ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডাক্তার হারেছ আলীর গ্রামীণ জীবন…এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:২১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩
  • / ৫২০ বার পড়া হয়েছে

গ্রাম বাংলায় যাদের আবাস তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেই দিনগুলোর সুবাস।শালুকফুল গ্রামের ডাক্তার বাড়ির পল্লি চিকিৎসক হারেছ আলী সাহেবের কথাই ধরা যাক। তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে।দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে।ডাক্তার হারেছ আলীর আধাপাকা টিনের উঠান ও খুলিসহ এক বিশাল সম্ভ্রান্ত বাড়ি।প্রাথমিক জীবনে হারেছ আলী সাহেব পল্লি চিকিৎসক ছিলেন বর্তমানে তিনি কৃষিকাজেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন।

ডাক্তার হারেছ আলীর স্ত্রী ফয়জুননেসা, বেশিরভাগ সময় মেয়ে ও আত্মীয়ের বাড়িতেই থাকেন।ফয়জুননেসারা চার ভাই ও পাঁচ বোন এবং শালুকফুল গ্রামের প্রসিদ্ধ মাস্টার বাড়ির মেয়ে ফলে বাবার বাড়ি কাছে হওয়াতে যাতায়াত অনেক বেশি।

ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখনো যৌথ পরিবারেই আছেন।তিনি শালুকফুল গ্রামের একজন আদর্শ ব্যাক্তি।গ্রামের সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা করেন। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের তিন ছেলে বাবুল, বেলাল ও বকুল ।

বাবুল একটি এমপিও ভুক্ত কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক, বেলাল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও বকুল প্রানী বিজ্ঞানে সদ্য পড়াশুনা শেষ করেছেন।বাবুল ও বেলাল বিবাহিত।দুই মেয়ে পারুল ও কবিতা।পারুল বিবাহিত, পাশের জামনগর গ্রামে তার বিয়ে হয়েছে।তার স্বামী আজিজ মিয়া জামনগর বাজারের একজন বড় ব্যাবসায়ী।

ডাক্তার হারেছ আলী নিয়মিতই পত্র-পত্রিকা পড়েন।পত্রিকার মাধ্যমে দেশের হালচাল জানতে পারেন।প্রায়শই তিনি বর্তমানের সাথে অতীতকে মেলাতে পারেন না।দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে হালশানের কথা।যা কেতাবি ভাষায় নববর্ষ বা বর্ষবরণ। নতুন ধান উঠা উপলক্ষে নতুন চালের ভাত ও গরুর মাংস রান্নার ধুম পড়ে, ঘরে ঘরে সেই কি ব্যাস্ততা।

গ্রামের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজার গুলোতে চলতো হালখাতা।মাইকে ভেসে আসতো একের পর এক নাম যে ‘আপনারা এখনো যারা হালখাতা খেতে আসেন নাই তারা চলে আসুন আপনার বাকি আছে..’।

হালখাতা উপলক্ষে ব্যাবসায়ীরা সারা বছরের ব্যাবসায়িক হিসাব-নিকাশ হালনাগাদ করতো। বড় ছেলে বাবুলের ডাকে ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের ঘুম ভাঙ্গলো।বাবুল তাকে জানালো, তার শ্বশুর বাড়ি থেকে খবর পাঠিয়েছে তারা তার স্ত্রী কে স্বাদ/সাত খাওয়ানোর জন্য আসবে।বাবুলের স্ত্রী রত্না সাত মাসের অন্ত:স্বত্বা।সাধারণত কোনো নারী সাত মাসের অন্ত:স্বত্বা হলে মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে মেয়েকে বিভিন্ন পদের স্বাদের খাবার খাওয়ানো হয়।

