিন কষ্টকর সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এই আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় মৌলভীবাজারের এই বিস্তীর্ণ বনভূমিতে বসবাস করে আসলেও স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১ বছর পরেও প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমিতে তাদের মালিকানা স্বীকৃত হয়নি। আদিবাসীদের ভোগদখলীয় এই বনভুমি কাগজে পত্রে জেলা প্রশাসক এবং বনবিভাগের নামে হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বনবিভাগ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা, বনবিভাগ কর্তৃক খাসিদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে মিথ্যা বনমামলা দায়ের করে হয়রানি, খাসিদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ভুমিখেকোদের সম্পৃক্ত করে আদিবাসীদের সাথে সংঘাতময় পরিস্থিতি এখানকার বর্তমান বাস্তব চিত্র। প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা ঝিমাই পুঞ্জির সাথে ঝিমাই চা বাগান (কেদারপুর টি কোম্পানী লিঃ) এর চলমান ভুমি বিরোধ, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃক ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন প্রায় দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কাটার প্রচেষ্টা, পুঞ্জিতে বসবাসরত আদিবাসীদের বসতভিটা, বিদ্যালয়, গীর্জা, কবরস্থান সর্বোপরি তাদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার এবং বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল প্রেক্ষাপটে প্রাণ- প্রকৃতি, পরিবেশের বিপর্যয়ের আশংকা তৈরি হওয়ায় আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছি। শতাধিক বছর ধরে এই পুঞ্জিতে খাসি আদিবাসীরা বসবাস করলেও ২০০৮ সালে প্রথম ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির দখলীয় ভুমির একাংশ নিজেদের লীজভুক্ত দাবি করেন এবং পানজুমের আওতাভুক্ত প্রাকৃতিক দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার জন্য নানাবিধ পাঁয়তারা শুরু করেন। ২০১১ সালে আদিবাসীরা ঝিমাই পুঞ্জির ভোগদখলীয় ভুমিতে স্বত্ব দাবী করে মৌলভীবাজার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে স্বত্ব মামলা করেন। তা সত্বেও চা বাগান কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২২/১২/২০১৪ তারিখে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শুধুমাত্র চা বাগান কর্তৃক রোপিত গাছের মার্কিং, সংখ্যা, গাছের প্রকার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য সহকারী বন সংরক্ষক বরাবরে নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি বিগত ১৭/০২/২০১৫ তারিখে পত্র নং ২২.০১.০০০০.৬৭২.০০৮.০৯৮.১৪.১০০৫ মুলে বিরোধপূর্ণ ভুমি ও পুঞ্জির কোন গাছ মার্কিং না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। (কপি সংযুক্ত আছে) তা সত্বেও চতুর ও প্রভাবশালী চা বাগান ।

কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক পুঞ্জিতে প্রবেশ করে গাছ মার্কিং শুরু করলে পুঞ্জিবাসীর পক্ষে মন্ত্রী রানা সুরং মহামান্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন যা বর্তমানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ ৪০০/২০১৯ হিসেবে চলমান আছে। অতি মুনাফালোভী চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির পান জন্মের আওতাধীন দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ নিজেরা রোপন না করেও অসাধুভাবে কাটার পাঁয়তারা করছেন। আমরা অদ্যকার সংবাদ সম্মেলন থেকে জোরালো ভাবে দাবি জানাচ্ছি ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের চা সেকশনের ছায়া বৃক্ষ বিধি মোতাবেক কর্তন করতে পারেন কিন্তু কোন অবস্থাতেই খাসিয়াদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ঝিমাই পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ কাটা যাবে না ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেন যেখানে জাতিসংঘ দ্বারা আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিগত ৫০ বছরে এতদঅঞ্চলের আদিবাসীদের প্রথাগত ভুমির মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা নানাভাবে বনবিভাগ ও প্রভাবশালীদের দ্বারা উচ্ছেদ, হামলা, মামলা ও হয়রানির স্বীকার হয়ে আসছেন। অথচ প্রাকৃতিক এই বনাঞ্চলে আদিবাসীরা প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে নিজেদের জীবন জীবিকা রক্ষা করে আসছেন এবং বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে আসছেন।

