ঢাকা ০৮:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
দাখিলে শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক শ্রীমঙ্গলের ডোবাগাঁও মাদরাসার আব্দুর রহিম কোটচাঁদপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫ উদযাপিত ভিসা প্রতারণার ফাঁদে মৌলভীবাজার মৌলভীবাজারে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর বিভিন্ন দাবিতে স্মরকলিপি তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা” দুর্গাপুরে বিএনপিনেতা আবু বক্কর সিদ্দিক মৌলভীবাজারে গ্রীণ কেয়ার ফাউন্ডেশনের মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ কোটচাঁদপুর সিরাজুল হক সিরুমিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত কোটচাঁদপুরের বলুহর বাওড় পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল জুড়ীতে চা বাগান সর্দার হ/ত্যা: প্রদান আসামি গ্রে/ফ/তা/র

বৈষম্যের শিকার স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৫৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি কর্মবিরতি সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল স্বাস্থ্য সহকারী,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক কর্মবিরতি পালন করেন।এ সময় স্বাস্থ্য সহকারীনেতা বলেন,আমরা বার বার শুধু আশার বাণীই শুনে যাচ্ছি। এ বার আর আশার বাণী নয়, তাই আমাদের নিয়োগবিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ‍্যতা (স্নাতক) সংযোগ ১৪তম গ্রেড প্রদান ও ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাবেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ প্রস্তাবিত ৬দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে এ কর্মবিরতি পালনে যাচ্ছি ।

স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবিঃ
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা অনুযায়ী ১৪তম গ্রেড প্রদান।
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারী কর্মীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া।
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।
৪. সব স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা।
৬. ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
তাই বৈষম্যের শিকার এ স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবী ন‍্যায‍্য ও যৌক্তিক, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের উক্ত ৬ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে তাদেরকে আন্দোলন থেকে কাজে ফিরাবেন এমনটাই প্রত‍্যাশা।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের জন্মের পর থেকে ১০টি মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা জন‍্য দেয়া হয় প্রতিশোধক টিকা। আর এ শিশুদের সু-স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় প্রতিশোধক টিকা যিনি তৃণমূল পর্যায় প্রদান করেন তিনি হলেন,একজন “স্বাস্থ্য সহকারী”।

এ স্বাস্থ্য সহকারীরা সরকারের সকল কর্মচারী থেকে আজ নানান বৈষম্যের শিকার, দীর্ঘ ২০ বছরে হয় না কোন পদোন্নতি! বহু অপেক্ষার পর যদিও কারোর পদোন্নতি হয় তাহলে বেতন বারে না এক পয়সাও।

স্বাস্থ্য সহকারী পদ সৃষ্টির আদি কথাঃ
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জনের পর তৎকালিন সময়ে দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সরকারী ভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে সর্ব প্রথম থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হয়।

উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিনে প্রতি ৪ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের শুভ সূচনা হয়। পরবর্তীতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্যে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ স্বাস্থ্য সহকারীদের একক ভাবে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় দেশে থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল,ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডায়রিয়া,ধনুর্ষ্টংকার,অন্ধত্ব দূরিকরণসহ সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রন, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পোলিও নিমূর্ল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপি সুনাম অর্জন করেন তারা। বসন্ত ও ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রে তাদের এই সফলতায় ১৯৭৯ সালে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ চালু করা হয় “সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই)”।

এ কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীগন বর্তমানে ১০টি মারাত্বক সংক্রামিত রোগ ( শিশুদের যক্ষ্মা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফুয়েঞ্জার, নিউমোনিয়া ও হাম-রুবেলা)র টিকা এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের কিশোরী ও মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা-প্রদান করে আসছেন।

বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এসব টিকা দেওয়ার পূর্বে নির্ধারিত দিনের আগে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বাধ্যতামূলক রেজিষ্ট্রেশন করে এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই। তাছাড়া জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রেশন,নবজাতক শিশু রেজিষ্ট্রেশন,গর্ভবতী রেজিষ্ট্রেশন,যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণ,কফ পরীক্ষার জন্য রোগী প্রেরণ, ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ খাওয়ানো এবং উঠান বৈঠক,মা সমাবেশের মাধ্যমে নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর গোড়ার দিকে সরকারি নির্দেশে স্থানে নির্বাচন,স্থানীয় জনগন থেকে বিনা মূলে জমিদানে উদ্বুদ্ধকরণ,নির্মাণ তদারকিসহ এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে।

