বৃটেনের নারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ট্রাস
- আপডেট সময় ০৮:৩৬:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে
আরও একজন নারী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে বৃটেন। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের দায়িত্বে আসছেন বহুল আলোচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। ভারতীয় বংশোদ্ভূত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাককে হারিয়ে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভের নেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিয়েছেন ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্রাডি। এর ফলে আজ মঙ্গলবার তিনি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্কটল্যান্ডের বালমোরালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেখানে রানীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র পেশ করবেন বরিস জনসন। তারপরই শুরু হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়া। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রধানকেই রানী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে থাকেন। সেই হিসেবে বরিস জনসনের সঙ্গে যাওয়া লিজ ট্রাসকেই তিনি নিয়োগ করবেন- এমনটাই বলা হয়েছে মিডিয়ার খবরে। এ হিসেবে আজই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাবেন।
ওদিকে দলীয় চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডি ঘোষণা দেয়ার পর পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন ঋষি সুনাক। তিনি এক টুইটে বলেছেন, কনজারভেটিভ পার্টি হলো ‘একটি পরিবার’। নতুন নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকবে। দলীয় নির্বাচনে লিজ ট্রাস পেয়েছেন ৮১,৩২৬ ভোট। ঋষি সুনাক পেয়েছেন ৬০,৩৯৯ ভোট। দলীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ায় লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, স্কটল্যান্ডের ফার্স্টমিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেন, বিরোধী লেবার দলের নেতা স্যার কিয়ের স্টরমার।
ওদিকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণ দিয়েছেন লিজ ট্রাস। তিনি বলেছেন, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়া গর্বের। এ জন্য নির্বাচন আয়োজন করায় তিনি ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্রাডি ও দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ যাত্রায় তার প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য। বিশেষ করে পরাজিত প্রার্থী ঋষি সুনাকের প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি। ধন্যবাদ জানান বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি। তিনি বলেন, আপনারা জেরেমি করবিনকে ‘ক্রাশ’ করে দিয়েছেন। (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিতে আমার ওপর আস্থা রাখায় কৃতজ্ঞতা জানাই। কনজারভেটিভ পার্টি-গ্রেটেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি অন আর্থ। এরপরই তিনি ট্যাক্স কর্তন, জ্বালানি বিল কমানো এবং দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৪ সালে কনজারভেটিভ পার্টিকে বিজয়ী করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন তিনি।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেনে আগ্রাসন- এই জোড়া আঘাতে বিশ্বের অর্থনীতি যখন তছনছ, মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বাড়ছে, বৃটেনে ৪০ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে মুদ্রাস্ফীতি, তখনই দেশের মহাদায়িত্ব কাঁধে নিতে যাচ্ছেন লিজ ট্রাস। আগেই কথা দিয়েছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘অবিলম্বে অ্যাকশনে’ যাবেন। বিশেষ করে দেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলা ইস্যুতে তার পরিকল্পনা ঘোষণার চাপ থাকবে। তবে লিজ ট্রাসও আগেভাগে পরিকল্পনা ও কাজ শুরু করেছেন। একটি সূত্র বলেছেন, তার টিম এরই মধ্যে ‘প্রচুর পদক্ষেপ’ নিয়ে ভাবছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তবে বিরোধী লেবার পার্টির দাবি, জনগণ সাহায্য পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে আছে। তারা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জানতে চায়।
ওদিকে নিজ দলের এমপিদের আস্থা হারিয়ে জুলাইয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এরপর ধাপে ধাপে দলের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হয় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে। তারা হলেন বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা গত শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে নতুন নেতা বেছে নিতে ভোট দেন। বৃটিশ সময় দুপুর বারোটায় বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন স্যার গ্রাহাম ব্রাডি। তবে বরিস জনসনের রেখে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকট সামলানোর মধ্যদিয়েই দায়িত্ব শুরু করতে হবে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে। বৃটেনে এখন গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতেও দেশটির মানুষ চাপে রয়েছে।
লিজ ট্রাস বর্তমান বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পিতা ছিলেন অঙ্কের অধ্যাপক এবং মা একজন নার্স। ট্রাস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে আসেন। ট্রাস প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ২০১০ সালে। প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার ইস্যুটির বিরুদ্ধে ছিলেন লিজ ট্রাস। পরে ব্রেক্সিটের নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বরিস জনসনকে সমর্থন করেন তিনি। বৃটিশ মিডিয়া প্রায়ই তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করে।
অপরদিকে এই দৌড়ের দ্বিতীয় প্রতিযোগী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। ৪২ বছর বয়সী সুনাকের পরিবার মূলত ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা। তার বাবা-মা ১৯৬০-এর দশকে বৃটেনে গিয়েছিলেন। সুনাকের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল বৃটেনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল উইনচেস্টারে। ট্রাসের মতো, তিনিও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি হন সুনাক। এমপি হওয়ার পরপরই ব্রেক্সিট সমর্থক সুনাককে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে দেখা হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বরিস জনসনের জয়ের পর সুনাককে অর্থমন্ত্রী করা হয়েছিল।
ফলাফলের পর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ বক্তব্য দেবেন বরিস জনসন। এরপর তিনি স্কটল্যান্ডে যাবেন। সেখানে জনসন রানীকে তার পদত্যাগের কথা জানাবেন। এর পর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন লিজ ট্রাস। রানী তাকে সরকার গঠন করতে বলবেন। নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ রাজকীয় রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করা হবে। আনুষ্ঠানিক নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই লন্ডনে ফিরে যাবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রথম ভাষণ দেবেন।
ওদিকে নির্বাচিত লিজ ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেন। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, আমাদের রাজনৈতিক মতবিরোধ অনেক গভীর। তা সত্ত্বেও তার সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই আমি, যেমনটা গত তিন জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিল। তার (লিজ ট্রাসের) এখন অবশ্যই জনগণ এবং ব্যবসায়ীদের এনার্জি বিলকে ফ্রিজ করতে হবে। আরও নগদ অর্থ সরবরাহ করতে হবে। সরকারি সেবাখাতে অর্থ বাড়াতে হবে।
আগে থেকেই এসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখছিল বিশ্ব। তবে বৃটেনে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, তাতে যেন রাশিয়ার কিছু এসে যায় না। কারণ, তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, রাশিয়া এবং বৃটেনের মধ্যে সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সোমবার মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু ঘটছে এমনটা কেউ আশা করতে পারেন না। অদূর ভবিষ্যতে আমি তো দুই দেশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। বিজয়ীকে কি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিনন্দন জানাবেন? এ প্রশ্নের জবাবে পেসকভ বলেন, অপেক্ষা করুন। দেখি কে প্রধানমন্ত্রী হন।