কমলগঞ্জ রাফি হ/ত্যা/কা/ন্ড: গ্রে/ফ/তা/র ছোট ভাই আলামত উ/দ্ধা/র

- আপডেট সময় ০১:৩৯:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৩০২ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের সিদ্ধেশ্বরপুর গ্রামে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। গত ৯ আগস্ট সকালে নিজ ঘরে আব্দুর রহিম রাফি (২৬) নামে এক ব্যক্তির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এবং কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু আফর মোঃ মাহফুজুল কবিরসহ থানার একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু করে।
গোপন সোর্স, তথ্য প্রযুক্তি, এলাকাবাসীর বক্তব্য এবং আচরন সন্দেহজনক হওয়ায় নিহতের ছোট ভাই রানাকে (ছদ্ম নাম, বয়স ১৬) সেদিনই (৯ আগস্ট) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে নিহতের স্ত্রী এবং আশেপাশের মানুষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গতকাল (১০ আগস্ট) সে তার ভাইকে ঘুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে।
হত্যার কারণঃ
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ গত ০৮ আগষ্ট রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় তার ভাই নিহত রাফির কাছে সে ৫০০ টাকা চায়। রাফি ছোট ভাইকে টাকা না দিয়ে গালিগালাজ এবং দুর্ব্যবহার করে। এই ঘটনায় বড় ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়। পরের দিন শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল ০৭.০০ ঘটিকার সময় ঘুম থেকে উঠে ঘাতক ছোট ভাই দেখে তার মা বাড়িতে নাই। বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় সেদিন রাফির ঘরের সব দরজাও খোলা ছিল। বাড়িতে কেউ নাই আর রাফি ঘুমিয়ে ছিল- এই সুযোগে আগের রাতের ঘটনায় ভাইয়ের উপর রাগের বশবর্তী হয়ে খাটের নিচে থাকা ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম রাফিকে ঘাড়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে।
পরবর্তীতে ঘাতক ছোট ভাই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা বেসিনে ধুয়ে পরিস্কার করে পুনরায় খাটের নিচে রেখে দেয় এবং তার পরনে থাকা রক্তমাখা লুঙ্গিও খাটের নিচে রেখে দেয়। ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে।
তবে শুধু এটাই হত্যাকান্ডের পেছনে একমাত্র কারন নয়।
নিহত রাফির বাবার স্বপ্ন ছিল ছোট ছেলে রানা (ছদ্মনাম) মাদ্রাসায় পড়াশোনা করবে, আলেম হবে। কিন্তু রানার পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা ছিল। রাফিদের বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই হিসেবে রাফিই ছিল ছোট ভাইয়ের অভিভাবক। রাফি চাইতো তার ছোট ভাই বাড়িতে না থেকে মাদ্রাসায় থেকে পড়াশোনা করবে। কিন্তু তার ভাই মাদ্রাসা না থেকে বাড়িতেই বেশী থাকত। এসব কারনে অভিভাবক হিসেবে বড় ভাই রাফি প্রায়ই তার ছোট ভাইকে শাসন করত। কিন্তু বড় ভাইয়ের শাসন সে মেনে নিতে পারেনি।
আবার, নিহত বড় ভাই রাফি পরিবারের অমতে প্রেম করে বিয়ে করে। এই বিয়েতে রাফির পরিবার বা আত্মীয় স্বজন কারোরই মত ছিল না। বিয়ের পর থেকে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে রাফির স্ত্রীর সাথে রাফির মা ও ভাইয়ের কিছু টানাপোড়নের তথ্যও পাওয়া যায়। বিয়ের এতদিনেও যেটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। প্রায়ই দেবর-ভাবী এবং ভাইয়ের সাথে পারিবারিক অশান্তির তথ্য পাওয়া যায়
সময়ের সাথে সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে বড় ভাইয়ের উপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে। যেটা শেষ পর্যন্ত হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা এবং তার ঘরের খাটের নিচ থেকে তার রক্তমাখা লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ভিকটিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মামলা নং- ০৫, তারিখ-১০/০৮/২০২৫ খ্রি., ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