২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি নিয়োগর পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রদানসহ বর্তমানেও সপ্তাহে ৩দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও বছরের দুই বার জাতীয় ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যেমে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদেরকে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানো মাধ্যমে ক্যাম্পেইন পালন করে থাকে। প্রাথমিক,মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ এবংএইচপিভি টিকা প্রদান করেন।

২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারী ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফল ভাবে প্রদান করে। আর এ সব টিকা প্রদানের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় নিয়োজিত আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী।

এ জন্য তাদের মাসিক ভ্রমণ ভাতা বাবদ মাসে দেয়া হয় মাত্র ৬০০ টাকা। বেতন পান সর্বসাকল্যে ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
এ স্বাস্থ্য সহকারীরা মা ও শিশুদেরকে টিকা প্রদানের পূর্বে সারা মাস সরকারী ছুটি ব্যতিত রৌদে-বৃষ্টিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে মা ও শিশু রেজিস্টেশন করে টিকা প্রদান করে। এই জন্য বছরে একটি ছাতাও বরাদ্দ করা হয় না সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে।
১৯৭৪ সালে ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টি হলেও বর্তমানে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার জনগোষ্ঠি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারী নিয়ম অনুসারে সে খানে ৫ থেকে ৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োজিত থাকার কথা।

প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পরপর পদোন্নতি পান। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ বছরেও পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারি না। যদিও পদোন্নতি পান তাহলে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে আরও কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পায়, যখন চাকরির বয়স বাকী থাকে মাত্র ৫ থেকে ৬ মাস। তবে পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা,উপজেলায়।

স্বাস্থ্য সহকারীদের আত্মত্যাগঃ
বিশ্বের মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন সাধারণ ছুটি। আর সে সময় করোনাভাইরাসের ঝুকি নিয়ে মাঠে থেকে জনগনকে করোনার টিকা, শিশুরদের টিকা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়েছেন তৃণমূল এ স্বাস্থ্য সহকারীই।

তাছাড়াও করোনার প্রথম দিকে স্বাস্থ্য সহকারীরাই বিদেশ ফেরতদের তথ্য সংগ্রহ করে স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করতে হচ্ছিল। তাছাড়া বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার জন্য অনুরোধ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং হোম কোয়ারান্টাইন অবস্থায় আছে কিনা তার ফলোআপও করেছিল এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই।
এছাড়া জ্বর,সর্দি, কাশি,শ্বাসকষ্টজনিত রোগী সনাক্ত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেছিলেন এবং সন্দেহ করোনারোগীর নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তাদের একটি মাস্ক ছাড়া ( নিজের অর্থায়নে ক্রয় করা ) আর কিছুই ছিল না। ঝুকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ওই সময় প্রায় ৮শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারী করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছে বেশই কয়েক জন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের মাধ্যমে অর্জনঃ
২০০৯ সালে ইমিউনাইজেশন কর্মসূচীর সফলতার জন্য গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভী) কর্তৃক পেয়েছেন পুরস্কার, ২০১০ সালে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর জন্য জাতিসংঘের এমডিজি-৪ অ্যাওয়ার্ড,২০১১ সালে শিশুমৃত্যু-মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাউথ সাউথ পুরষ্কার, ২০১২ সালের বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় (গ্যাভি) কর্তৃক টিকাদানকারী দেশের অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের অ্যাওয়ার্ড,২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশকে দিয়েছে পোলিও নির্মুলের সনদ,২০১৬ সালে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) কর্তৃক বাংলাদেশকে পোলিও নির্মূলে সাফল্যের স্বীকৃতির সনদ, ২০১৬ সালে ধনুষ্টকার নির্মুলের সনদ অর্জন এবং সর্ব শেষ ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৭৪তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন সময়ে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) কর্তৃক শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সাফল্যের জন্য তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী পেয়েছেন ভ্যাকসিন হিরো সম্মাননা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও দেশের বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজ গুলো শতভাগ টেকনিক্যাল এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের যত বড় বড় সফলতা এসেছে তা একমাত্র তৃণমূল এ স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের মাধ্যমেই। এ সম্মানগুলো একমাত্র স্বাস্থ্য সহকারীদের দ্বারাই অর্জন। তাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ূ বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে সুপরিচিত লাভ করে।

