ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ
আগুনে পুড়ল সিএনজি চালকের সপ্ন, আমনধান ও নগদ অর্থসহ ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ কার্যক্রমবিষয়ক সেমিনার আজ মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস, গণকবরে শ্রদ্ধা ও আলোচনা সভা মৌলভীবাজারে অবৈধ ভারতীয় পন্যসহ আটক – ৩ ইমজার সভাপতি ও মাছরাঙা প্রতিনিধি তমাল ফেরদৌস দুলাল এর স্মরণে শোকসভা প্রতিবন্ধী নারীর ম র দে হ উদ্ধার দুর্গাপুরে আলেম সমাজকে নিয়ে জামায়াতের উলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামি গ্রে ফ তা র উপজেলা পর্যায়ে ওয়ান-স্টপ সলিউশন সেন্টার স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে সম্মেলন আল্ট্রা-পুওর গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামের আয়োজনে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবস পালিত

আগুনে পুড়ল সিএনজি চালকের সপ্ন, আমনধান ও নগদ অর্থসহ ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

তিলে তিলে গড়ে তোলা পাঁচ ভাইয়ের জমানো সপ্ন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দেড়যুগ পূর্বে আত্মীয়দের সহায়তায় ও নিজেদের জমানো অর্থে গড়ে তোলা আধাপাকা ঘরটি এখন শুধুই ছাই। ধসে পড়েছে দেয়ালের প্রতিটি ইট। কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের বসতঘরটিতে।পুড়ে ছাই হয়ে যায় সদ্য ঘরে তোলা শতাধিক মন আমন, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, কাপর-চোপর, দেড় লক্ষাধিক নগদ টাকা ও ফার্নিচার। শুধু রক্ষা পায় ঘরে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবন। নির্মম ও বিভৎস ওই ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর আটঘর গ্রামের নাছির উদ্দীন নামে এক সিএনজি চালকের বাড়িতে।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮ টার দিকে ওই সিএনজি চালকের বসতঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘরটিতে নাসির উদ্দীন ছাড়াও তাঁর আরও পাঁচ ভাই ও এক বোনের পৃথক সংসার রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রবিবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে উত্তর আটঘর গ্রামের নাসির উদ্দীন এর বসতঘরে বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এমন দৃশ্য চোখে পড়ার পর পরিবারের লোকজন হতভম্ব হয়ে চিৎকার শুরু করেন। আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টার পর পুরো ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। এ খবর আশপাশ সহ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। শতশত মানুষ জড়ো হন নাসির উদ্দীনদের বাড়িতে। তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল, জড়ো হওয়া মানুষদের কারো পক্ষেই আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের মাধ্যমে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে রাত পৌনে ৯ টার দিকে মৌলভীবাজার শহর থেকে সেখানে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। তবে তাঁর আগেই আগুনে পুড়ে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। পড়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের একঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

জানা যায়, সিএনজি চালক নাসির উদ্দীন সহ ৫ ভাই পৃথকভাবে পরিবার নিয়ে ওই ঘরটিতে বসবাস করে আসছেন। নাসির সহ দুই ভাই সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও অন্যরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘরটিতে তাদের ৫ ভাইয়ের স্ত্রী, শিশু সন্তান, নাসির উদ্দীন এর মা ও বোন সহ অন্তত ২০ জনের মতো সদস্য বসবাস করেন।

রবিবার রাতে পরিবারের গৃহিণীরা রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। এমন সময় হটাৎ আগুনের দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন গোটা পরিবারের সদস্যরা। জীবন বাঁচাতে ঘরটি অরক্ষিত রেখেই বাহিরে বেড়িয়ে আসেন তারা। তাদের চোখের সামনেই মুহুর্তেই সাজানো-গোছানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। এসময় পুরো গ্রামবাসী ঘটনার বিভৎসতার স্বাক্ষী হন।

রাত ১০ টার দিকে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন, নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সহায়তার আশ্বাসও দেন তারা এবং প্রাথমিকভাবে কম্বল ও কিছু শুকনো খাবার দেন। তবে কোন অর্থ সহায়তা পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ।

নাজিরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন জানান, বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট খেকে আগুনের সূত্রপাত, এ ঘটনায় পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। তিনি জানান, নগদ লক্ষাধিক টাকা সহ অন্তত ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিব হোসেন জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে সারা জীবনের কষ্টার্জিত মাথাগোঁজার ঠাঁই টুকু হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাতম, আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে উত্তর আটঘর গ্রামের পরিবেশ। গতকাল বিকেলেও যেখানো একত্রে সবাই এক ছাদের নিচে সুখের সপ্ন ভুনতেন। আজ নিমেষেই সেখানে পুড়া গন্ধে বিষাদময় পরিবেশ।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সিএনজি চালক নাসির উদ্দীন এর সাথে। পরিচয় দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, বাল্ব বিস্ফোরণে প্রথমে আগুনের দৃশ্য দেখেন তাঁর মা। মুহূর্তেই ঘরের সবগুলো কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তিনি বলেন, সব হারিয়ে আমরা এখন অন্যর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ধান বিক্রির দেড় লক্ষ টাকা, শতাধিক মন আমন ধান, পাঁচ ভাইয়ের ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার,আসবাবপত্র সহ সব পুড়ে ছাই। কিচ্ছু বেড় করাও সম্ভব হয়নি।

মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ সিদ্দিকুল আলম আগুন লাগার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে বলেও জানান তিনি।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আগুনে পুড়ল সিএনজি চালকের সপ্ন, আমনধান ও নগদ অর্থসহ ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি

আপডেট সময় ০৯:১২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

তিলে তিলে গড়ে তোলা পাঁচ ভাইয়ের জমানো সপ্ন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। দেড়যুগ পূর্বে আত্মীয়দের সহায়তায় ও নিজেদের জমানো অর্থে গড়ে তোলা আধাপাকা ঘরটি এখন শুধুই ছাই। ধসে পড়েছে দেয়ালের প্রতিটি ইট। কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের বসতঘরটিতে।পুড়ে ছাই হয়ে যায় সদ্য ঘরে তোলা শতাধিক মন আমন, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, কাপর-চোপর, দেড় লক্ষাধিক নগদ টাকা ও ফার্নিচার। শুধু রক্ষা পায় ঘরে বসবাস করা মানুষগুলোর জীবন। নির্মম ও বিভৎস ওই ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর আটঘর গ্রামের নাছির উদ্দীন নামে এক সিএনজি চালকের বাড়িতে।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮ টার দিকে ওই সিএনজি চালকের বসতঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘরটিতে নাসির উদ্দীন ছাড়াও তাঁর আরও পাঁচ ভাই ও এক বোনের পৃথক সংসার রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রবিবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে উত্তর আটঘর গ্রামের নাসির উদ্দীন এর বসতঘরে বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এমন দৃশ্য চোখে পড়ার পর পরিবারের লোকজন হতভম্ব হয়ে চিৎকার শুরু করেন। আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টার পর পুরো ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। এ খবর আশপাশ সহ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। শতশত মানুষ জড়ো হন নাসির উদ্দীনদের বাড়িতে। তবে আগুনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল, জড়ো হওয়া মানুষদের কারো পক্ষেই আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের মাধ্যমে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে রাত পৌনে ৯ টার দিকে মৌলভীবাজার শহর থেকে সেখানে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। তবে তাঁর আগেই আগুনে পুড়ে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। পড়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের একঘন্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

জানা যায়, সিএনজি চালক নাসির উদ্দীন সহ ৫ ভাই পৃথকভাবে পরিবার নিয়ে ওই ঘরটিতে বসবাস করে আসছেন। নাসির সহ দুই ভাই সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও অন্যরা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘরটিতে তাদের ৫ ভাইয়ের স্ত্রী, শিশু সন্তান, নাসির উদ্দীন এর মা ও বোন সহ অন্তত ২০ জনের মতো সদস্য বসবাস করেন।

রবিবার রাতে পরিবারের গৃহিণীরা রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। এমন সময় হটাৎ আগুনের দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন গোটা পরিবারের সদস্যরা। জীবন বাঁচাতে ঘরটি অরক্ষিত রেখেই বাহিরে বেড়িয়ে আসেন তারা। তাদের চোখের সামনেই মুহুর্তেই সাজানো-গোছানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। এসময় পুরো গ্রামবাসী ঘটনার বিভৎসতার স্বাক্ষী হন।

রাত ১০ টার দিকে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন, নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সহায়তার আশ্বাসও দেন তারা এবং প্রাথমিকভাবে কম্বল ও কিছু শুকনো খাবার দেন। তবে কোন অর্থ সহায়তা পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ।

নাজিরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন জানান, বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট খেকে আগুনের সূত্রপাত, এ ঘটনায় পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। তিনি জানান, নগদ লক্ষাধিক টাকা সহ অন্তত ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিব হোসেন জানান, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে সারা জীবনের কষ্টার্জিত মাথাগোঁজার ঠাঁই টুকু হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের মাতম, আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে উত্তর আটঘর গ্রামের পরিবেশ। গতকাল বিকেলেও যেখানো একত্রে সবাই এক ছাদের নিচে সুখের সপ্ন ভুনতেন। আজ নিমেষেই সেখানে পুড়া গন্ধে বিষাদময় পরিবেশ।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সিএনজি চালক নাসির উদ্দীন এর সাথে। পরিচয় দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, বাল্ব বিস্ফোরণে প্রথমে আগুনের দৃশ্য দেখেন তাঁর মা। মুহূর্তেই ঘরের সবগুলো কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তিনি বলেন, সব হারিয়ে আমরা এখন অন্যর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ধান বিক্রির দেড় লক্ষ টাকা, শতাধিক মন আমন ধান, পাঁচ ভাইয়ের ঘরে থাকা স্বর্ণালঙ্কার,আসবাবপত্র সহ সব পুড়ে ছাই। কিচ্ছু বেড় করাও সম্ভব হয়নি।

মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ সিদ্দিকুল আলম আগুন লাগার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে বলেও জানান তিনি।