ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরে ডুবে থাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:৩১:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
  • / ৬৯৭ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক: এবার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল । টানা ২ সপ্তাহের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন উপজেলায় ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে জমি তলিয়ে গেছে, ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যবহৃত খলাও। এদিকে পানি কমলেও হাওরে ডুবে থাকা জমিতে পাকা ধান কিভাবে কাটবেন তা নিয়ে চিন্তিত হাওরপাড়ের কৃষক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ডুবে থাকা প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর, বালিজুরী,শক্তিয়ারখলা, দূর্ঘাপুর, ভাটিপাড়া, বাগমারা,এছাড়াও আনোয়ারপুর, ফাতারী,ফতেহপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। পানিতে ধান কাটা ও সড়কে মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সিরাজপুর বাগগাও গ্রামের কৃষক ইসমাইল নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার পাতারী গ্রামের কৃষক কৃষক বকুল মিয়া জানান,ভাবতেই পারিনি উঁচু জমিতে পানি উঠে যাবে। গত ২০বছরেও এমন পানি দেখিনি। হাওরে যেন পানি কমে ও বাকি ধান যেন পচে না যায় বা না পচার আগেই কাটা যায়,তাই একটু রোদের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন বলেও জানান তিনি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরপাড়ের কৃষক ইসলাম উদ্দিন জনান,আমি সকালেই চলে যাই হাওরে ডুবা ধান কাটা যায় কিনা সেই চেষ্টা করি। আর পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকেই একটু রোদের অপেক্ষা করে কেটে রাখা ধান শুকানোর জন্য। মাড়াই দেওয়া ধান একেবারে যেন নষ্ট না হয় সকাল থেকে ধান শুকানোর চেষ্টা করে। আজ রোদ থাকায় আশা করছি ধান শুকাতে ও ডুবে যাওয়া হাওরে ধানও কাটতে পারব।

শক্তিয়ারখলা এলাকার শিউলী বেগম বলেন,হাওরের ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য বর্তমানে স্থানীয় সড়কগুলোই একমাত্র ভরসা। তবে হাওরে যেন পানি কমে ও বাকি ধান যেন পচে না যায় বা না পচার আগেই কাটা যায়,তাই একটু রোদের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন তার মত অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়,হাওর প্রধান নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল, সীমান্ত এলাকা ও উঁচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। হাওরে কৃষকের ইরি ও বোরো ধান, বাদামের গাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এছাড়াও নষ্ট হচ্ছে মৌসুমী সবজি। অনেকেই আধাকাচা পাকা ধান কাটতে পেরেছেন, অনেকেই পারেননি। নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। এতে করে দিনমজুর ও গরিব দুঃখী মেহনতী মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে।

বালিজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন বলেন,আমার এলাকার বেশীরভাগ উচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি ধান কাটতে পারলেও বৈরি আবহাওয়া ও শুকানোর জায়গা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ধান শুকানো যাচ্ছে না ফলে কৃষকরা কষ্ট আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,জেলায় এবার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। হাওরের ভেতরের ধান কাটা শেষ। তবে হাওরের উঁচু অংশের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা এখনো বাকি। এগুলো কাটতে আরও ১০দিন সময় লাগবে। এছাড়া বন্যায় আউশ ধানের ৪৮ হেক্টর জমির বীজতলা ও ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও সর্বশেষ বন্যায় সুনামগঞ্জে ৮২৯হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এপ্রিলের পাহাড়ি ঢলে ২০টি ছোট বড় হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরে ডুবে থাকা ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক

আপডেট সময় ০৫:৩১:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

মৌলভীবাজার২৪ ডেস্ক: এবার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল । টানা ২ সপ্তাহের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন উপজেলায় ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি বাড়ার কারণে জমি তলিয়ে গেছে, ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যবহৃত খলাও। এদিকে পানি কমলেও হাওরে ডুবে থাকা জমিতে পাকা ধান কিভাবে কাটবেন তা নিয়ে চিন্তিত হাওরপাড়ের কৃষক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ডুবে থাকা প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে।

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর, বালিজুরী,শক্তিয়ারখলা, দূর্ঘাপুর, ভাটিপাড়া, বাগমারা,এছাড়াও আনোয়ারপুর, ফাতারী,ফতেহপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। পানিতে ধান কাটা ও সড়কে মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সিরাজপুর বাগগাও গ্রামের কৃষক ইসমাইল নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার পাতারী গ্রামের কৃষক কৃষক বকুল মিয়া জানান,ভাবতেই পারিনি উঁচু জমিতে পানি উঠে যাবে। গত ২০বছরেও এমন পানি দেখিনি। হাওরে যেন পানি কমে ও বাকি ধান যেন পচে না যায় বা না পচার আগেই কাটা যায়,তাই একটু রোদের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন বলেও জানান তিনি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরপাড়ের কৃষক ইসলাম উদ্দিন জনান,আমি সকালেই চলে যাই হাওরে ডুবা ধান কাটা যায় কিনা সেই চেষ্টা করি। আর পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকেই একটু রোদের অপেক্ষা করে কেটে রাখা ধান শুকানোর জন্য। মাড়াই দেওয়া ধান একেবারে যেন নষ্ট না হয় সকাল থেকে ধান শুকানোর চেষ্টা করে। আজ রোদ থাকায় আশা করছি ধান শুকাতে ও ডুবে যাওয়া হাওরে ধানও কাটতে পারব।

শক্তিয়ারখলা এলাকার শিউলী বেগম বলেন,হাওরের ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য বর্তমানে স্থানীয় সড়কগুলোই একমাত্র ভরসা। তবে হাওরে যেন পানি কমে ও বাকি ধান যেন পচে না যায় বা না পচার আগেই কাটা যায়,তাই একটু রোদের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন তার মত অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়,হাওর প্রধান নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চল, সীমান্ত এলাকা ও উঁচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। হাওরে কৃষকের ইরি ও বোরো ধান, বাদামের গাছ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এছাড়াও নষ্ট হচ্ছে মৌসুমী সবজি। অনেকেই আধাকাচা পাকা ধান কাটতে পেরেছেন, অনেকেই পারেননি। নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। এতে করে দিনমজুর ও গরিব দুঃখী মেহনতী মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে।

বালিজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন বলেন,আমার এলাকার বেশীরভাগ উচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি ধান কাটতে পারলেও বৈরি আবহাওয়া ও শুকানোর জায়গা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ধান শুকানো যাচ্ছে না ফলে কৃষকরা কষ্ট আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,জেলায় এবার ছোট বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। হাওরের ভেতরের ধান কাটা শেষ। তবে হাওরের উঁচু অংশের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা এখনো বাকি। এগুলো কাটতে আরও ১০দিন সময় লাগবে। এছাড়া বন্যায় আউশ ধানের ৪৮ হেক্টর জমির বীজতলা ও ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও সর্বশেষ বন্যায় সুনামগঞ্জে ৮২৯হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এপ্রিলের পাহাড়ি ঢলে ২০টি ছোট বড় হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।