স্বাস্থ্য সহকারীদের বঞ্চনা ও বৈষম্যঃ
১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচএসসি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাশ ব্লক সুপারভাইজার যারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাক।
১৯৮৫ সালের ৫ আগষ্ট সরকারী এক আদেশে তাদের বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উর্ত্তীণ করা হয় ও ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল আবার তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করে টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকারী আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটানারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশের মাধ্যমে তাদেরও ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করে এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদেরও ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। ২০২০ সালে তাদেরও ১৩তম গ্রেড প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারী করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যারা গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা প্রদান করেন তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তন হয় কিন্তু সৃষ্টির সেরাজীব মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজও।

স্বাস্থ্য সহকারীদের সাথে পূর্বের ঘোষিত ও প্রতিশ্রুতিঃ
১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সহাকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের এক মহাসমাবেশে তাদের বেতন বৈষম্য নিরসন করে টেকনিক্যাল পদমর্যদার দাবি বাস্তবায়নে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও, সে ঘোষণার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে আজও বাস্তবায়নের কোন প্রতিফল ঘটেনি।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের বহু সাফল্যের পরও দীর্ঘদিন থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী,সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য পরির্দশকরা নিয়োগবিধি সংশোধনকরে আপগ্রেডেশন বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবি পূরণের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক আবেদন করে আসছেন।
তার কোন বাস্তাবায়ন না পেয়ে ২০১৬ সালে ২৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন ঢাকা বিভাগের এক সমাবেশে কনের। উক্ত সমাবেশ তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী তাদের দাবি যৌক্তিক বলে ঘোষণা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়ে ছিলেন কিন্তু তার কোন প্রতিফল পাইনি এ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
ফলে ২০১৭ সালে ৩০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহারীদের সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারীতে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী (ইপিআই) বন্ধ রেখে বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।
এ প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি মেনে নিলে তারা কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পাইনি এ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
পরে ২০২০ সালে আবার কর্মসূচিতে গেলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে উক্ত সভার রেজুলেশনের মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু তারও কোন বাস্তবায়ন করেনি।
সর্বশেষ চলতি বছর ২০২৫ সালে আবারও তারা একই দাবি বাস্তবায়নের জন্য গত ২৫ মে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনকালে উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ৩মাসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের দাবি বাস্তবায়নের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
যার ফলে আবাও গত ২৬ জুলাই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ১ মাসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা আগামী ১২ অক্টোবর আসন্ন টিসিবি টিকাদান ক্যাম্পেইনকে সামনে রেখে জনস্বার্থে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফলভাবে সম্পন্ন করার সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ বিষয় অদ্যবদি তাদের দাবি বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় ৬৪ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে কমপ্লিট শাটডাউনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

এপ্রেক্ষিতে গত ২৮ সেস্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর স্মারকলিপি পদান করে ১লা অক্টোবর থেকে ইপিআই ও আসন্ন টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনসহ সকল প্রকার কার্যক্রম বর্জনসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
আমরা আশার করি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যের
শিকার দেশের এ স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রস্তাবিত ন‍্যায‍্য ও যৌক্তিক ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন করবেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বৈষম্যের শিকার স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতি

আপডেট সময় ০১:৫৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি কর্মবিরতি সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সামনে অত্র প্রতিষ্ঠানের সকল স্বাস্থ্য সহকারী,সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক কর্মবিরতি পালন করেন।এ সময় স্বাস্থ্য সহকারীনেতা বলেন,আমরা বার বার শুধু আশার বাণীই শুনে যাচ্ছি। এ বার আর আশার বাণী নয়, তাই আমাদের নিয়োগবিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ‍্যতা (স্নাতক) সংযোগ ১৪তম গ্রেড প্রদান ও ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাবেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ প্রস্তাবিত ৬দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে এ কর্মবিরতি পালনে যাচ্ছি ।