এ জন্য বাবুল শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়স্বজনের জন্য বন্দোবস্ত করতে বাবার সাথে পরামর্শ করতে এসেছে। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের সময় কাটছে ভীষণ ব্যাস্ততায়।স্ত্রী ফয়জুননেসা প্রায় দেড়মাস পর বড় মেয়ে পারুলের বাড়ি থেকে এসেছে।এই সময় পারুল দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছে।মা ও মেয়ে এখন বেশ সুস্থ আছে।পারুলের স্বামী আজিজ মিয়ার কথা প্রথম সন্তানের সময় পারুল বাবার বাড়িতে ছিলো তাই তাদের কোনো চিন্তা ছিল না।কিন্তু এবার যেহেতু আজিজ মিয়ার জামগ্রামের বাড়িতে সন্তান প্রসব হবে তাই পারুলের ইচ্ছাতেই শাশুড়ী ফয়জুননেসা কে জামাই আজিজ মিয়ার বাড়িতে দেড়মাস থাকতে হয়েছে।কুরবানির ঈদের আর মাসখানেক বাকি আছে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব চান এবার দুইটা গরু কুরবানী দিবেন।কেননা সংসার বড় হয়েছে।সবাই যৌথ পরিবারেই আছে।বেলাল কে এবার গরু কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।সে ঈদের আগেই দুই-তিন টা গরুর হাটের বাজার দর যাচাই করে তারপর গরু কিনবে।

এবার ভালো গরু হওয়া চাই।গ্রামের পঞ্চায়েতে সব গরু একত্রে জবাই করা হবে।সব গরু জবাইয়ের পর গোশত তিন ভাগ করে সবার একভাগ যারা কুরবানি দেয় নাই তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব পঞ্চায়েতের একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি।মাংসের সুসঠু বন্টন এবং পঞ্চায়েতের এই ভ্রাতৃত্ববন্ধন তিনি ধরে রাখতে চান। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব সিদলের ভর্তা ও নাপা শাক দিয়ে সকালের খকরা ভাত খেয়ে উঠানে বসে স্ত্রী ফয়জুননেসার সাথে গল্প করছিলো।এমন সময় জামাই আজিজ মিয়া সালাম দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। জামাই আজিজ মিয়ার কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর জানা গেল, তিনি ছোটমেয়ে কবিতার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

ছেলের নাম জাহাঙ্গীর আলম সে দ্বিতীয় ছেলে বেলালের সাথে কাঠালীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে।পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত তাই এই বিয়ের ব্যাপারে সবাই ইতিবাচক মতামত প্রদান করলো। আজ বৃহস্পতিবার, ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছে।তারা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার কবিতা কে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসবে।আগামীকাল কবিতার বিয়ের আঠারো দিন পূর্ণ হচ্ছে।ফলে এই আঠারার জন্য সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে।ডাক্তার হারেছ আলী এক মণ মিস্টি ও এক মণ জিলাপির অর্ডার দেওয়ার জন্য ছোট ছেলে বকুলকে বাজারে পাঠিয়েছে।

স্ত্রী ফয়জুননেসা নতুন জামাই ও আত্মীয়স্বজনের জন্য ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ও একটা খাশি কেনার জন্য বড়ছেলে বাবুলকে পাশের ডাক্তার বাজারে পাঠিয়েছে। বাবুলের স্ত্রী রত্না ও বেলালের স্ত্রী শেলী পাশের কাশিয়াডাঙ্গা পাড়ার জমিরন ও কলিছন কে দিয়ে চালের আটা কুটতে ব্যাস্ত সময় পার করছে।পুরো ডাক্তার বাড়িতেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হাটাহাটির করে তার পুকুর ও ধানখেত পরিদর্শন শেষে খাংকায় বসে রেডিও শুনছেন।এমন সময় শালুকফুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল হক মাস্টার সাহেব তার সাথে দেখা করতে এসেছেন।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব চেয়ারম্যান সাহেব কে পানের বাটখারা এগিয়ে দিলেন এবং কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলেন।চেয়ারম্যান সাহেব জানালেন কাঠালীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাচনে তিনি ডাক্তার সাহেবকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করতে চান।

এখন সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।মানুষজন যান্ত্রিক হয়েছে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব গ্রামের ইতিহাস ও ঔতিহ্য ধরে রাখতে চেয়ারম্যান সাহেবকে বরাবরই সহযোগিতা করেছেন।এখনো তিনি অনেক কর্মঠ ও শালুকফুল গ্রামের একজন আদর্শ ব্যাক্তি।আবহমান বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে তিনি পরম যত্নে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

লেখক: সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ডাক্তার হারেছ আলীর গ্রামীণ জীবন…এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন

আপডেট সময় ০৪:২১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩

গ্রাম বাংলায় যাদের আবাস তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেই দিনগুলোর সুবাস।শালুকফুল গ্রামের ডাক্তার বাড়ির পল্লি চিকিৎসক হারেছ আলী সাহেবের কথাই ধরা যাক। তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে।দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে।ডাক্তার হারেছ আলীর আধাপাকা টিনের উঠান ও খুলিসহ এক বিশাল সম্ভ্রান্ত বাড়ি।প্রাথমিক জীবনে হারেছ আলী সাহেব পল্লি চিকিৎসক ছিলেন বর্তমানে তিনি কৃষিকাজেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন।

ডাক্তার হারেছ আলীর স্ত্রী ফয়জুননেসা, বেশিরভাগ সময় মেয়ে ও আত্মীয়ের বাড়িতেই থাকেন।ফয়জুননেসারা চার ভাই ও পাঁচ বোন এবং শালুকফুল গ্রামের প্রসিদ্ধ মাস্টার বাড়ির মেয়ে ফলে বাবার বাড়ি কাছে হওয়াতে যাতায়াত অনেক বেশি।

ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখনো যৌথ পরিবারেই আছেন।তিনি শালুকফুল গ্রামের একজন আদর্শ ব্যাক্তি।গ্রামের সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা করেন। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের তিন ছেলে বাবুল, বেলাল ও বকুল ।

বাবুল একটি এমপিও ভুক্ত কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক, বেলাল সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও বকুল প্রানী বিজ্ঞানে সদ্য পড়াশুনা শেষ করেছেন।বাবুল ও বেলাল বিবাহিত।দুই মেয়ে পারুল ও কবিতা।পারুল বিবাহিত, পাশের জামনগর গ্রামে তার বিয়ে হয়েছে।তার স্বামী আজিজ মিয়া জামনগর বাজারের একজন বড় ব্যাবসায়ী।

ডাক্তার হারেছ আলী নিয়মিতই পত্র-পত্রিকা পড়েন।পত্রিকার মাধ্যমে দেশের হালচাল জানতে পারেন।প্রায়শই তিনি বর্তমানের সাথে অতীতকে মেলাতে পারেন না।দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তার চোখের সামনে ভেসে উঠে হালশানের কথা।যা কেতাবি ভাষায় নববর্ষ বা বর্ষবরণ। নতুন ধান উঠা উপলক্ষে নতুন চালের ভাত ও গরুর মাংস রান্নার ধুম পড়ে, ঘরে ঘরে সেই কি ব্যাস্ততা।

গ্রামের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও বাজার গুলোতে চলতো হালখাতা।মাইকে ভেসে আসতো একের পর এক নাম যে ‘আপনারা এখনো যারা হালখাতা খেতে আসেন নাই তারা চলে আসুন আপনার বাকি আছে..’।

হালখাতা উপলক্ষে ব্যাবসায়ীরা সারা বছরের ব্যাবসায়িক হিসাব-নিকাশ হালনাগাদ করতো। বড় ছেলে বাবুলের ডাকে ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের ঘুম ভাঙ্গলো।বাবুল তাকে জানালো, তার শ্বশুর বাড়ি থেকে খবর পাঠিয়েছে তারা তার স্ত্রী কে স্বাদ/সাত খাওয়ানোর জন্য আসবে।বাবুলের স্ত্রী রত্না সাত মাসের অন্ত:স্বত্বা।সাধারণত কোনো নারী সাত মাসের অন্ত:স্বত্বা হলে মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে মেয়েকে বিভিন্ন পদের স্বাদের খাবার খাওয়ানো হয়।