এমতাবস্থায় মৌলভীবাজার জেলার আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, জান-মাল রক্ষা, প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ. এর লক্ষ্যে অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিম্নবর্ণিত দাবিনামা বাস্তবায়নের জন্য ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। • ঝিমাই খাসি পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ বিধি বহির্ভূত ভাবে কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ঝিমাই পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা বাগান কর্তৃপক্ষের সকল বাঁধা অপসারন করতে হবে। ডুলুকছড়া, বেলকুমা, নুনছড়া সহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভুমিখেকোদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আদিবাসীদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনভুমিতে কোন প্রকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবেনা। খাসিয়া পানচাষ পদ্ধতিকে বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎপাদন ও বিপননের সকল পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দিতে হবে। বিনা সুদে কৃষি ঋন ও পানের ন্যায্য বাজার মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রভৃতি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির মালিকানা ও শান্তিপূর্ন ভোগদখল নিশ্চিত করতে হবে। বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসীদের ভুমি সমস্যা সমাধানের লক্ষে বিশেষ ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। পান চাষের একমাত্র অবলম্বন প্রাকৃতিক গাছ কেটে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

 

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ঝিমাই খাসি পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আপডেট সময় ১১:২০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক::কুলাউড়া উপজেলাধীন ঝিমাই খাসি পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ, বিভিন্ন খাসি পুঞ্জির বিশেষ কৃষি ঐতিহ্যবাহী পানজুম, পরিবেশ-প্রাণ-প্রকৃতি,আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, প্রথাগত ভূমির মালিকানা,ঐতিহ্য, সংস্কৃতি,অস্তিত্ব রক্ষার্থেসংবাদ সম্মেলন করেছে বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন,বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাডলি ডেরিক প্রেন্টিস, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ এর সভাপতি জনক দেববর্মা, আদিবাসী নেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাং, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু, বাপার সমন্বয় আসম সালেহ সোহেল, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান

সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়…  বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটি এবং কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন সাংবাদিক, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শ্রেণী পেশার নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিদের অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা অবগত আছেন মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ৮০টি খাসি পুঞ্জি রয়েছে, যেখানে প্রধানত খাসি ও গারো আদিবাসীরা স্মরনাতীত কাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিশেষ কৃষিপদ্ধতিতে পানচাষ করে নিজেদের জীবন জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষা করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতেই সহস্রাধিক বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী পান চাষ, সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এবং রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে এই আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ বিহীন অবস্থায় যুগ যুগ ধরে কঠিন কষ্টকর সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এই আদিবাসীরা বংশপরম্পরায় মৌলভীবাজারের এই বিস্তীর্ণ বনভূমিতে বসবাস করে আসলেও স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১ বছর পরেও প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমিতে তাদের মালিকানা স্বীকৃত হয়নি। আদিবাসীদের ভোগদখলীয় এই বনভুমি কাগজে পত্রে জেলা প্রশাসক এবং বনবিভাগের নামে হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন যাবত বনবিভাগ ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা, বনবিভাগ কর্তৃক খাসিদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে মিথ্যা বনমামলা দায়ের করে হয়রানি, খাসিদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ভুমিখেকোদের সম্পৃক্ত করে আদিবাসীদের সাথে সংঘাতময় পরিস্থিতি এখানকার বর্তমান বাস্তব চিত্র। প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমরা ঝিমাই পুঞ্জির সাথে ঝিমাই চা বাগান (কেদারপুর টি কোম্পানী লিঃ) এর চলমান ভুমি বিরোধ, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃক ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন প্রায় দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কাটার প্রচেষ্টা, পুঞ্জিতে বসবাসরত আদিবাসীদের বসতভিটা, বিদ্যালয়, গীর্জা, কবরস্থান সর্বোপরি তাদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার এবং বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের জটিল প্রেক্ষাপটে প্রাণ- প্রকৃতি, পরিবেশের বিপর্যয়ের আশংকা তৈরি হওয়ায় আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছি। শতাধিক বছর ধরে এই পুঞ্জিতে খাসি আদিবাসীরা বসবাস করলেও ২০০৮ সালে প্রথম ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির দখলীয় ভুমির একাংশ নিজেদের লীজভুক্ত দাবি করেন এবং পানজুমের আওতাভুক্ত প্রাকৃতিক দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার জন্য নানাবিধ পাঁয়তারা শুরু করেন। ২০১১ সালে আদিবাসীরা ঝিমাই পুঞ্জির ভোগদখলীয় ভুমিতে স্বত্ব দাবী করে মৌলভীবাজার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে স্বত্ব মামলা করেন। তা সত্বেও চা বাগান কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২২/১২/২০১৪ তারিখে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শুধুমাত্র চা বাগান কর্তৃক রোপিত গাছের মার্কিং, সংখ্যা, গাছের প্রকার ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য সহকারী বন সংরক্ষক বরাবরে নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি বিগত ১৭/০২/২০১৫ তারিখে পত্র নং ২২.০১.০০০০.৬৭২.০০৮.০৯৮.১৪.১০০৫ মুলে বিরোধপূর্ণ ভুমি ও পুঞ্জির কোন গাছ মার্কিং না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। (কপি সংযুক্ত আছে) তা সত্বেও চতুর ও প্রভাবশালী চা বাগান ।

কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক পুঞ্জিতে প্রবেশ করে গাছ মার্কিং শুরু করলে পুঞ্জিবাসীর পক্ষে মন্ত্রী রানা সুরং মহামান্য হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন যা বর্তমানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ ৪০০/২০১৯ হিসেবে চলমান আছে। অতি মুনাফালোভী চা বাগান কর্তৃপক্ষ ঝিমাই পুঞ্জির পান জন্মের আওতাধীন দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ নিজেরা রোপন না করেও অসাধুভাবে কাটার পাঁয়তারা করছেন। আমরা অদ্যকার সংবাদ সম্মেলন থেকে জোরালো ভাবে দাবি জানাচ্ছি ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র তাদের চা সেকশনের ছায়া বৃক্ষ বিধি মোতাবেক কর্তন করতে পারেন কিন্তু কোন অবস্থাতেই খাসিয়াদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ঝিমাই পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ কাটা যাবে না ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেন যেখানে জাতিসংঘ দ্বারা আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিগত ৫০ বছরে এতদঅঞ্চলের আদিবাসীদের প্রথাগত ভুমির মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা নানাভাবে বনবিভাগ ও প্রভাবশালীদের দ্বারা উচ্ছেদ, হামলা, মামলা ও হয়রানির স্বীকার হয়ে আসছেন। অথচ প্রাকৃতিক এই বনাঞ্চলে আদিবাসীরা প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে নিজেদের জীবন জীবিকা রক্ষা করে আসছেন এবং বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে আসছেন।

এমতাবস্থায় মৌলভীবাজার জেলার আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, জান-মাল রক্ষা, প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণ. এর লক্ষ্যে অদ্যকার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে নিম্নবর্ণিত দাবিনামা বাস্তবায়নের জন্য ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। • ঝিমাই খাসি পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ বিধি বহির্ভূত ভাবে কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ঝিমাই পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা বাগান কর্তৃপক্ষের সকল বাঁধা অপসারন করতে হবে। ডুলুকছড়া, বেলকুমা, নুনছড়া সহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভুমিখেকোদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আদিবাসীদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনভুমিতে কোন প্রকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবেনা। খাসিয়া পানচাষ পদ্ধতিকে বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎপাদন ও বিপননের সকল পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দিতে হবে। বিনা সুদে কৃষি ঋন ও পানের ন্যায্য বাজার মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রভৃতি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির মালিকানা ও শান্তিপূর্ন ভোগদখল নিশ্চিত করতে হবে। বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসীদের ভুমি সমস্যা সমাধানের লক্ষে বিশেষ ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। পান চাষের একমাত্র অবলম্বন প্রাকৃতিক গাছ কেটে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।