স্বাস্থ্য সহকারীদের ৬ দফা দাবিঃ
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা অনুযায়ী ১৪তম গ্রেড প্রদান।
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারী কর্মীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া।
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা।
৪. সব স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা।
৫. বেতন স্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা।
৬. ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
তাই বৈষম্যের শিকার এ স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবী ন‍্যায‍্য ও যৌক্তিক, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের উক্ত ৬ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে তাদেরকে আন্দোলন থেকে কাজে ফিরাবেন এমনটাই প্রত‍্যাশা।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের জন্মের পর থেকে ১০টি মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা জন‍্য দেয়া হয় প্রতিশোধক টিকা। আর এ শিশুদের সু-স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় প্রতিশোধক টিকা যিনি তৃণমূল পর্যায় প্রদান করেন তিনি হলেন,একজন “স্বাস্থ্য সহকারী”।

এ স্বাস্থ্য সহকারীরা সরকারের সকল কর্মচারী থেকে আজ নানান বৈষম্যের শিকার, দীর্ঘ ২০ বছরে হয় না কোন পদোন্নতি! বহু অপেক্ষার পর যদিও কারোর পদোন্নতি হয় তাহলে বেতন বারে না এক পয়সাও।

স্বাস্থ্য সহকারী পদ সৃষ্টির আদি কথাঃ
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অর্জনের পর তৎকালিন সময়ে দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সরকারী ভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে সর্ব প্রথম থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হয়।

উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিনে প্রতি ৪ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের শুভ সূচনা হয়। পরবর্তীতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্যে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ স্বাস্থ্য সহকারীদের একক ভাবে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় দেশে থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল,ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডায়রিয়া,ধনুর্ষ্টংকার,অন্ধত্ব দূরিকরণসহ সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রন, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পোলিও নিমূর্ল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপি সুনাম অর্জন করেন তারা। বসন্ত ও ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রে তাদের এই সফলতায় ১৯৭৯ সালে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ চালু করা হয় “সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই)”।

এ কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীগন বর্তমানে ১০টি মারাত্বক সংক্রামিত রোগ ( শিশুদের যক্ষ্মা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফুয়েঞ্জার, নিউমোনিয়া ও হাম-রুবেলা)র টিকা এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের কিশোরী ও মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা-প্রদান করে আসছেন।

বিশেষ করে নারী ও শিশুদের এসব টিকা দেওয়ার পূর্বে নির্ধারিত দিনের আগে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বাধ্যতামূলক রেজিষ্ট্রেশন করে এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই। তাছাড়া জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রেশন,নবজাতক শিশু রেজিষ্ট্রেশন,গর্ভবতী রেজিষ্ট্রেশন,যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণ,কফ পরীক্ষার জন্য রোগী প্রেরণ, ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ খাওয়ানো এবং উঠান বৈঠক,মা সমাবেশের মাধ্যমে নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর গোড়ার দিকে সরকারি নির্দেশে স্থানে নির্বাচন,স্থানীয় জনগন থেকে বিনা মূলে জমিদানে উদ্বুদ্ধকরণ,নির্মাণ তদারকিসহ এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে।

২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি নিয়োগর পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রদানসহ বর্তমানেও সপ্তাহে ৩দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
এছাড়াও বছরের দুই বার জাতীয় ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যেমে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদেরকে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানো মাধ্যমে ক্যাম্পেইন পালন করে থাকে। প্রাথমিক,মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ এবংএইচপিভি টিকা প্রদান করেন।

২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারী ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফল ভাবে প্রদান করে। আর এ সব টিকা প্রদানের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় নিয়োজিত আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী।

এ জন্য তাদের মাসিক ভ্রমণ ভাতা বাবদ মাসে দেয়া হয় মাত্র ৬০০ টাকা। বেতন পান সর্বসাকল্যে ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
এ স্বাস্থ্য সহকারীরা মা ও শিশুদেরকে টিকা প্রদানের পূর্বে সারা মাস সরকারী ছুটি ব্যতিত রৌদে-বৃষ্টিতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে মা ও শিশু রেজিস্টেশন করে টিকা প্রদান করে। এই জন্য বছরে একটি ছাতাও বরাদ্দ করা হয় না সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে।
১৯৭৪ সালে ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টি হলেও বর্তমানে একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার জনগোষ্ঠি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারী নিয়ম অনুসারে সে খানে ৫ থেকে ৬ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োজিত থাকার কথা।