এ জন্য বাবুল শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়স্বজনের জন্য বন্দোবস্ত করতে বাবার সাথে পরামর্শ করতে এসেছে। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের সময় কাটছে ভীষণ ব্যাস্ততায়।স্ত্রী ফয়জুননেসা প্রায় দেড়মাস পর বড় মেয়ে পারুলের বাড়ি থেকে এসেছে।এই সময় পারুল দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছে।মা ও মেয়ে এখন বেশ সুস্থ আছে।পারুলের স্বামী আজিজ মিয়ার কথা প্রথম সন্তানের সময় পারুল বাবার বাড়িতে ছিলো তাই তাদের কোনো চিন্তা ছিল না।কিন্তু এবার যেহেতু আজিজ মিয়ার জামগ্রামের বাড়িতে সন্তান প্রসব হবে তাই পারুলের ইচ্ছাতেই শাশুড়ী ফয়জুননেসা কে জামাই আজিজ মিয়ার বাড়িতে দেড়মাস থাকতে হয়েছে।কুরবানির ঈদের আর মাসখানেক বাকি আছে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব চান এবার দুইটা গরু কুরবানী দিবেন।কেননা সংসার বড় হয়েছে।সবাই যৌথ পরিবারেই আছে।বেলাল কে এবার গরু কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।সে ঈদের আগেই দুই-তিন টা গরুর হাটের বাজার দর যাচাই করে তারপর গরু কিনবে।

এবার ভালো গরু হওয়া চাই।গ্রামের পঞ্চায়েতে সব গরু একত্রে জবাই করা হবে।সব গরু জবাইয়ের পর গোশত তিন ভাগ করে সবার একভাগ যারা কুরবানি দেয় নাই তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব পঞ্চায়েতের একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি।মাংসের সুসঠু বন্টন এবং পঞ্চায়েতের এই ভ্রাতৃত্ববন্ধন তিনি ধরে রাখতে চান। ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব সিদলের ভর্তা ও নাপা শাক দিয়ে সকালের খকরা ভাত খেয়ে উঠানে বসে স্ত্রী ফয়জুননেসার সাথে গল্প করছিলো।এমন সময় জামাই আজিজ মিয়া সালাম দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। জামাই আজিজ মিয়ার কুশলাদি জিজ্ঞাসার পর জানা গেল, তিনি ছোটমেয়ে কবিতার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

ছেলের নাম জাহাঙ্গীর আলম সে দ্বিতীয় ছেলে বেলালের সাথে কাঠালীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে।পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত তাই এই বিয়ের ব্যাপারে সবাই ইতিবাচক মতামত প্রদান করলো। আজ বৃহস্পতিবার, ডাক্তার হারেছ আলী সাহেবের বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজন এসেছে।তারা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার কবিতা কে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে নিয়ে আসবে।আগামীকাল কবিতার বিয়ের আঠারো দিন পূর্ণ হচ্ছে।ফলে এই আঠারার জন্য সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে।ডাক্তার হারেছ আলী এক মণ মিস্টি ও এক মণ জিলাপির অর্ডার দেওয়ার জন্য ছোট ছেলে বকুলকে বাজারে পাঠিয়েছে।

স্ত্রী ফয়জুননেসা নতুন জামাই ও আত্মীয়স্বজনের জন্য ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ও একটা খাশি কেনার জন্য বড়ছেলে বাবুলকে পাশের ডাক্তার বাজারে পাঠিয়েছে। বাবুলের স্ত্রী রত্না ও বেলালের স্ত্রী শেলী পাশের কাশিয়াডাঙ্গা পাড়ার জমিরন ও কলিছন কে দিয়ে চালের আটা কুটতে ব্যাস্ত সময় পার করছে।পুরো ডাক্তার বাড়িতেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব ফজরের নামাজ পড়ে প্রায় তিন কিলোমিটার হাটাহাটির করে তার পুকুর ও ধানখেত পরিদর্শন শেষে খাংকায় বসে রেডিও শুনছেন।এমন সময় শালুকফুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল হক মাস্টার সাহেব তার সাথে দেখা করতে এসেছেন।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব চেয়ারম্যান সাহেব কে পানের বাটখারা এগিয়ে দিলেন এবং কুশলাদি জিজ্ঞাসা করলেন।চেয়ারম্যান সাহেব জানালেন কাঠালীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নির্বাচনে তিনি ডাক্তার সাহেবকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করতে চান।

এখন সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে।মানুষজন যান্ত্রিক হয়েছে।ডাক্তার হারেছ আলী সাহেব গ্রামের ইতিহাস ও ঔতিহ্য ধরে রাখতে চেয়ারম্যান সাহেবকে বরাবরই সহযোগিতা করেছেন।এখনো তিনি অনেক কর্মঠ ও শালুকফুল গ্রামের একজন আদর্শ ব্যাক্তি।আবহমান বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে তিনি পরম যত্নে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

লেখক: সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।