প্রজাতন্ত্রের পদোন্নতি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ৩ থেকে ৭ বছর পরপর পদোন্নতি পান। কিন্তু একজন স্বাস্থ্য সহকারী ২০ বছরেও পদোন্নতি পেয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে পারি না। যদিও পদোন্নতি পান তাহলে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হতে আরও কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে এমন সময় পদোন্নতি পায়, যখন চাকরির বয়স বাকী থাকে মাত্র ৫ থেকে ৬ মাস। তবে পদোন্নতি হলেও বেতন বাড়ে না এক পয়সাও। উপরন্তু বদলি করা হয় অন্য জেলা,উপজেলায়।

স্বাস্থ্য সহকারীদের আত্মত্যাগঃ
বিশ্বের মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন সাধারণ ছুটি। আর সে সময় করোনাভাইরাসের ঝুকি নিয়ে মাঠে থেকে জনগনকে করোনার টিকা, শিশুরদের টিকা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়েছেন তৃণমূল এ স্বাস্থ্য সহকারীই।

তাছাড়াও করোনার প্রথম দিকে স্বাস্থ্য সহকারীরাই বিদেশ ফেরতদের তথ্য সংগ্রহ করে স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করতে হচ্ছিল। তাছাড়া বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার জন্য অনুরোধ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং হোম কোয়ারান্টাইন অবস্থায় আছে কিনা তার ফলোআপও করেছিল এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই।
এছাড়া জ্বর,সর্দি, কাশি,শ্বাসকষ্টজনিত রোগী সনাক্ত করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেছিলেন এবং সন্দেহ করোনারোগীর নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তাদের একটি মাস্ক ছাড়া ( নিজের অর্থায়নে ক্রয় করা ) আর কিছুই ছিল না। ঝুকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ওই সময় প্রায় ৮শতাধিক স্বাস্থ্য সহকারী করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মৃত্যু হয়েছে বেশই কয়েক জন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের মাধ্যমে অর্জনঃ
২০০৯ সালে ইমিউনাইজেশন কর্মসূচীর সফলতার জন্য গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভী) কর্তৃক পেয়েছেন পুরস্কার, ২০১০ সালে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর জন্য জাতিসংঘের এমডিজি-৪ অ্যাওয়ার্ড,২০১১ সালে শিশুমৃত্যু-মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর জন্য সাউথ সাউথ পুরষ্কার, ২০১২ সালের বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় (গ্যাভি) কর্তৃক টিকাদানকারী দেশের অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের অ্যাওয়ার্ড,২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বাংলাদেশকে দিয়েছে পোলিও নির্মুলের সনদ,২০১৬ সালে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) কর্তৃক বাংলাদেশকে পোলিও নির্মূলে সাফল্যের স্বীকৃতির সনদ, ২০১৬ সালে ধনুষ্টকার নির্মুলের সনদ অর্জন এবং সর্ব শেষ ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৭৪তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন সময়ে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশন (গ্যাভি) কর্তৃক শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সাফল্যের জন্য তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী পেয়েছেন ভ্যাকসিন হিরো সম্মাননা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ও দেশের বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজ গুলো শতভাগ টেকনিক্যাল এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের যত বড় বড় সফলতা এসেছে তা একমাত্র তৃণমূল এ স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের মাধ্যমেই। এ সম্মানগুলো একমাত্র স্বাস্থ্য সহকারীদের দ্বারাই অর্জন। তাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ূ বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে সুপরিচিত লাভ করে।

স্বাস্থ্য সহকারীদের বঞ্চনা ও বৈষম্যঃ
১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে এইচএসসি পাশ স্বাস্থ্য সহকারীদের ১৬তম গ্রেডে মূল বেতন ছিল ৩০০ টাকা। কৃষি বিভাগের এসএসসি পাশ ব্লক সুপারভাইজার যারা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাক।
১৯৮৫ সালের ৫ আগষ্ট সরকারী এক আদেশে তাদের বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ১৪তম গ্রেডে উর্ত্তীণ করা হয় ও ২০০১ সালের ২৩ এপ্রিল আবার তাদেরকে ১১তম গ্রেডে আপগ্রেডেশন করে টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সরকারী আদেশে পদবী পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা করা হয়।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ভেটানারী ফিল্ড এসিস্ট্যান্টরা ১৯৭৭ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ১৯তম গ্রেডে মূল বেতন পেতেন ২৪০ টাকা। ব্লক সুপারভাইজারদের সাথে ১৯৮৫ সালে সরকারী আদেশের মাধ্যমে তাদেরও ১১তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করে এবং টেকনিক্যাল মর্যাদা প্রদান করা হয়।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস সহকারী শিক্ষক যারা ১৭তম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, তাদেরও ১৪তম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হয়। ২০২০ সালে তাদেরও ১৩তম গ্রেড প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারী করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যারা গৃহপালিত প্রাণীর চিকিৎসা প্রদান করেন তাদেরও ভাগ্য পরিবর্তন হয় কিন্তু সৃষ্টির সেরাজীব মানব শিশু স্বাস্থ্য ও মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে তৃণমূল স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি আজও।

স্বাস্থ্য সহকারীদের সাথে পূর্বের ঘোষিত ও প্রতিশ্রুতিঃ
১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সহাকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের এক মহাসমাবেশে তাদের বেতন বৈষম্য নিরসন করে টেকনিক্যাল পদমর্যদার দাবি বাস্তবায়নে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও, সে ঘোষণার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে আজও বাস্তবায়নের কোন প্রতিফল ঘটেনি।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজের বহু সাফল্যের পরও দীর্ঘদিন থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী,সহকারী স্বাস্থ্য পরির্দশক ও স্বাস্থ্য পরির্দশকরা নিয়োগবিধি সংশোধনকরে আপগ্রেডেশন বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদার দাবি পূরণের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক আবেদন করে আসছেন।
তার কোন বাস্তাবায়ন না পেয়ে ২০১৬ সালে ২৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন ঢাকা বিভাগের এক সমাবেশে কনের। উক্ত সমাবেশ তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী তাদের দাবি যৌক্তিক বলে ঘোষণা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে একটি কমিটি গঠন করে দিয়ে ছিলেন কিন্তু তার কোন প্রতিফল পাইনি এ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
ফলে ২০১৭ সালে ৩০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য সহারীদের সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারীতে দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী (ইপিআই) বন্ধ রেখে বেতন স্কেলসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।
এ প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি মেনে নিলে তারা কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করেন। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পাইনি এ স্বাস্থ্য সহকারীরা।
পরে ২০২০ সালে আবার কর্মসূচিতে গেলে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্য সহকারীদের সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে উক্ত সভার রেজুলেশনের মাধ্যমে তাদের দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু তারও কোন বাস্তবায়ন করেনি।
সর্বশেষ চলতি বছর ২০২৫ সালে আবারও তারা একই দাবি বাস্তবায়নের জন্য গত ২৫ মে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনকালে উর্ধতন কর্মকর্তাগণ ৩মাসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের দাবি বাস্তবায়নের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
যার ফলে আবাও গত ২৬ জুলাই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ১ মাসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা আগামী ১২ অক্টোবর আসন্ন টিসিবি টিকাদান ক্যাম্পেইনকে সামনে রেখে জনস্বার্থে টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফলভাবে সম্পন্ন করার সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ বিষয় অদ্যবদি তাদের দাবি বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় দাবি বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের এক মতবিনিময় সভায় ৬৪ জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে কমপ্লিট শাটডাউনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

এপ্রেক্ষিতে গত ২৮ সেস্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর স্মারকলিপি পদান করে ১লা অক্টোবর থেকে ইপিআই ও আসন্ন টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনসহ সকল প্রকার কার্যক্রম বর্জনসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
আমরা আশার করি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যের
শিকার দেশের এ স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রস্তাবিত ন‍্যায‍্য ও যৌক্তিক ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন করবেন।